নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবল প্রতিযোগিতার মজাটা ঠিক এইখানে। কখন কোথায় কী ঘটে তা শেষ বাঁশি বাঁজার আগ পর্যন্ত বলা যাবে না। শেষ দুই রাতের কথাই ধরুন। কেউ কি ভেবেছিলো রিয়াল মাদ্রিদের মাঠে এসে টানা তিনবারের চ্যাম্পিয়নদের ৪-১ গোলে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ আটে উঠে যাবে আয়াক্স? কিংবা পরের রাতে পিএসজির মাঠে চোটজর্জর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড প্রত্যবর্তনের ইতিহাস গড়বে?
যদি কেউ ভেবেও থাকে সেই সংখ্যাটা নেহাত হাতেগোনা। ঘরের মাঠে প্রথম লেগে কমপক্ষে দুই গোলে পিছিয়ে থাকার পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ইতিহাসে টিকে থাকার কোন রেকর্ড নেই। নেই বলতে এর আগে ১০৬ ম্যাচে রেকর্ড ছিল না, যেটা পরশু করে দেখালো ওলে গানার সুলশারের ম্যান ইউ।
প্রিমিয়ার লিগের দলটার ভাগ্য ভালোই বলতে হবে। পুরো ম্যাচে আধিপত্য দেখিলো পিএসজি, আর জিতলো ম্যানইউ। আসলে পিএসজি রক্ষণে যে ভুলগুলো করেছে ম্যান ইউ সেগুলো কাজে লাগিয়েছে মাত্র। তাতেই বাজিমাৎ। প্যারিসের পার্ক দে প্রেন্সেসে ৩-১ গোলে জেতে ম্যান ইউ। জোড়া গোল করেন রোমেলু লুকাকু। দুই লেগ মিলে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৩-৩। অ্যাওয়ে গোলের সুবিধা নিয়ে অগ্রযাত্রা অব্যহত রাখে রেড ডেভিলরা।
ম্যাচ শেষে যে ভুলগুলোর কথা স্বীকার করেছেন দলের ব্রাজিল ডিফেন্ডার মার্কিনহোস, ‘যে রকম বাজে খেলেছি, তার কোনো ব্যাখ্যা চলে না। এমন ফলাফল ক্ষমার অযোগ্য। কীভাবে কী হলো, সে সম্পর্কে ভাবতে হবে, বিশ্লেষণ করতে হবে। এটা আমাদের জন্য সংকটময় এক মুহূর্ত।’
সবচেয়ে নাটকীয় মুহূর্তের কথা বলতে গেছে চলে আসবে অন্তিম মুহূর্তে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়া ভিএআর পেনাল্টিতে পাওয়া মার্কাস র্যাশফোর্ডের গোলটি। ৯৪তম মিনিটের সেই গোলে ইতিহাস রচনা করে রেড ডেভিলরা। আর হৃদয় ভাঙে স্বাগতিক সমর্থকদের। টানা তৃতীয়বারের মত শেষ ষোলোয় থমকে যায় ফরাসি চ্যাম্পিয়নদের ইউরোপিয়ান শিরোপার স্বপ্ন।
গোলটি নিয়ে অবশ্য সমালোচনা চলছে বেশ। ক্ষেপেছেন ইনজুরির কারণে গ্যালারিতে বসে খেলা দেখা দলের সবচেয়ে বড় তারকা নেইমার। তার মতে, এটা কোনভাবেই পেনাল্টি ছিল না। ইনস্টাগ্রামে এক পোস্টে উয়েফার এক হাত নিয়ে ব্রাজিল তারকা লেখেন, ‘এটা একটা লজ্জার ব্যাপার, ভিএআরে রিপ্লে দেখার দায়িত্বে তারা এমন চারজন মানুষকে রাখল, যারা ফুটবল সম্পর্কে কিছুই জানে না। এটা পেনাল্টি হয় না। বল তার পেছনের দিকে আঘাত করলে কিভাবে হ্যান্ডবল হয়!’
