পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বৈদেশিক কর্মসংস্থান বা অভিবাসি বাংলাদেশীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাংলাদেশের ফরেক্স রির্জাভের অন্যতম প্রধান খাত। আঞ্চলিক ও আর্ন্তজাতিক মানদন্ডে বর্তমানে এ খাতে বাংলাদেশের আয় ও প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক হলেও নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ ক্রমে সঙ্কুচিত হওয়া এবং ভিসা ও আকামা জটিলতায় মধ্যপ্রাচ্য থেকে ব্যাপক হারে শ্রমিক ফেরত আসায় আগামীতে বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতের রেমিটেন্স আয়ে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গতকাল ছিল আন্তর্জাতিক অভিবাসন দিবস। এ উপলক্ষ্যে অভিবাসি বাংলাদেশিদের নিয়ে যে ভাবনা-চিন্তার বিষয় আলোচিত হয়েছে। এবারের আন্তজার্তিক মাইগ্রেন্ট ডে’র প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল, ‘ডিগনিটি অ্যান্ড জাস্টিস আর মাইগ্রেন্টস রাইটস’। মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের এই প্রেক্ষাপটে বিদেশে বাংলাদেশের নারী-পুরুষ শ্রমিকদের অবস্থা বিশেষভাবে আলোচিত হতে পারে। বিশেষত: সউদি আরব থেকে প্রতিদিন ফেরত আসা অসংখ্য নারী শ্রমিকের অভিজ্ঞতা আমাদের মানবিক মর্যাদা ন্যায়বোধের জন্য খুবই অবমাননাকর। বাংলাদেশ থেকে গৃহশ্রমিক হিসেবে সউদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে চাকুরী যাওয়া নারীদের যে অন্যায় ও অবমাননার শিকার হতে হয় তা’ পুরো জাতিকেই লজ্জিত ও অপমানিত করে। বছরের পর বছর ধরে এই ধারা অব্যাহত থাকলেও বাংলাদেশের নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের যথাযোগ্য মর্যাদা ও ন্যায্য মজুরী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের সরকারের যেন কোন পরিকল্পনা ও তৎপরতা নেই।
দেশে বিনিয়োগ নেই। অতএব কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রও খুব সীমিত হয়ে পড়েছে। এহেন বাস্তবতায় বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং গার্মেন্টস রফতানীর মত খাতের উপর ভিত্তি করেই দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জগুলো দীর্ঘদিন ধরেই অমিমাংসিত রয়ে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে কিছু সুবাতাস বইলেও অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তাও মিলিয়ে যাচ্ছে। মালয়েশিয়ার মত ভ্রাতৃপ্রতিম রাষ্ট্রে দশক ধরে বাংলাদেশি শ্রমিকদের উপর নিষেধাজ্ঞা উচ্চ পর্যায়ে বহু দেনদরবারের পর প্রত্যাহৃত হওয়ার পরও তা তেমন কোন কাজে লাগানো যায়নি। স্বল্প খরচ ও জি টু জি প্লাস পদ্ধতিতে বছরে লাখ লাখ শ্রমিক পাঠানোর চুক্তির পরও সে সুযোগ একাধিক বার ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের বৈদেশিক কর্মসংস্থানে এর বিরূপ প্রভাব ইতিমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে। প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের তথ্য হচ্ছে, গত বছর (২০১৭) যেখানে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০ লাখ শ্রমিক চাকুরী নিয়ে বিদেশে গেছে, সর্বশেষ তথ্য অনুসারে সে সংখ্যা ৭.১২ লাখে এসে দাড়িয়েছে। মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে চলতি বছর ১২ লাখ বৈদেশিক কর্মসংস্থানের লক্ষ্য নির্ধারন করা হলেও হলেও লক্ষ্য পুরণ করার দুরের কথা, গত বছরের সংখ্যা অতিক্রম করা অসম্ভব হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসি কল্যান বিষয়ক আলোচনা ¯্রফে একটি আন্তর্জাতিক দিবস কেন্দ্রিক বিষয় নয়।এটি এদেশের জাতীয় অর্থনীতি এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার প্রশ্নে একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মন্ত্রণালয় আছে, মন্ত্রী আছেন এবং বিদেশে দূতাবাস ও মিশন থাকলেও দেশের বৈদেশিক মূদ্রা আয় ও জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা প্রবাসি শ্রমিকদের সমস্যাগুলো নিরসনের যেন কেউ নেই। একজন শ্রমিকের পাসপোর্ট পাওয়া, ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট থেকে শুরু করে এয়াপোর্ট পার হওয়া পর্যন্ত স্বদেশে ও বিদেশে শ্রমিকদের যে সব হয়রানি, মজুরী বঞ্চনা ও অন্যায্য আচরণের সম্মুখীন হতে হয় তা’ দূর করা সম্ভব হলে বিদ্যমান বৈদেশিক কর্মসংস্থান থেকে আরো অন্তত ২০ ভাগ আয় বৃদ্ধি করা সম্ভব ছিল। এ ক্ষেত্রে বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয় এবং বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশন অফিসগুলোতে আরো দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের দায়িত্ব দিতে হবে। বিদেশে শ্রমিকদের সমস্যা ও আইনগত সহায়তার প্রশ্নে সংশ্লিষ্ট মিশনগুলোকে তাদের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। জিসিএম বা ‘গ্লোবাল কমপ্যাক্ট ফর মাইগ্রেশন’ সম্পর্কিত আইন ও নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে এ সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শ্রমিকরা আরো নিরাপদ কর্মপরিবেশ পাবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদ ব্যক্ত করছেন। আজ ১৯ ডিসেম্বর মারাকেশে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জিসিএম নীতিমালা অনুমোদিত হতে যাচ্ছে বলে জানা যায়। এ ক্ষেত্রে অন্যতম অংশী ও ভুক্তভোগী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে সমন্বিত ভ‚মিকা রাখতে হবে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানে চলমান সমস্যা ও সঙ্কট দ্রুত দূর করতে না পারলে আগামীতে দেশে সামাজিক-অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।