Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গৃহকর্মী নির্যাতন

| প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সাবরিনা শুভ্রা : গৃহপরিচারিকাদের ওপর নির্যাতন কোনো কোনো গৃহকর্ত্রী বা গৃহস্বামীর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তারাও যে মানুষ এ উপলব্ধিও হারিয়ে ফেলেছে কেউ কেউ। বিশেষত শিশু গৃহপরিচারিকাদের ওপর নির্যাতন যেভাবে বাড়ছে তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো। যৌন হয়রানির শিকার হওয়া তো নারী গৃহপরিচারিকাদের একাংশের জন্য নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এমনকি শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। যারা শিশুদের ওপর কথায় কথায় নির্যাতন চালায়, তাদের মানসিক সুস্থতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।

দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে। নির্যাতন যেন তাদের কপালের লিখন। সামান্য ত্রুটি হলেই নির্যাতিত হতে হয়। তিনবেলা ভাত খেতে পাবে, শুধু এই আশায়ই সব নির্যাতন মুখ বুজে সহ্য করতে হয়। অথচ ওসব বাড়িতেই হয়তো একই বয়সী ছেলেমেয়ে আছে। এই গৃহকর্মীদের অনেকেরই ভালো বিছানায় ঘুমানোর অধিকার নেই। বাড়ির লোকদের সঙ্গে কথা বলতে বা টেলিভিশন সেটের সামনে বসতে পারে না অনেকে। শিশু বয়সে যে কাজ করা সম্ভব নয়, এমন ভারী কাজও এসব শিশু গৃহকর্মীকে দিয়ে করানো হয়। ফলে তার স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা বাধাগ্রস্ত হয়। ভাতের কষ্ট যাদের গৃহকর্মীতে পরিণত করে; তাদের অনেকেই পুষ্টিহীনতায় ভোগে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ী, দেশে গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা ১ লাখ ২০ হাজার। এদের এক বড় অংশকে প্রতিনিয়তই নির্যাতনের শিকার হতে হয়। দেশে শিশু শ্রমিকদের সুরক্ষায় আইন না থাকায় নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধে তা ভূমিকা রাখতে পারছে না। কোনো কোনো নির্যাতনের ঘটনায় নির্যাতকদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও শেষ পর্যন্ত আপসের চোরাবালিতে তা ঢাকা পড়ে যায়। গরিব গৃহপরিচারিকা ও শিশু শ্রমিকদের অভিভাবকরা মামলা চালিয়ে আরও হয়রানি হওয়ার চেয়ে আপস করাকেই স্বস্তিদায়ক বলে মনে করে। গৃহপরিচারিকা ও শিশু গৃহশ্রমিকদের নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধে কড়া আইনি সুরক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার। এ ব্যাপারে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইনি সংস্কারের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। গৃহপরিচারিকা নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলার উদ্যোগও নেওয়া দরকার।

আইন করে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করা হলে নির্মমভাবে এত শ্রমিককে প্রাণ দিতে হতো না। তাই অবিলম্বে আইন করে এ শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করেও বহু গৃহশ্রমিক নিস্তার পায় না। গৃহকর্তার কাছে অনেক গৃহশ্রমিক যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। তার পরেও চাকরি হারানোর ভয়ে গৃহকর্তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পারে না অনেক শ্রমিক। আবার কোনো পদক্ষেপ নিতে গেলে নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। এতে শেষ পর্যন্ত অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়।

