পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
অনেক স্বপ্ন, সম্ভাবনা ও আশা জাগানিয়া জুট পলিমারের বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা পদে পদে বিলম্বিত ও বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। যে স্বপ্ন ও সম্ভাবনার উপর ভর করে বাংলাদেশী পাট তার সোনালী ঐতিহ্য ফিরে পেতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশী বিজ্ঞানীর উদ্ভাবিত (বায়ো-ডি-গ্রেডেবল) পচনশীল জুট পলিমার ব্যাগের কাঁচামালের একমাত্র উৎস বাংলাদেশের পাট। এর চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যে পলিথিন ব্যাগ বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে এবং সারাবিশ্বই এর একটি সহজলভ্য ও পরিবেশবান্ধব বিকল্প পণ্যের সন্ধানে উন্মুখ ছিল, এই বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানের পথ দেখিয়েছে বাংলাদেশেরই বিজ্ঞানীরা। দীর্ঘ ৫ বছরের নিরলস, অকèান্ত পরিশ্রমের পর ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. মোবারক আহমেদ খান এবং তার সহযোগিরা প্রথম পাটের সেলুলোজ থেকে পরিবেশবান্ধব পলিমার উদ্ভাবনে সক্ষম হন। যেখানে পেট্টোলিয়ামজাত পলিমার শত শত বছরেও মাটির সাথে মিশে না, পঁচেনা, সেখানে জুট পলিমার পানি ও বায়ুরোধক হওয়া সত্বেও মাত্র ৫-৬ মাসেই পঁচে মাটিতে মিশে যায়। প্রচলিত পলিথিনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও পরিবেশগত সমস্যার দিক বিবেচনা করে দীর্ঘদিন ধরেই একটি পরিবেশবান্ধব পলিমারের স্বপ্ন দেখছে বিশ্বের পরিবেশ সচেতন মানুষ। পাট থেকে পলিমার উদ্ভাবনের কৃতিত্বের জন্য বিজ্ঞানী মোবারক আহমেদ খানকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালে জাতীয় পুরস্কার ও সম্মাননায় ভ‚ষিত করেছেন। তবে সোনালী ব্যাগের আবিস্কারক মোবারক আহমেদ খানের মধ্যে এখন হতাশা ও অস্থিরতা ভর করেছে। কারণ এমন একটি অভাবনীয় ও অভ‚তপূর্ব সাফল্যের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে তিনি পদে পদে বিলম্বিত ও বাঁধাগ্রস্ত হতে দেখছেন।
গতকাল পত্রিকান্তরে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, সরকারের বাজেট বরাদ্দ এবং নীতিগত সিদ্ধান্তের অভাবে জুট পলিমার ও সোনালী ব্যাগের বিশাল অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনা কাজে লাগছেনা। তিন বছরের বেশী সময় ধরে সোনালী ব্যাগ পরীক্ষামূলক উৎপাদনে থাকলেও দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে এর ব্যাপক বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছেনা। আমাদের নাগরিক জীবনে পলিথিনের ধ্বংসাত্মক পরিবেশগত প্রতিক্রিয়ার কারণে দেশে পলিথিন উৎপাদন ও ব্যবহার আইন করে নিষিদ্ধ করা হলেও পলিথিন ব্যাগের বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগ যখন ব্যবহারিক ও অর্থনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছেনা, তখন জুট পলিমার থেকে উৎপাদিত সোনালী ব্যাগের বাজার সম্প্রসারণ ও চাহিদা পুরণ করতে হলে এর ব্যাপক ভিত্তিক উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বেই এ ধরনের ব্যাগের চাহিদা থাকায় প্রতিদিন হাজার হাজার টন জুট পলিমার উৎপাদনের উপযোগি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও প্রকল্প হাতে নিতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাণিজ্যের যুগে এ ধরনের বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় শিল্পের বাণিজ্যিক উৎপাদন অহেতুক বিলম্বিত হওয়া দু:খজনক। যেখানে দেড় লক্ষকোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট এবং নানা খাতে হাজার হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার, সেখানে সোনালী ব্যাগের বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ের ২০০-২৫০ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছেনা! এমন একটি বিশেষায়িত প্রকল্পকে লতিফ বাওয়ানী জুটমিল বা বিজেএমসি’র গতানুগতিক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত করাও সমীচিন নয়। জুট পলিমারের ব্যাপক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে এ খাতে অগ্রাধিকারমূলক হাজার কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে।
আইনগত নিষেধাজ্ঞা সত্তে¡ও শুধুমাত্র ঢাকা ও আশপাশে প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহৃত ও জঞ্জাল হিসেবে জমা হচ্ছে। এসব পলিথিন ব্যাগ শহরের পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা, নদীগর্ভ ও বর্জের ভাগাড়ে জমা হয়ে বড় ধরনের পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। এটি শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়। পশ্চিমা শিল্পোন্নত দেশগুলোসহ সারাবিশ্বেই এই সমস্যা বিদ্যামান। এ কারণেই জুট পলিমার থেকে উৎপাদিত সোনালী ব্যাগের সম্ভাবনা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা পাল্টে দিতে পারে। দেশের আভ্যন্তরীন চাহিদা পুরণের পাশাপাশি বিশ্বের চাহিদা পুরণে জুট পলিমার উৎপাদনে যে পরিমান বিনিয়োগ ও মহাপরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন ছিল তার কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। লতিফ বাওয়ানী জুট মিলের ‘সোনালী ব্যাগ প্রকল্প’ থেকে বর্তমানে প্রতিদিন মাত্র ২০০০ ব্যাগ উৎপাদিত হচ্ছে। পাটের টিস্যু ফাইবার থেকে সেলুলোজ সংগ্রহের জন্য অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় মেশিনারিজের জন্য বিদেশি কোম্পানীর সাথে চুক্তি হলেও টাকার অভাবে তা সংগ্রহ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন জুটি পলিমার উদ্ভাবক ও বিজেএমসি’র উপদেষ্টা বিজ্ঞানী মোবারক আহমেদ খান। যেখানে তৈরী পোশাক খাতের বাণিজ্যে কাঁচামালের অনেকাংশই আমদানী নির্ভর, সেখানে সোনালী ব্যাগের উদ্ভাবন, কাঁচামাল এবং উৎপাদন ব্যবস্থার শতভাগ বাংলাদেশের নিজস্ব। এর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা ও পাটের ঐতিহ্যও বাংলাদেশের একান্ত নিজস্ব সম্পদ। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে জুট পলিমার ও সোনালী ব্যাগের ক্রয়াদেশ পাওয়া গেলেও বর্তমান বাস্তবতায় আভ্যন্তরীণ চাহিদার শতকরা একভাগও পুরণ করা সম্ভব নয়। পরিবেশ সচেতনতার কারণে এমনিতেই বিশ্বব্যাপী পাটের মত প্রাকৃতিক তন্তুর চাহিদা বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশের পাট ও পাটপণ্যের রফতানীও বেড়ে চলেছে। জুট পলিমারের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে পাটের অর্থনৈতিক গুরুত্ব ১০গুণ বেড়ে যেতে পারে। জুট পলিমারের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হলে আগামী বছর দৈনিক ২০০ টন জুট পলিমার উৎপাদনের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আযম। তবে পলিথিনের সুলভ ও সহজলভ্য বিকল্প হিসেবে জুট পলিমারের আভ্যন্তরীণ ব্যবহার ও আন্তর্জাতিক বাজার নিশ্চিত করতে হলে জুট পলিমার উৎপাদনে সরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারী উদ্যোগ ও বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালা ও প্রণোদনামূলক বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।