পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ভারত আমাদের নিকটতম বৃহৎ প্রতিবেশী। সুখে-দুঃখে প্রতিবেশীর ওপর নির্ভর করতে হয়। কথায় বলে, অনেক কিছু পরিবর্তন করা গেলেও প্রতিবেশী বদল করা যায় না। আমরা অবশ্য প্রতিবেশী বদল করতে চাই না। ভারত বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্র। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অসামান্য অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। প্রায় এক কোটি মানুষকে ভারত নয় মাস ধরে খাবার যোগান দিয়েছে। অস্ত্র ও রসদ যোগান দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করেছে। ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ মাবোনদের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা। ভারতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছাড়া স্বাধীনতা এত অল্প সময়ে লাভ সম্ভব ছিল না। আমাদের দামাল ছেলেদের সাথে ভারতীয় জনগণ ও সেনাদের সহযোগিতা, সমর্থন ও কার্যকর অংশগ্রহণ বিশে^র মানচিত্রে অতি অল্প সময়ে বাংলাদেশ স্থান পেয়েছে স্বাধীন দেশ হিসেবে। আমাদের প্রত্যাশা ছিল এ নবীন রাষ্ট্রকে সার্বিকভাবে সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে ভারত আমাদের বন্ধুত্বের বন্ধনকে শক্তিশালী করবে। কিন্তু অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করা গেল, স্বাধীনতার পর ভারত কাংখিত ও বাঞ্চিত সাহায্য সহযোগিতার হাত অনেকটাই গুটিয়ে ফেলেছে। নিকটপ্রতিবেশী হিসাবে অনেকগুলো অমীমাংসিত সমস্যা ভারত সমাধান না করে জিইয়ে রাখতে আগ্রহী। আমরা উদারহস্তে সবকিছু দিয়ে দিলেও ভারত তার হাত গুটিয়ে রাখছে। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী ভারত থেকে ফিরে বলেন, ‘তাদের আমি সবকিছু দিয়েছি। এত দিয়েছি যে, তারা সারাজীবন মনে রাখবে।’
বাংলাদেশ ভারতকে না চাইতেই অনেকিছু দিয়েছে। তাদের চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত পাওয়ায় তারা আমাদের চাহিদার প্রতি উদাসীন বলা যায়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পানি সমস্যা। পানি চুক্তি না করেই ৫৪টি নদীতে বাঁধ দিয়ে ভারত বাংলাদেশকে পানি থেকে বঞ্চিত করছে। আন্তর্জাতিক আইনকে অবজ্ঞা করে আমাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে একের পর এক নদীতে বাঁধ দিচ্ছে। সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে দেশের মানুষ পানি বঞ্চিত হচ্ছে। জয়েন্ট নদী কমিশনের বৈঠক নিয়মিত হচ্ছে না। কালেভদ্রে হলেও কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভা সমাপ্ত হচ্ছে। ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি থাকলেও ছিটমহল সমস্যা দীর্ঘদিন ঝুলে ছিল। সমস্যা জিইয়ে রাখতেই যেন ভারত অধিক আগ্রহী। তিস্তা চুক্তি হবে হবে বলে আজতক হয়নি। নানা অজুহাতে তিস্তা চুক্তি বিলম্বিত করে আমাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। পানির অভাবে উত্তরবঙ্গ মরুভূমি হতে চললেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার তিস্তার প্রবাহ থেকে পানি অন্যদিকে সরে নিচ্ছে। টিপাই মুখ বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশকে শুকিয়ে মারার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার নানা অজুহাতে চুক্তি তো করছেই না, উল্টো দম্ভভরে ঘোষণা করছে, টিপাই মুখ বাঁধ হবেই। অবশ্য ভারত সরকার বাংলাদেশ সরকারের জোরালো ভূমিকার অভাব ও উদাসীনতার সুযোগকে ষোল আনাই কাজে লাগাচ্ছে। না চাইতেই বাংলাদেশ সরকার সবকিছু উজাড় করে দিয়েছে। দরকষাকষির সকল রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে সরকার ভারত সরকারের করুণার ওপর নির্ভর করে আছে। কিছুদিন আগে এইচ.