পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দুই ছেলের আকুতি- ‘স্যার, আমার মা এত কষ্ট করে মারা গেল। ওরা আমার ভাইকেও ছাড়ল না। আমরা এর বিচার চাই, আমার বাবাও যদি দোষী হয় তারও বিচার চাই’
মা ও ছোট ভাইয়ের জানাজায় অংশ নিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে নিহত শামসুন্নাহারের দুই ছেলে। তাদের আর্তচিৎকারে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। খুন হওয়া ছোট ছেলে শাওনকে শেষবারের মতো এক নজর দেখতে এসে তার সহপাঠী বন্ধুরাও বিলাপ করে কাঁদতে থাকে। এই হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখে অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। জানাজার পর সেখানে কান্নার রোল পড়ে যায়।
গতকাল শনিবার বাদ জোহর কাকরাইলের সার্কিট হাউজ মসজিদে নিহত মা ও ছেলের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে মসজিদের বাইরে সৃষ্টি হয় এ হৃদয়বিদারক দৃশ্য। জানাজায় শামসুন্নাহারের পরিবার ছাড়াও শাওনের স্কুলের বন্ধুরা তাদের প্রিয় বন্ধু শাওনকে শেষ বিদায় দিতে গিয়ে চোখের পানি মুছতে থাকে। জানাজায় উপস্থিত ছিল নিহত শামসুন্নাহারের বিদেশ ফেরত বড় ছেলে মুন্না ও মেঝো ছেলে অনিক ছাড়াও তাদের স্বজনেরা। এ সময় শত শত মানুষের উপস্থিতিতে রমনা থানার ওসি কাজী মাঈনুল ইসলামকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে অনিক ও মুন্না। তারা মা ও ভাই হত্যার বিচার দাবি করে।
ওসিকে জড়িয়ে ধরে মুন্না ও অনিক কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘স্যার, আমার মা এত কষ্ট করে মারা গেল। ওরা আমার ভাইকেও ছাড়ল না। আমরা এর বিচার চাই। আমার বাবাও যদি দোষী হয়, তারও বিচার চাই।’ এ সময় তাদের উদ্দেশে ওসি কাজী মাঈনুল বলেন, দায়ীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর ব্যবস্থা করব। ইতোমধ্যে দুই আসামি ও হত্যাকারী গ্রেফতার হয়েছে।
এর আগে মা ও ছোট ভাইয়ের জানাজায় অংশ নিতে শুক্রবার রাতে মুন্না কানাডা থেকে এবং অনিক লন্ডন থেকে ঢাকায় আসে।
অন্যদিকে কাকরাইলে মা-ছেলে হত্যার মূল আসামি আল-আমিন জনিকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গত শুক্রবার রাত ৩টায় গোপালগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব-৩। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান মুফতি মাহমুদ খান। তিনি জানান, হত্যার দায় স্বীকার করেছে জনি, তাকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় কাকরাইলের ভিআইপি রোডের ৭৯/১ নম্বর বাসার গৃহকর্তা আবদুল করিমের প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহার করিম (৪৬) ও তার ছেলে শাওনকে (১৯) গলাকেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আবদুল করিম ও তার তৃতীয় স্ত্রী শারমিন মুক্তাকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পরে হত্যা মামলা দায়ের করে ‘পরিকল্পনাকারী’ হিসেবে তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়।
গত বুধবার সন্ধ্যায় কাকরাইলের পাইওনিয়ার গলির ৭৯/১ নম্বর বাসার গৃহকর্তা আবদুল করিমের প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহার করিম (৪৬) ও তার ছেলে শাওনকে (১৯) গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
