Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিপিএল টি-২০তে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স চ্যাম্পিয়ন

| প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ভার্সন টি-২০ তে বরাবরই উত্তেজনা থাকে। স্বল্প সময়ে ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে মারকুটে ব্যাটিংয়ে চার-ছক্কা দেখার জন্য দর্শক যেমন উদগ্রীব থাকেন তেমনি উত্তেজনায়ও শিহরিত হন। ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলো টি-২০ নিয়ে প্রতি বছরই ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক টুর্নামেন্টের আয়োজন করে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) নামে ২০১১-১২ মৌসুম দিয়ে এই টুর্নামেন্টের যাত্রা শুরু হয়। বিগত ছয় মৌসুম ধরে এই আয়োজন চলে আসছে। প্রতি বছরই দেশি-বিদেশি বিখ্যাত ক্রিকেটার এবং কোচের আগমনে ক্রিকেটাঙ্গন বর্ণীল হয়ে উঠে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচদের আগমণে আসরটি ঝলমল হয়ে উঠেছিল। দেশের ক্রিকেটের জন্য বিপিএল অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। তরুণ প্রজন্ম এবং সব শ্রেণীর দর্শকের কাছে এ এক কাক্সিক্ষত টুর্নামেন্ট। নিজ নিজ দলের সমর্থনে এবং প্রিয় ক্রিকেটারের খেলা দেখতে তারা গ্যালারি কিংবা টেলিভিশনের সামনে বসেন। টানটান উত্তেজনা এবং নাটককীয়তায় পরিপূর্ণ এ টুর্নামেন্ট প্রাণভরে উপভোগ করেন। এবারের টুর্নামেন্টেও তার সব কিছুই ছিল। গত শুক্রবার শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ও ঢাকা ডাইনামাইটস-এর মধ্যে যে টুর্নামেন্টের যে ফাইনাল খেলাটি হলো তাতে ক্রিকেটের যত ধরনের অভিব্যক্তি এবং নাটকীয়তা থাকে তার সবই ছিল। এমন ফাইনাল দেখে দর্শক তৃপ্ত এবং আনন্দিত। চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের যারা সমর্থক তারা তো বটেই, ঢাকা ডাইনামাইটসের সমর্থকরাও এমন হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখে তৃপ্ত। ফাইনালকে তারা দেশের ক্রিকেটের বিজয় হিসেবেই দেখছেন।
একটি টুর্নামেন্টের ফাইনাল যেমন হওয়া দরকার তার সবকিছুই ছিল এবারের বিপিএলের ফাইনালে। দেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের তামিম ইকবালের অপরাজিত ঝড়ো সেঞ্চুরিতে (১৪১) দলটির সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ১৯৯। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ঢাকা ডাইনামাইটসও কম যায়নি। জয় থেকে মাত্র ১৩ রান দূরে থাকতে তাদের থেমে যেতে হয়। তারা ৯ উইকেটে করে ১৮২ রান। যে কোনো টুর্নামেন্টে এক দল চ্যাম্পিয়ান হলেও সার্বিকভাবে সেই টুর্নামেন্টেরই জয় হয়। আয়োজক, সমর্থক সর্বোপরি খেলোয়াড়দের জয়কেই বড় করে দেখা হয়। ক্রিকেটের মতো অভিজাত খেলা এবং টুর্নামেন্টের আয়োজন করা গর্বের বিষয়। বলা বাহুল্য, দেশে এখন ক্রিকেটই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। এক সময় ফুটবলে উন্মাদনা থাকলেও তাকে ছাপিয়ে ক্রিকেট এখন দেশ ও বিদেশে সবচেয়ে সফল খেলায় পরিণত হয়েছে। এর জন্য মূলত জাতীয় ক্রিকেট বোর্ড এবং এর দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিবর্গদের উদ্যোগ ও আন্তরিকতাই মূখ্য ভূমিকা পালন করেছে এবং করে চলেছে। বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল যখন ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্ব ছিলেন তখন থেকে দেশের ক্রিকেট বিশ্ব দরবারে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে। দেশে-বিদেশে একের পর এক বিভিন্ন টুর্নামেন্টে সাফল্য আসতে থাকে। তিনি ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্ব