Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

জীবনের একটি মুহূর্তও দায়িত্বহীনভাবে কাটানো যাবে না

মোহাম্মদ আবদুল গফুর | প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

দেশে এখন ক্রান্তিকাল চলছে। বর্তমান সরকারের প্রতি দেশের মানুষের যে আর আস্থা নেই তা বিএনপির গত শনি বারের বিশাল সমাবেশে তা প্রমাণিত হয়েছে। দৈনিক ইনকিলাবে গত রবিবার প্রথম পৃষ্ঠায় প্রধান প্রতিবেদন হিসাবে যে সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে তার শিরোনাম ছিল: ‘তারকাবিহীন সমাবেশে লাখো লোক’। উপ-শিরোনাম ছিল : ‘কাকরাইল,আরামবাগ লোকে লোকারণ্য’। ‘গোটা দেশ ঢাকায়’। এসব শিরোনাম কোন অর্থেই অতিরেক ছিল না।
দেশের বৃহত্তম বিরোধী দল বিএনপির ৪০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশ প্রমাণ করেছে দেশের মানুষ এখন রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পরিবর্তনের জন্য এক পায়ে খাড়া। প্রধান বিরোধী দল যাতে কোন আন্দোলন করতে না পারে, সে লক্ষ্যে সরকার কি না করেছে! হাজার হাজার বিএনপি নেতা কর্মীকে বন্দী তো করেছেই, তাতেও কাজ হচ্ছে না দেখে শেষ পর্যন্ত অবাধ নিরপেক্ষ ভোটে তিন তিনবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী করেও আওয়ামী লীগ তার মন থেকে গণতন্ত্র-ভীতি দূর করতে পারেনি।
দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল হিসাবে পরিচিত আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের আস্থা কত ব্যাপকভাবে হারিয়েছে, তার প্রমাণ দলটি রাখছে তার বিএনপির বিরোধী এসব কর্মকান্ড থেকে। কিন্তু এসব করেও আওয়ামী লীগ শেষ পার পাবে কিনা সে ব্যাপারে ভরসা পাচ্ছে না।
ইতোমধ্যে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন দুই-একটি কথা বিচ্ছিন্নভাবে বলেছেন যাতে মনে হয় তিনি বোধ হয় এখনও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন। যেমন তিনি বলেছেন মানুষে ভোট দিয়েছিল, তাই ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলাম। যদি না দেয়, ক্ষমতায় যাব না, এতে আমার কোন দু:খ থাকবে না। এসব কথা থেকে মনে হয় তিনি এখনও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন। কিন্তু এর পর পরই তাঁর নেতৃত্বাধীন দল বা সরকার এমন কিছু কাজ করে বসে, যাতে মনে হবে, তিনি আদৌ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না।
শুধু তাই নয়, দেশে একাদশ সংসদ নির্বাচন কিভাবে অনুষ্ঠিত হবে, সে ব্যাপারে দেশের মানুষ তার সরকারের উপর আস্থা রাখতে পারছে না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এ ব্যাপারে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ইলেকশন কমিশন নিজেই তার নিজের প্রতি অনাস্থা সৃষ্টি করে চলেছে।
কীভাবে, এবার সে কথায় আসছি। ভোটকে নিরপেক্ষ ও বির্তকমুক্ত করতে ভোটে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহারের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। অর্থাৎ স্বয়ং ইসি উদ্যোগী হয়ে ইভিএম ব্যবহার এর চিন্তা ভাবনা করছে তার ফলে ইতোমধ্যেই ইসি বির্তকিত হয়ে পড়েছে। এটা ইসির পক্ষে অত্যন্ত অনুচিৎ হয়েছে।
ঘটনার এখানেই শেষ নয়। সরকারের শীরকদের অধিকাংশ ইভিএম এর বিপক্ষে। ইসি ইভিএম-এর পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করায় সরকারের অধিকাংশ শরীক দলের সঙ্গে প্রধান সরকারী দল অর্থাৎ আওয়ামী লীগের ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টির আশংকা দেখা দিয়েছে। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে ইভিএম-এর পক্ষে হওয়া সত্ত্বেও ইভিএম চাপিয়ে দেয়া হবে না বলে সকলের প্রতি আশ্বাস দান করেছেন। তবে এতেও বাস্তবে কতটা কাজ হবে তা বলা কষ্টকর।
বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত জনসভায় নেতৃবৃন্দ যে বলেছেন, খালেদা জিয়া ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবেন না, এটাতে সরকারী দলের নেতারা সম্ভবত ভেতরে ভেতরে খুশীই হয়েছেন। তারা তো আসলেই চান এমন এক নির্বাচন যেখানে শুধু আওয়ামী লীগ ও তার ঘোষিত ও অঘোষিত মিত্ররাই অংশ নেবে। আওয়ামী লীগের এই অবস্থানের কাছে প্রধান বিরোধী দল তথা বিএনপির নির্বাচন সংক্রান্ত অবস্থানের যে কোনোই সাদৃশ্য দেখা যাচ্ছে না তা সুস্পষ্ট।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠানে গত শনিবার ইতোমধ্যেই দাবী জানানো হয়েছে যে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে, নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে, নির্বাচন কমিশন পুর্নগঠন করতে হবে, এবং নির্বাচন তদারকির কাজে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। নির্বাচন নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে এসব দাবী খুবই যথাযথ, তবে আওয়ামী লীগের অতীতের ইতিহাস বিচার করলে এসব দাবী তারা কতটা মেনে নিতে রাজি হবে সে বিষয়ে গুরুতর সন্দেহ রয়েছে।
তবে দেশের বাস্তব পরিস্থিতি যে আওয়ামী লীগের অনুকূলে নেই অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে যে বিএনপির কাছে তাদের পরাজিত হবার আশংকা রয়েছে এ বাস্তবটাও আওয়ামী লীগের অনেক নেতার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলেই মনে হয়েছে। আওয়ামী লীগের দুই নম্বর নেতা সেক্রেটারী জেনারেল জনাব ওবায়দুল কাদের তাই বিএনপির বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চালানোর লক্ষ্যে সংখ্যালঘুদের প্রতি সাবধানবাণী উচ্চারণ করে বলেছেন : আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির জয় হলে তা সংখ্যালঘুদের জন্য বিপদের হতে পারে।
আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী জেনারেলের এ মন্তব্যে শুনে সুদূর অতীতের কিছু কথা মনে এলো যা প্রকাশের লোভ কিছুতেই এড়াতে পারছিনা। বৃটিশ শাসনামলের শেষ দিকের কথা। তখন কলকাতা ছিল অবিভক্ত বাংলার প্রাদেশিক রাজধানী। শেখ মুজিব তখন কলকাতা থাকতেন। মুসলিম লীগের অন্যতম ছাত্র নেতা হিসাবে। কলকাতায় মোহামেডান স্পোর্টং ক্লাব ও মোহনবাগানের মধ্যে খেলা হলে খেলার মাঠে হিন্দু-মুসলমানের গন্ডগোলের আশংকা দেখা দিত। তখন হিন্দু দর্শকরা অনেকে জানতে চেষ্টা করত শেখ মুজিব মাঠে এসেছে কিনা। তারা (হিন্দু দর্শকরা) বলতো, সোহরাওয়াদীর গুন্ডাটা মাঠে এসেছে কিনা। এসে থাকলে, সেটা তাদের জন্য ভয়ের কথা। একথা শুনেছি সিএসপি এ এফ এম ইয়াহিয়া যখন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি ছিলেন এবং আমি ছিলাম প্রকাশনা পরিচালক। সুতরাং কাকে যে কি কারণে কে সাম্প্রদায়িক মনে করে তা জোর করে বলা যায় না।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগ নেতাদের কারো কারো মুখে ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডে জিয়ার জড়িত থাকার কথা প্রচারিত হচ্ছে। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্যে এই অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। যাকে দেখতে পারিনা, তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ তোলা এদেশে নতুন কিছু নয়। যাকে দেখতে পারিনা, কোন অভিযোগ তুলে মামলা দিয়ে যদি কিছুদিন তাকে হয়রান করা যায়, মন্দকি। বিশেষ করে জিয়ার উদ্যোগে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল হিসাবে বিএনপির প্রতিষ্ঠা লাভের পর এভাবে দেশের অধিকাংশ নেতা কর্মীই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এই দুই দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। অথচ বিশ্বস্ত সূত্রে শুনেছি, শেখ মুজিব ও জিয়া পরস্পর পরস্পরকে যথেষ্ট ভাল জানতেন। শেখ মুজিবের প্রতি পাকিস্তানী বাহিনীর সকল বাঙালী সৈনিকের, বিশেষ করে জিয়ার যথেষ্ট শ্রদ্ধা ছিল। অপর পক্ষে জিয়ার প্রতিও শেখ মুজিবের যথেষ্ট স্নেহ ছিল। জিয়ার সৈনিক জীবনের অধিকাংশ প্রমোশন মুজিব আমলেই হয়েছিল।
