Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহাকাশ জয়ের অব্যাহত চেষ্টা

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ২৫ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম


মানুষ চলে যাবে এবার ভিনগ্রহে। হ্যাঁ, এ স্বপ্নই বাস্তব রূপ পেতে চলেছে। বিভিন্ন দেশ প্রায়ই মহাকাশ, মঙ্গলগ্রহ, চাঁদ, সূর্যসহ নানা গ্রহ-উপগ্রহে যান পাঠাচ্ছে। এর সা¤প্রতিক উদাহরণ হচ্ছে: নাসা জানিয়েছে, তারা ২০১৮ সালে (৩১ জুলাই থেকে ১৮ আগস্ট) সূর্যের কাছে একটি রোবটিক মহাকাশযান পাঠাবে। সংস্থাটি ২০২০ সালে মঙ্গলে হেলিকপ্টার পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এরূপ বহু খবর আছে গ্রহ-উপগ্রহে প্রাণি ও যানবাহন পাঠানোর। আর বর্তমানে চেষ্টা চলছে মানুষ পাঠানোর এমনকি তা হতে পারে ২০১৮ সালেই। ইতোমধ্যেই তার টিকেট বিক্রি সম্পন্ন হয়েছে। এ কল্পনাতীত কর্মটি সাধন করছে মার্কিন এক বিজ্ঞান সংস্থা। অন্য গ্রহ-উপগ্রহে মানুষ বসবাস করতে পারবে কিনা এবং সেখানে প্রজনন হবে কিনা এসব নিয়েও গবেষণা চলছে। কতিপয় গ্রহে পানি পাওয়ায় গবেষণা আরো জোরদার হয়েছে। এই অবস্থায় চাঁদে জমি বিক্রি শুরু হয়েছে কয়েক বছর আগেই। মানুষ সেখানে আবাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে এ জমি ক্রয় করছে। সর্বপরি ভিনগ্রহে বিনোদন কেন্দ্রও গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রকৃষ্ট উদাহরণ মহাশূন্যে বাড়ি নির্মাণ। এ ব্যাপারে সিএনএন’র খবরে প্রকাশ, ক্লাউড আর্কিটেকচার অফিসের স্থপতিরা মহাশূন্যে ভাসমান অ্যাপার্টমেন্ট তৈরির পরিকল্পনা করছেন। মহাশূন্যে ভাসমান এই অট্টালিকা এক জায়গায় স্থির থাকবে না। পৃথিবীর চারপাশে প্রদক্ষিণরত স্যাটেলাইটের মতো এটি ঘুরে বেড়াবে। মূলত মহাশূন্যের একটি কক্ষপথে স্থাপন করা হবে বিশেষ এই ভাসমান অট্টালিকা। নামকরণ করা হয়েছে ‘অনালেমা টাওয়ার’। অপরদিকে, বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহে স্যাটেলাইট স্থাপন করে সেখান থেকে তরঙ্গ নিয়ে পৃথিবী নামক গ্রহে ব্যাপক আর্থিক কর্ম শুরু হয়েছে গত শতাব্দির মাঝামাঝি সময়ে যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসবের মধ্যে মহাকাশ নিয়েই বিজ্ঞানীদের তৎপরতা বেশি। তাই এর অগ্রযাত্রা সর্বাধিক। আর এ অগ্রযাত্রা থেকে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশের স্যাটেলাইট, যার নামকরণ করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ এখন মহাকাশে বিচরণ করছে, যা আগামী আগস্ট মাস নাগাদ নিজস্ব অরবিটে স্থান করে নিয়ে আর্থিক কার্যক্রম শুরু করবে। তাই মহাকাশ নিয়ে এখন দেশবাসীর মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে মহাকাশ নিয়ে কথা বলছে। দেশের জন্য এটা এক কল্যাণজনক বিষয়। কারণ, বর্তমান কাল হচ্ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যার প্রতিনিয়তই উন্নতি ও বিস্তার ঘটছে সব ক্ষেত্রেই এবং তা পৃথিবীসহ সব গ্রহ-উপগ্রহেই। যারা বিজ্ঞানের এ অগ্রযাত্রাকে যত বেশি ব্যবহার করতে পারছে, তারা তত বেশি উন্নতি করছে। তাই এ বিষয়ে আমাদের পিছিয়ে থাকলে চলবে না। আমাদেরও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এ অগ্রযাত্রায় সামিল হতে হবে। আর সেটা করতে হলে আধুনিক বিজ্ঞান-প্রযুক্তি জানতে হবে, বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে। এ লক্ষ্য পূরণে এসব নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হওয়া দরকার। নতুবা জাতি ‘রাজনীতি পাগল’ থেকে ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মনস্ক হতে পারবে না। সে লক্ষ্য পূরণের ক্ষীণ আশা নিয়ে আজকের বিষয় মহাকাশের স্যাটেলাইট নিয়ে কিছু আলোকপাত।
