Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

চট্টগ্রামে স্ত্রী শাশুড়ি খুন, স্বামী উধাও

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৩১ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

নগরীর পাঠানটুলিতে খুন হয়েছেন মা-মেয়ে। তাদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুরে লাশ দু’টি উদ্ধার করে পুলিশ। মা হোসনে আরার (৫০) লাশ পড়েছিল শয়নকক্ষে। পাশের একটি তালাবদ্ধ কক্ষে পাওয়া যায় মেয়ে পারভীনের (১৮) লাশ।
এ জোড়া খুনের জন্য স্বজনরা পারভীনের স্বামী আবদুল মতিনকে (৩৫) সন্দেহ করছেন। ঘটনার পর থেকে হাওয়া হয়ে গেছেন রিক্সা চালক মতিন। সরেজমিন ঘুরে নিহতের স্বজন, প্রতিবেশী ও পুলিশের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পারিবারিক কলহের জেরে এ খুনের ঘটনা ঘটতে পারে। পাঠানটুলি চট্টেশ্বরাই গায়েবি মসজিদের উল্টোদিকে কাপুরিয়া পাড়ায় মা-মেয়ে খুনের ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠে।
খুনের শিকার মা-মেয়ের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর থানার ধনবতি গ্রামে। পারভীন নগরীর একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। দেড় বছর আগে আবদুল মতিনের সাথে তার বিয়ে হয়। তখন মতিন সিলেটে ভাঙ্গারির দোকান চালাতেন। বিয়ের পর পারভীনকে নিয়ে যান সিলেটে। সেখানে তাকে প্রায় মারধর করতেন মতিন। কয়েক মাস আগে পারভীনের স্বজনরা তাকে সিলেটের স্বামীর বাসা থেকে মুরাদনগরের গ্রামের বাড়ি নিয়ে যায়। পারভীনের ছোট ভাই সোহেল নগরীর একটি বেকারিতে কাজ করে। নয় মাস আগে মা হোসনে আরাকে গ্রাম থেকে নিয়ে আসে সে।
কাপুরিয়া পাড়ার আবদুল আলিমের ভাড়া ঘরে দুই কক্ষের একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতো মা-ছেলে। কয়েক মাস আগে আবদুল মতিনও তার স্ত্রীকে নিয়ে চট্টগ্রাম চলে আসে। পারভীনের চাকরি হয় একটি গার্মেন্টসে। মতিন রিক্সা চালাতে শুরু করেন। মা হোসনে আরার বাসার সামনে এক রুমের একটি বাসা ভাড়া নেন পারভীন। প্রতিবেশীরা জানায়, এ বাসায় উঠার পরও মতিন প্রায় পারভীনকে মারধর করতো। সোমবার রাত ১০টায় প্রতিবেশীরা মতিন ও পারভীনকে তাদের বাসায় খাওয়া-দাওয়া করতে দেখে। পরে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয় বলেও জানান তারা।
বেলা ১১টায় হোসনে আরার পুত্র সোহেল বেকারি থেকে এসে দরজা খোলা দেখতে পায়। ঘরে ঢুকে দেখে শয়নকক্ষে পড়ে আছে মায়ের লাশ। এ দৃশ্য দেখে চিৎকার করে ঘর থেকে বের হয়ে যায় সোহেল। বোন পারভীনকে মায়ের মৃত্যুর খবর দিতে গিয়ে দেখে তার বাসায় তালা। এরপর তার কারখানায় খবর দেয়া হলে বলা হয়, পারভীন কারখানায় যাননি। ইতোমধ্যে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। পুলিশ এসে তালা ভেঙ্গে দেখতে পায় পারভীনের লাশ পড়ে আছে মেঝেতে। দু’জনকেই শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে সুরতহাল রিপোর্টে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ভোররাতের কোনো এক সময়ে হত্যার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ।
সোহেল দাবি করেন, ভগ্নিপতি মতিন তার মা ও বোনকে হত্যা করে পালিয়েছেন। তার ভাষ্য, স্থানীয় এক বেকারিতে তিনি কাজ করেন। স্ত্রী ও মাকে নিয়ে তিনি এক কক্ষে ভাড়া থাকতেন। স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় মাস দুয়েক আগে বাবার বাড়ি গেছেন। মা একাই ছিলেন কক্ষে। পাশের কক্ষে ভাড়া থাকছিলেন বোন পারভীন ও তার স্বামী মতিন। মতিন নির্যাতন করার কারণে তার বোন এখানে চলে আসেন। দেড় মাস আগে মতিন এসে আর মারধর করবেন না জানিয়ে এখানে বসবাস শুরু করেন।
ডবলমুরিং থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জহির হোসেন বলেন, মা-মেয়ের গলায় দাগ দেখা গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে, ঘুমের মধ্যে শ্বাসরোধে তাদের হত্যা করা হয়েছে। সন্দেহভাজন হিসেবে মতিনকে খুঁজে বের করা হবে বলে তিনি জানান। মা-মেয়ের লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের পাশাপাশি সিআইডি ও পিবিআই বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুন

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