পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের মহাসড়কগুলোতে দীর্ঘ যানজট নিত্যদিনের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকে যাত্রীদের অশেষ দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। এই দুর্ভোগের মধ্যেই ডাকাতদের হামলায় মালামাল লুট এমনকি আহত-নিহত হওয়ার বিষয়টি যাত্রীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে। মহাসড়কে এখন নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। যানজটে আটকে থাকা যাত্রীদের মালামাল লুট ও মারধর করে ডাকাতরা নির্বিঘ্নে চলে যাচ্ছে। এর কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। ফলে দিন দিন মহাসড়কে ডাকাতির সংখ্যা বেড়ে চলেছে। গত কয়েক মাসে দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে ৫০টির অধিক ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও ডাকাতদের গ্রেফতারে জোরালো কোনো পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি। মহাসড়কে যে শুধু যাত্রীরাই ডাকাতির শিকার হচ্ছে তা নয়, মালামাল বোঝাই ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরি, প্রাইভেটকারসহ অন্যান্য যানবাহনও ডাকাতির শিকার হচ্ছে। চালকদের হাত-পা বেঁধে এমনকি হত্যা করে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এমনও দেখা যায়, মালামাল বোঝাই পুরো গাড়ি গায়েব হয়ে গেছে। কখনো চলন্ত গাড়ির সামনে গাছ ফেলে ডাকাতি করা হচ্ছে। মহাসড়কের গাড়ি চালকরা বলছেন, যখন যানজট বাড়ে তখনই ডাকাতি, ছিনতাই বেড়ে যায়। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবে এ ঘটনা ঘটছে। এছাড়া মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাফিলতি এবং যাত্রীরা হয়রানি হওয়ার শঙ্কায় পুলিশের দ্বারস্থ হচ্ছে না। ফলে ডাকাত দল ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মহাসড়কের এই মহাবিপদের কথা ভেবে দূরগামী যাত্রীরা রাতে চলাচল কমিয়ে দিয়েছে। বলা যায়, মহাসড়কগুলো এখন চলাচলের ক্ষেত্রে অনেকটাই অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।
মহাসড়কে যাত্রী ও মালামাল বহনকারি যানবাহন ডাকাতের কবলে পড়া নতুন কিছু নয়। এ ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এ হার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মূল কারণ, ডাকাত চক্রকে গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যথেষ্ট তৎপরতা না থাকা। ডাকাত দল এখন এতটাই দুর্ধর্ষ হয়ে উঠেছে যে, তারা র্যাব পরিচয়েও ডাকাতি করতে দ্বিধা করছে না। গত বছরের নভেম্বরে র্যাব অভিযান চালিয়ে ৬ ডাকাতকে আটক করলে জানা যায়, তারা র্যাব পরিচয়ে ডাকাতি করতো। তাদের কাছ থেকে বিদেশি পিস্তল, গুলি, হ্যান্ডকাফ, ওয়াকিটকি সেট, কালো গ্লাসের মাইক্রোবাস, র্যাবের জ্যাকেটসহ সিগনাল লাইট ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়। এ দলটি প্রায় দেশজুড়ে বিভিন্ন মহাসড়কে ডাকাতি করতো। বিভিন্ন মহাসড়কে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ডাকাত ধরা পড়লেও সুদীর্ঘ মহাসড়কের বেশিরভাগ এলাকাই অনিরাপদ রয়ে গেছে। বিশেষ করে যখন মাইলের পর মাইল যানজটের সৃষ্টি হয়, তখন ডাকাতরা সুযোগ নেয় বেশি। বলার অপেক্ষা রাখে না, যারা নিয়মিত মহাসড়কে যাতায়াত করেন, তারা ভাল করেই জানেন, মহাসড়কের কোন কোন এলাকায় ডাকাতদের উপদ্রব বেশি। সেসব এলাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে ডাকাতি কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। মহাসড়কে থানা ও এলাকাভিত্তিক পুলিশ টহল থাকার কথা। দেখা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় রাতে পর্যাপ্ত পুলিশি টহল থাকে না এবং ডাকাতির সময় পুলিশের গাড়ি দূরে অবস্থান করায় ডাকাতি বেশি হচ্ছে। গাড়ি চালকদের অনেকের অভিযোগ, মহাসড়ক পুলিশের একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ সদস্যদের সাথে ডাকাত দলের যোগসাজশ রয়েছে। যদি তাই হয়, তবে তা ভয়াবহ ঘটনা এবং এতে মহাসড়ক কোনোভাবেই নিরাপদ হবে না। এমনিতেই মহাসড়কের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত পুলিশ নেই, তার উপর দায়িত্বপালনকারীদের একটি শ্রেণী যদি দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও ঘাফিলতি করলে ডাকাতদের উৎপাত কখনোই বন্ধ করা যাবে না। এক হিসেবে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অঞ্চলে হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে মাত্র ১১টি। পুলিশের সদস্য সংখ্যাও কম। অথচ দেশের অর্থনৈতিক লাইফ লাইন হিসেবে পরিচিত এ মহাসড়কের নিরাপত্তায় আরও বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকা জরুরি। তা না থাকায়, এ মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে বেশি। কুমিল্লা অঞ্চলের এক পুলিশ কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, যানজটের সময় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। দেশের অন্যান্য মহাসড়কেও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
মহাসড়কের নিরাপত্তা বলতে শুধু দুর্ঘটনা না ঘটাকেই বোঝায় না। মহাসড়কে যানমালের নিরাপত্তার বিষয়টিকেও বোঝায়। প্রতি মুহূর্তে যদি যাত্রী ও যানবাহন চালকদের ডাকাতের ভয়ে শঙ্কিত থাকতে হয়, তবে মানুষ কীভাবে চলাচল করবে? এখন পরিস্থিতি এমন অবস্থায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে দুর্ঘটনায় যেমন মানুষ আহত-নিহত হচ্ছে, তেমনি ডাকাতিরও শিকার হচ্ছে। বলা যায়, একই পথে দুই বিপদের মধ্য দিয়ে মানুষকে যাতায়াত করতে হচ্ছে। আমরা মনে করি, হাইওয়ে পুলিশ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। মহাসড়কের কোন কোন এলাকায় ডাকাতির ঘটনা বেশি ঘটে, সেসব এলাকা চিহ্নিত করে পুলিশের টহল ও তৎপরতা বাড়াতে হবে। থানাভিত্তিক হাইওয়ে পুলিশ সংখ্যা বৃদ্ধি করে সংশ্লিষ্ট এলাকার মহাসড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্তত পাঁচ কিলোমিটার অন্তর পুলিশ ফাঁড়ি থাকা দরকার। যেসব ডাকাত চক্র সক্রিয় তাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে হবে। মহাসড়কের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে হাইওয়ে পুলিশকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।