পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে দেশে অকাল বন্যা, ঝড়-বৃষ্টি, বজ্রপাত বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, যতই দিন যাবে আবহওয়ার এই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেশে পড়তে থাকবে। প্রতি বছর বন্যাসহ অন্যান্য দুর্যোগ দেখা দিতে পারে। প্রাকৃতিক এসব দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে বলে মনে হয় না। বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বেড়িবাঁধ, নদী শাসনসহ অন্যান্য ব্যবস্থায় দুর্বলতা রয়ে গেছে। ফলে প্রতি বছরই বন্যায় মানুষের দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। গত বছর উত্তর বঙ্গ ও মধ্যাঞ্চলে যে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয় তার ক্ষত এখনো শুকায়নি। ব্যাপক ফসলহানি, গবাদি পশু ও বাড়িঘর ভেসে যাওয়া থেকে শুরু করে সহায় সম্বল হারানো মানুষগুলো বন্যার ধকল সামলে উঠতে না উঠতেই আবার বন্যার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও ফেনিতে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। এ থেকে ধরে নেয়া যায়, এবারও ব্যাপক মাত্রায় দেশে বন্যা দেখা দিতে পারে। এ আলামত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রায় প্রতি দশ বছর অন্তর অন্তর দেশে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। সে মতে এ বছরও বড় ধরনের বন্যা হতে পারে। ফলে এখন থেকেই সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বন্যা মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি নেয়া দরকার।
এবার যে বন্যা হতে পারে এবং তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে, তার আভাস এখনই পাওয়া যাচ্ছে। হিমালয় পাদদেশ, চীন, তিব্বত, নেপাল, ভারতের বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, অরুণাচল, আসাম, মেঘালয়, মনিপুর ও মিজোরামে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। এসব অঞ্চলে অতিবৃষ্টি অব্যাহত থাকলে এর ¯্রােত যে বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসবে, তাতে সন্দেহ নেই। বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া বিভাগসহ আন্তর্জাতিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস সেই ইঙ্গিত দিয়েছে। এর সাথে যদি দেশে বৃষ্টিপাত শুরু হয়, তবে তা উজানের ঢলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ব্যাপক বন্যা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদীর পানি প্রবাহের ৭৫ থেকে ৯০ ভাগই উজান অববাহিকার ফলে উজানে অতিবৃষ্টি হলে তা অবধারিতভাবেই গঙ্গা-পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, মেঘনা অববাহিকায় নেমে আসবে। সাধারণত দেশে বর্ষায় বন্যা দেখা দেয় জুলাই মাসে। এবার যদি তা দেখা দেয়, তবে তা আগস্ট- সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রলম্বিত হতে পারে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বৃষ্টিপাত লাঘবকারী ‘এল-নিনো’ হ্রাস পাওয়ায় পূর্ব ভারতে অতিবৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এর প্রভাব পড়বে নদ-নদীর উজান অববাহিকায়। ইতোমধ্যে গঙ্গা-পদ্মা ও এর সংলগ্ন নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। যতই দিন যাবে তা বাড়বে বৈ কমবে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, ভারতে বন্যা দেখা দিলে এবং তা সামাল দিতে নদীর বাঁধগুলো বরাবরের মতোই উন্মুক্ত করে দেবে। যার ফলে বন্যার ঢল বাংলাদেশে ধাবিত হবে। দেখা দেবে ভায়াবহ বন্যা। ভারতে আবহাওয়ার বর্তমান যে পরিস্থিতি, তাতে সেখানের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তা বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসবে, এ আশঙ্কা আগে থেকেই করা যায়। বন্যার ঢল সামাল দিতে ভারত গঙ্গার ফারাক্কা, তিস্তায় গজলডোবাসহ অন্যান্য বাঁধ ও ব্যারেজের গেট খুলে দিয়ে বাংলাদেশের দিকে কী পরিমাণ পানি ছেড়ে দেয় তা কখনোই জানায় না। বাংলাদেশ বন্যার আগাম তথ্য জানতে পারে না। ভারতের উচিত গেট খুলে দেয়ার বিষয়টি বাংলাদেশকে আগে থেকেই অবহিত করা। এ কাজটি সে করে না। ফলে বাংলাদেশে ডুবেযায় ভারতের পানিতে। বন্যা মোকাবেলা করার জন্য আমরা যে বিকল্প গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি, তাতেও ভারত আপত্তি জানিয়েছে। এ কারণে, এ প্রকল্পও স্থগিত হয়ে রয়েছে। ভারতের এমন অমানবিক আচরণ বছরের পর বছর ধরেই চলছে। বলা বাহুল্য, ভারত আমাদের কাছ থেকে তার চাহিদার সবটুকুই আদায় করে নিয়েছে। বিনিময়ে আমরা কিছুই পাইনি। এক তিস্তা চুক্তি নিয়ে কত টালবাহানা চলছে।
আগাম বন্যা মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট উদাসীনতা ও গাফিলতি বরাবরই পরিলক্ষিত হয়ে আসছে। গত বছর বন্যায় যেসব বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো এখনো পুরোপুরি মেরামত ও সংস্কার করা হয়নি। অনেক জায়গায় বাঁধ সংস্কারে বরাদ্দও ঠিকমতো ছাড় পায়নি। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, বন্যা দেখা দিলে তা মোকাবেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পূর্ণ প্রস্তুতি নেই। তার আচরণ এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, আগে বন্যা হোক, তারপর দেখা যাবে। এই মনোভাবের কারণে যে বন্যায় দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে, তা আমরা বরাবরই লক্ষ্য করে আসছি। আগেভাগে বন্যা নিয়ন্ত্রণকারী বাঁধ মেরামত ও সংস্কার করলে বন্যা পরিস্থিতি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। অথচ বাঁধ সংস্কারে প্রতি বছরই শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। বাঁধ আর সংস্কার হয় না। যেহেতু বাংলাদেশ ভারতের বিরূপ আচরণের শিকার এবং বন্যা হওয়ার আশঙ্কা প্রবল, সেহেতু বন্যা নিয়ন্ত্রণকারী বাঁধগুলোর মেরামত ও সংস্কার একটি নিয়মিত কাজ হওয়া স্বাভাবিক। আমরা দেখছি, কেবল বন্যা হলেই ভেঙ্গে যাওয়া বা ভেসে যাওয়া বাঁধ সংস্কারে বালির বস্তা, বোল্ডার ইত্যাদি ফেলে মেরামত করতে। এতে কেবল অর্থেরই অপচয় হয়, বন্যার পানি আর ঠেকানো যায় না। আমরা মনে করি, বন্যা নিয়ন্ত্রণকারি বাঁধ নির্মাণ, সংস্কার ও মেরামতের স্থায়ী সমাধান দরকার। শত কোটি টাকার দুর্বল বাঁধের কারণে হাজার হাজার কোটি টাকার ফসল ও সম্পদের হানি হবে, মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে পড়বে, তা মেনে নেয়া যায় না। পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ আবহাওয়া অধিদপ্তরকে বন্যার আগাম পূর্বাভাস ও তা মোকাবেলায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।