হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
সংবিধান বা আইন মোতাবেক, আগামী পার্লামেন্ট নির্বাচন এই বছরটি শেষ হওয়ার আগে আগেই অথবা আগামী বছর শুরু হওয়া মাত্রই অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের বা বিভিন্নমুখী সমীকরণ বা মেরুকরণ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সচেতন নাগরিকমাত্রই জানেন, এ ধরনের নড়াচড়া শুরু হয়েছে এবং এর কিছু লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আমি যেহেতু একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং আমাদের দলটি একটি সুনির্দিষ্ট ও সুপরিচিত রাজনৈতিক জোটের অন্তর্ভুক্ত, সেহেতু নিজে কোনো কিছু বলতে বা লিখতে গেলেই আমাকে সাবধান হতে হয়। তবে আমি এ ব্যাপারে নিজের সৃষ্টি করা একটি নিয়ম মেনে চলি। তা হলো, সত্য বলতে না পারলেও, অসত্য বলব না, তথা অসত্য প্রচার করব না। যদি কোনো মতামত দিই বা কোনো মূল্যায়ন লিপিবদ্ধ করি, তাহলে আমার ওই বক্তব্যের একাধিক রকমের মূল্যায়ন হতে পারে বা পাঠক একাধিক রকমের উপসংহার টানতে পারেন। প্রথম ভুল বোঝাবুঝি হওয়ার সম্ভাবনাটি হচ্ছে লেখকের পরিচয় নিয়ে। মতামত বা মূল্যায়ন কি ব্যক্তি মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীকের, নাকি কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীকের? এই প্রশ্নের উত্তর একেকজন একেকভাবে আবিষ্কার করবেন। আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমাকে সাবধান হতে হবে। কারণ আমি একটি দলের প্রধান এবং দলটি একটি জোটের সদস্য। কেউ-না-কেউ আমাকে প্রশ্ন করতেই পারেন: ‘আপনি জেনারেল ইবরাহিম দলের প্রধান হওয়ার বহু আগে দলবিহীন একজন নাগরিক হিসেবে আপনার মতামত ব্যক্ত করতেন। এখন দলের প্রধান হওয়ার কারণে, আপনি কি দলের চিন্তাচেতনার বাইরে গিয়ে নিজস্ব কোনো মতামত ব্যক্ত করতে পারবেন না?’ আবার, অন্য কেউ-না-কেউ আমাকে প্রশ্ন করতেই পারেন: ‘আপনার দল একটি জোটের অন্তর্ভুক্ত বলে কি আপনি নিজের স্বাধীন চিন্তাচেতনা কোথাও তালা মেরে রেখেছেন যে, দলীয় বা জোটের চিন্তার বাইরে কিছু প্রকাশ করবেন না?’ আমার উত্তর হবে: ব্যক্তি ইবরাহিম এবং পার্টি চেয়ারম্যান ইবরাহিম এই উভয় ব্যক্তিত্ব দ্বারা আলাদা আলাদাভাবে কোনো জিনিসের মূল্যায়ন বা কোনো জিনিস প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা বা মতামত উপস্থাপন করা খুবই কঠিন।
এরূপ কাজ আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশে দুষ্কর; তাই ওই চেষ্টা না করাই ভালো। আমার উত্তরের আর একটা অংশ অনেকটা এ রকম : আমার লেখনী দিয়ে আমাদের পার্টি বা আমাদের জোট বিব্রত হোক বা স্পর্শকাতরতায় ভুগুক কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হোক সেটা কোনো অবস্থাতেই চাই না। তবে এটাও নিবেদন করে রাখতে হবে যে, আমাদের দলের চিন্তাভাবনা, চেয়ারম্যানের চিন্তাভাবনা দিয়ে বৃহদংশেই প্রভাবিত। একই ধারাবাহিকতায় এটাও নিবেদন করে রাখতে হবে, ২০ দলীয় জোটের চিন্তাভাবনা, জোটের প্রধান শরিকের চিন্তা-ভাবনা দিয়ে বৃহদংশেই প্রভাবিত; যেমন ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের চিন্তাভাবনা, জোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের চিন্তাভাবনা দিয়েই বৃহদংশে প্রভাবিত। না বললেই নয় যে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের চিন্তাভাবনাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তাভাবনা দিয়ে অবশ্যই বৃহদংশে প্রভাবিত; যেমন রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চিন্তাভাবনাও সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিন্তাভাবনা দিয়েই বহুলাংশে প্রভাবিত। সম্মানিত পাঠক, যে অনুচ্ছেদটি পড়লেন, এর কথাগুলো দিয়ে কেন আজকের কলামের সূচনা করছি? এ প্রশ্নের উত্তর আজ লিখিতভাবে দিলাম না; আগামী কোনো দিনের জন্য বাকি রাখলাম।
