Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘একটা সময় মনে হয়েছে আমি মারা যাব। মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়েছিল’

ঢাবিতে ছাত্রলীগের নির্মম নির্যাতন

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩, ১০:১২ এএম

'আমাকে গেস্টরুমে নেয়া হয়েছে, টর্চার সেলে নেয়া হয়েছে। খাবার, পানি না দিয়ে লাঠি, স্টাম্প দিয়ে আবরারের মতো আমাকে নির্যাতন করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আমাদের হলে সিসি ক্যামেরা না থাকার কারণে হয়ত বিষয়গুলো আসেনি। ভোরবেলা একটা সময় মনে হয়েছে আমি মারা যাব। আমাকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়েছিল।'

কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে গেস্টরুম নির্যাতনের স্বীকার হওয়া মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়াদ। সোমবার (২৩ জুন) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্যাতনের বর্ণনা দেন 'শিবির সন্দেহে' ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার হওয়া ওই শিক্ষার্থী।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শাহরিয়াদ বলেন, 'আমাকে রোববার ডেকে নিয়ে ফোন চেক করে বলে আমি শিবির করি। তারপর আমাকে ধরে পদ্মা ব্লকের ৪০০৮ নম্বর কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে মাজেদ রহমান পাইপ দিয়ে আমাকে জোরে আঘাত করে। এরপর ইউসুফ তুহিন চড় থাপ্পড় দেয়। তারপর সাকিবুল সুজন এসে আমার উরুতে পাইপ দিয়ে চার-পাঁচটা বাড়ি দেয়। এরপর সাংবাদিকরা এলে আলোচনার মাধ্যমে হল থেকে বের করে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে পরে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত হল থেকে বের হতে নিষেধ করে। ছাত্রলীগ নেতারা রাতভর আমাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করে।'

তিনি আরো বলেন, ‘সকালে হলে আমাকে আবার চড় থাপ্পড় দেয়া শুরু করে। তারপর কান টেনে, ঘাড় চাপে। একজন চুল টানে, কান টানে। এরপর আমার মাকে ফোন করে ভিডিও কল দেয় এবং বলে তুই স্বীকার কর, নইলে তোর মারে ফোন দিয়ে তোরে মারমু যেন তোর মা স্ট্রোক করে। এরপর একই সময়ে মাহমুদকে পাশে চড়, থাপ্পড়, ঘুষি দিয়ে মারতে থাকে। তারপর আমাকে বেল্ট দিয়ে মারে। তারপর ব্রাজিলের পতাকা ছিল বারান্দায় বাঁশে লাগানো। সেটা খুলেও মারে।’

নির্যাতনের সাথে জড়িত সবাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী উল্লেখ করে শাহরিয়াদ বলেন, ছাত্রলীগ নেতা মাজেদ, আহমেদ ফয়সাল, শাহনেওয়াজ বাবু, ইউসুফ তুহিন, শাকিবুল হাসান সুজন সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করেছে। এরা সবাই তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী। বায়েজিদ বোস্তামী, আবুল হাছান সাঈদী এরাও এসময় উপস্থিত ছিল। এছাড়া রাজু, প্রান্ত এবং শুভ- এরা ছোট ভাই মাহমুদকে ব্যাপক মারধর করেছে।

শিবির সম্পৃক্ততার বিষয় স্বীকার করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি নামাজ কালাম পড়ি, বলতে পারেন প্র্যাক্টিসিং মুসলিম। এসব দেখে আমাকে অনেকে শিবির বলে সন্দেহ করত। কিন্তু এগুলোর সাথে আমার কখনো সম্পৃক্ততা ছিল না। আমাদের কনভারসেশনের মধ্যেও এমন কিছু ছিল না। তারা আমাকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করে। তাদের নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য আমি সেসময় এটা বলেছি। কিন্তু মূলত আমি এসবের সাথে কখনো জড়িত ছিলাম না।

বিচার দাবি করে তিনি বলেন, আমি চাই না আমার মতো এ ধরনের নির্যাতনের স্বীকার কেউ হোক। জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই আমি। একইসাথে আমি আইনি পদক্ষেপ নেব।

এদিকে মারধর বিষয় অস্বীকার করেন অভিযুক্তরা। তবে তারা দাবি করেন শিবিরের সাথে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শাহরিয়াদ। একইসুরে কথা জানান ছাত্রলীগ ও হল প্রশাসন।

এ বিষয়ে বিজয় একাত্তর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির বলেন, ছাত্রশিবিরের সাথে ওই শিক্ষার্থীর সম্পৃক্ততা আছে বলে জেনেছি। সে নিজেও বিষয়টি স্বীকার করেছে। সে এখন অনুতপ্ত। সে বলেছে, আমি এটা বুঝতে পারিনি। যেহেতু সে স্বীকার করেছে, এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী বিষয়টি প্রক্টর দেখবেন।

প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, হল প্রশাসন যেভাবে সহযোগিতা চেয়েছে আমরা করেছি। অভিযোগের বিষয়ে কথা হয়েছে। সে (ভুক্তভোগী) লিখিত দিয়েছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিবিরোধী কোনো কাজ করবে না। পরে তাকে পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত রোববার (২২ জানুয়ারি) রাত ১১টা থেকে সোমবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল পর্যন্ত কয়েক ধাপে ওই শিক্ষার্থীর ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠে এসব ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। নির্যাতনের শিকার শাহরিয়াদ ২০১৯-২০ সেশনের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।



 

Show all comments
  • GOLAM RABBI ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩, ১০:২৮ এএম says : 0
    হায় এ কেমন বর্বরতার যুগ চলতেছে !
    Total Reply(0) Reply
  • GOLAM RABBI ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩, ১০:২৮ এএম says : 0
    হায় এ কেমন বর্বরতার যুগ চলতেছে !
    Total Reply(0) Reply
  • FlsHLXX ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩, ১০:৫৯ এএম says : 0
    Drugs information leaflet. Short-Term Effects. flagyl for sale Best trends of medicines. Get information here.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্যাতন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