মোট কথা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও শহীদ জিয়া উভয়ই বাংলাদেশের দুই দেশপ্রেমিক নেতা ছিলেন। বাংলাদেশের উন্নতি ও অগ্রগতিতে উভয়েরই প্রচুর অবদান ছিল এবং উভয়ের শাহাদত বরণে বাংলাদেশ যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আজ দু’জনের কেউই আমাদের মধ্যে বেঁচে নেই। তাই আমাদের উচিৎ উভয়ের ভাল দিকগুলো স্মরণ করে তাদের আত্মার কল্যাণের জন্য আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্য প্রার্থনা করা এবং উভয়ের জীবন থেকে তাদের ভাল ভালো দিকগুলো বেছেবেছে অনুসরণ করতে চেষ্টা করা।
মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের এই দুই নেতার কেউ আজ বেঁচে নেই। কিন্তু দেশকে স্বাধীন দেশ হিসাবে গড়ে তোলার জন্য উভয়ই তারা অনেক ত্যাগ, সাধনা ও সংগ্রাম করে গেছেন। সে দেশ (বাংলাদেশ) আজ এখনো টিকে আছে এবং সেই দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধির সঙ্গে আমাদের উন্নতিও জড়িত হয়ে আছে। তাই আমাদের নিজেদের স্বার্থেই এই উভয় নেতার অনুসারীদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি গড়ে তুলতে চেষ্টা করা আমাদের পরম পবিত্র কর্তব্য।
শুধু তাই নয়। আমাদের যেমন একটা পরিচয় আমরা বাংলাদেশী নাগরিক। সেই হিসাবে আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ও শহীদ জিয়ার স্বদেশবাসী, অন্য হিসাবে আমরা সকলেই মানুষ এবং এক আল্লাহর সৃষ্টি মানুষ হিসাবে, সমগ্র বিশ্বাবাসীর ভ্রাতৃস্থানীয়। বাংলাদেশী ছাড়াও আমরা যে বিশ্ব স্রষ্টার সৃষ্টি মানুষ হিসাবে আমরা পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং মানুষ হিসাবে সারা বিশ্বে সকল মানুষের সঙ্গে আমাদের ভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং সেই হিসাবে সমগ্র বিশ্ববাসীর উন্নতিতে আমরা যেন আনন্দিত হতে পারি, সেই মানসিকতা গড়ে তোলা আমাদের পবিত্র কর্তব্য এটা যেন আমরা কখনো না ভুলি।
এখানেই শেষ নয়। আমরা আজ বিশ্বে বেঁচে আছি। কিন্তু ভবিষ্যতে আমরা কেহই বেঁচে থাকবো না। এ জীবনের ইতি হবে আমাদের। স্রষ্টার বিধান অনুসারে আমরা একদিন মৃত্যু বরণ করবো। চলে যাব এমন দেশে যে দেশ থেকে কেউ ফিরে আসেনা। কিন্তু আমাদের এ জীবনের ভাল মন্দ সকল কাজের জবাবদিহিতা করতে বাধ্য থাকবো। কার কাছে? যাঁর কাছ থেকে আমরা এ জীবনে এসেছি তাঁর কাছে আমাদের এই জীবনের সকল কাজের জন্য জবাবদিহিতা করতে বাধ্য থাকবো।
সুতরাং আমরা যতদিন এ জীবনে বেঁচে আছি আমাদের দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। জীবন কখনও দায়িত্ববিহীন নয়। আমাদের প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে যথাসাধ্য দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে আপনজনদের প্রতি, দেশবাসীর প্রতি, বিশ্ববাসীর প্রতি, সর্বোপরি বিশ্ব স্রষ্টার প্রতি যাঁর কাছে থেকে আমরা এ জীবন পেয়েছি জীবন শেষে মৃত্যুর পর এ জীবনের সকল দায়িত্বের হিসাব যেন আমরা তাঁর কাছে আমরা সঠিকভাবে সন্তোষজনকভাবে দিতে পারি সেজন্য যেন নিজেকে তৈরি করে নিতে পারি সেই তৌফিকই প্রার্থনা করি মহা স্রষ্টার কাছে। আল্লাহুম্মা আমিন!



 

Show all comments
  • Nannu chowhan ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৩:১৬ পিএম says : 0
    Shonmanio lekhok Abdul gofur shaheb ja likhesenta shotti prano bonto shothik eaijonno apnake janai antorik mobarokbad,shathe aro jog korte chai je amader bortoman rajnoitiq netara je hare ekkjon arek jonke shomolochonar ourdhe othe je shomosto vasha bebhar kore tate mone hoy jeno amader eaishob netara kokhono shkkha protishtane shottikar shikkha nei nai shathe aro ekta bepar kivabe onara proyato netader nia ja ichsa tai montobbo kore onek shomoy borborotar chorom porjjaie chole jai eai karone onoshari jobukra aro chorom hana hani aro chorom jongli borbor jooger shim longghon kore fele ,kintu eaishob tader shekhanor bodle tader bahaba dia thaken,ete shara desher shanti prio jongon desher vobishot shommonde hotash..
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি


আরও
আরও পড়ুন