নেহাত পেটের দায়ে পরের বাড়িতে কাজ করতে আসা শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক কর্মীরা গৃহকর্তা বা কর্ত্রীর বীভৎস ও বিচিত্র নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। উদয়াস্ত নয়; আলো ফোটার আগ থেকে মধ্যরাত্রি পর্যন্ত গৃহকর্মীরা নিভৃত গৃহকোণে নীরবে কাজের বিনিময়ে উপযুক্ত মজুরি দূরে থাক, মানুষ হিসেবে প্রাপ্য মর্যাদাও সবসময় জোটে না। শুধু আমাদের দেশের ভেতরেই নয়, আরব তথা গোটা মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আফ্রিকা, আমেরিকা ও দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শ্রমিক গৃহকর্মে নিয়োজিত রয়েছে। তাদের প্রায় আশি ভাগই নারী। তাদের মধ্যে অনেকেই নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, যৌন হয়রানি ও অত্যাচারের শিকার হচ্ছে। আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী তাদের অধিকার কতটুকু রক্ষা করা যাচ্ছে? সম্ভবত কিছুই নয়। অতএব বাংলাদেশ সরকারকে যেমনিভাবে দেশীয় গৃহপরিচারীকাদের স্বার্থরক্ষা, অধিকার প্রতিষ্ঠা ও কল্যাণ সাধন করতে হবে, ঠিক তেমনিভাবে প্রবাসী গৃহপরিচারীকাদেরও স্বার্থরক্ষা, অধিকার প্রতিষ্ঠা ও কল্যাণ সাধনে রাখতে হবে বলিষ্ঠ ভূমিকা। বিশেষ করে ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার স্বার্থে আমরা চাই তাদের আইনী সুরক্ষা। উল্লেখ করা যায় যে, গৃহকর্মে যারা সহায়তা করে, উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে তাদের সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তারা কোনো কৃতদাস বা দাসী নয়। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে গৃহকর্মী বা পরিচারিকাদের বেতনভুক্ত স্টাফের মর্যাদা দেয়া হয়। আমাদের বাংলাদেশে এখনো এক শ্রেণির শিক্ষিত বিবেকবান সচ্ছল গৃহস্থ বা সম্ভ্রান্ত পরিবার আছে যারা বাড়িতে কাজের ছেলে বা মেয়ে রাখলেও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের চেয়ে খুব একটা পার্থক্য নির্ণয় করে না। তবে এ দেশে অর্ধশিক্ষিত, বিবেকহীন, হঠাৎ গজিয়ে ওঠা নব্য ধনী ও মধ্যবিত্ত সংসারে গৃহকর্মীর ওপর বর্বর নির্যাতন অতিমাত্রায় দৃশ্যমান বিধায় এর সাথে মানসিক দৃষ্টিভঙ্গির সমস্যা কিংবা অনেকের অহংবোধের বিকারগ্রস্ততা থাকলেও থাকতে পারে। আবার পরিবার ও সমাজব্যবস্থা অন্য অনেক কিছুর মতো প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে। এই ভাঙ্গা-গড়ার ঘূর্ণাবর্তে এমন আরো অনেক সামাজিক সমস্যা দেখা দেয়া অসম্ভব নয়। 

লেখক: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক

M„nKg©x wbh©vZb

mvewibv ïåv

M„ncwiPvwiKv‡`i Ici wbh©vZb †Kv‡bv †Kv‡bv M„nKΩx ev M„n¯^vgxi Af¨v‡m cwiYZ n‡q‡Q| ZvivI †h gvbyl G DcjwäI nvwi‡q †d‡j‡Q †KD †KD| we‡klZ wkï M„ncwiPvwiKv‡`i Ici wbh©vZb †hfv‡e evo‡Q Zv AvZw¼Z nIqvi g‡Zv| †hŠb nqivwbi wkKvi nIqv †Zv bvix M„ncwiPvwiKv‡`i GKvs‡ki Rb¨ wbZ¨‰bwgwËK NUbv| GgbwK wkïivI †invB cv‡”Q bv| hviv wkï‡`i Ici K_vq K_vq wbh©vZb Pvjvq, Zv‡`i gvbwmK my¯’Zv wb‡qI cÖkœ IVv ¯^vfvweK|

