শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
প্রিয় হুমায়ূন এমন চিঠিতে কেমন আছো জিজ্ঞেস করতে হয়না, জানি তুমি ওই আকাশেই আছো, ভালো আছো। আজ অন্যভাবেই শুরু করি, দেশে ও দেশের বাইরের পেক্ষাগৃহে চলছে তোমার ‘দেবী’। দেখার খুব ইচ্ছে, কিন্তু‘ মেয়েটার পরীক্ষা বলে এতদিন দেখা হয়নি, আজ বিকেলেই যাচ্ছি ‘দেবী’ দেখতে। তোমার মিসির আলী সমগ্র আমার ঘরে, বড় মেয়েটা টেস্ট পরীক্ষার পর আবদার করেছে বইটির জন্যে। নিমিষেই ওর পড়া শেষ। ছোট মেয়ে খেতে বসে তোমার মিসির আলী সামনে করে। দুটোই আমার বই পোকা। ‘দেবী’ দেখবো বলছি বলে বড় মেয়েটা বলে--
আগে ‘দেবী’ পড়ে নেও।
ছোট মেয়ে বলে-
না পড়েই ‘দেবী’ দেখো।
আমি অল্পটুকু পড়েছি অনেক আগে, এখন সে সব একটুও মনে নেই। তাই না পড়েই যাবো। এরপর হয়তো অন্য চিঠিতে লিখবো তোমার ‘দেবী’ আর এই ‘দেবী’র মিল অমিলের কথা।
প্রিয় হুমায়ূন, অমর একুশে বই মেলা শুরু হলে অনেককে বলতে শুনি-
‘হুমায়ূন নেই তবুও তাঁর বইয়ের স্টলে পাঠকের ভিড়’।
আমি বলি- কে বলে তুমি নেই? তুমি আছো, তুমি থাকবে যতদিন বাংলা সাহিত্য থাকবে। যতদিন বাংলা ভাষা থাকবে, বইমেলা যতদিন থাকবে তুমিও ততদিন থাকবে। সেদিন সবুজ নামের আমার এক বন্ধু বলে, সে তোমাকে হিংসা করে। জিজ্ঞেস করলাম, কেনো?
জবাবে বলল-
‘হুমায়ূন যা ধরে তাই সোনা হয়ে যায়, তামাকেও সে সোনা বানিয়ে ফেলে, তাই হিংসা হয়।’
ভেবে দেখলাম সে ভুল বলেনি। যখন থেকে টিভি দেখছি প্রতিদিন, তখন থেকেই তোমায় দেখছি, তোমার নাটক দেখছি। কোনটা ছেড়ে কোনটার কথা বলি, এইতো সেদিন আমাদের বর্তমান সংস্কৃত মন্ত্রী মাননীয় ও সম্মানিত ব্যক্তি আসাদুজ্জামান নূর এর সাথে দেখা বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ হলরুমে। উনি তো চলেই যাচ্ছেন, কিš‘ কি করে উনাকে থামাই। একটু কথা তো বলতেই হবে। পেছন থেকে বাকের ভাই বলে ডাকতেই তিনি দাঁড়িয়ে পড়েন। সবাইতো আমার দিকে তাকিয়ে হা করে আছে। কথা হলো, হলো ভালো-মন্দ জানাশোনা। মেয়েরা বলে-
এটা কি করলে? কেনো বললে? উনার নাম কি এটা?
তখন তোমার ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের গল্প শুনাই, সেই নাটকের কুত্তাওয়ালির কথা বডি টারমানিক মানে গায়ে হলুদ, সে গল্প ওদের বলি। ওরা তোমার সাহিত্য পড়ে, কিš‘ তোমার নাটক খুব একটা দেখেনি। আর নতুন নাটকের ভিড়ে সেসব নাটক কে দেখাবে বলো। আমার বিশ্বাস এখনো যদি আবার সে নাটক গুলো দেখায়, দর্শক টিভির পর্দায় হুমড়ি খেয়ে পড়বে।
হুমায়ূন, টিভিতে তোমার কোন সিনেমা, নাটক বা গানের অংশ দেখালেই আমি বলি-
এটা হুমায়ূনের। মেয়েরা বলে-
বুঝলে কি করে?
একটাই কথা, এমন করে কি আর সবুজ বলেছে তুমি সোনা ফলাও। প্রতিটা দৃশ্যই বলে দেয় এটা তোমার কাজ, তোমার হাতের ছোঁয়া। তোমার করা শঙ্খনীল কারাগার, আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের দিন, চন্দ্রকথা, শ্যামল ছায়া, নন্দিত নরকে, নিরন্তর, সাজঘর, আমার আছে জল, নয় নম্বর বিপদ সংকেত, দারুচিনি দ্বীপ, ঘেটু পুত্র কমলা এক একটি সিনেমা নয়, যেনো জীবন্ত গল্প। সবই দেখা, তুমিই বলো, এগুলো কি কখনো পুরনো হবে তুমিই বলো? তাহলে তুমি নেই এটা ওরা বলে কি করে। আচ্ছা তোমার মাথায় এমন এমন ভাবনা কি করে আসতো বলতো। এক একটা নাটকে কি কিরে তুমি পাঠককে এতটা ধরে রাখতে শেষ না হওয়া পর্যন্ত। টেলিভিশনের ধারাবাহিক গুলোর মাঝে- এইসব দিনরাত্রি, বহুব্রীহি, কোথাও কেউ নেই, নক্ষত্রের রাত, অয়োময়, আজ রবিবার কখনোই ভুলে যাবার নয়। সেই তোমার লবঙ্গলতা, দারুচিনি বেগম আরো কত কি। আজ রোববার নাটকে আলি জাকেরের কফিনের ভেতর ঢুকে থাকা। উহ! মনে করলে ভয় ও লাগে।
হুমায়ূন তোমায় লিখছি, সামনে টিভি চলছে। তোমার জন্মদিনে আমাদের গনমাধ্যম গুলো তোমাকে নিয়ে অনেক নিউজ করেছে। অনেকে তোমার কথা বলছে। গল্পকার সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন - ্রহুমায়ূন আহম্মদ নতুন প্রজন্মকে বই পড়তে শিখিয়েছে।গ্ধ
সত্যিই তুমিই তো আমাকে আমার পরের প্রজন্মকে বই পড়তে শিখিয়েছ। তোমার সাহিত্যের অনেক জায়গায় তুমি নুহাশের মা গুলতেকিনকে সাহিত্য রাণী উপাধি দিয়েছিলে। এই তো কবে বই মেলায় দূর থেকে তাকে দেখেছি, মন ভরে দেখেছি। কাছে যাইনি যদি যেতে যেতে দূরে সরে যায়, তাহলে তো দেখাও হবে না। আমি মনে করি আমাদের প্রতিটি মানুষের জীবনে কয়েকটি সাদা পেইজ থাকে, তোমার ও কি তাই ছিলো। নাকী সব কানায় কানায় ভরিয়ে দিয়েছো। আর কত লিখবো, সীমাবদ্ধতা বলতে তো কিছু আছে। আজ এখানেই রাখি, আবার লিখবো কুয়াশা ভেজা শিশির কণা না হয় বরিষায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।