হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
যে বিষয়গুলো সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সেগুলোকে আদালতের মাধ্যমে ফয়সালা করার এক মারাত্মক অশুভ প্রবণতা অতীতেও লক্ষ করা গিয়েছিল, বর্তমানেও যাচ্ছে। গত ৩ জানুয়ারি বুধবার হাইকোর্টে একটি রিট মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ৪ জানুয়ারি এ সম্পর্কে একটি জাতীয় বাংলা দৈনিকে যে রিপোর্ট ছাপা হয়েছে তার শিরোনাম হলো, ‘আট দিবস পালন সবার জন্য বাধ্যতামূলক করতে রিট’। এ সম্পর্কে যে রিপোর্ট ছাপা হয়েছে, তা নিম্নরূপ: মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা ও শহীদ বুদ্ধিজীবী সংক্রান্ত আটটি দিবস রাজনৈতিক দলসহ সব নাগরিকের পালন বাধ্যতামূলক করতে নির্দেশনা চেয়ে রিট করা হয়েছে। এসব দিবস সবার জন্য পালন বাধ্যতামূলক করা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত আসন্ন জাতীয় নির্বাচন স্থগিতের আরজি জানানো হয়েছে।
গত বুধবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোজাম্মেল হক ও মো. শহীদুল রিট আবেদনটি করেন। এর ওপর বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে শুনানি হওয়ার কথা ছিল তবে শুনানি হয়েছে কিনা সেই সম্পর্কে খবরের কাগজে কোন রিপোর্ট দেখা যায়নি।
রিট আবেদনের বিষয়টি জানিয়ে আইনজীবী মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস, ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস ও ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান রাজনৈতিক দলসহ সব নাগরিকের জন্য পালন বাধ্যতামূলক করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করা হয়েছে। কেননা, স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও এসব দিবস সবার পালনে নিষ্ক্রিয়তা দেখা গেছে।
রাজনৈতিক দলগুলোকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে জানিয়ে রিট আবেদনকারী এই আইনজীবী বলেন, এসব দিবস পালনে ব্যর্থ হলে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন বাতিল চাওয়া হয়েছে। এসবের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত রাখার আরজি রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সম্পর্কে দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে একজনের মধ্যেও কোন মত দ্বৈততা ও বিতর্ক নাই। সেটি নিয়ে রিট করার কী প্রয়োজন ছিল সেটি মোটেই বোধগম্য নয়। অনুরূপভাবে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস প্রভৃতি দিবস নিয়েও দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে একজন মানুষের মাঝেও বিতর্ক নাই। কিন্তু ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান নিয়ে অবশ্যই বিতর্ক আছে। এটি আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী ঘরানার রাজনৈতিক শ্লোগান। এর পাল্টা আরেকটি শ্লোগান রয়েছে। সেটি হলো, ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’। এই দুটি শ্লোগান শুধুমাত্র দুটি রাজনৈতিক দলেরই শ্লোগান নয়। এটি দুটি রাজনৈতিক ঘরানার মতাদর্শ প্রতিফলনকারী দুটি শ্লোগান। তাই দেখা যায়, আওয়ামী লীগ বা এই ধরনের সেক্যুলার, কিন্তু বামপন্থী নয়, এই ধরনের রাজনৈতিক দল জয় ‘বাংলা শ্লোগান’ দেয়। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন তারা জয় বাংলা শ্লোগান দেয়। ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানের মাধ্যমে তারা বোঝাতে চায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ইত্যাদি রাজনৈতিক আদর্শ।
পক্ষান্তরে যারা বাংলাদেশ জিন্দাবাদ শ্লোগান দেন তারা এই শ্লোগানের মাধ্যমে বোঝাতে চান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, আল্লাহর প্রতি ঈমান, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রভৃতি। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং অন্যান্য ইসলামী রাজনৈতিক দল ক্ষমতার বাইরে থাকুক অথবা ক্ষমতায় থাকুক, তারা বাংলাদেশ জিন্দাবাদকে জাতীয় শ্লোগান হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।
\দুই\
আওয়ামী ঘরানার এবং বিএনপি ঘরানার বাইরে আরেকটি ঘরানা রয়েছে যাদেরকে বলা হয় বাম ঘরানা। এদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (ইনু), রাশেদ খান মেননের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ প্রমুখ। তারা জয় বাংলাও বলে না, বাংলাদেশ জিন্দাবাদও বলে না। তারা বলে, জয় বাংলার মেহনতী মানুষ। অবশ্য এই মুহুর্তে বামদের প্রায়োরিটি যে কি সেটা অনেকে বুঝে উঠতে পারে না। এক সময় হাতুড়ি, কাস্তে লাল পতাকা, সর্বহারার এক নায়কত্ব ইত্যাদি ছিল তাদের রাজনৈতিক আদর্শ। এখন তাদের রাজনৈতিক আদর্শ যে কি, সেটি শিক্ষিত সচেতন মানুষও বুঝে উঠতে পারেন না। এরা শ্রমিক কৃষক, মুটে মজুর তথা মেহনতী মানুষের মুক্তির কথা বাদ দিয়ে এখন আওয়ামী লীগের লাইনে কথা বলা শুরু করেছেন। আর সেটি হলো সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ মৌলবাদ প্রভৃতি। এক সময় এই বামেরা দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। এক দলের কেবলা ছিল বেইজিং বা পিকিং। আরেক দলের কেবলা ছিল মস্কো। এখন উভয় দলেরই কেবলা হয়ে গেছে ভারত বা দিল্লী, যেমন আওয়ামী লীগের কেবলা অনেক আগে থেকেই নির্ধারণ করা আছে ভারত বা দিল্লী।
এছাড়া আরো ছয় সাতটি দিবস রয়েছে যেগুলোকে জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করা বাধ্যতামূলক করার জন্য তারা ঐ রিট আবেদনে আরজি পেশ করেছেন। আবেদনে বলা হয়েছে যে, ‘স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও এসব দিবস সবার পালনে নিষ্ক্রিয়তা দেখা গেছে’। এসব দিবস পালনে ব্যর্থ হলে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন বাতিল চাওয়া হয়েছে। এসবের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত রাখার আরজি রয়েছে।
রিট আবেদনের উপসংহারে বলা হয়েছে যে, এসব দিবস যে সব রাজনৈতিক দল পালন করবে না সে সব রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। এছাড়া যতদিন পর্যন্ত আদালতে এই সব বিষয়ে ফয়সালা না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত দেশের পরবর্তী নির্বাচন বাতিল করতে হবে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ৪ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বা তারপর কোন এক তারিখে রিট আবেদনের ওপর হাই কোর্টে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
\তিন\
যারা এই রিট আবেদনটি করেছেন তারা কেন এবং কোন দৃষ্টিকোণ থেকে এই আবেদন করেছেন সেটি আমাদের বোধগম্য নয়। যখন কোন রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে দেশ তীব্রভাবে বিভক্ত হয়ে পড়ে তখন সেই বিষয়ে উচ্চ আদালতকে মোটেই জড়িত হওয়া উচিত নয়। উদাহরণ স্বরূপ ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানটির কথা। এই শ্লোগানটির পক্ষে যেমন কিছু জন সমর্থক আছে তেমনি বিপক্ষেও কম লোক নাই। তর্কের খাতিরে ধরা হোক যে আজ হাইকোর্ট ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানকে বাধ্যতামূলক করল। আর কালকে যদি দেশের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয় এবং ২০ দলীয় জোট ক্ষমতায় আসে তাহলে গণ রায়ের ভিত্তিতে এবং পার্লামেন্টের বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠ সদস্যের ভোটের ভিত্তিতে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদকে’ জাতীয় শ্লোগান হিসেবে গ্রহণ করা হবে। তাহলে যে হাইকোর্টের রায়ের ভিত্তিতে জয় বাংলাকে জাতীয় শ্লোগান করা হয়েছিল সেই হাইকোর্টের মান মর্যাদা কোথায় থাকে? তাহলে উচ্চ আদালত অর্থাৎ হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের মান মর্যাদা এবং অবস্থানকে বিপন্ন করার এসব আত্মঘাতি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে কার স্বার্থে। শুধুমাত্র জয় বাংলাই নয়, ঐ আটটি দিবসের মধ্যে এমন কতকগুলো দিবস রয়েছে যেগুলো তীব্র বিতর্কমূলক এবং যেগুলো ভবিষ্যতে উচ্চ আদালতকে জনগণের নিকট আস্থার সংকটে ফেলে দিতে পারে।
\চার\
