পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাজধানীতে যানজট নতুন কোনো বিষয় নয়। স্বচ্ছন্দে ও দ্রুত চলাচলের সুবিধা অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। রাস্তায় যানজটে পড়তে হবে, এ নিয়তি মেনে নিয়েই এখন রাজধানীবাসী কর্মক্ষেত্রে রওনা দেন। কর্মস্থলে পৌঁছতে পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়েও অনেকে যথাসময়ে পৌঁছতে পারেন না বিশ্বের কোনো রাজধানীতে নগরবাসীকে এমন দুর্ভোগে পড়তে হয় কিনা আমাদের জানা নেই। অথচ রাজধানীর যানজটের যতগুলো কারণ রয়েছে, তার সবই সকলের জানা। নগরবিদরা এসব কারণের প্রতিকার এবং যানজট মোটামুটি সহনীয় করার নানা উপায় বাৎলে দিয়েছেন। তারপরও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। বরং দিন দিন তা জটিল থেকে জটিলতর আকার ধারণ করেছে। যানজটের অন্যতম কারণ পরিবহন ব্যবস্থাপনায় চরম বিশৃঙ্খলা। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক জুড়ে যেখানে-সেখানে ইচ্ছামতো গাড়ি পার্কিং নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, পুরো রাজধানীই যেন একটি পার্কিং জোনে রূপান্তরিত হয়েছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজধানীর বিশ্বরোডসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের এক পাশে সারবদ্ধভাবে বাস, কভার্ড ভ্যান, ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন পার্কিং করে রাখা হচ্ছে। ফ্লাইওভারের নিচের জায়গাগুলোতেও বাস স্টপেজ থেকে শুরু করে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব অনাচার দেখার যেন কেউ নেই। ট্র্যাফিক বিভাগকেও কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না।
যানজটের কারণে শুধু রাজধানীতে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়, তার হিসাব বিভিন্ন সময়ে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, যানজটের কারণে বছরে ক্ষতি হয় বিশ হাজার কোটি টাকার উপরে। মানুষের কর্মঘন্টা নষ্ট হয় ৩২ লাখ। বছরের পর বছর ধরে এ ক্ষতি হচ্ছে এবং তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ হিসাব থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, আগামী বছরগুলোতে ক্ষতির পরিমাণ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। এ থেকে কীভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে, তারও কার্যকর কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। যথাযথ উদ্যোগের অভাবেই রাজধানীর যানজট পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। একটি আদর্শ রাজধানীতে সড়কের জন্য সাধারণত ২৫ শতাংশ জায়গা থাকতে হয়। এর বিপরীতে ঢাকায় আছে মাত্র ৭ শতাংশ। সড়ক বৃদ্ধিরও কোনো উপায় নেই। এই স্বল্প পরিমাণ রাস্তার উপরই প্রতিদিন নামছে, গড়ে আড়াইশ’র মতো নতুন গাড়ি। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, যানজটের সার্বিক পরিস্থিতি ক্রমে কতটা নাজুক পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। তার উপর, বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ সড়কের অর্ধেক অবৈধ দখল এবং পার্কিংয়ে চলে যায়। বছর জুড়ে উন্নয়ন কর্মকান্ডে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে সড়ক সরু হয়ে আরও শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছে। এ মুহূর্তে রাজধানীর সড়কের চিত্র যদি লক্ষ্য করা হয়, তবে দেখা যাবে সড়কগুলোর পরিস্থিতি কতটা করুণ। খোঁড়াখুঁড়ির পাশে গাড়ি পার্কিংও করা হচ্ছে। এছাড়া ভবন নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত ইট ও বালি সড়কের উপর রেখে নির্মাণ কাজ চলছে। সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ফুটপাত ও সড়কের একটি অংশ হকারদের দখলে চলে যাওয়ায় সড়ক আরও সংকুচিত হচ্ছে। গণ পরিবহণগুলো কোনো নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করেই যত্র-তত্র থামিয়ে যাত্রী ওঠাচ্ছে, নামাচ্ছে। এসব সমস্যার পাশাপাশি যখন রাজনৈতিক দল বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের সভা-সমাবেশ বা বিভিন্ন পেশাজীবীদের দাবী-দাওয়া আদায়ে মিছিল করা হয় তখন রাজধানী কার্যত অচল হয়ে পড়ে। নিয়মিত হয়ে পড়া এসব সমস্যা সমাধানে কোনো সমাধানি পরিলক্ষিত হচ্ছে না
যানজটের কারণে অর্থনীতির যে অপরিমেয় ক্ষতি হচ্ছে, তা থেকে বের হয়ে আসতে হলে রাজধানীকে গতিশীল করার বিকল্প নেই। রাজধানীতে যে ৭ শতাংশ সড়ক রয়েছে, নগরবিদরা বহুদিন ধরেই বলে আসছেন, সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে এ সড়ক ব্যবহার করতে পারলে যানজট অনেকটাই সহনীয় করা সম্ভব। দ্রুত সমাধানের জন্য তারা গণপরিবহণের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং তা সীমিত সংখ্যক পরিবহণ কোম্পানির মাধ্যমে পরিচালনার ওপর জোর দিয়েছেন। মূল সড়কগুলোকে ধীর গতির রিকশা প্রবেশ নিষেধ ও বন্ধ করা প্রয়োজন। ব্যক্তিগত গাড়ি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রেও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা জরুরি। গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবৈধ পার্কিং ও দখল পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে হবে। মনে রাখা দরকার, আমার যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের সার্টিফিকেট পেয়েছি, তা ম্লান করতে রাজধানীর যানজটই যথেষ্ট। ঢাকার যানজটের চিত্র দেখলে কারো পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় যে, আমরা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে যাচ্ছি। কাজেই উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার চিত্রটি যথার্থ করে তুলতে হলে রাজধানীর যানজট নিরসনে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যানজট যদি সহনীয় পর্যায়েও নিয়ে আসা যায়, তবে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হ্রাস পাবে, তা জিডিপিতে যুক্ত হয়ে উন্নয়ন গতিকে আরও বেগবান করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।