†`‡ki `wi`ª Rb‡Mvôxi GKwU eo Ask A‡b¨i evwo‡Z M„nKg©x wn‡m‡e KvR K‡i| wbh©vZb †hb Zv‡`i Kcv‡ji wjLb| mvgvb¨ ÎywU n‡jB wbh©vwZZ n‡Z nq| wZb‡ejv fvZ †L‡Z cv‡e, ïay GB AvkvqB me wbh©vZb gyL ey‡R mn¨ Ki‡Z nq| A_P Ime evwo‡ZB nq‡Zv GKB eqmx †Q‡j‡g‡q Av‡Q| GB M„nKg©x‡`i A‡b‡KiB fv‡jv weQvbvq Nygv‡bvi AwaKvi †bB| evwoi †jvK‡`i m‡½ K_v ej‡Z ev †Uwjwfkb †m‡Ui mvg‡b em‡Z cv‡i bv A‡b‡K| wkï eq‡m †h KvR Kiv m¤¢e bq, Ggb fvix KvRI Gme wkï M„nKg©x‡K w`‡q Kiv‡bv nq| d‡j Zvi ¯^vfvweK †e‡o IVv evavMÖ¯Í nq| fv‡Zi Kó hv‡`i M„nKg©x‡Z cwiYZ K‡i; Zv‡`i A‡b‡KB cywónxbZvq †fv‡M|

evsjv‡`k cwimsL¨vb ey¨‡ivi Rwic Abyhvqx, †`‡k M„nK‡g© wb‡qvwRZ wkïi msL¨v 1 jvL 20 nvRvi| G‡`i GK eo Ask‡K cÖwZwbqZB wbh©vZ‡bi wkKvi n‡Z nq| †`‡k wkï kÖwgK‡`i myiÿvq AvBb bv _vKvq wbh©vZb-wbcxob e‡Ü Zv f~wgKv ivL‡Z cvi‡Q bv| †Kv‡bv †Kv‡bv wbh©vZ‡bi NUbvq wbh©vZK‡`i weiæ‡× gvgjv n‡jI †kl ch©šÍ Avc‡mi †Pvivevwj‡Z Zv XvKv c‡o hvq| Mwie M„ncwiPvwiKv I wkï kÖwgK‡`i AwffveKiv gvgjv Pvwj‡q AviI nqivwb nIqvi †P‡q Avcm Kiv‡KB ¯^w¯Í`vqK e‡j g‡b K‡i| M„ncwiPvwiKv I wkï M„nkÖwgK‡`i wbh©vZb-wbcxob e‡Ü Kov AvBwb myiÿvi e¨e¯’v Kiv `iKvi| G e¨vcv‡i gvbevwaKvi cÖwZôvb¸‡jv‡K AvBwb ms¯‹v‡ii mywbw`©ó cÖ¯Íve wb‡q GwM‡q Avm‡Z n‡e| M„ncwiPvwiKv wbh©vZ‡bi weiæ‡× mvgvwRK m‡PZbZv M‡o †Zvjvi D‡`¨vMI †bIqv `iKvi|

AvBb K‡i kÖwgK‡`i AwaKvi wbwðZ Kiv n‡j wbg©gfv‡e GZ kÖwgK‡K cÖvY w`‡Z n‡Zv bv| ZvB Awej‡¤^ AvBb K‡i G k«wgK‡`i AwaKvi cÖwZôvi miKv‡ii cÖwZ †Rvi `vwe Rvbvw”Q| †fvi †_‡K ga¨ivZ ch©šÍ KvR K‡iI eû M„nkÖwgK wb¯Ívi cvq bv| M„nKZ©vi Kv‡Q A‡bK M„nkÖwgK †hŠb wbh©vZ‡bi wkKvi nq| Zvi c‡iI PvKwi nviv‡bvi f‡q M„nKZ©vi weiæ‡× c`‡ÿc wb‡Z cv‡i bv A‡bK kÖwgK| Avevi †Kv‡bv c`‡ÿc wb‡Z †M‡j wbh©vZ‡bi gvÎv †e‡o hvq| G‡Z †kl ch©šÍ A‡b‡KB AvZ¥nZ¨vi c_ †e‡Q wb‡Z eva¨ nq|

†bnvZ †c‡Ui `v‡q c‡ii evwo‡Z KvR Ki‡Z Avmv wkï I cÖvßeq¯‹ Kg©xiv M„nKZ©v ev KΩxi exfrm I wewPÎ wbh©vZ‡bi wkKvi n‡q _v‡K| D`qv¯Í bq; Av‡jv †dvUvi AvM †_‡K ga¨ivwÎ ch©šÍ M„nKg©xiv wbf…Z M„n‡Kv‡Y bxi‡e Kv‡Ri wewbg‡q Dchy³ gRywi `~‡i _vK, gvbyl wn‡m‡e cÖvc¨ gh©v`vI memgq †Rv‡U bv| ïay Avgv‡`i †`‡ki †fZ‡iB bq, Avie Z_v †MvUv ga¨cÖvP¨, BD‡ivc, Avwd«Kv, Av‡gwiKv I `wÿY Gwkqvmn we‡k¦i wewfbœ †`‡kI evsjv‡`‡ki D‡jøL‡hvM¨ msL¨K kÖwgK M„nK‡g© wb‡qvwRZ i‡q‡Q| Zv‡`i cÖvq Avwk fvMB bvix| Zv‡`i g‡a¨ A‡b‡KB bvbvfv‡e kvixwiK I gvbwmK wbh©vZb, †hŠb nqivwb I AZ¨vPv‡ii wkKvi n‡”Q| AvBGjI Kb‡fbkb Abyhvqx Zv‡`i AwaKvi KZUyKy iÿv Kiv hv‡”Q? m¤¢eZ wKQyB bq| AZGe evsjv‡`k miKvi‡K †hgwbfv‡e †`kxq M„ncwiPvixKv‡`i ¯^v_©iÿv, AwaKvi cÖwZôv I Kj¨vY mvab Ki‡Z n‡e, wVK †Zgwbfv‡e cÖevmx M„ncwiPvixKv‡`iI ¯^v_©iÿv, AwaKvi cÖwZôv I Kj¨vY mva‡b ivL‡Z n‡e ewjô f~wgKv| we‡kl K‡i ag©xq I mvgvwRK g~j¨‡eva mgybœZ ivLvi ¯^v‡_© Avgiv PvB Zv‡`i AvBbx myiÿv| D‡jøL Kiv hvq †h, M„nK‡g© hviv mnvqZv K‡i, DbœZ we‡k¦i †`k¸‡jv‡Z Zv‡`i m¤ú‡K© `…wófw½i A‡bK cwieZ©b n‡q‡Q| Zviv †Kv‡bv K…Z`vm ev `vmx bq| DbœZ we‡k¦i †`k¸‡jv‡Z M„nKg©x ev cwiPvwiKv‡`i †eZbfy³ ÷v‡di gh©v`v †`qv nq| Avgv‡`i evsjv‡`‡k GL‡bv GK †kÖwYi wkwÿZ we‡eKevb m”Qj M„n¯’ ev m¤£všÍ cwievi Av‡Q hviv evwo‡Z Kv‡Ri †Q‡j ev †g‡q ivL‡jI cwiev‡ii Ab¨vb¨ m`m¨‡`i †P‡q Lye GKUv cv_©K¨ wbY©q K‡i bv| Z‡e G †`‡k Aa©wkwÿZ, we‡eKnxb, nVvr MwR‡q IVv be¨ abx I ga¨weË msmv‡i M„nKg©xi Ici ee©i wbh©vZb AwZgvÎvq `…k¨gvb weavq Gi mv‡_ gvbwmK `…wófw½i mgm¨v wKsev A‡b‡Ki Ans‡ev‡ai weKviMÖ¯ÍZv _vK‡jI _vK‡Z cv‡i| Avevi cwievi I mgvRe¨e¯’v Ab¨ A‡bK wKQyi g‡Zv cÖwZwbqZ e`‡j hv‡”Q| GB fv½v-Movi N~Y©ve‡Z© Ggb Av‡iv A‡bK mvgvwRK mgm¨v †`Lv †`qv Am¤¢e bq|

†jLK: wek¦we`¨vjq wkÿK

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্যাতন


আরও
আরও পড়ুন