পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
স্থল যোগাযোগ, ব্যবসা বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য দেশের মহাসড়কগুলো গেটওয়ে হিসেবে কাজ করে থাকে। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি আমদানী-রফতানীসহ জাতীয় অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা পালন করে থাকে। যে কোনো কারণে এই মহাসড়কে যানজট বা অবরোধের মত বিড়ম্বনা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জাতীয় অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। সংকীর্ণ ও অনুন্নত, নানা স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার কারণে এক সময় এই মহাসড়কের যাত্রি ও পণ্যবাহী গাড়ীগুলোকে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকে থাকতে হতো। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মহাসড়কগুলোকে চারলেনে উন্নীত করার পাশাপাশি পুরনো সেতুগুলোর সংস্কার এবং বেশ কয়েকটি নতুন সেতু নির্মামের পর সে অবস্থার অনেকটা পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। মহাসড়কের উন্নয়ন ঘটলেও সড়কের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার তেমন কোনো উন্নয়ন ঘটেনি। বিশেষত নানা শ্রেনী পেশার মানুষ তাদের ক্ষোভ, অসন্তোষ ও দাবী-দাওয়ার জন্য এখনো যত্রতত্র সড়ক-মহাসড়ক অবরোধের পথ বেছে নিচ্ছে। দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতায় নানা ধরনের সমস্যা-সংকটের উদ্ভব হবে, এটাই স্বাভাবিক। এসব সমস্যা নিরসনে যখন তখন সড়ক মহাসড়ক অবরোধ করে বাছ-বিচারহীনভাবে জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে তোলার অপরিনামদর্শি প্রবণতা বন্ধ করতে হবে।
সড়কে বাসচাপায় দুই সহপাঠির মৃত্যুর প্রতিবাদে নিরাপদ সড়কের দাবীতে গত বছর শিক্ষার্থীদের রাজপথে নেমে আসার ঘটনাটি ছিল অভ’তপূর্ব ও চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী। সে আন্দোলনে পুরো জাতির সমর্থন দেখা গেছে। এ থেকে বোঝা যায়, সড়কে নিরাপত্তা একটি সার্বজনীন প্রত্যাশা ও দাবী। তবে সড়কে নিরাপত্তার অন্যতম শর্তই হচ্ছে, সড়ক-মহাসড়কগুলোকে স্বাচ্ছন্দ্যে যান চলাচলের উপযোগী ও অবারিত রাখা, সেই সাথে রাস্তার মান ও গাড়ীচালকদের অদক্ষতা ও বেপরোয়া মনোভাবের কারণে দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় নজরদারি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এসব বিষয় রাতারাতি আমূল পরিবর্তন নিশ্চিত করা হয়তো সম্ভব নয়। রাজপথকে মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও আন্দোলনের মূল টার্গেটে পরিনত হওয়ার বাস্তবতা অবশ্যই বদলাতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, হাইওয়ে পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনকে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। চলতি বছরের প্রথম দিকে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবীতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধের কারণে এ পথের পরিবহন যাত্রিরা কয়েকদিন ধরে অশেষ দুর্ভোগের শিকার হন। সড়ক মহাসড়ক অবরোধের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষকে জিম্মি করা হলেও সংশ্লিষ্ট অবরোধকারিদের দাবী আদায় করা সম্ভব হয়েছে এমন কোনো নজির নেই। এ ধরনের জনভোগান্তি সৃষ্টিকারি তৎপরতার কারণে সংশ্লিষ্টদের ন্যায্য দাবীও সাধারণ মানুষের সমর্থন হারাতে পারে।
সমুদ্রোপকুল ও নদনদীতে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে মাছের প্রজনন সময়ে ডিমওয়ালা মাছ এবং ইলিশের জাটকা নিধন বন্ধ করতে বছরের কয়েক মাস মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ সময়ের জন্য মৎস্যজীবী জেলেদের খাদ্য ও ত্রাণ সহায়তার আওতায় আনা হয়েছে। এ ব্যবস্থার কারণে গত এক দশকে দেশে ইলিশসহ মাছের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সরকারের এ উদ্যোগে কিছু সংখ্যক জেলে মেনে নিতে পারছে না। সম্প্রতি এসব জেলেরা মৎস্য ধরা নিষিদ্ধের সরকারী ঘোষণা প্রত্যাহারের দাবীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিক্ষোভ ও অবরোধ সৃষ্টি করে। জেলেদের অবরোধের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুন্ড এলাকায় নজিরবিহিন যানজটের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে ঈদের ছুটি শেষে শহরে ফেরত আসা হাজার হাজার মানুষ এই মহাসড়কে অপ্রত্যাশিত বিড়ম্বনা ও দুর্ভোগের শিকার হন। এরই ধারাবাহিকতায় এবার জেলেদের দেখাদেখি মাছ বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীরাও মাছ ধরার উপর ২ মাসের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবীতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করেছে মাছ বিক্রেতা ও ফিশিং বোট মালিক-শ্রমিকরা। মৎস্য প্রজননকালে সমুদ্রোপকুলে ৪৫দিন ধরে মাছ ধরা বন্ধ রাখার সরকারী নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এ বছর তা বাড়িয়ে ৬৫দিন করা হয়েছে। সেই সাথে যান্ত্রিক ট্রলারের সাথে সাথে ছোট ছোট অযান্ত্রিক জেলে নৌকাকেও এ বছর নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে। এ কারণেই জেলে এবং মৎস্যজীবীরা এবার সরকারী নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ আন্দোলনে নেমেছে। এ বিষয়ে গরীব মৎসজীবিদের বিকল্প আয় ও ক্ষতিপুরণের ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত এ ধরনের সরকারী সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে দাবী আদায়ে মহাসড়ক অবরোধের যে কোন প্রয়াস অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। সেই সাথে বিভিন্ন মহাসড়কের উপর সাপ্তাহিক হাট-বাজার বসানোর কারণেও যানজটসহ দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রিদের। সড়কের বিকল্প থাকলেও জাতীয় মহাসড়কগুলোর কোনে বিকল্প নেই। মহাসড়কগুলোকে যে কোনো ধরনের বিক্ষোভ-সমাবেশ ও অবরোধের আওতামুক্ত রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনকে অবশ্যই আরো কঠোর ভ’মিকা গ্রহণ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।