আজকের কলাম লিখতে গিয়ে একটু ভিন্ন অভ্যাস করলাম। ভবিষ্যতেও এরূপ করতে পারি। আজ ভিন্ন একজন লেখকের কলাম থেকে কিছু কথা উদ্ধৃত করব। কলামটির শিরোনাম ‘তৃতীয় মেয়াদের সরকার! স্বপ্ন নাকি বাস্তব’? লেখক সাবেক সংসদ সদস্য ও কলামিস্ট গোলাম মাওলা রনি। জনাব রনি একজন সুপ্রতিষ্ঠিত ও পাঠকপ্রিয় কলাম লেখক। তিনি একাধিক পত্রিকায় লিখে থাকেন। যে কলামটি থেকে উদ্ধৃত করছি সেটি প্রকাশিত হয়েছিল গত ১৪ জুলাই বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায়। জনাব রনির কলামের শেষ দিকের তিনটি অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করছি। প্রত্যেকটি অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করার পরপরই তার সাথে আমার মন্তব্য যোগ করে দিলাম।
প্রথম অনুচ্ছেদ: একাধিকবার ক্ষমতায় থাকা
‘তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করেন এমন বুদ্ধিজীবীদের মতে, বিশ্বের সর্বত্র দরিদ্র, হতদরিদ্র কিংবা উন্নয়নশীল দেশের ক্ষমতার মসনদে যিনি বা যারাই বসুন না কেন, তিনি বা তাদের অবশ্যই প্রভাবশালী বিদেশী শক্তির তাঁবেদারি করতে হবে। অন্যথায় ক্ষমতাচ্যুতি অথবা রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার ঝুঁকি মোকাবেলার পাশাপাশি সেনাবিদ্রোহের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে বিনিদ্র রজনী কাটাতে হবে। তাদের তাঁবেদারির বদনামি মাথায় নিয়ে জনগণের ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও বিরক্তি মোকাবেলা করতে হবে। অথচ নির্বাচনের সময় তারা প্রকৃতপক্ষে কোনো সাহায্যই করতে পারবে না, কেবল দূর থেকে হুমকি-ধমকি দেয়া ছাড়া। এ কঠোর ও নির্মম বাস্তবতার জন্যই ওইসব দেশে পরপর দু’বার কোনো রাজনৈতিক দল গণরায়ে নির্বাচিত হয় না। কেউ যদি গণরায় উপেক্ষা করে বিকল্প পদ্ধতিতে ক্ষমতায় থেকে যায়, তবে অনাগত দিনে চতুর্মুখী বিপদ তাকে অক্টোপাসের মতো চেপে ধরে তার সব সুখ-শান্তি-আরাম-আয়েশ এবং সুনাম-সুখ্যাতি হারাম করে দেয়। উপরোক্ত প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের সার্বিক অবস্থা থেকেই অনুমান করতে পারবেন।’
আমার মন্তব্য:
বাংলাদেশের বর্তমান সরকার পরপর দু’বার ক্ষমতায় রয়েছে। জনাব গোলাম মাওলা রনির মূল্যায়নে এই সরকার প্রথমবার ক্ষমতায় এসেছে (২০০৯ জানুয়ারি) গণরায়ের মাধ্যমে। তার মূল্যায়নে ক্ষমতায় আসার পর এই সরকারকে বিদেশী শক্তির তাঁবেদারি করতে হয়েছে। জনাব রনির তৃতীয় মূল্যায়নটি আংশিকভাবে বেঠিক। এই সরকারের প্রথম মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় মেয়াদে আসার জন্য বিদেশী শক্তি অবশ্যই সহায়তা করেছে। সেই শক্তির নাম ভারত। গণরায় উপেক্ষা করেই ভারত নামক একমাত্র বিদেশী শক্তির সহায়তায়, বর্তমান রাজনৈতিক সরকার দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসে। জনাব রনির চতুর্থ মূল্যায়ন সঠিক, যথা বিকল্প পদ্ধতিতে ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার কারণে বর্তমান সরকারকে চতুর্মুখী বিপদ অক্টোপাসের মতো চেপে ধরেছে এবং এই চাপের কারণে বর্তমান সরকারের সব সুখ-শান্তি-আরাম-আয়েশ ও সুনাম-সুখ্যাতি ‘হারাম’ হয়ে গেছে। আমি জনাব রনির মূল্যায়নকে মাপকাঠি (ইংরেজি পরিভাষায় স্ট্যান্ডার্ড বা ইয়ার্ডস্টিক) হিসেবে ব্যবহার করেছি। বর্তমান সরকারের অন্যতম দুশ্চিন্তা, কীভাবে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা যাবে। যেহেতু কাজটি অস্বাভাবিক, সে জন্য সরকারকেও অনেক অস্বাভাবিক কাজ করতে হচ্ছে। অনেক উদাহরণের মধ্য থেকে একটি মাত্র উদাহরণ দিচ্ছি: মাদকবিরোধী অভিযানের নামে মানুষ হত্যা ও ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি।
