পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের সড়ক-মহাসড়কে ইজিবাইক, থ্রি হুইলার, নছিমন, ভটভটিসহ ধীরগতির হাল্কা যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ হলেও এগুলো অবাধে চলছে। নিষিদ্ধ হওয়া সত্তে¡ও এগুলোর চলাচল থেকে বোঝা যায়, সড়কে কোনো শৃঙ্খলা নেই। সড়কগুলোতে নিয়ম-কানুন, আইন প্রয়োগ যথাযথভাবে হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম গত সপ্তাহে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, সড়ক পরিবহন খাতে সমস্যা রয়েছে। এ খাতে উন্নতি করা যায়নি। তাঁর এ কথা থেকেই বোঝা যায়, সড়ক খাত কি অবস্থায় রয়েছে। এর ফলাফল প্রতিদিনই পাওয়া যাচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনায় বেঘোরে মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকে পড়ে মানুষ নাকাল হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, মহাসড়কে ধীরগতির ইজিবাইক, থ্রি হুইলার জাতীয় অবৈধ যানবাহনের অবাধ চলাচল। পুরোপুরি নিষিদ্ধ হওয়া সত্তে¡ও দেশের সড়ক-মহাসড়কে ১২ লাখেরও বেশি ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করছে। মহাসড়কে এ ধরনের যান বিশ্বের আর কোথাও চলে কিনা, আমাদের জানা নেই। বর্তমান সরকার নির্বাচনের আগে ঘোষণা দিয়েছিল, নির্বাচনের পর মহাসড়ক থেকে এসব থ্রি হুইলার জাতীয় যানবাহন তুলে দেয়া হবে। সরকারের কথা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। এসব যানবাহন দিব্যি চলাচল করছে।
আমাদের দেশে মহাসড়কের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কতটা ধারণ রয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করা যেতেই পারে। মহাসড়ক হবে মসৃন, নির্বিঘ্ন ও দ্রুত গতির। মহাসড়ক দিয়ে কেবল দ্রুতগামী যানবাহনই চলাচল করবে। নির্দিষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছাড়া এর সাথে পার্শ্বরাস্তা বা ছোট ছোট সংযোগ সড়ক থাকবে না। আমাদের দেশের মহাসড়কগুলোর দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে, এসব বৈশিষ্ট্য নেই বললেই চলে। মহাসড়কের উপর বাজার বসছে, দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে, পাশের বাড়ি বা এলাকা থেকে এসে সংযোগ সড়ক মিশছে। তার উপর ধীরগতির যানবাহন চলাচল তো আছেই। এসব কারণে দেশের মহাসড়কগুলো কেবল নামেই মহাসড়ক হয়ে আছে। মহাসড়কগুলো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। অথচ সড়ক খাতের উন্নয়নের জন্য সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। চার লেন, আট লেনে উন্নতিকরণ চলছে। দেখা যাচ্ছে, লেন যতই বাড়ানো হচ্ছে, নিষদ্ধ যানবাহন চলাচল এবং অবৈধ দখলও সমানতালে বাড়ছে। তাহলে এই লেন বৃদ্ধি করে কী লাভ হচ্ছে? অর্থনীতির পাইপলাইন হিসেবে পরিচিত এক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটির নানা স্থানে অবৈধ দখল, বাজার বসা থেকে শুরু করে ধীরগতির নিষিদ্ধ থ্রি হুইলার চলছে। দেশের অন্যান্য মহাসড়কের চিত্রও একই। এই মহাসড়কে অবৈধভাবে প্রায় দুইশ’ বাজার বসে। মহাসড়ক দখল করে বাজার বসার এমন নজির বিশ্বের আর কোথাও নেই। এসব অবৈধ দখল ও যানবাহন নিয়ে যখন লেখালেখি হয়, তখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কিছুটা সক্রিয় হয়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। তবে কিছুদিন না যেতেই তা পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। এ যেন উচ্ছেদ-দখল নিয়ে এক ধরনের ইঁদুর-বিড়াল খেলা চলছে। আমরা অর্থনীতির এত উন্নয়নের কথা বলছি, অথচ অর্থনীতির প্রধানতম মাধ্যম মসৃণ যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারছি না। মহাসড়কে মাইলের পর মাইল যানজট লেগে থাকা নিত্যদিনের ঘটনা। আমরা অর্থনীতিতে ইমার্জিং টাইগারে পরিণত হওয়ার দেশের দিকে রয়েছি। যাতায়াত ব্যবস্থাই যদি ধীর ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থেকে যায়, তাহলে এ কথা তো অর্থহীন ছাড়া কিছু নয়। অর্থনীতির গতি যতটুকুই রয়েছে, তা ধীর করে দিচ্ছে সড়ক-মহাসড়কের ধীরগতির যানবাহনের নির্বিঘ্ন চলাফেরা। যেসব ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক চলছে, এগুলোর ব্যাটারি চার্জ দিতে গিয়ে যে বিপুল পরিমান বিদ্যুৎ বেরিয়ে যাচ্ছে তা পর্যন্ত বিবেচনায় আনা হচ্ছে না। অর্থনীতির গতি ধীর করে দিচ্ছে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি, যাদের লোভে কিংবা প্রভাবে মহাসড়কে অবৈধ থ্রি হুইলার, নসিমন, করিমন, ভটভটি চলছে এবং এসব দেখার জন্য যেসব হাইওয়ে পুলিশ রয়েছে, তাদের উদাসীনতা ও গাফিলতি। এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়, একশ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে সরকার জিম্মি হয়ে আছে। তারা উচ্চ আদালতের ও সরকারেরর নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা করছে না। তারা যেন আইনের উর্ধ্বে। তা নাহলে, মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল ও দখলদারিত্ব চলে কীভাবে?
আমরা বহুবার বলেছি, সড়ক-মহাসড়ক থেকে অবৈধ থ্রি হুইলার, ইজিবাইকজাতীয় ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চলাচল পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে। দেশের সচেতন শ্রেণীর প্রত্যেকের দাবীও তাই। সরকার এসব যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধের পক্ষে হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। সরকারের আদেশ-নির্দেশ যদি বাস্তবায়িত না হয় এবং তা বাস্তবায়নে সদিচ্ছা না থাকে, তবে আমরা যতই বলি না কেন, তাতে কোনো কাজ হবে না। সরকার ব্যর্থ হলে অন্য কার কি করার থাকে! তারপরও আমরা আবারও বলতে চাই, সড়ক-মহাসড়ক থেকে থ্রি হুইলার, ইজিবাইক, ভটভটি, রিকশার মতো যানবাহন চলাচল পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে হবে। যাদের মদদে ও প্রশ্রয়ে এসব চলছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বছরের পর বছর ধরে মহাসড়কে অরাজকতা চলবে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। মহাসড়ক থেকে শুধু এসব অবৈধ যানবাহন নিষিদ্ধ করলেই চলবে না, যারা মহাসড়কের উপর অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে দখল করে আছে তাদের চিরতরে উচ্ছেদ করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে অর্থদন্ডসহ আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। উচ্ছেদকৃত জায়গা যাতে পুনরায় দখল না হয়, এমন ব্যবস্থাও করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।