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, এর আগে উচ্চ আদালত ৫ম, ৭ম এবং ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করেছে। এসব নিয়ে সেদিনও অনেক কথা হয়েছিল। বিরোধীদলের এবং অনেক প্রবীণ আইনজীবীর মতামত উপেক্ষা করে ঐসব রায় কার্যকর করা হয়েছে। বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী সব সময়ই সরকারের এসব পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছে। তারা পরিষ্কার ভাষায় বলেছে যে, আগামীতে ক্ষমতায় এলে তারা উচ্চ আদালতের এসব রায় পরীক্ষা নিরীক্ষা করবেন এবং পার্লামেন্টের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংশোধন করবেন। ৫ম সংশোধনী রায়ের একস্থানে বলা হয়েছে যে, সংবিধানে গণভোটের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই প্রেসিডেন্ট হিসেবে জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান যে গণভোট অনুষ্ঠান করেন সেটিও অবৈধ এবং বাতিলযোগ্য। শুধুমাত্র মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াই গণভোট করেননি, গণভোটের নজির এই উপমহাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশে আছে। গণভোটে অংশগ্রহণ করেন কয়েক কোটি লোক। তাদের মতামতকে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ সামারিলি অর্থাৎ তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল করে দিচ্ছে। এই বিষয়টি সাধারণ মানুষের কাছে বিসদৃশ্য মনে হয়। তবুও আমরা কোনো সরাসরি মন্তব্য করছি না। আপিল বিভাগ এই বিষয়টির ওপর আলোকপাত করলে জনগণ উপকৃত হবেন।
ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে পাকিস্তান আমল এবং বাংলাদেশ আমলের রাজনীতি যারা তীক্ষèভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন তারা বলছেন যে, তিনটি সংশোধনী উচ্চতর আদালত বাতিল করেছেন সেগুলো শুধুমাত্র আইনগত বিষয় নয়। এগুলো মূলত রাজনৈতিক বিষয়। সেই রাজনৈতিক বিষয়কে ফয়সালার জন্য আদালতে টেনে আনা উচিত হয়নি। এগুলোর সুরাহা হওয়া উচিত ছিল রাজপথে অথবা সংসদে। রাজপথ বলতে বোঝাচ্ছি আমরা জনমত গঠনের মাধ্যম। সভা-সমিতি, মিছিল-মিটিং। যে ইস্যুটি আদালত ফয়সালা করেছে সেই ইস্যুটি গণভোটে নিয়ে যাওয়া যেত। অথবা নির্বাচনী ইস্যু করা যেত। ৫ম সংশোধনীর পক্ষে এবং বিপক্ষে প্রচার করার অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া যেত। যারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আসতেন তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের রায় মোতাবেক ইস্যুটির ফয়সালা করতেন। কিন্তু সেটা না করে বিষয়টি আদালতে গেল কেন? আমাদের জাতীয়তাবাদ কী হবে? বাঙালি জাতীয়তাবাদ নাকি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ? এই প্রশ্নের মীমাংসা করবে কে? আদালত? নাকি জনগণ? আমাদের রাষ্ট্রীয় আদর্শ কী হবে? সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতা? নাকি আল্লাহর প্রতি ঈমান? সংবিধানে সেক্যুলারিজম অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান। অনুরূপভাবে সেক্যুলারিজমকে বাদ দিয়ে ‘আল্লাহর প্রতি ঈমান’ এই বাক্য প্রতিস্থাপন করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। বাংলাদেশের এই দুই কালজয়ী রাজনীতিকের রাজনীতি ছিল দুইটি ধারার। সেই দুইটি ধারা আজও বাংলাদেশে রেল লাইনের মতো সমান্তরালভাবে বয়ে চলেছে। একটি হলো সেক্যুলারিজম ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনীতি। অপরটি হলো বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধের রাজনীতি। এই দুইটি ধারা কোনোদিন এক মোহনায় এসে মিলবে না। মিলতে পারে না। এমন মৌলিক রাজনৈতিক ইস্যুর ফয়সালা হাইকোর্ট বা আপিল বিভাগ করবে কীভাবে? আর করবেই বা কেন?
অতীতের তিনটি সংশোধনী বাতিলের ব্যাপারে যা ঘটবার ঘটে গেছে। আগামীতে নির্বাচনে যারা মেজরিটি পাবেন তারা পার্লামেন্টের মাধ্যমে ঠিক করবেন, এসব বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। এসব ইস্যু পেন্ডিং রেখে আবার আট দিবস বাধ্যতামূলকভাবে পালন করার নতুন ইস্যু সৃষ্টি করার এই অপচেষ্টা কেন, সেটি কারো বোধগম্য নয়। এখন বরং সকলের উচিত, যতদূর সম্ভব বিতর্ক পরিহার করে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য একটি অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা চালানো।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।