পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাতের আঁধারে বাসায় হানা দিয়ে মা-মেয়েকে খুন, লাশ পানির ট্যাঙ্কে। দিনের আলোয় বাসায় ঢুকে কিশোরীকে গলা কেটে, দুগ্ধপোষ্য শিশুকে পানিতে চুবিয়ে হত্যা। পিতার সামনেই পুত্রকে কুপিয়ে খুন। অসংখ্য মানুষের জটলায় গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন। সভায় অতর্কিত হামলা চালিয়ে সিনেমা স্টাইলে কুপিয়ে হত্যা। প্রাতঃভ্রমনে বের হওয়া বৃদ্ধাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ গুম। একের পর এক এমন নৃশংস খুনের ঘটনায় চট্টগ্রামে আতঙ্ক বিরাজ করছে, বাড়ছে নিরাপত্তাহীনতা। কেন এমন ভয়ানক নৃশংসতা- অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক অস্থিরতা, নৈতিক অবক্ষয় সেই সাথে লোভ লালসার কারণে অপরাধ বাড়ছে, বাড়ছে নিষ্ঠুরতাও। খুনের সঠিক তদন্ত ও দ্রুতসময়ে বিচার নিষ্পত্তি না হওয়াও খুনের ঘটনা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে মনে করেন ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞরা।
চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলায় একের পর এক নৃশংস খুনের ঘটনা ঘটছে। কয়েকটি ঘটনায় দ্রুতসময়ে খুনের রহস্য উদঘাটন ও ঘাতকরা ধরা পড়লেও বেশিরভাগ ঘটনায় পুলিশ রহস্য উদঘাটন ও খুনিদের চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে। সর্বশেষ নগরীর টাইরগার পাস আমবাগানের ফ্লোরাপাস এলাকায় নির্মম খুনের শিকার হন মা-মেয়ে। তারা হলেন- রুপালী ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল অফিসার শাহ মেহেরুন নেছা বেগম ও তার মা মনোয়ারা বেগম। রোববার বিকেলে পুলিশ মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় মনোয়ারা বেগমের পুত্র মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে খুলশী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যাকান্ডের ২৪ ঘণ্টা পার হলেও খুনের রহস্য উদঘাটনে কোন কুলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ। খুলশী থানার ওসি শেখ মোঃ নাসির উদ্দিন দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, সন্দেহভাজন দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তবে এখনো খুনিদের চিহ্নিত কিংবা গ্রেফতার করা যায়নি। খুনের কারণও এখনো অজানা। নিহতের স্বজনদের দাবি, কয়েক কোটি টাকা মূল্যের তিন গন্ডা জমিসহ বাড়িটি আত্মসাতের জন্যই মা-মেয়েকে হত্যা করা হতে পারে। এ অভিযোগ খতিয়ে দেখার পাশাপাশি পুলিশ এ জোড়া খুনের পেছনে ডাকাতি বা অন্য কোন কারণ আছে কিনা তাও তদন্ত করছে। তবে প্রায় শত বছরের বৃদ্ধা এবং তার বয়োবৃদ্ধা কন্যাকে নির্মম, নৃশংসভাবে খুনের ঘটনায় নগরীতে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
এদিকে নগরীতে একের এক নৃশংস খুনের ঘটনা ঘটছে। গত ২৭ জুন নগরীর বাকলিয়ার লায়লা ভবনে কিশোরী ইলহামকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। ২৬ জুন রাতে আমিন জুট মিল এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় অনিক নামে আরও এক যুবককে। ১৫ জুন দিনদুপুরে নগরীর পতেঙ্গার একটি বাসায় হানা দিয়ে ৯ মাসের শিশুকে পানিতে চুবিয়ে মারে দুর্বৃত্তরা। ১৮ জুন নগরীর পল্টন রোডে পিতার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় যুবলীগ কর্মী আবু জাফর অনিককে। তার আগের দিন ১৭ জুন হালিশহরের বিডিআর সিনেমা হল এলাকায় মোঃ সুমন নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। একই দিন বাকলিয়ায় খুন হন আরও এক যুবক। ২৭ মে রাতে আকবর শাহ এলাকায় ছুরিকাঘাতে খুন হন সুমন নামে অপর এক যুবক। একই দিন সকালে নগরীর বন্দর থানার হালিশহর এলাকায় ব্যাংক কর্মকর্তা সজল নন্দীকে নিজ বাসায় গলা কেটে হত্যা করা হয়।
২৬ মে প্রাতঃভ্রমণে বের হয়ে নগরীর সদরঘাট এলাকায় খুন হন বৃদ্ধা মঞ্জু সেন। ২১ মে মোহরা কামাল বাজার এলাকায় অসংখ্য মানুষের সামনে মোঃ আরাফাত নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ১১ মে বায়েজিদ এলাকায় খুন হন আবুল কাশেম নামে অপর এক যুবক। ৫ মে রুমানা আক্তার নামে এক কিশোরীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বাঁশখালীর চাম্বল গ্রামে। ৪ মে রাঙ্গুনিয়ায় পুড়িয়ে হত্যা করা হয় এক যুবলীগ নেতাকে। ২ মে পতেঙ্গা সৈকতে খুন হয় সানশাইন গ্রামার স্কুলের ছাত্রী তাসফিয়া আমিন। ২৭ এপ্রিল বাকলিয়ায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় যুবলীগ নেতা ফরিদুল ইসলামকে । ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান চলাকালে নগরীর মধ্যম হালিশহরের একটি স্কুলে হানা দিয়ে অসংখ্য মানুষের সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় যুবলীগ নেতা মহিউদ্দিন মহিদকে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার কুসুম দেওয়ান বলেন, খুনের নৃশংসতা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। অতিরিক্ত লোভ আর প্রতিহিংসার কারণে পাশবিকতা বাড়ছে। এরা এত বেশি বেপরোয়া যে খুন করলে ধরা পড়তে হবে, জেল ফাঁসি হবে তাও ভুলে বসে আছে। সামাজিক অস্থিরতা নৈতিক অবক্ষয়সহ নানা কারণে নৃশংসতা বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধুমাত্র পুলিশি কার্যক্রম দিয়ে এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ সম্ভব নয়। নগরীতে সম্প্রতি সংঘটিত নৃশংস খুনের ঘটনায় জড়িত বেশ কয়েকজন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, খুনিদের কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।
ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাবেক জেলা পিপি অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন বলেন, আইনের শাসন না থাকায় মানুষের মধ্যে প্রতিহিংসা বাড়ছে। ঘাতকরা ধরা না পড়া এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। ‘খুন করে পার পাওয়া যায়’ এমন বিশ্বাস অপরাধীদের বেপরোয়া করে তোলে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।