ইউনুসা’র তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত মহাশূন্যে ৮,১৩০টি ছোট-বড় নানা ধরনের অবজেক্ট (রকেট, স্যাটেলাইট, নভোচারীদের ব্যবহার্য) পাঠানো হয়েছে। তন্মধ্যে জাতিসংঘে নিবন্ধিত ৭,৩২৮টি। এসব অবজেক্টের মধ্যে কক্ষপথে কৃত্রিম উপগ্রহের সংখ্যা ৪,৮১১টি যা মহাকাশ, সমুদ্রসহ বিশ্বের ৩১টিস্থান থেকে উৎক্ষেপণ করা যায়। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ভারত, চীন, ইসরায়েল, ইরাক, জাপান, কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আলজিরিয়া ও কেনিয়াতে রয়েছে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র। এ পর্যন্ত ৫৭টি দেশ ও ২২টি সংস্থা মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে। সর্বশেষ কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর অভিজাত ক্লাবে নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ। মহাকাশে অবজেক্ট প্রেরণের দেশভিত্তিক সংখ্যা হচ্ছে: রাশিয়ান ফেডারেশন (সোভিয়েত ইউনিয়নসহ) ৩৫২১, যুক্তরাষ্ট্র ২৮৫৬, চীন ৪১৩, জাপান ২৩৫, ফ্রান্স ১৪৫, ভারত ১০১, ব্রিটেন ৮৬ ও ইসা ৮২টি। মহাকাশে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের কৃতিত্ব সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের। ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর স্পুটনিক-১ নামে কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে নতুন ইতিহাস তৈরি করে দেশটি। একই বছর দেশেটি মহাকাশে দ্বিতীয় কৃত্রিম উপগ্রহ স্পুটনিক-২ উৎক্ষেপণ করে। স্পুটনিক-২ লাইকা নামে একটা কুকুর বহন করে নিয়ে যায়। অবশ্য উৎক্ষেপণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে লাইকা মারা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৫৮ সালের ৩১ জানুয়ারি তাদের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ এক্সপ্লোরার-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে ১৯৫৯ সালের ১৭ ফেব্রæয়ারি প্রথম স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা হয়। স্মরণীয় যে, কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীর চারদিকে এমনভাবে ঘোরে, যেন বহির্মুখী শক্তি একে বাইরের দিকে গতি প্রদান করে। মূলত মধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে এটি কক্ষপথ থেকে ছিটকে যায় না। বহির্মুখী ও মধ্যাকর্ষণ শক্তি স্যাটেলাইটকে ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। মহাকাশে পৃথিবীর মতো বায়ুমÐল না থাকায় গতি ও ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে কোনো তারতম্য লক্ষিত হয় না। টিভি ও বেতার সংকেত প্রেরণ এবং আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকারী কৃত্রিম উপগ্রহগুলো সাধারণত পৃথিবী থেকে ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থান করে। তবে ভিন্ন ভিন্ন কাজের স্যাটেলাইট ভিন্ন ভিন্ন দূরত্ব ও গতিতে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। পৃথিবী থেকে ৪৫০ কিলোমিটার ওপরেও অবস্থান করতে পারে স্যাটেলাইট। স্যাটেলাইট পৃথিবীর যত কাছে থাকে গতি তত বেশি হয়।