ঘটনার পরদিন বৃহস্পতিবার রাতে নিহত শামসুন্নাহারের ভাই আশরাফ আলী বাদী হয়ে রমনা থানায় মামলা (নম্বর-১) করেন। মামলায় আবদুল করিম, করিমের দ্বিতীয় স্ত্রী শারমিন মুক্তা, মুক্তার ভাই জনিসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আগেই আটক করা শামসুন্নাহার করিমের স্বামী আবদুল করিম ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী মডেল শারমিন মুক্তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
তরকারি বিক্রেতা থেকে প্রযোজক বনে যাওয়া আবদুল করিম তার তৃতীয় স্ত্রী শারমিন আক্তার মুক্তাকে নিয়ে ছয় মাস আগে রাঙামাটি ঘুরতে যান। সেখানেই প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহার করিমকে খুন করার পরিকল্পনা করেন তিনি। হত্যার জন্য মুক্তার ভাই আল-আমিন ওরফে জনিকে প্রস্তাব দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়। গ্রেফতার হওয়ার পর রিমান্ডে করিম ও মুক্তার কাছ থেকে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানতে পেরেছে পুলিশ। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, কাকরাইলে আবদুল করিমের দুইটি বাড়ির মধ্যে একটি ছিল শামসুন্নাহারের নামে। ওই বাড়িটির দিকে নজর ছিল তৃতীয় স্ত্রী মুক্তার। বাড়িটি নিজের নামে রেজিস্ট্রি করতে বারবার করিমকে চাপ দিয়ে আসছিলেন মুক্তা। এ ছাড়া করিমের বেপরোয়া জীবন যাপনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন শামসুন্নাহার। এসব কারণে শামসুন্নাহারকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি।
এদিকে জনি ছিল বেকার। নানা কারণে তার স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ায় জনির সন্তানকে দেখাশোনা করতেন তার বোন মুক্তা। জনির সামগ্রিক খরচও বহন করতেন তিনিই। একপর্যায়ে বোনের আবদারে এই হত্যাকান্ড ঘটাতে রাজি হয়ে যায় জনি।
ঘটনার দিন (১ অক্টোবর) বুধবার সন্ধ্যায় জনি একটি ছুরি নিয়ে কাকরাইলে আবদুল করিমের বাসায় প্রবেশ করে। সেখানে গিয়ে সে প্রথমে শামসুন্নাহারকে গলাকেটে হত্যা করে। এসময় শামসুন্নাহারের ছোট ছেলে দেখে ফেলে এবং দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন জনি দৌড়ে গিয়ে সিঁড়িতে শাওনকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে।
এ বিষয়ে ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান বলেন, রিমান্ডে আসামিরা মুখ খুলতে শুরু করেছে। রিমান্ড শেষেই এ হত্যাকান্ডের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য বেরিয়ে আসবে।
আলোচিত ওই হত্যাকান্ডের ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে শামসুন্নাহারের ভাই আশরাফ আলী বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় আসামি করা হয় আবদুল করিম (৫৬), তার তৃতীয় স্ত্রী শারমিন আক্তার মুক্তা (২৫) এবং মুক্তার ভাই আল-আমিন জনিসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে। পরে ওই মামলায় রাতেই করিম ও মুক্তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরের দিন তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
শামসুন্নাহারের ভাই আশরাফ আলী বলেন, আমার ধারণা, করিম ও মুক্তা দুজনে মিলেই আমার বোন ও ভাগিনাকে খুন করিয়েছে। কাকরাইলে করিমের দুইটি বাড়ির একটি আমার বোন শামসুন্নাহারের নামে ছিল। কিন্তু ওই বাড়িটি মুক্তা নিজের নামে রেজিস্ট্রি করতে দীর্ঘদিন ধরেই করিমকে চাপ দিয়ে আসছিল।
যেভাবে মা-ছেলেকে খুন করে জনি
এদিকে র্যাব জানায়, র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে মা-ছেলে হত্যাকান্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছে এ ঘটনায় গ্রেফতার আল-আমিন জনি। সে ব্যবসায়ী আবদুল করিমের তৃতীয় স্ত্রী শারমিন মুক্তার ভাই।