থেকে চলে গেলেও এ ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। তবে ক্রিকেট বোর্ডে না থাকলেও ক্রিকেট তিনি ছাড়েননি। তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছেন। ক্রিকেটাঙ্গনে তার পরিবার ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে সুপরিচিত। লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, শত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা ফাইনাল খেলা দেখতে মাঠে এসেছিলেন। মাঠে থেকে নিজ দলকে উৎসাহ দিয়েছেন। এবারের রানার আপ ঢাকা ডাইনামাইটসের পৃষ্ঠপোষকতাকারী দেশের প্রখ্যাত শিল্পপতি এবং এমপি সালমান এফ রহমানের পরিবারও ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে পরিচিত। ক্রিকেটের পৃষ্ঠপোষকতায় নিবেদিত। এছাড়া টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী সাতটি ফ্রান্সাইজির মধ্যে অন্যান্য দলকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে দেশের বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। বলার অপেক্ষা রাখে না, ক্রিকেটে কর্পোরেট হাউসগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা এর উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে। আমরা আশা করি, অন্যান্য বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোও ক্রিকেটের উন্নয়নে শামিল হবে। ক্রিকেট এমন এক খেলা যা তরুণ ও যুব সমাজকে এক নির্মল আনন্দে ভাসিয়ে রাখে। গত ৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্ট তাদেরকে উৎসবে মাতিয়ে রেখেছিল। কীভাবে এক মাসের অধিক সময় কেটে গেছে তারা টের পায়নি। খেলাধূলার সুফল এই যে, তা তরুণ ও যুব শ্রেণীকে শুধু বিনোদিতই করে না, বিভিন্ন অপকর্ম ও খারাপ নেশা থেকে দূরে রাখে। তাদের সুস্থ্য ধারায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশে এ ধরনের টুর্নামেন্ট যত বেশি হবে, তরুণ শ্রেণীও সুস্থ্য ধারায় তত ধাবিত হবে। ফলে ক্রিকেটের পাশাপাশি ফুটবলসহ দেশের অন্যান্য খেলাকে জনপ্রিয় করে তোলার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স দ্বিতয়বারের মতো (প্রথমবার ২০১৫-১৬) চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় আমরা দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক অর্থমন্ত্রী ও তার পরিবার, কোচ, খেলোয়াড় ও সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন জানাই। সেঞ্চুরি করার মাধ্যমে চ্যাম্পিয়ন হতে ভূমিকা রাখায় তামিম ইকবালকেও অভিনন্দন জানাই। একই সঙ্গে অভিনন্দন জানাই রানার আপ ঢাকা ডাইনামাইটসের পৃষ্ঠপোষক, কোচ, খেলোয়াড় ও সংশ্লিষ্টদেরও। এবারের টুর্নামেন্টের লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, বিদেশী অনেক নামী-দামী ক্রিকেটার খেললেও ব্যাট, বল ও ফিল্ডিংয়ের পারফরম্যান্সের দিক থেকে দেশী ক্রিকেটাররাই বেশি এগিয়ে। ক্রিকেটারদের এ সাফল্য আমাদের ক্রিকেটের ধারাবাহিক উন্নতিই নির্দেশ করছে। সামনে জাতীয় ক্রিকেট দলের নিউজিল্যান্ড সফর রয়েছে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, সেখানে ক্রিকেটাররা তাদের এ পারফরম্যান্স ধরে রেখে ভাল ফলাফল করতে সমর্থ হবে। আমরা বিপিএল-এর মতো বর্ণীল ও উৎসবমুখর টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য ক্রিকেট বোর্ড, বিভিন্ন ফ্র্যান্সাইজি ও পৃষ্ঠপোকদের অভিনন্দন জানাই এবং এ টুর্নামেন্ট ধারাবাহিকভাবে আয়োজিত হবে, এ প্রত্যাশা করি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিপিএল

২৭ জানুয়ারি, ২০২৩
২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন