পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
খুনিদের পাশবিক তান্ডব থেকে রেহাই পাননি প্রায় শত বছর বয়সী বৃদ্ধাও। অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা বয়োবৃদ্ধা কন্যাসহ খুনের পর তাদের লাশ গুম করা হয়েছে বাড়ির রিজার্ভ পানির ট্যাঙ্কে। চট্টগ্রাম নগরীর টাইগার পাস আমবাগান ফ্লোরাপাস এলাকার একটি ভবনে ঘটে এ নৃশংস জোড়া খুনের ঘটনা। গতকাল (রোববার) বিকেলে পুলিশ লাশ দু’টি উদ্ধার করে। তারা হলেন- মনোয়ারা বেগম (৯৭) এবং তার মেয়ে রুপালী ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল অফিসার শাহ মেহেরুন নেছা বেগম (৬৭)। চিরকুমারী মেহেরুন নেছা মাকে নিয়ে ভবনের নিচতলায় থাকতেন। মনোয়ারা বেগম চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার পুরানবাজার এলাকার ফজলুর রহমানের স্ত্রী।
পুলিশের ধারণা, মেহেরুন নেছাকে শক্ত কোন বস্তু দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগমকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে সুরতহাল রিপোর্টে ধারণা করা হয়েছে। লোমহর্ষক এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিনে সংঘটিত বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনার কোন কিনারা হয়নি। এরমধ্যে ফের জোড়া খুন পুলিশকেও ভাবিয়ে তুলেছে। তাৎক্ষণিক মা-মেয়ে খুনের ঘটনার কোন রহস্য জানা যায়নি। তবে স্বজনদের দাবি, কয়েক কোটি টাকা দামের তিন গন্ডা জমিসহ বাড়িটি দখলের উদ্দেশেই স্থানীয় কোন সন্ত্রাসী গ্রুপ এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। পুলিশ বলছে, মোটিভ যা হোক এটি পরিকল্পিত একটি হত্যাকান্ড।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মনোয়ারা বেগমের নয় ছেলেমেয়ের মধ্যে কেবল মেহেরুন নেছাই বিয়ে করেননি। মাকে নিয়েই ছিল তার সংসার। নগরীর টাইগার পাস থেকে আমবাগান রেলক্রসিং হয়ে ঝাউতলা যাওয়ার পথে এ কে খানের পাহাড়ে লাগোয়া মেহেরুন নেছার বাড়ি (৩৭৪, মেহের মঞ্জিল)। আমেরিকা প্রবাসী ছোট ছেলে আসাদুর রহমান প্রতিদিনের মতো সকালে মা ও বোনের খবর নিতে মোবাইলে ফোন দেন। কিন্তু বাসার তিনটি মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর তিনি ভবনের নিকটবর্তী এক আত্মীয় মাকসুদুর রহমানকে ফোন দিয়ে বাসায় যেতে বলেন। তিনি মেহের মঞ্জিলে গিয়ে দেখেন সামনের দরজা বন্ধ। সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে দেখেন নিচতলার বাসা পেছন থেকে দরজা ভাঙা এবং ভেতরে সবকিছু তছনছ অবস্থায় রয়েছে। এরপর তিনি নিহত মনোয়ারা বেগমের নাতি ফৌজদারহাটের বাসিন্দা বেলাল হোসেনকে খবর দেন। এরমধ্যে পুলিশকেও খবর দেয়া হয়।
বেলাল হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, বাড়িতে ঢুকে ঘরের দরজা, আলমিরা ভাঙ্গা এবং তছনছ অবস্থায় দেখতে পান। কিন্তু ঘরে তাদের কাউকে পাওয়া যাচ্ছিল না। ফ্লোরে পড়েছিল তিনটি সীম কার্ড, মোবাইল পাওয়া যায়নি। এরমধ্যে পুলিশ এসে তাদের দু’জনকে খুঁজতে থাকে। পরে ফ্লোরে পড়ে থাকা রক্তের চিহ্ন ধরে এগিয়ে যেতে নিচতলার পানির রিজার্ভ ট্যাঙ্কে মনোয়ারা বেগমের পা দেখতে পান তিনি। এরপর পুলিশ সেখানে দু’জনের লাশের সন্ধান পায়। জোড়া খুনের ঘটনা শোনার পর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে ছুটে যান। দমকল বাহিনীর কর্মীরা বিকেলে লাশ দু’টি ট্যাঙ্ক থেকে বের করে আনেন।
খুলশী থানার ওসি শেখ নাসির উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, রাতে যে কোনো সময় তাদের দু’জনকে খুনের পর লাশ দু’টি ট্যাঙ্কে ফেলে দেয়া হয়। মাথা থেতলানো অবস্থায় ট্যাঙ্কের নিচে ছিল মেহেরুন নেছার লাশ। তার উপর পাওয়া যায় তার মায়ের লাশ। তার শরীরে আঘাতের বড় কোন চিহ্ন নেই। তাকে শ্বাসরোধে অথবা পানিতে চুবিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এরপর বাসায় লুটপাট করারও আলামত দেখা গেছে। তবে বাসা থেকে কি কি জিনিস খোয়া গেছে তা তাৎক্ষণিক জানা যায়নি। এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড জানিয়ে ওসি বলেন, কেন এই হত্যাকান্ড তা তদন্ত করে খুনীদের পাকড়াও করা হবে। তবে নিহত মেহেরুন নেছার বোনের ছেলে বেলাল হোসেনের দাবি বাড়িটি দখল করার উদ্দেশেই দু’জনকে খুন করতে পারে। কারণ দীর্ঘদিন থেকে তারা মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে আসছিল।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ভবনের নিচতলা কমপ্লিট করতেই এলাকার একটি সন্ত্রাসী গ্রæপের সদস্যরা চাঁদা দাবি শুরু করে। ফলে সাত তলা ভবনের চার তালা পর্যন্ত ছাদ ঢালাই করা হলেও এক তলার উপরে আর নির্মাণ করা যায়নি। তিনি বলেন, চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে খালা মেহেরুন নেছা গোপনে বাড়িটি বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। তবে বেলাল সন্ত্রাসীদের নাম বলতে ভয় পাচ্ছিলেন।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মেহের মঞ্জিলটি আশপাশের ভবন থেকে এবং কিছুটা উঁচু পাহাড়ের ওপর। পুলিশের ধারণা, রাতের যে কোনো সময় সন্ত্রাসীরা বাড়িতে হানা দিয়ে দু’জনকে খুন করে। ফলে তাদের শোর চিৎকার বাইরে থেকে শোনা যায়নি। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আব্দুল ওয়ারিশ খান বলেন, মা-মেয়ের মৃত্যুর কারণ এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি তারা। কে বা কারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সেটিও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি। কোন সন্ত্রাসী গ্রæপ জড়িত থাকলে তাদেরও ছাড় দেয়া হবে না বলে জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।