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ: জনপ্রতিনিধি বনাম আমলা
‘বিগত প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে যারা মেম্বর, চেয়ারম্যান, মেয়র বা এমপি হয়েছেন তার মধ্যে বিরাটসংখ্যক লোক নিজেদের ওপর বিশ্বাস ও আস্থা হারানোর পাশাপাশি জনগণের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। প্রতিদ্ব›িদ্বতামূলক নির্বাচন, প্রতিপক্ষকে সামাল দেয়া, জনগণের কাছে বিনয়ী হয়ে ভোট প্রার্থনা এবং সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে নিজের পক্ষে ব্যালট পেপারে ভোটারদের স্বীকৃতি আদায়ের মতো কঠিন কাজের জন্য যে গুণাবলি দরকার, তা তারা ইতোমধ্যে হারিয়ে ফেলেছেন। তারা সরকার এবং প্রশাসনের দয়া, আনুকূল্য ও হুন্ডা-গুন্ডার মাধ্যমে জাল-জালিয়াতির নির্বাচনে জয়ী হয়ে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার বাইরে অন্য চেষ্টা-তদবির করার কথা কল্পনা করতে পারছেন না। অন্য দিকে, বিগত দিনে এমপি-মন্ত্রীরা প্রশাসনের যে সম্মান ও সমীহ পেতেন, তা বর্তমানে এসে ঠিক ৩৬০ ডিগ্রি উল্টে গেছে। রাষ্ট্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেভাবে প্রকাশ্যে জনপ্রতিনিধিদের মূল্যায়ন করছেন, তাতে মনে হয় তাদের করুণা ছাড়া ভোটের মাঠে কেউ দাঁড়াতেই পারবেন না।’
আমার মন্তব্য:
অনুচ্ছেদটিতে জনাব রনির মূল্যায়নের তিনটি অংশ আছে। আমি প্রথম ও দ্বিতীয় অংশের সাথে হুবহু একমত। তৃতীয় অংশের সাথে পুরোপুরি একমত নই। অর্থাৎ রাষ্ট্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রকাশ্যে জনপ্রতিনিধিদের মূল্যায়ন করার প্রসঙ্গটিতে আমার ভিন্নমত আছে। আমার মত হলো, গত ৯ বছর ধরে সরকার যত আমলা রিক্রুট করেছে, তারা নিশ্চিতভাবেই আওয়ামী মহলের সাথে সংশ্লিষ্ট। কিছু দিন আগে সরকার একটি সার্কুলার ইস্যু করেছে। এই সার্কুলারে বলা হয়েছে, বর্তমানে দায়িত্ব পালনরত বাংলাদেশের সব উপজেলার ইউএনও-র রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পুনরায় যাচাই করতে হবে। শুধু ব্যক্তি ইউএনও’র নয়; তার পরিবারের সদস্যদেরও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা যাচাই করতে হবে। অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রী, সাবালক ছেলেমেয়ে, শ্বশুর-শাশুড়ি, পিতা-মাতা, দাদা-নানা ও আপন চাচা-চাচী, আপন মামা-মামী, আপন খালা-খালু, আপন ফুফা-ফুফু, আপন ভাইবোন, শালা-সম্বন্ধি প্রমুখের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা যাচাই করে দেখা হবে। যাচাই করতে গিয়ে যদি কোনো ইউএনও’র পরিবারে কারো আওয়ামী ঘরানার বাইরের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, তাহলে সেই ইউএনও’র ভাগ্যে কী আছে, সেটা পাঠকমাত্রই কল্পনা করতে পারেন।
গত ৯ বছর ধরে সরকার যত সরকারি আমলা নিযুক্ত করেছে, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে অথবা কমিশন ছাড়া কথিত উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে, সব ক্ষেত্রেই প্রার্থীর আওয়ামী লীগের প্রতি আনুগত্য একটা বাধ্যতামূলক বৈশিষ্ট্য ছিল; সে আনুগত্য আওয়ামী লীগ না হলেও আওয়ামী ঘরানার প্রতি বা আওয়ামী দর্শনের প্রতি। একবাক্যে বলা যায়, বাংলাদেশের এই মুহূর্তের আমলাতন্ত্রের তথা সরকারি কর্মকর্তাদের বিরাট অংশ, আওয়ামী লীগের প্রতি অনুগত। অতএব, আওয়ামী লীগের নির্বাচিত বা মনোনয়ন নামক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণের সাথে আওয়ামী ঘরানার আমলাতন্ত্রের দ্বিমত বা বৈরিতা থাকার কথা নয়। তবে এ দলের বাইরের কেউ যদি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হন, তাহলে তিনি অবশ্যই আওয়ামী মনোভাবাপন্ন সরকারি আমলার কাছে করুণার পাত্র এবং বাংলাদেশ সরকারের দয়ার পাত্র। এটি একটি মারাত্মক বিষমাখা