স্যাটেলাইটের লাভ-ক্ষতি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছে: গবেষণা, সামরিক ও রাজনৈতিক প্রয়োজনে বড় দেশগুলোর মধ্যে মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানোর প্রতিযোগিতা শুরু হলেও তা এখন হয়ে উঠেছে অর্থনীতির একটি বড় সম্ভাবনা। প্রযুক্তির ক্রম উন্নয়ন এ প্রয়োজনীয়তাকে আরো বেশি অপরিহার্য করে তুলছে। স¤প্রচার, যোগাযোগ ও আবহাওয়াগত নানা তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি মহাকাশ হয়ে উঠেছে প্রকৃতি সুরক্ষা ও খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানেরও বড় মাধ্যম। ফলে বিশ্বজুড়ে এখন মহাকাশবিজ্ঞান পরিণত হয়েছে মহাকাশবাণিজ্যে। তাই বিভিন্ন দেশের সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও মহাকাশ গবেষণায় বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ করছে। তন্মধ্যে গুগল, অ্যামাজন, স্পেসএক্সসহ বড় বড় কোম্পানি উল্লেখ্যোগ্য। যারা উদ্ভাবন ও কর্মসংস্থানে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। মহাকাশবাণিজ্যে জড়িত বিশ্বের শীর্ষ ১০ উদ্ভাবনী কোম্পানির মধ্যে রয়েছে স্পেসএক্স, বোয়িং, ওরবিটাল সায়েন্সেস, সিয়েরানেভাদা করপোরেশন, ভারজিন গ্যালাকটিক, এক্সকোর অ্যারোস্পেস, মেড ইন স্পেস, এড এস্ট্রা রকেট কোম্পানি, প্লেনেটারি রিসোর্সেস এবং এয়ারবাস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস। বিশ্লেষকরা বলছেন, মহাকাশ অর্থনীতি উন্নত বিশ্বের মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনেছে। ক্রমান্বয়ে তা পুরো বিশ্বের অর্থনীতি ও মানুষের জীবনযাত্রায় বড় পরিবর্তন আনবে। ২০৩০ সালে মহাকাশ অর্থনীতি কেমন হবে এ নিয়ে এক বক্তব্যে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের হেজার্ড রিসার্চ সেন্টারের অনারারি অধ্যাপক এলেরন স্টোফেন বলেন, মহাকাশে পাঠানো যাত্রীবাহী যানের মাধ্যমে কয়েক মিনিটে এ বিশ্বকে অতিক্রম করা যাবে, যেখানে স্বাভাবিকভাবে কয়েক ঘণ্টা লাগে। স্যাটেলাইটের দেওয়া ব্রডব্যান্ড যোগাযোগের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের মানুষ বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে। মহাকাশভিত্তিক নেভিগেশনের মাধ্যমে যান ব্যবহার করে এক শহর থেকে আরেক শহরে যাতায়াত ও পণ্য পাঠানোও অনেক সহজ হবে। এসডিজি অর্জনে বড় ভূমিকা রাখবে মহাকাশ অর্থনীতি। অপরদিকে, মহাকাশ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান- প্লেনেট’র সিইও উইলমার্শাল বলেন, বিশ্বের এসডিজি অর্জনে বড় ভূমিকা রাখছে স্যাটেলাইট। ইন্টারনেট ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছে। ভবিষ্যৎ মহাকাশ গবেষণা আমাদের আরো নতুন নতুন সম্ভাবনার তথ্য দেবে। তিনি আরো জানান, ১৭টি এসডিজির ১২টি অর্জনেই সহায়তা করবে স্যাটেলাইটের পাঠানো তথ্য। স্যাটেলাইট থেকে পাঠানো ছবি ও তথ্যে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো যাবে। কৃষক বুঝতে পারবে কখন কীটনাশক বা সার বা পানি দিতে হবে। অপরদিকে, বর্তমানে বিশ্বের বড় সংকট মিঠা পানির। স্যাটেলাইট ইমেজের মাধ্যমে জানা যাবে কোথায় পানির মজুদ আছে এবং তা কোথায় প্রয়োজন। পানি ও বায়ুদূষণ এবং মরুকরণ কোথায় হচ্ছে তা জেনেও দ্রæততার সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। মাছ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য অবৈধ আহরণের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যাবে