Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

নেপথ্যে ডাকাতির টাকা ভাগাভাগি

উত্তরায় জোড়া খুন

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

গত অক্টোবরে রাজধানীর উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টরে কাশবনের মধ্যে ডাকাতির টাকা ভাগাভাগি ও নিজেদের কোন্দলে খুন হয় কামাল ও ইমন। অজ্ঞাত পরিচয় দুই লাশ উদ্ধারের রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। শুক্রবার রাতে রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে ওই ঘটনায় জড়িত দুই আসামি মনির হোসেন ও মো. ফরিদকে গ্রেফতার এবং উদ্ধার করা হয় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র-ধারালো বটি ও রড। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
ডিবি উত্তরের ডিসি মশিউর রহমান জানান, এক মাসেরও বেশি সময় তদন্তের পর বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্র ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে রাজধানীর আদাবরের ঢাকা উদ্যান এলাকা থেকে গত ৩০ নভেম্বর বিকেলে মনিরকে গ্রেফতার করা হয়। একই দিন রাত সাড়ে ১১টায় শনির আখড়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় ফরিদকে। মামলার তদন্ত এবং দুই আসামির স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে আসে এ নির্মম হত্যাকান্ডের মূল বিষয়। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত ও ডিবির কাছে আসামিদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, কামাল  হোসেন, ইমন শেখ, মনির হোসেন ও ফরিদ একটি ডাকাত দল গঠন করে। তাদের সঙ্গে রেজাউল ও আল-আমিন নামের আরও কয়েকজন ছিলেন। এই যুবকরা রাজধানীর তুরাগ এলাকার বেড়িবাঁধ ও উত্তরা এলাকায় ডাকাতির করত। কখনো কখনো ফরিদপুরসহ আশপাশের জেলাগুলোয় সড়কে চলাচলকারী যানবাহন থামিয়ে ডাকাতি করত।
ডিবি উত্তরের ডিসি মশিউর রহমান বলেন, দিনের বেলা তারা পেশা বদল করত। কিন্তু গভীর রাতে প্রথমে সড়কে কাঠের গুঁড়ি ও বড় পাথর ফেলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে প্রাইভেটকার, সিএনজিচালিত অটোরিকশার পথরোধ করত এই ডাকাত দল। তারপর ধারালো দা, বঁটি, লোহার রড ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা, মোবাইল সেট ও স্বর্ণালংকার লুট করত। ডাকাতির মালামাল ভাগাভাগি করত তারা। কামাল ও ইমন ডাকাতির বেশির ভাগ মালামাল নিজেদের কাছে রেখে দিত। এ নিয়ে অন্যদের মধ্যে কোন্দল শুরু হয়। সর্বশেষ ফরিদপুরে একটি ডাকাতির মালামাল ভাগাভাগি কেন্দ্র করে কামাল ও ইমনের সঙ্গে ফরিদ ও মনিরের দ্বন্ধ আরও বেড়ে যায়। এরই প্রতিশোধ নিতে তারা কামাল ও ইমনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ফরিদ ও মনির এই হত্যার কথা স্বীকার করেছে।
ডিবি সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় কামাল হোসেন ও ইমন  শেখকে নিয়ে মনির, ফরিদ ও রেজাউল ডাকাতি করতে উত্তরার ১৬ নম্বর  সেক্টরে জড়ো হয়। রাত ন’টার দিকে ১৬ নম্বর সেক্টরের ২ নম্বর প্লটে কাশবনের ভেতর দিয়ে যেতে থাকে। একপর্যায়ে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, বঁটি ও রড দিয়ে কামাল ও ইমনকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে মনির ও ফরিদ। এই ভয়াবহ দৃশ্য দেখে দৌড়ে পালিয়ে যায় রেজাউল। প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট কোপানোর পর মৃত্যু নিশ্চিত করে কামাল ও ইমনের লাশ ফেলে পালিয়ে যায় মনির ও ফরিদ। পালানোর সময় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত বঁটি ও রড পাশের ঝোঁপে ফেলে দেয় তাঁরা। ডিবির তথ্য মতে, ফরিদ ও মনিরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, হত্যাকান্ডের পরপরই গা ঢাক দেয় তারা। মনির গাবতলী এলাকায় নিজের বাসা ছেড়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকে। ফরিদ রাজধানী ছেড়ে প্রথমে কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা এবং পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় চলে যায়। সেখানে গিয়েও আবারও ডাকাতির পরিকল্পনা করতে থাকে। ফরিদের বিরুদ্ধে ফরিদপুরের বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে।
উল্লেখ্য গত ২০ অক্টোবর রাতে উত্তরার ১৬ নং সেক্টরের ২ নং প্লটে কাশবনঘেরা স্থানে ২টি অজ্ঞাতনামা অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে তুরাগ থানা পুলিশ। দুটি লাশেরই চেহারা বিকৃত হয়ে যাওয়ায় তাদের সনাক্তকরণে পুলিশ জটিলতার মধ্যে পড়ে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে লাশ উদ্ধারের খবর প্রকাশিত হবার পরদিন ২১ অক্টোবর লাশ দুটি সনাক্ত করে তাদের স্বজনরা। এ ঘটনায় ভিকটিম কামাল হোসেনের পিতা শেখ জলিল বাদী হয়ে তুরাগ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। তুরাগ থানা পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্তে নামে মহানগর  গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুন

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