টি. ইমামের নেতৃত্বে একটি দল ভারত সফর করে। তারা নির্বাচনের আগে তিস্তা চুক্তি থেকে অনেকটা সরে এসেছেন বলে মিডিয়ায় খবর বেরিয়েছিল। ভাটির দেশ হিসাবে তিস্তা চুক্তি জরুরি নয়। বিনাভোটে নির্বাচিত সরকারকে সমর্থন ও সহযোগিতা দানের বিষয়ে ভারত সরকারকে রাজী করাই ছিল প্রতিনিধি দলের মূল উদ্দেশ্য। সেখানে বলা হয়, বিএনপি, জামায়াত ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ পাকিস্তান হবে, জঙ্গীতে দেশ ভরে যাবে। বাংলাদেশ অশান্তি বিশৃংখলার স্বর্গরাজ্যে পরিণত হবে- ইত্যাদি। সরকার ছলে বলে কৌশলে তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসতে বদ্ধ পরিকর। দেশ রসাতলে যাক- আমার ক্ষমতা থাকা চাই, এরকম মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিত্যাজ্য। মুখে বন্ধুত্বের রসালো কথা শোনা গেলেও কার্যক্রম বাংলাদেশের অনুকূলে নয়। সীমান্তে ফেলানীরা গুলি খেয়ে মরলেও প্রতিবাদ করতে পারে না সরকার। এক রহস্যময় কারণে ভারতের বিমাতাসুলভ ও বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী কর্মকান্ডে সরকার প্রতিবাদের ভাষা যেন হারিয়ে ফেলেছে।
বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী ও বন্ধু হিসাবে ভারতের সাথে বাংলাদেশের লেনদেন বেশি। বর্তমান সরকারের আমলে বন্ধুত্ব সবচেয়ে গাঢ় ও মধুর হয়েছে বলে দাবি করা হয়। বৃহৎ প্রতিবেশী ও বন্ধু হিসাবে আমরা তার কাছে প্রত্যাশিত আচরণ পাচ্ছি না, বরং অবন্ধুসূলভ ও সংকীর্ণ আচরণ লক্ষ করা যাচ্ছে। ২০১৬ সালে ভারত ১০০ টাকা ও ৫০০ টাকার রুপির নোট বাতিল করে। এসময় আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে ৫০ কোটি রুপি জমা ছিল। বাংলাদেশ এ রুপি বদলিয়ে নিতে গেলে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সে সুযোগ দেয়নি। বন্ধুত্বের সূত্র ধরে নানারকম দেন দরবার অব্যাহত রাখলেও কেন্দ্রীয় সরকার এখনও সে সুযোগ দেয়নি। ইতেমাধ্যে দেড় বছর পার হলেও এই ৫০ কোটি রুপি ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বদলানোর সুযোগ দেয়নি। ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ভারতীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সাথে যোগাযোগ ও চিঠি চালাচালি করেও কিছু হয়নি।
বাংলাদেশের স্বার্থ বিষয়ে ভারত এতটা অনুদার হবে, সেটা প্রত্যাশিত নয়। বরং নিকটতম প্রতিবেশী হিসাবে বাংলাদেশের মানুষ ভারতের নিকট থেকে সব পর্যায়ে সমমর্যাদা ভিত্তিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করে। অথচ, বাংলাদেশের মানুষ লক্ষ করেছে ভারত বিপদে সহযোগিতার হাত প্রসারিত না করে সংকুচিত করেছে। মায়ানমারের ১০/১২ লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ফলে আমাদের অর্থনীতি বিশাল চাপে পড়েছে। সামাজিক সমস্যা ও সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে, রাজনৈতিক অঙ্গনে সমস্যা ছড়াতে পারে। এতবড় মানবিক বিপর্যয়ে আমরা ভারতের আশানুরূপ সাহায্য ও সহযোগিতা পাইনি। বৃহত্তম দেশটি আামাদের এত বড় সংকটে দৃশ্যমান সহযোগিতা না দিয়ে যেন ধরি মাছ না ছুঁই পানির অবস্থায় চলছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তার যে আগ্রহ ও আন্তরিকতা দেখেছি, রোহিঙ্গা সংকটে সে রকম দেখা যাচ্ছে না। এর ওপর আসামে নাগরিকত্ব ছাঁটাইয়ে আর এক নতুন সমস্যা সৃষ্টির আশংকা দেখা দিয়েছে। ৩০ জুলাই আসামের ন্যাশনাল রেজিষ্ট্রার অব সিটিজেন (এনআরসি) কর্তৃপক্ষ নাগরিকত্বের হালনাগাদ খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে ৪০ লাখ ৭ হাজার জনের নাম নগরিকত্বের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এরা বাংলা ভাষাভাষী এবং ধর্মীয় পরিচয়ে অধিকাংশই মুসলিম। এদের আসাম থেকে বিতাড়ণই নাগরিক তালিকা করার প্রধান লক্ষ্য। বলা হচ্ছে, এরা বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী। যা আদৌ সত্য ও সঠিক নয়। বাংলাদেশ এ ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সরব হয়েছেন, তিনি বলেছেন, ‘এটি ডিভাইড এন্ড রুল নীতিমালা, মানুষকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে ... এটি মানবতা ধ্বংস করবে।’
ভারতে ‘ইল্লিগ্যাল মাইগ্রেন্টস ডিটারমিনেশন বাই ল বা আইএম ডিটি নামের আইন হয়েছিল। এতে বলা হয়েছিল, অবৈধ হিসাবে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত নাগরিকত্ব বহাল থাকবে। ২০১৫ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ঐ ধারাটি উল্টে দিয়েছে। নাগরিকত্ব প্রমাণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে অধিবাসীদের ওপর। মমতা অভিযোগ করেছেন, সর্বোচ্চ আদালতে এনিয়ে শুনানীর সময় কেন্দ্র যাবতীয় তথ্য সরবরাহ করেনি। নাগরিকত্ব তালিকায় হিন্দু-মুসিলম উভয় সম্প্রদায়ের নাম নেই বলে মমতা দাবি করে বলেন, কেন্দ্র বিভাজন সৃষ্টি চেষ্টা করছে। ভোট ব্যাংক চিনে নিয়ে বিরোধীদের বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। বংশানুক্রমে বসবাস করলেও এ তালিকা প্রকাশের পর নাগরিকত্ব লিস্টে যাদের নাম নেই তারা চরম অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। এ নিয়ে শুধু আসামে নয়, গোটা ভারতে ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। সর্বত্র একটা প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, বাংলাদেশ এমনিতেই ১০-১২ লক্ষ রোহিঙ্গা নিয়ে সমস্যা-সংকটের আবর্তে হাবুডুবু খাচ্ছে। আসাম থেকে এই বিপুল সংখ্যক মুসলিম তাড়ালে বাংলাদেশের মতো ছোট একটি দেশে স্থান সংকুলান অসম্ভভব হয়ে পড়বে। রোহিঙ্গারা আসায় ইতোমধ্যে সামাজিক সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিরাট বনভ‚মি ধ্বংস হতে চলেছে। সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধির সাথে রাজনৈতিক সমস্যাও শুরু হতে চলেছে। তাদের ওপর যখন অত্যাচারের স্টিম রোলার চালানো হবে, সেক্ষেত্রে তারা বাধ্য হয়ে বাংলাদেশে চলে আসতে পারে। বাংলাদেশ ছোট অর্থনীতির দেশ হিসাবে ৩০-৪০ লাখ আসামীদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হিমশিম খাবে। তাদেরকে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে আসামে আশ্রয় নেয়া স্মরণার্থী। আসাম অবশ্য অনেকদিন ধরে এসব বাঙ্গালী তাড়াতে তৎপর ছিল। আই এস ডিটি আইন এতদিন বাধা ছিল। ২০০৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের নাগরিকত্ব প্রমাণের ভার অধিবাসীদের ওপর দেওয়ায় বাঙ্গালী মুসলমানরা বিপদে পড়েছে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে নাগরিকত্বের প্রমাণ দেখাতে যারা ব্যর্থ হয়েছে তাদেরকে আসামের নাগরিক লিস্ট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তারা ৩-৪ পুরুষ ধরে আসামে বসবাস করলেও আসাম সরকার নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে না। আসামের জনসংখ্যা তিনকোটি ২০ লাখ। বাঙ্গালী অসমীয়া-ভাষী হিন্দু ও অনেক নৃতাত্বিক গোষ্ঠী আসামে বসবাস করে। কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার নির্বাচনের পূর্বেই ঘোষণা দিয়েছিল আসাম থেকে তাড়ানো হবে বাঙ্গালী মুসলমানদের। বাঙ্গালীরা অনেক দিন ধরেই অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগের মধ্যে ছিল। সে উদ্বেগ-শঙ্কা বাস্তব রূপ নিতে যাচ্ছে।
