Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

কৃষিঋণ নীতিমালা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে

অলিউর রহমান ফিরোজ | প্রকাশের সময় : ৩ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

দেশের সরকার কৃষি খাতে বড় ধরনের ঋণদান কার্যক্রম হাতে নেয় প্রতিবছরই। কিন্তু তাতে কৃষকদের কোন ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না। তার কারণ, দেশে কৃষকের কোন সঠিক তালিকা নেই। কৃষককে, কৃষি ঋণ দেয়ার আগে তাদের তালিকা তৈরি করে কার্ডের আওতায় নিতে হবে। এটা না থাকায় এবং ঋণদান পদ্ধতিতে বড় ধরনের গলদ থাকায় ব্যাংক এবং কৃষক উভয়ই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। সরকার প্রতি বছর বিভিন্ন ফসলের ওপর ঋণদান কার্যক্রম হাতে নেয়। কিছু ঋণ আছে ভর্তুকি পর্যায়ের। কিছু ঋণ আছে বাণিজ্যিক। ফসলের ঋণ কৃষক ফসল ঘরে তুললেই পরিশোধ করতে হয়। আর বাণিজ্যিক ঋণ প্রথাগত নিয়মেই বিতরণ করে থাকে ব্যাংকগুলো। ভর্তুকি ঋণের হিসাবটা অবশ্য আলাদা। দেশের স্বার্থে সরকার প্রতি বছর বিশেষ কিছু ফসলের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণ করে থাকে। মসলা, ডাল এবং দুগ্ধজাত গাভীর জন্য এ ঋণের পদক্ষেপ নেয়া হয়। এবার আসা যাক, কৃষক কি সরাসরি তার ঋণটি পেয়ে থাকে? একজন কৃষককে ঋণ পেতে হলে অনেকগুলো মাধ্যম ঘুরে আসতে হয়। গ্রামের নেতা গোছের কিছু লোক তখন দালালের ভূমিকায় অবর্তীণ হয়। ফলে কৃষক যে ঋণ পেয়ে থাকে তার সিংহভাগই তাদের পেটে ঢুকে যায়। আবার অনেক সময় কৃষক সরল মনে, ছবি এবং তার জমির দলিল-পর্চা দালালের হাতে তুলে দেয়। তখন কৃষকের অগোচরেই দালালরা কাঙ্খিত ঋণ তুলে নেন। এ ক্ষেত্রে কৃষক কিছুই জানতে পারে না। শুধু জানতে পারে যখন তার নামে ব্যাংক থেকে নোটিশ যায়। এ সময়ও থাকে দালালের কারসাজি। যে ঋণ তার অগোচরে নেয়া হয়েছিল, দালালরা তাদের নিজস্ব টাকা দিয়ে সে ঋণ পরিশোধ দেখিয়ে হাতিয়ে নেয় আরো বেশি ঋণের টাকা। এ ক্ষেত্রে কৃষক নামমাত্র পাচ্ছে। দালালরা টাকা নিয়ে ব্যাংকে বসে থাকে কোন কোন কৃষক টাকার অভাবে আগের ঋণ শোধ করে আর বেশি ঋণ নিতে পারে না। তখন তাদের ঋণ পরিশোধ করে বেশি টাকা হাতিয়ে নেয় এ দালালরা। আর যারা সব বাধা অতিক্রম করে কিছু ঋণ পায়, তারাও হয়ে পড়ে ঋণ খেলাপী। কৃষিঋণের একটা বড় ধরনের গলদ হলো তামাদি ঋণ। একজন কৃষক যদি ফসলের ওপর নেয়া কৃষিঋণ ৩ বছরের মধ্যে পরিশোধ না করে তবে তা তামাদিতে পরিণত হয়। একজন নিয়মিত ঋণ পরিশোধকারী কৃষক এবং তামাদি কৃষকের মধ্যে পার্থক্য অনেক। ফসলের ওপর ঋণ নেয়া কৃষকের ঋণ তিন বছর অতিক্রম করে গেলে তার জন্য ব্যাংক কোন ধরনের সুদ আরোপ করতে পারে না। আর যে নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেছে এ ক্ষেত্রে তার জন্য আছে আইনের যতো প্রয়োগ। কী আশ্চর্যজনক ঋণদান পদ্ধতি এবং নিয়মকানুন। অপরদিকে যেখানে ছোট ছোট মৎস্য চাষ, হাঁস মুরগী পালন কিছু বন্ধকী ঋণ রয়েছে তা যদি পঞ্চাশ হাজার বা এক লাখ হয় সে ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো সম্পত্তি নিলাম করতে পারে না। দীর্ঘদিনে নানা কারণে ঋণ সুদে সুদে পাহাড় হয়ে ওঠে। যা পরে একজন মৎস্য খামারী বা মুরগী পালনকারীর পক্ষে পরিশোধ করাটা অসম্ভব হয়ে পড়ে। ব্যবসায়ীদরে জন্য রয়েছে সিসি ঋণ। এ ঋণের বড় ধরনের জটিলতা হলো, অনেক ব্যবসায়ী এ ঋণের সুবিধাগুলো জানে না বা অনুধাবন করতে পারে না। এমনকি ব্যাংক থেকেও বিশেষভাবে জানানো হয় না। একবার ঋণ নিয়ে আর ব্যাংকের ধারে কাছে তারা যায় না। তার জন্য যদি ৬ লাখ টাকার ঋণ মঞ্জুর হয় তখন সে টাকা উত্তোলন করে যতোদিন ইচ্ছা ব্যবসায় খাটিয়ে হাতে নগদ টাকা এলে সেটা যদি ব্যাংকে রাখা হয় তাহলে সে টাকার আর সুদ দিতে হয় না। কিন্তু অনেক ব্যবসায়ীকে কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আর ধারে কাছে আসতে দেখা যায়নি। এভাবেই বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের টাকা সরকার যে কারণে ঋণ হিসেবে বিতরণ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরছে তার প্রতিফলন ঘটে না। সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৃষি ঋণ হলো ভর্তুকিকৃত ঋণ। এ ঋণে ব্যাপক অনিয়ম ঘটায় সরকার তার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সাধিত করতে পারছে না। বিশেষ করে যারা দেশে মরিচ, আদা, রসুন, পেঁয়াজ, হলুদ, সরিষার আবাদ করে তাদের জন্য মাত্র ৪ শতাংশ সুদে দেয়া হয় ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত। কিন্তু কোন ব্যাংকই প্রকৃত কোন কৃষককে উপরোক্ত ফসলের চাষের আওতায় আনতে পারেনি। এ ঋণ ব্যাংকের দালাল ও গ্রামের নেতা গোছের কিছু লোক বড় ধরনের অনিয়মের মাধ্যমে কৃষকদের দিয়ে থাকে। বিশেষ করে কৃষি ব্যাংকে এ ঋণের লক্ষ্যমাত্রা সব সময়ই বেশি থাকে। সেখানে এ ঋণ নিয়ে কৃষক ঘর তোলে, মেয়ে বিয়ে দেয় বা অন্য কোন কাজে ব্যয় করে থাকে। এভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঠিক তদারকির অভাবে সরকারের বড় ধরনের প্রচেষ্টা ও উদ্দেশ্য নস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া একটি বাড়ি একটি খামার গড়ার উদ্দেশ্যে বকনা গরু লালনপালনে নেয়া হয়েছে বিশেষ পদক্ষেপ। কৃষককে বকনা গরু লালন-পালনে মাত্র ৫ শতাংশ হারে ঋণ দেয়া হয়। কিন্তু গ্রামেও এখন দুধের কেজি ৬০ টাকা। তাহলে কি কৃষি ঋণ বন্ধ থাকবে? না। এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে করতে হবে দেশের কৃষকদের কৃষি কার্ড। তাদের কৃষি উপকরণ বিতরণে নিতে হবে ভর্তুকির ব্যবস্থা। সার-বীজ ও বিদ্যুতে নিতে বস্তবমুখী পদক্ষেপ। নগদ টাকা বিতরণে থাকে বড় ধরনের অনিয়ম এবং জালিয়াতি। অনেক ব্যাংক ম্যানেজারই নামে-বেনামে ভর্তুকিকৃত টাকা তুলে অন্য ব্যাংকে রাখছেন। তাতে করে অনিয়মের জালে বিরাট একটা জনগোষ্ঠি জড়িয়ে পড়ছে। সরকার প্রতিবছর যে টাকা দিয়ে বেশি মূল্যে খাদ্যশস্য আমদানি করে সে টাকা যদি কৃষিকার্ড করে কৃষকদের অনুদান হিসেবে প্রদান করে তাহলে দেশে মূল্যেস্ফীতি আর থাকবে না। লেখক: সাংবাদিক



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কৃষিঋণ


আরও
আরও পড়ুন