প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় আওয়ামী ঘরানার আমলাতন্ত্রের স্বার্থ এবং আওয়ামী ঘরানার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির স্বার্থ এক হয়ে যায়। অতএব, বর্তমান ক্ষমতাসীন দল যেন পুনরায় ক্ষমতায় থাকে অর্থাৎ তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকে, সে জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করাই স্বাভাবিক। তবে হ্যাঁ, পৃথিবীতে অতীতের সব স্বৈরতান্ত্রিক দেশের মতো বর্তমানের সব স্বৈরতান্ত্রিক দেশেও এই প্রবণতা লক্ষণীয়।
তৃতীয় অনুচ্ছেদ কয়েকটি কঠিন সুপারিশ:
আমার মতে, আওয়ামী লীগ যদি পুরো পরিস্থিতি সতর্কভাবে মূল্যায়ন করে এবং কারো কথা, উসকানি বা সমালোচনা গ্রাহ্য না করে নিজেদের সুবিধামতো নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে, তবে তারা বিনা বাধায় তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে পারবে। অন্য দিকে, রূঢ় বাস্তবতা, দেশীয় রাজনীতির ঐতিহ্য অনুসরণ এবং সব মহলকে খুশি করার নীতি নিয়ে দেশ-বিদেশে প্রশংসা লাভের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার ফাঁদে পড়ে, তবে তৃতীয় মেয়াদ তাদের কাছে দুঃস্বপ্নের বিষয়ে পরিণত হবে। লিপস্টিক উন্নয়নের ফরমুলা অনুসরণ করে সর্বজন পরিচিত, সম্মানিত ও জনপ্রিয় লোকদের নিজেদের দলের অথবা কৌশলে বিরোধী দলের প্রার্থী বানিয়ে একটি আকর্ষণীয় সংসদ উপহার এবং বিগত দিনের চিহ্নিত অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে যে দৃশ্যমান জনজোয়ার সৃষ্টি হবে, তাতে অনেক দুর্নাম-বদনাম, অনিয়মের অভিযোগ ভেসে যাবে।’
আমার মন্তব্য:
বর্তমান শাসক সরকার তথা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল দেশকে একতাবদ্ধ রাখার কাজটি সুচিন্তিতভাবে করতে পারেনি। তারা উন্নয়নের নামে প্রচুর মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে এটা যেমন বাস্তব, তেমনি এসব প্রকল্পের মাধ্যমে মেগা দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হচ্ছে। ১৯৭২ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশে দুর্নীতি হয়নি বা সরকারি পর্যায়ে দুর্নীতি হয়নি, এ কথা কোনো দিনও বলব না; তবে দুর্নীতিকে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় লুটপাটের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলেই। বর্তমান সরকার অব্যাহতভাবে প্রচার করছে, যদি জনগণ তাদের পুনরায় ক্ষমতায় না আনে, তাহলে বাংলাদেশের উন্নয়ন ব্যাহত হবে। অতএব, দেশের উন্নয়নের স্বার্থেই, জনগণ যেন বর্তমান সরকারকে পুনরায় ক্ষমতায় আনে। এই আবেদন সরকার অব্যাহতভাবেই করে যাচ্ছে। সরকারের রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষ যারা, তাদের পক্ষ থেকে এই বক্তব্যের জোরালো প্রতিবাদ বা জোরালো ভিন্ন মত এখনো আসা শুরু হয়নি; হালকাভাবে তা হচ্ছে। এটা সরকারের একটি কৌশলও বটে। এই কৌশল হলো, বিরোধী পক্ষ যেন রাজনৈতিক সরকারের দুর্বলতার বিষয়ে বক্তব্য দিতে না পারে তার জন্য বিরোধী পক্ষের মনোযোগ ও দৃষ্টি অন্যত্র নিবদ্ধ রাখা। আমার চূড়ান্ত মন্তব্য: আগামী চার-পাঁচ মাসের মধ্যে যদি নির্বাচন হয়, সেই নির্বাচন আমাদের দেশের ও রাষ্ট্রের জন্য, আমাদের রাজনীতির জন্য ব্যতিক্রমী তাৎপর্য বহন করবে। যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, সেই নির্বাচনকে কোনোমতেই শুধু একটি পার্লামেন্ট গঠন এবং সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনার মধ্যে আবদ্ধ রাখলে চলবে না। এই নির্বাচনের মাধ্যমে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ফায়সালা হবে, অপ্রকাশ্যে, অলিখিতভাবে, অঘোষিতভাবে, অদর্শনীয়ভাবে, ছদ্মবেশে।
লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।