Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্বকাপেও এ জয়ের ধারা অব্যাহত থাকুক

| প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আগে এক অবিস্মরণীয় জয় পেল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আয়ারল্যান্ডে ডাবল লীগ পদ্ধতির ত্রিদেশীয় সিরিজে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। টুর্নামেন্টের অপর দুটি দল হচ্ছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আয়ার ল্যান্ড। এই দুই দলকে হারিয়েই প্রথমবারের মতো কোনো ট্রাই ন্যাশনস সিরিজ চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ। লীগ পদ্ধতিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে দুইবার করে বাংলাদেশ মুখোমুখি হয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে লীগের দুই খেলায় অনায়াসে হারিয়েছে। আয়ারল্যান্ডের সাথে প্রথম ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়। পরের ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের করা তিনশ’র কছাকাছি ম্যাচ তাড়া করে সহজে জয় পায়। ফাইনালে সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন হয়। অথচ লীগ পর্যায়ের প্রায় প্রতিটি ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তিনশ’র উপরে রান করে। আয়ারল্যান্ডও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিনশ’র ওপরে রান তুলে। তারপরও জিততে পারেনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেমন বাংলাদেশের সাথে জিততে পারেনি, আয়ার ল্যান্ডেরও পারার কথা নয়। শেষ পর্যন্ত প্রতিপক্ষকে ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিংয়ে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন করেই বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়। দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে ক্রিকেটাররা একটি নতুন পালক সংযোজন করল বা বদ্ধ দুয়ার খুলে দিল। কারণ এর আগে সাতবার ফাইনালে গিয়েও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি।
বাংলাদেশের ক্রিকেট অনেক দূর এগিয়েছে। বিশ্বের কোনো দলই এখন আর ছোট বা দুর্বল দল হিসেবে দেখে না। দেখার সেই সুযোগও নেই। ক্রিকেটের পরাশক্তির প্রতিটি দলই বাংলাদেশের কাছে একাধিকবার হারের তিক্ত স্বাদ পেয়েছে। তাদের হারাতে হারাতে প্রমাণ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন আর হেলাফেলা করার নয়। সে শক্ত প্রতিদ্ব›দ্বী। তাকে সমীহ করতে হবে। এশিয়া কাপ, টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপ সর্বোপরি বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ প্রবল শক্তিমত্তা প্রদর্শন করেছে এবং দুরূহ সব ম্যাচে শক্তিধর দলগুলোকে হারিয়েছে। দেশের মাটিতে বিশ্বের এমন কোনো দল নেই যাকে হারায়নি। নিউজিল্যান্ডকে তো দুই দুইবার হোয়াইট ওয়াশ করে ছেড়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়েও বাদ যায়নি। একটা সময় বাংলাদেশকে বলা হতো ‘জায়ান্ট কিলার’। এর অর্থ, বাংলাদেশ ছোট দল, মাঝে মাঝে বড় দলকে হারিয়ে দেয়। এটা অনেকটা তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলা। তবে বাংলাদেশ যে এ ধরনের দল নয়, তারা যে ধারাবাহিকভাবে ‘জায়ান্ট কিল’ করতে পারে, তার প্রমাণ দেখাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন আর আগের মতো বড় দলগুলোকে ‘হঠাৎ হারিয়ে’ দেয়া দল নয়। এ দল এখন পরিপূর্ণ পেশাদার এবং যে কোনো দলকে নিয়মিত হারানোর মতো একটি শক্তিধর দল। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হয়। এই বোর্ডের দায়িত্বে ধারাবাহিকভাবে যে কজন ব্যক্তিত্ব ছিলেন, তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আজ বিশ্বে অন্যতম শক্তিধর দলে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, ক্রিকেট বোর্ডের বর্তমান প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন এমপি’র দূরদর্শী সিদ্ধান্ত এবং ক্রিকেটের প্রতি তাদের অপরিসীম ভালবাসা ও আন্তরিকতা দেশের ক্রিকেটকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া এবং সাফল্য বয়ে আনার পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ক্রিকেটকে বিশ্বমান সম্পন্ন করার জন্য যা যা দরকার তারা তাই করেছেন এবং করছেন। বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গণে বাংলাদেশ এখন আর উদীয়মাণ দল নয়, এটি একটি পেশাদার এবং প্রবল প্রতাপশালী দল। যে কাউকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে। খেলাধুলায় বাংলাদেশের গর্ব করার মতো এই একটি মাত্রই খেলা ক্রিকেট। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে নিয়মিত প্রতিনিধিত্ব করে চলেছে। ক্রিকেটাররাও তাদের মনপ্রাণ উজাড় করে দিয়ে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনছে। সর্বশেষ বিশ্বকাপের আগে ত্রিদেশীয় ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধ্য দিয়ে গৌরব বয়ে এনেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এবারের বিশ্বকাপে ব্যাটিং উপযোগী পিচ তৈরি করা হবে। ফলে একেক ইনিংসে রানের বন্যা বয়ে যেতে পারে। ম্যাচ জেতার জন্য ৩৫০ রানও যথেষ্ট হবে না। ৩৭০-৮০ রানের প্রয়োজন পড়বে। ইতোমধ্যে এ প্রবণতা লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠেছে। চলতি ইংল্যান্ড পাকিস্তান পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে দেখা যাচ্ছে সাড়ে তিনশ’র কাছাকাছি রান করেও জিততে পারছে না। তার চেয়ে ২০-২৫ রান বেশি করলে জেতার সম্ভাবনা দেখা দেয়। বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আয়ারল্যান্ড সিরিজেও এ প্রবণতা দেখা গেছে। তিনশ’র উপরে রান করে আয়ারল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিততে পারেনি। তার চেয়ে বেশি রানের প্রয়োজন পড়েছে। এ সিরিজের মাধ্যমে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা ভাল একটি অভিজ্ঞতা লাভ করেছে। তারাও বুঝতে পেরেছে, এবারের বিশ্বকাপে ভাল করতে হলে সাড়ে তিনশ’ বা তার বেশি রান করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, এক দিনের ক্রিকেটে কোন দলকেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই বা কাউকেই নিশ্চিত ফেবারিট ধরা যায় না। যে কোনো দিনে যে কেউই জিততে পারে বা হেরে যেতে পারে।
বিশ্বকাপের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে দলের জন্য সঞ্জীবনী শক্তি হিসেবে কাজ করবে। ক্রিকেটাররা উজ্জীবীত ও সাহসী হয়ে উঠবে। এর কারণ হচ্ছে, এবারের বিশ্বকাপ ইংল্যান্ডে ঠান্ডা আবহাওয়ার মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের আবহাওয়া একই প্রকৃতির। ফলে বিশ্বকাপের আগে ভিন্ন পরিবেশ ও আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে এই সিরিজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আশা করা যায়, ক্রিকেটাররা ইংল্যান্ডের সার্বিক ক্রিকেটীয় পরিবেশ সম্পর্কে ইতোমধ্যে অবগত হয়েছে এবং এ অনুযায়ী নিজেদের মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা যদি তার সামর্থ্য ও পেশাদারিত্ব বজায় রেখে খেলে যেতে পারে তবে বিশ্বকাপ জেতা অসম্ভব কিছু নয়। আমরা আশা করি, ক্রিকেটাররা বিশ্বকাপে জয়ের মিশন নিয়েই তাদের যাত্রা শুরু করবে। বিশ্বকাপে তাদের এ জয়ের ধারা অব্যাহত থাকুক এই কামনা করছি। পরিশেষে, আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় আমরা ক্রিকেটার, কোচ, নির্বাচক এবং ক্রিকেট বোর্ডকে অভিনন্দন জানাই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিশ্বকাপ

২৩ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন