Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজধানীতে ত্রুটিপূর্ণ ভবন নির্মাণ

প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৫ এএম, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

রাজধানীতে বাসা-বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে এবং ভবনের নিরাপত্তার জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)-এর যে বিধিমালা রয়েছে, তা মানা হচ্ছে না। মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় স্পষ্টভাবে বলা আছে, কোনো ভবনে বসবাস বা ব্যবহারের আগে রাজউক থেকে ব্যবহার বা বসবাসের সনদ নিতে হবে। দেখা যাচ্ছে, এ আইন চালু হওয়ার পর থেকে বিগত ১০ বছরে রাজধানীতে প্রায় ৪০ হাজার ভবন নির্মিত হয়েছে। অথচ এই নিয়ম মেনে সনদ নেয়া হয়েছে মাত্র ১৬২টি ভবনের ক্ষেত্রে। নগরবিদরা বলছেন, ব্যবহার সনদ না নেয়ায় নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মিত হচ্ছে কিনা, তা নজরদারি করা সম্ভব হচ্ছে না। কোনো ভবনমালিক অনিয়ম করে নকশায় পরিবর্তন আনলেও তা ধরা পড়ছে না। ফলে নির্মিত ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। ভবন ব্যবহার সংক্রান্ত সনদ না নিলে রাজউক থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। রাজউক অন্য বিষয়ে যতটা তৎপর, আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ততটাই উদাসীন। এর ফলে ভবন মালিকরাও নিয়মের ধার ধারছে না। বিষয়টি ভবনের নিরাপত্তা, সর্বোপরি জানমালের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বিশেষ কারণ রয়েছে।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নকশা অনুযায়ী বসবাসের ভবন নির্মাণের নিয়ম-কানুন না মানার প্রবণতা বহুকাল ধরেই চলছে। বিশেষ করে রাজধানীতে এ নিয়ম খুব কমই মানা হচ্ছে। মাঝে মাঝে রাজউক নকশাবর্হিভূত ভবনের বিরুদ্ধে অভিযান চালালেও তাতে সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। ভবন মালিকের সাথে রাজউকের দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিদের আপস-রফার বিষয়টি কারো অজানা নয়। প্রভাবশালী মালিকদের ভবনে ত্রæটি থাকলেও তা এড়িয়ে যাওয়া হয়। রাজউকের উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ শাখার এক কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, অনেক ক্ষেত্রে ভবন নির্মাণের সময় অনুমোদিত নকশার বিচ্যুতি ঘটছে। নির্মাণের সময় নকশার চাইতে ডানে-বাঁয়ে এক-দেড় ফুট বাড়িয়ে বা আট তলার অনুমোদন নিয়ে নয়তলা বানিয়ে ফেলছে। নির্মাণ শেষে ব্যবহার সনদ না নেয়ায় এসব ভবন মালিকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। অনেক সময় অনুমোদিত নকশায় ভবনের নিচতলার পুরোটা গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য রাখার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। একপাশে গাড়ি পার্কিং রেখে অন্যপাশে ফ্ল্যাট তৈরি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি, সঠিক নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ না করার ফলে অনেক ভবনে ফাটল ধরেছে এবং হেলে পড়েছে। এর ফলে আশপাশের ভবনও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। তখন ত্রæটিপূর্ণ ওই ভবন পরিত্যাক্ত বা ভেঙ্গে ফেলা ছাড়া গতি থাকে না। সঠিক নিয়ম ও নকশা অনুসরণ করলে ভবন মালিককে এই বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে হতো না। ২০০৮ সালের ঢাকা মহানগর ইমারত বিধিমালায় দ্বিতীয় অধ্যায়ের ১৮ ধারায় বলা হয়েছে, ইমারত আংশিক বা সম্পূর্ণ নির্মাণ শেষের পরে তা ব্যবহার বা বসবাসের জন্য সনদ নিতে হবে। এই সনদ পাওয়ার আগে ইমারত আংশিক বা সম্পূর্ণ কোনো অবস্থাতেই ব্যবহার করা যাবে না। পাঁচ বছর পরপর এটি নবায়ন করা বাধ্যতামূলক। মূল কথা হচ্ছে, একটি ভবন নির্মাণ কোনো সাময়িক বিষয় নয়, এতে বংশ পরম্পরায় বসবাসের সুযোগ রয়েছে। কাজেই যে ভবনটি দীর্ঘকাল ব্যবহারের জন্য নির্মাণ করা হবে, তা সঠিক নিয়ম ও নকশা অনুযায়ী ভবন মালিকদের স্বার্থেই করা উচিত। ত্রæটিপূর্ণ নকশায় একবার ভবন নির্মিত হয়ে গেলে, তা পুনরায় সংস্কার করা অত্যন্ত কঠিন এবং ব্যয়বহুল। এ কথা সবার জানা, আন্তর্জাতিক জরিপে ঢাকাকে বসবাসের অনুপযোগী হিসেবে অনেক আগেই চিহ্নিত করা হয়েছে। মধ্যম মাত্রার ভূমিকম্প হলে সরকারি হিসেবেই প্রায় ৭৩ হাজার ভবন ধ্বসে পড়বে। লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হবে। এমন এক ভয়াবহ বিপজ্জনক রাজধানীতে যদি নতুন করে ত্রæটি-বিচ্যুতি সম্পন্ন এবং নকশা বর্হিভূতভাবে নতুন ভবন নির্মিত হয়, তবে তা আত্মঘাতী এবং ধ্বংসকে ডেকে আনা ছাড়া কিছু নয়।
নকশা অনুযায়ী এবং বসবাস উপযোগী ভবন নির্মিত হচ্ছে কিনা, তা দেখার দায়িত্ব রাজউকের। ৪০ হাজার ভবনের মধ্যে মাত্র ১৬২টি ভবনের নিয়ম মানা থেকে স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, এক্ষেত্রে রাজউকের চরম গাফিলতি রয়েছে। নিয়মিত তদারকি করলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, রাজউক কেবল আইন করেই তার দায় সেরেছে। আইনের সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে কিনা, তা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করছে না। নিরাপদ বাসভবন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে রাজউকের এই অমনোযোগিতা ও উদাসীনতা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। রাজউকের উচিত নকশা অনুযায়ী নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দেয়ার পাশাপাশি ভবনটি তা মেনে গড়ে উঠছে কিনা, তা নিয়মিত নজরদারি করা। নগরবিদরা বলছেন, ভবন ব্যবহার সনদ ছাড়া ভবনে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ না দেয়ার আইন করা হলে, নকশাবর্হিভূত ভবন নির্মাণ অনেকাংশে কমিয়ে আনা যাবে। আমরাও মনে করি, ভবন মালিকদের বাধ্য করতে এ ধরনের একটি আইন করা আবশ্যক। ভবন মালিকদেরও আহŸান জানাই, তারা যাতে ত্রæটিপূর্ণ ও নকশার বিকৃতি ঘটিয়ে ভবন নির্মাণ না করেন। কারণ তাদের বংশধররাই নির্মিত ভবনে বসবাস করবে। ভবিষ্যত বংশধরদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই আইন মেনে ও যথাযথ নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করা উচিত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজধানী

১৩ ডিসেম্বর, ২০২২
১৭ নভেম্বর, ২০২২
১১ অক্টোবর, ২০২২
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন