পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সড়ক-মহাসড়ক ও জনপথের উন্নয়ন একটি চলমান বাস্তবতা। আর খোঁড়াখুঁড়ি হচ্ছে উন্নয়নের অন্যতম ধাপ। কিন্তু সাম্প্রতিক বাস্তবতা হচ্ছে, উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় স্বস্তির চেয়ে খোঁড়াখুঁড়ির বিড়ম্বনা অনেক বেশি প্রলম্বিত ভোগান্তিকর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত বর্ষাকে সামনে রেখে সড়ক উন্নয়নের কাজে হাত দেয়া এবং রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে দীর্ঘদিন ফেলে রাখার বেপরোয়া প্রবণতা বন্ধ হচ্ছে না। এখন জুন মাস। আগামী অর্থবছরের নতুন বাজেট ঘোষণা হয়েছে। বিগত অর্থবছরের উন্নয়ন কর্মকান্ডের বাস্তবায়ন এরই মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও টেন্ডার হওয়ার পর মাসের পর মাস সময় ক্ষেপন করে অর্থবছরের শেষদিকে মে-জুন মাসে তড়িঘড়ি রাস্তা খোঁড়াখুড়ি করে বর্ষার কারণে কাজ ফেলে রাখার পুরনো অপকৌশলের কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। রাজধানীর ডিপ্লোম্যাটিক জোন বা বাণিজ্যিক এলাকা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যস্ত সড়ক থেকে শুরু করে বন্দর নগরীর সমুদ্রবন্দরের সংযোগ সড়ক পর্যন্ত সর্বত্রই রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে একই রকম বিড়ম্বনার শিকার সাধারণ মানুষ। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের সাথে কানেক্টিং (পিসি) রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ির পর দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রাখার কারণে জনভোগান্তির তথ্য পাওয়া যায়। জুনের আগেই এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কের উন্নয়ন কাজ শেষ করার কথা থাকলেও কাজের ধীরগতির কারণে এখন বর্ষায় এসে ঠেকেছে। এবার মে মাসে তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় সময়মত উন্নয়ন কাজ শেষ করার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বর্ষার আগে কাজ সমাপ্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি আগামী বছরেও কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
বন্দর নগরীতে রাস্তা উন্নয়নের নামে খোঁড়াখুড়ি করে দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় জনভোগান্তির খবর কোনো নতুন বিষয় নয়। স্থানীয় প্রশাসন বা সিটি কর্পোরেশন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের উন্নয়ন কাজ সময়মত কাজ শেষ করতে না পারা এবং খোঁড়াখুঁড়ি করে দীর্ঘদিন ফেলে রাখার এমন চিত্র সারাদেশেই প্রায় অভিন্ন। তবে বন্দরের সাথে সংযুক্ত যে সব রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন আমদানি-রফতানির শত শত কন্টেইনার ও ট্যা-ঙ্কলরি যাতায়াত করে থাকে, উন্নয়নের নামে সে সব রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি করে দীর্ঘদিন ফেলে রাখার কোনো সুযোগ নেই। তিন বছরের বেশি সময় ধরে পিসি কানেক্টিং রাস্তার কাজ চলছে, যা এক বছরের বেশি সময় লাগার কথা নয়। উন্নয়নের দোহাই দিয়ে সড়কের বিশেষ অংশে যান চলাচল বন্ধ রাখা, নির্মান সামগ্রী স্ত‚প করে রাখার কারণে স্থানীয় লাখ লাখ বাসিন্দা ও রাস্তা ব্যবহারকারিদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। শুধু যে রাস্তায় চলাচল ব্যহত হচ্ছে তা নয়, খোঁড়াখুঁড়ির পর নির্মাণ কাজ দীর্ঘায়িত করে রোদ ও বাতাসে সর্বত্র ধুলোবালি ছড়িয়ে পড়ায় জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতি হয়, অন্যদিকে সামান্য বৃষ্টিতে কাদা ও খানাখন্দকে এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। উন্নয়নের নামে বছরের পর বছর ধরে চলা এমন জনভোগান্তির কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে উন্নয়ন সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব গড়ে উঠতে দেখা যায়।
অপরিতল্পিত উন্নয়নের ফলে এমনিতেই বর্ষার সময় বন্দর নগরী চট্টগ্রামের বেশিরভাগ রাস্তা সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায়। এ কারণেও বন্দরনগরীতে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বেশি জনভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে জনভোগান্তির জন্য বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী সংস্থার মধ্যে কাজের সমন্বয়হীনতাকেও দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন(চসিক) সংশ্লিষ্ট চারটি সেবা সংস্থাকে কাজের সমন্বয় করার নির্দেশনা জারি করে চিঠি দিয়েছিল গত বছর। সেই সাথে বর্ষায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ রাখার নির্দেশনাও জারি করার কারণে বর্ষায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির ভোগান্তি থেকে নগরবাসি রেহাই পাবে বলে আশা করা হয়েছিল। অর্থবছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও পিসি রোডের কাজের বেহাল দশা এবং বর্ষা সমাগত অবস্থায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির বাস্তবতা থেকে এটাই প্রতিয়মান হচ্ছে রাস্তা উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো চসিকের নির্দেশনাকে তেমন গ্রাহ্য করছে না। চসিক মেয়র নিজেই পিসি রোডসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগগুলোর উন্নয়ন কাজ তদারক করছেন বলে জানা যায়। তাহলে খোঁড়াখুঁড়ি করে মাসের পর মাস ফেলে রাখার সুযোগ কোথায়? গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কেন বছরের পর বছর ধরে লাখ লাখ মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে? এ প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই এসে যায়। উন্নয়নের নামে ভোগান্তি-বিড়ম্বনা পোহাতে পোহাতেই একটি প্রজন্মের মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জনগণের রাজস্বে উন্নয়ন ব্যয়ের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ। বর্ষা বা ঈদকে সামনে রেখে তড়িঘড়ি করে যেনতেন প্রকারে উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নের চেষ্টা বা খোঁড়াখুঁড়ির পর ফেলে রেখে জনভোগান্তি বাড়িয়ে তোলার বিদ্যমান বাস্তবতা অবশ্যই বদলাতে হবে। উন্নয়ন কাজের মান এবং বাস্তবায়নের সময়সীমা ঠিক রাখার কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।