স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। নিশ্চিহ্ন হওয়া থেকে রক্ষা করা যাবে বন্য পশু ও জীববৈচিত্র্য। বর্তমান বিশ্বের অর্ধেক মানুষ ইন্টারনেট প্রবেশাধিকার পাচ্ছে; কিন্তু স্পেসএক্স ও ওয়ানওয়েভ কোম্পানি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরি করছে, তাতে বিশ্বের সিংহভাগ মানুষ ইন্টারনেট প্রবেশাধিকার পাবে। বিশেষ করে যেসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই সেসব অঞ্চলেও পৌঁছাবে ইন্টারনেট। ফলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দারুণ অগ্রগতি অর্জিত হবে। অর্থনৈতিক বৈষম্য কমাতেও বড় ভূমিকা রাখবে। তাই এই খাতে বিনিয়োগের হিড়িক পড়েছে। ইনভেস্টমেন্ট ফার্ম স্পেস অ্যাঞ্জেলসের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বৈশ্বিক মহাকাশশিল্প ৩৬০ বিলিয়ন ডলারের। এ আয় মূলত স্যাটেলাইট ম্যানুফ্যাকচারিং, গ্রাউন্ড ইকুয়িপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং এবং উৎক্ষেপণ শিল্প থেকে। ২০২৬ সাল নাগাদ এ শিল্প হবে ৫৫৮ বিলিয়ন ডলারের। তাই স্যাটেলাইটের উপকারিতা ব্যাপক।
কিন্তু স্যাটেলাইটের যেমন উপকারিতা আছে, তেমনি অপকারিতাও আছে। এর মেয়াদ শেষ হলে আবর্জনা হিসেবে রয়ে যায় মহাকাশে। এভাবে জমতে জমতে মহাকাশ দূষিত হয়ে পড়তে পারে। যেমন ভূপৃষ্ঠের নানা আবর্জনার করণে বিশ্বের পরিবেশ আজ ব্যাপক দূষিত হয়েছে। ফলে নানা মহাসংকট সৃষ্টি হয়েছে। তদ্রæপ মহাকাশ দূষিত হয়ে নানা সংকট সৃষ্টি হতে পারে এবং তার প্রভাব পৃথিবীসহ বিভিন্ন গ্রহে পড়তে পারে। যাক, সেটা ভবিষ্যতের বিষয়। তাই যখন ঘটবে তথনই ভাবা যাবে। বর্তমানে মহাকাশে যে আবর্জনা সৃষ্টি হয়েছে সেটি নিয়ে ভাবা দরকার। এ ক্ষেত্রে ডয়েচে ভেলের খবরে প্রকাশ, গত ছয় দশকে মহাকাশে অনেক স্যাটেলাইট অকেজো হয়ে গেছে। ফলে সেখানে জমা হয়েছে ভাঙা, বাতিল ও অকেজো স্যাটেলাইট ও রকেটের টুকরো। কিন্তু এগুলো স্থির হয়ে নেই। সক্রিয় স্যাটেলাইটের মতোই প্রদক্ষিণ করছে পৃথিবীকে। তাই এগুলো নভোচারীদের জন্য যেমন বিপদজ্জনক তেমনি সক্রিয় কৃত্রিম উপগ্রহের জন্যও ক্ষতিকর। অতি ক্ষুদ্র ধাতব টুকরোও মহাকাশযানের বহিরাবরণ ফুটো করে দিতে পারে। বর্তমানে প্রায় ২৮ হাজার বাতিল ধাতুর টুকরো কক্ষপথে ঘুরছে। ভবিষ্যতে এমন দাঁড়াতে পারে যে, স্যাটেলাইটকে কক্ষপথে রাখাই কঠিন হয়ে পড়বে। আবার কক্ষপথে যেসব স্যাটেলাইট আছে, তার ৩৮ ভাগই অচল! আইএসএস ১৪ বছর ধরে পৃথিবী পরিক্রমণ করে চলেছে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪০০ কিলোমিটার উচ্চতায়, ঘণ্টায় ২৮ হাজার কিলোমিটার গতিতে। কেফলারের একটি আস্তরণ আইএসএসকে মাইক্রো-মেটেওরাইটের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে বাঁচাচ্ছে। কিন্তু যেসব নভোচারী মাসের পর মাস মহাকাশযানটিতে কাটান, তাদের পক্ষে সবচেয়ে বড় বিপদ হলো মহাকাশের ‘ডেব্রিস’ বা অকেজো স্যাটেলাইটের টুকরো। আইএসএস তীব্র গতিতে মহাশূন্যে ঘুরপাক খাচ্ছে, আবার মহাকাশের আবর্জনার গতিরোধ করার জন্য বাতাসের প্রতিরোধ পর্যন্ত নেই। রকেটের বিভিন্ন নিঃশেষিত পর্যায় অথবা অকেজো স্যাটেলাইটগুলোকে সরাতে না পারলে কোনো না কোনো সময় এই মহাকাশে আবর্জনার পরিমাণ বেড়ে যাবে। উপরন্তু অনেকগুলো পৃথিবীতে পড়ে ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে। তাই মহাকাশকে সুরক্ষিত রাখতে অচল স্যাটেলাইট অপসারণ করা জরুরি।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মহাকাশ


আরও
আরও পড়ুন