নেইমারের সঙ্গে একমত নন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ সুলশার। রেফারির সিদ্ধান্তকে সঠিক বলেই মনে করেন নরওয়ের ৪৬ বছর বয়সী এই কোচ, ‘আমি ঘটনাটা বা ভিডিও দেখিনি। আমি আশা করি যে সিদ্ধান্তটা সঠিক ছিল।’ হোসে মরিনহোর চেয়ারে আপৎকালীন দায়ীত্ব পালন করতে বসা সুলশার বলেন, ‘আমি আমার দলের সদস্যদের শান্ত রাখার মাধ্যমে রেফারিকে সাহায্য করার চেষ্টা করছিলাম, কারণ এ বিষয়ে আমরা কোনোভাবেই কিছু করতে পারতাম না। আমি আশা করি, সিদ্ধান্তটা যথার্থ ছিল। আর তারা সেটাই বলেছে, তাই সম্ভবত এটা ঠিকই ছিল।’
ম্যাচের শুরুতেই সুলশারের দলকে অসম্ভবের স্বপ্ন দেখান লুকাকু। অথচ প্রথমার্ধে ভাগ্যের ছোঁয়ায় পেয়ে যাওয়া দুই গোল ছাড়া উল্লেখ করার মত কিছুই করতে পারেনি ম্যান ইউ। এসময় ৮৫ শতাংশ সময়ই বলের দখল ছিল পিএসজির অনুকূলে। পিএসজি রক্সণের ভুলে দ্বিতীয় মিনিটে অরক্ষিত জায়গায় বল পেয়ে যান লুকাকু। গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি বুফনকে কাটিয়ে সহজেই তা জালে পাঠিয়ে দেন বেলজিয়ান স্ট্রাইকার।
নিজেদের ভুলে পিছিয়ে পড়ে গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠা টমাস টুখেলের শিষ্যরা ১২তম মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে এমবাপের ক্রসে প্লেসিং শটে স্কোরবোর্ডে সমতা আনেন হুয়ান বের্নাট। কিন্তু ৩০তম মিনিটে আবারো ভুল করে বসেন প্রতিযোগিতার সবচেয়ে বয়স্ক ও অভিজ্ঞ খেলোয়াড় বুফন। র্যাশফোর্ডের দুরপাল্লার শট তার হাত ফসকে বেরিয়ে যায়, দৌড়ে এসে তার মাথার উপর দিয়ে বল জালে পাঠিয়ে আবারো দলকে এগিয়ে নেন লুকাকু।
এর আগে পরে আক্রমণের বান বইয়ে দিয়েও জাল আবিষ্কার করতে পারেননি এমবাপে-ডি মারিয়ারা। বিরতির পরও শেষ পর্যন্ত আধিপত্য ছিল পিএসজির। কিন্তু ভাগ্য তাদের সঙ্গে শুধু যেন দাঁত খিঁছকে হেসেছে। এমবাপে এদিন নিজের গতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। বেশ ক’বার গতির কারণেই ভয়ঙ্কর সব জায়গায় বলের নিয়ন্ত্রণ হারান ফরাসি তারকা।
স্কোরবোর্ড ২-১ হলেও দুই লেগ মিলে এসময় এগিয়ে ছিল পিএসজিই। কিন্তু নির্ধারিত সময় শেষে যোগ করা সময়ে ডিওগো ডালটের শট প্রেসনেল কিম্পেম্বের হাতে লাগে। ভিএআরের সহায়তা নিয়ে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। স্বাগতিক গ্যালারিতে নেমে আসে একরাশ হতাশা।
একই সময়ে অনুষ্ঠিত অন্য ম্যাচটিও ছিল নাটকীয়তায় ভরা। এবং এখানেও সেই নাটকের পরিসমাপ্তি হয় ভিএআর পেনাল্টি ভাগ্যে।
নির্ধারিত সময়ে ঘরের মাঠে রোমার বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে ছিল পোর্তো। ওদিকে প্রথম লেগেও একই ব্যবধানে এগিয়ে ছিল রোমা। সব দিক দিয়েই ৩-৩ সমতা থাকায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। শেষ বাঁশি বাজার ৫ মিনিট আগে ভিএআরের সহায়তায় পেনাল্টি পায় পোর্তো। তা থেকে গোল করে দলকে শেষ আটে তোলেন অ্যালেক্স তেলেস।
পিএসজি ১ : ৩ ম্যান ইউ
দুই লেগ মিলে ৩ : ৩ সমতা, অ্যাওয়ে গোলের সুবিধা নিয়ে শেষ আটে ম্যান ইউ
পোর্তো ৩ : ১ রোমা
দুই লেগ মিলে ৪-৩ ব্যবধানে এগিয়ে শেষ আটে পোর্তো
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।