Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যশোরের রাষ্ট্রায়ত্ত দু’টি জুট মিল অনিশ্চয়তার দোলাচলে

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ৮ জুলাই, ২০২০, ৩:১৮ পিএম

আদমজী জুট মিলের পর দেশের সর্ববৃহৎ জুট মিল জেজেআইসহ যশোরের শিল্পশহর নওয়াপাড়ার দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত জুট মিল অনিশ্চয়তার দোলাচলে। দুটি মিলকে ঘিরেই মুলত যশোরের নওয়াপাড়া শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত। বকেয়া পাওনা পরিশোধসহ শ্রমিকদের বিদায় দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত সরকারের। জুট মিল শ্রমিকরা তাদের ভবিষ্যত নিয়ে দারুণ দুশ্চিন্তায় আছেন।

ঐতিহ্যবাহী রাস্ট্রায়াত্ব জুট মিল ছিল একসময় রমরমা। কবে কীভাবে আবার মিল চালু হবে, জমজমাট হবে কী হবে না, না বিলুপ্তি ঘটবে তা নিয়ে চলছে নানামুখী জল্পনা কল্পনা। আদমজীর পরিণতি কী অপেক্ষা করছে জেজেআইয়ের-এই প্রশ্নটি বেশ বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

রাস্ট্রায়ত্ব পাটকল বন্ধ করা এবং গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে শ্রমিকদের চাকুরিচ্যুতি ও পিপিপি (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ)-এর মাধ্যমে মিল পরিচালনার মত জাতীয় ও জনস্বার্থ বিরোধী সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে যশোরের রাস্তায় প্রতিবাদ হয়েছে দফায় দফায়। জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট্র ও কৃষক সংগ্রাম সমিতি, ওয়াকার্স পার্টি (মার্কসবাদী)সহ বামজোট নেতৃবৃন্দ বলেছেন, এক সময়ে এই দেশের মানুষের দাবির প্রেক্ষাপটে কৃষিজমিতে উৎপাদিত পাটকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিলো পাটকল। রাষ্ট্রের যথাযথ পরিচালনার নীতিগত দুর্বলতা, মাথাভারী আমলাতান্ত্রিক প্রশাসন এবং লুটপাট ও অব্যবস্থাপনা-অনিয়মের কারণে এই শিল্পে সংকট দেখা দিয়েছে।

যশোরের অভয়নগরে দু’টি জুটমিলের শ্রমিকদের ২শ’৮৩ কোটি টাকা মজুরি বকেয়া রয়েছে। বর্তমানে মিলগেটের বাইরে প্রতিদিন শ্রমিকরা উদ্বেগ-উৎকন্ঠা নিয়ে অবস্থান করছেন। সবচেয়ে দুশ্চিন্তায় চাকরীর মেয়াদ যাদের অল্প তারা। কারণ বেনিফিট পাবেন একেবারেই কম।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, শিল্পশহর নওয়াপাড়ার রাজঘাট এলাকায় ভৈরব নদের তীরে ১৯৬৭ সালের ৩০মে প্রায় ৮২একর জমির ওপর যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজের (জেজেআই) নির্মাণ হয়। ১৯৭০সালের ২৭ জানুয়ারি ৩১০টি হেসিয়ান লুম, ১০০টি স্যাকিং লুম এবং ৫৬টি সিবিসি (ব্রড) লুম নিয়ে মিলটির কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৭৮সাল পর্যন্ত মিলটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সফলতার স্বাক্ষর রাখে। বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) অন্তর্ভূক্ত হওয়ার কয়েকবছর পর থেকে অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় এ মিলটি।

অপরদিকে একই এলাকায় ভৈরব নদের তীরে ১৯৬৭ সালে ৩১একর জমির ওপর কার্পেটিং জুট মিলের নির্মাণ হয়। ১৯৬৯ সালে ৮৬টি সিবিসি (ব্রড) লুম নিয়ে মিলটি উৎপাদন শুরু করে। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত মিলটি লাভজনক ছিল। আমাদের অভয়নগর উপজেলা সংবাদদাতা নজরুল ইসলাম মল্লিক জানান, জেজেআই মিলের প্রকল্প প্রধান সফিকুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, জেজেআই মিলে স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ১ হাজার ৮৬ জন। অস্থায়ী শ্রমিক রয়েছে ১ হাজার ১৭৭জন। কর্মচারী ৭০ জন এবং কর্মকর্তা রয়েছেন ৪৫জন। শ্রমিকদের বকেয়া মজুরী, গ্রাচুইটি ও পিএফ ফান্ডের পরিমাণ প্রায় ২০০কোটি টাকা। মিলটি বন্ধ হওয়ার পূর্বে পাট থেকে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য প্রায় ২৮ কোটি টাকা। যা মিলে মজুদ রয়েছে।

কার্পেটিং জুট মিলের প্রকল্প প্রধান আহম্মেদ হুসাইন জানান, মিলে স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ৩১৩ জন, অস্থায়ী শ্রমিক রয়েছে ৪৫০জন। শ্রমিকদের বকেয়া মজুরী, গ্রাচুইটি ও পিএফ ফান্ডের পরিমাণ প্রায় ৮৩ কোটি টাকা। বন্ধ হওয়ার পূর্বে পাট থেকে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য ৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। যা মিলে মজুদ পড়ে আছে।

জেজেআই জুট মিলের সিবিএ’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নওয়াপাড়া পৌরসভার কাউন্সিলর জিয়াউদ্দিন পলাশ জানান, বর্তমান সরকার শ্রমিকবান্ধব সরকার। শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণে পূর্ণবিবেচনা করে পূনরায় রাষ্ট্রায়ত্ত মিলগুলো চালু করার দাবি জানান তিনি। কোন ভোগান্তি ছাড়াই শ্রমিকদের পাওনা টাকা সঠিক সময়ের মধ্যে পরিশোধ করার দাবি জানান কার্পেটিং জুট মিল সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক ফারাজী নজরুল ইসলাম।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