বিশ্বায়নের এ যুগে এরকম সমস্যা আমাদের ভাবিত করে। এ সমস্যা মানবিক যার সমাধান ভারত সরকারের হাতে। আসামে বাঙ্গালী জনসংখ্যা এক তৃতীয়াংশ। অসমী-বাঙ্গালীদের মধ্যে বহুবার সংঘর্ষ হয়েছে। বাঙ্গালী তাড়ানোর চেষ্টা বার বার ব্যর্থ হলেও অনেক প্রাণহানি ঘটেছে। বাঙ্গালীরা পূর্ব পুরুষদের সূত্র ধরে ব্রিটিশ শাসনের সময় থেকে এ রাজ্যে বসবাস করছে। শুধু জাতি ধর্মের দোহাই দিয়ে নাগরিকদের তাড়ানো বর্তমান বিশ^বিবেক অনুমোদন করে না। তাছাড়া ৪০ লাখ অধিবাসীদের মধ্যে এমনও দেখা গেছে, একই পরিবারের কিছু লোক নাগরিকত্ব পেয়েছে আর কিছু লোক নাগরিকত্ব হারিয়েছে। এমতাবস্থায় ঐ সকল পরিবারের রাষ্ট্রহীন অধিবাসীরা কী করবে? অবশ্য তৃণমূল কংগ্রেস নেতা নেত্রীরা এসব অধিবাসীদের পক্ষাবলম্বন করে লড়াই করছেন। ভারতের অনেক নেতা নেত্রী ও মানবাধিকার কর্মী আসাম সরকারের লিস্ট প্রণয়নকে ভালো চোখে দেখছেন না। তারা রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার উভয়ের সমালোচনা অব্যাহত রেখেছেন। বিরোধীদলীয় নেতা ও কংগ্রেসের এমপি গুলাম নবী আজাদ বলেছেন, ‘আমাদের কোন নাগরিককে জাতি ও ধর্মের ভিত্তিতে বের করে দেওয়া উচিত নয়। এটা মানবাধিকার লংঘন। এন আরসিকে রাজনরীতিকরণ ও ভোট ব্যাংক হিসাবে ব্যবহার করা উচিত নয়। এটা হিন্দু-মুসলিমের বিষয় নয়।’ যুক্তরাষ্ট্রে যেভাবে ট্রাম্প প্রশাসন অবৈধ অধিবাসী পিতামাতার কাছ থেকে তাদের সন্তানদের আলাদা করে রেখেছিল তেমনি ঘটনা আসামে ঘটেছে।
দুঃখজনক ব্যাপার হলো, আসাম সমস্যা নিয়ে খোদ ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হলেও বাংলাদেশ সরকার চুপচাপ থাকায় বিষয়টি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিষয়টি কেবল ভারতের অত্যন্তরীন বিষয় বলে উড়িয়ে দেবার সুযোগ নাই। এতগুলো লোককে বাংলাদেশে তাড়িয়ে দিলে এটি হবে বাংলাদেশের মহাসংকট। এনিয়ে এখনই ভারত সরকারের সাথে দেনদরবার শুরু করা দরকার। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আসামে বাঙালী খেদাও চলছে। ওরা রোহিঙ্গা নয়। দেশের মধ্যেই ওরা উদ্বাস্তু হয়ে পড়বে। যদি পুশব্যাক হয় অর্থাৎ বাংলাদেশ যদি না নেয়, সেক্ষেত্রে তারা যাবে কোথায়? বিজেপি রাজনৈতিক খেলা খেলছে। বাঙালী খেদাও, বিহারি খেদাও শুরু করেছে। বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্তে¡ও রাতারাতি বলে দেয়া হচ্ছে তুমি বিদেশি। এটা ভয়াবহ। মমতা আরও বলেছেন, আসামের এই উচ্ছেদের প্রভাব পশ্চিমবঙ্গেও পড়বে’। মমতা বন্দোপাধ্যায় অতীব সত্য কথা বলেছেন। এ বাঙ্গালীরা রোহিঙ্গা নয় তারা যুগ যুগ ধরে লড়াই করে সেখানে টিকে আছে। শত অত্যাচারে তারা আসাম ছাড়বে বলে মনে হয় না। এতে আসামে আর একটি রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হবে। ভারত সরকারকে বিষয়টি নিয়ে আর একবার চিন্তা ও বিবেচনা করার আহ্বান জানাচ্ছি। বাংলাদেশ সরকারের আশু কর্তব্য হলো, বিষটিতে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেয়া এত বিপুল সংখ্যক মানুষ যদি বাংলাদেশে প্রবশে করে সেক্ষেত্রে সামাল দেওয়া আমাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়বে। এক্ষেত্রে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করা আবশ্যক। ভারত এ সরকারের সুহৃদ। ভারতের সাথে এ সরকারের উষ্ণতম সম্পর্ক রয়েছে। এ সম্পর্কের সূত্র কাজে লাগিয়ে আসাম সংকট সমাধানে সরকার কার্যকর উদ্যোগ নেবে বলে প্রত্যাশা করছি।
লেখক: প্রফেসর (অব.), দর্শন বিভাগ ও সাবেক ডিন, কলা অনুষদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।