র্যাব বলেছে, জনি জানিয়েছে, নরসিংদী থেকে ঢাকায় আসার পর নানামুখী সমস্যায় পড়েছিলেন তার বোন শারমিন মুক্তা। তিন-চার মাস আগে করিমের সঙ্গে তার বিয়ে বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ঘটনার তিন-চার দিন আগে মুক্তা আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। জনি মনে করে, বোনের এসব সমস্যার জন্য করিমের প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহারই দায়ী। এরপরই সে তাকে হত্যা করে। মাকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলে প্রাণ হারায় শাওন। র্যাব জানায়, তাদের কাছে প্রাথমিক স্বীকারোক্তিতে জনি এসব কথা জানিয়েছে।
শনিবার বিকেল সাড়ে চারটায় কাওরান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে বাহিনীর মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ বলেন, ব্যবসায়ী আবদুল করিমের তৃতীয় স্ত্রী মুক্তা। চার বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। মুক্তা তার মা ও ভাই জনিকে নিয়ে নরসিংদীতে থাকত। স¤প্রতি সে মা ও ভাইকে নিয়ে ঢাকায় এসে একটি ভাড়া বাসায় ওঠে। কাকরাইলের বাসাটি (ঘটনাস্থল) ছিল শামসুন্নাহারের নামে।
ঢাকায় আসার পর থেকে স্বামী করিমের সঙ্গে আর্থিক বিষয় নিয়ে দ্ব›দ্ব দেখা দেয় মুক্তার। ব্যবসায়ী করিমের অধিকাংশ সম্পত্তি প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহারের নামে। এ নিয়ে টানাপড়েন শুরু হয়।
মুফতি মাহমুদ জানান, বোনের আর্থিক সঙ্কট, আত্মহত্যার চেষ্টা ও বিচ্ছেদ সবকিছুর জন্য করিমের প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহারকে দায়ী করে জনি। ওইদিনই সে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
সে অনুযায়ী ৩১ অক্টোবর নিউমার্কেট থেকে সে একটি ধারালো অস্ত্র কেনে। ঘটনার দিন (১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সে ওই বাড়িতে যায়। কলিংবেল চাপলে গৃহকর্মী দরজা খুলে দেয়। পরে গৃহকর্মী রান্নাঘরে ঢুকলে জনি রান্নঘরের দরজা বাইরে থেকে আটকে দেয়। ঘটনার সময় বাসায় শামসুন্নাহার ও তার তৃতীয় সন্তান শাওন ছিল বাসায়।
মুফতি মাহমুদ বলেন, জনি তাদের ঘরে ঢুকে প্রথমে শাওনকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে বলে, ‘এখানে বসে থাক। আমি তোর মায়ের সঙ্গে কথা বলব।’ এরপর শামসুন্নাহারকে সে একের পর এক ছুরিকাঘাত করে। শাওন মাকে রক্ষায় এগিয়ে এলে তার গলায় ছুরি দিয়ে আঘাত করে জনি। শাওন দৌড়ে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে সে সিঁড়িতে পড়ে যায়। এদিকে বাসা থেকে বেরিয়ে নিচে নেমে জনি দারোয়ানকে বলে- ওপরে ঝামেলা হচ্ছে, আপনি যান। এই কথা বলে জনি ভবন থেকে বেরিয়ে আসে।
শামসুন্নাহারের বাসায় ঢোকার আগেই পাশের পরিত্যক্ত একটি ভবনে নিজের এক সেট জামাকাপড় রেখে এসেছিল জনি। হত্যাকান্ডের পর ওই ভবনে গিয়ে সে কাপড় পাল্টায়। হত্যাকান্ডের সময় জনি নিজেও সামান্য আহত হয়েছিল। এ জন্য পাশের ক্লিনিকে গেলেও সঙ্গে টাকা কম থাকায় সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেয় সে।
এরপর সে প্রথমে ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নেয়। পরে গোপালগঞ্জের মোকসেদপুর চলে যায়। পথে পদ্মায় নিজের রক্তমাখা কাপড় ও অন্যান্য জিনিস ফেলে দেয়।
র্যাবের মুখপাত্র জানান, জোড়া হত্যাকান্ডের ঘটনায় জনির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আজ রোববার তাকে আদালতে হাজির করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।