Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নাটক ও চলচ্চিত্রে হুমায়ূন আহমেদ

শা হ রি য়া র সো হে ল | প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

হুমায়ূন আহমেদ (১৩ নভেম্বর, ১৯৪৮-১৯ জুলাই, ২০১২) বাংলা ভাষার কিংবদন্তি ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার, গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি সমাদৃত। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তিন শতাধিক। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক।
হুমায়ূন আহমেদ রচিত প্রথম উপন্যাস নন্দিত নরকে, এটি ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয়। তাঁর সৃষ্ট হিমু এবং মিসির আলি ও শুভ্র চরিত্রগুলো বাংলাদেশের যুবকশ্রেণিকে গভীরভাবে উদ্বেলিত করেছে। বাংলাদেশের প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী তিনিই লিখেছেন এবং এর জনপ্রিয়তাও তার হাত দিয়ে শুরু হয়। তাঁর রচিত প্রথম সায়েন্স ফিকশন তোমাদের জন্য ভালোবাসা। তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রসমূহ পেয়েছে অসামান্য দর্শকপ্রিয়তা। তাঁর টেলিভিশন নাটকগুলো ছিল সর্বাধিক জনপ্রিয়। সংখ্যায় বেশি না হলেও তাঁর রচিত গানগুলোও জনপ্রিয়তা লাভ করে। তাঁর অন্যতম উপন্যাস হলো মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, মাতাল হাওয়া, লীলাবতী, কবি, বাদশাহ নামদার ইত্যাদি। বাংলা সাহিত্যের উপন্যাস শাখায় অবদানের জন্য তিনি ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তাঁর অবদানের জন্য ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে একুশে পদকে ভ‚ষিত করে।
হুমায়ূন আহমেদ নির্মিত বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র সমাদৃত হয়। তাঁর নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র হল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক আগুনের পরশমণি (১৯৯৪)। ছবিটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ আটটি পুরস্কার লাভ করে। তাঁর নির্মিত অন্যান্য সমাদৃত চলচ্চিত্রগুলো হলো শ্রাবণ মেঘের দিন (১৯৯৯), দুই দুয়ারী (২০০০), শ্যামল ছায়া (২০০৪) ও ঘেটু পুত্র কমলা (২০১২)। শ্যামল ছায়া ও ঘেটু পুত্র কমলা চলচ্চিত্র দুটি বাংলাদেশ থেকে বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে অস্কারের জন্য নিবেদন করা হয়েছিল। এছাড়া ঘেটু পুত্র কমলা চলচ্চিত্র পরিচালনার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালনা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
তিনি ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ এর দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্য টেলিভিশন ধারাবাহিক এবং টেলিফিল্ম রচনা শুরু করেন। ১৯৮৩ সালে তার প্রথম টিভি কাহিনীচিত্র প্রথম প্রহর বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। এটি তাঁকে রাতারাতি জনপ্রিয় করে তোলে। তাঁর অন্যতম টেলিভিশন ধারাবাহিকÑ এইসব দিনরাত্রি, বহুব্রীহি, কোথাও কেউ নেই, নক্ষত্রের রাত, অয়োময়, আজ রবিবার, নিমফুল, তারা তিনজন, আমরা তিনজন, মন্ত্রী মহোদয়ের আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম, সবুজ সাথী, উড়ে যায় বকপঙ্খী, এই মেঘ এই রৌদ্র। পরবর্তী সময়ে তিনি বহু এক পর্বের নাটক নির্মাণ করেছেন। যাদের মধ্যে খেলা, অচিন বৃক্ষ, খাদক, একি কাÐ, একদিন হঠাৎ, অন্যভুবন উল্লেখযোগ্য।
হুমায়ূন আহমেদ ১৯৮৭ সালে ঢাকার অদ‚রে গাজীপুর জেলার সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের পিজুলিয়া গ্রামে ২২ বিঘা জমির ওপর স্থাপিত বাগান বাড়ি নুহাশ পল্লী গড়ে তোলেন। বর্তমানে এর আয়তন আরও বৃদ্ধি করে ৪০ বিঘা করা হয়েছে। জীবনের শেষ সময়ে তিনি এই বাড়িতে থাকতে ভালোবাসতেন। তিনি বিবরবাসী মানুষ; তবে মজলিশী ছিলেন। গল্প বলতে আর রসিকতা করতে খুব পছন্দ করতেন। তিনি ভণিতাবিহীন ছিলেন। নীরবে মানুষের স্বভাব-প্রকৃতি ও আচার-আচরণ পর্যবেক্ষণ করা তার শখ। তবে সাহিত্য পরিমÐলের সঙ্কীর্ণ রাজনীতি বা দলাদলিতে তিনি কখনো নিজেকে জড়িয়ে ফেলেননি। তিনি স্বল্পবাক, কিছুটা লাজুক প্রকৃতির মানুষ এবং বিপুল জনপ্রিয়তা সত্তে¡ও অন্তরাল জীবন-যাপনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। নিঃসঙ্গতা খুব একটা পছন্দ করতেন না। কোথাও গেলে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে যেতে পছন্দ করতেন। বাংলাদেশে তাঁর প্রভাব তীব্র ও গভীর; এজন্য জাতীয় বিষয় ও সঙ্কটে প্রায়ই তাঁর বক্তব্য সংবাদ মাধ্যমসম‚হ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করে থাকতো। মৃত্যুর পর তাকে নুহাশ পল্লীতে দাফন করা হয়। তাঁর মৃত্যুতে সারা বাংলাদেশে সকল শ্রেণির মানুষের মধ্যে অভ‚তপ‚র্ব আহাজারির সৃষ্টি হয়। তাঁর মৃত্যুর ফলে বাংলা সাহিত্য ও চলচ্চিত্র অঙ্গনে এক শ‚ন্যতার সৃষ্টি হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হুমায়ূন আহমেদ
আরও পড়ুন