পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
কঠিন শর্ত মেনে ভারতের কাছ থেকে ঋণ নেয়ার আরো একটি চুক্তিতে সই করেছে বাংলাদেশ। প্রথম দফায় ২০১০ সালে ১০০কোটি ডলারের ঋণচুক্তির (লাইন অব ক্রেডিট) শর্তাবলী নিয়ে দেশে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় ২০১৩ সালে একই ধরনের শর্তে আরো ২০০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি হয় ভারতের সাথে। প্রথম চুক্তির পর ইতিমধ্যে ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও ১০০কোটি ডলার প্রকল্পের মাত্র ৩৭ কোটি ডলার ছাড় করেছে ভারত। অর্থাৎ যে সব প্রকল্পে অর্থায়নের কথা ছিল সাত বছরে তার একতৃতীয়াংশ মাত্র বাস্তবায়িত হয়েছে। দ্বিতীয় লাইন অব ক্রেডিটে স্বাক্ষরের পর ৪ বছর অতিক্রান্ত হলেও কোন অর্থই এখনো ছাড় হয়নি। এহেন বাস্তবতায় কঠিণ শর্তে তৃতীয় লাইন অব ক্রেডিটে আরো সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩৬ হাজার কোটি) ঋণচুক্তি সই হয়েছে। এ ঋণচুক্তির আদৌ কোন প্রয়োজন ছিল কিনা সে প্রশ্ন উঠেছে। অর্থনীতিবিদদের কারো কারো মতে, প্রথম ও দ্বিতীয় ঋণচুক্তি বাস্তবায়ণ না হওয়ার প্রেক্ষাপটে নতুন চুক্তির প্রয়োজন ছিলনা। শর্তযুক্ত ঋণে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। আগের মত তৃতীয় দফার ঋণচুক্তিতেও শর্ত শিথিলে বাংলাদেশের দাবি উপেক্ষিত হয়েছে। বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে এ পর্যন্ত ভারত থেকে প্রায় ৮০০কোটি ডলারের ঋণচুক্তিতে আবদ্ধ হল বাংলাদেশ, যা এখন পর্যন্ত কোন দেশকে ভারতের দেয়া সর্বোচ্চ ঋণচুক্তি।
যেখানে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়নব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তজার্তিক সংস্থার কাছ থেকে আরো অনেক সহজশর্তে ঋণ লাভের সুযোগ রয়েছে, সেখানে ভারত থেকে কঠিন শর্তে ও প্রকারান্তরে উচ্চ মাশুলে ঋণ গ্রহণ কতটা যুক্তিযুক্ত হয়েছে সে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়। ভারত নিজেও বিভিন্ন প্রকল্পে লক্ষকোটি রূপির বিদেশি ঋণ নিচ্ছে । এ ক্ষেত্রে আহমেদাবাদ- মুম্বাই বুলেট ট্রেন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করা যায়। একলাখ ১০ হাজার কোটি রুপির এই প্রকল্পের ৮১ শতাংশ অর্থায়ণ করছে জাপান। ঋণচুক্তি অনুসারে ০.১ শতাংশ সুদ ৫০ বছরে পরিশোধ করবে ভারত। পাশাপাশি জাপান নিজেদের অভীজ্ঞতা ও প্রযুক্তি সহায়তা দিলেও প্রকল্প বাস্তবায়নে জাপান কোন কঠিন শর্ত চাপিয়ে দেয়নি। ভারত জাপানের কাছ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের সফ্টলোন গ্রহন করলেও বাংলাদেশের উপর তিন দফায় প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের হার্ডলোন চাপিয়ে দিয়েছে। জাপান বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগি দেশ। বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাইকার পাশাপাশি চীনও বিভিন্ন প্রকল্পে আরো বড় আকারের ঋণ ও বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রæতি দিচ্ছে। এ ব্যাপারে তাদের শরণাপন্ন হওয়া যেতো। দেখা যাচ্ছে, যে ১৭টি প্রকল্পে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের কথা বলা হয়েছে তার বেশীরভাগই ভারতীয় স্থল ও নৌ-ট্রানজিট ও করিডোর সুবিধার সাথে সম্পর্কযুক্ত। অন্যদিকে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুত প্রকল্পে উৎপাদিত বিদ্যুতের সঞ্চালণ লাইন তৈরীতে ভারতীয় ঋণে ভারতীয় কন্ট্রাক্টরদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি সার্বিকভাবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
লাইন অব ক্রেডিটের শর্ত অনুসারে অনুমোদিত ঋণের সুদহার শতকরা ১ ভাগ যা’ ৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ড ছাড়া ২০ বছরে পরিশোধ করতে হবে। তবে দশমিক ৫০ ভাগ কমিটমেন্ট ফি এবং পূর্ত অবকাঠামোখাতের সব সরঞ্জামের শতকরা ৬৫ ভাগ ভারত থেকে ক্রয় এবং ভারতীয় কন্ট্রাক্টর ও লোকবল নিয়োগের শর্তের জালে বাংলাদেশকে উচ্চহারের মাশুল গুনতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। ভারতীয় পণ্য এবং ভারতীয় কন্ট্রাক্টরদের কাজের মান যাচাইয়ের ক্ষমতা ও পদ্ধতিগত নিরপেক্ষতা সুস্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিদ্যমান শর্তের কারণে দেশীয় বা বিশ্ববাজার থেকে পণ্যের মান যাচাইপূর্বক প্রতিযোগিতামূলক কমমূল্যে পণ্য সংগ্রহের কোন সুযোগ থাকছেনা। উল্লেখ্য জাহাজ নির্মান, সিমেন্ট, রডসহ অবকাঠামোখাতের পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মান অর্জনে সক্ষম হলেও ভারতীয় ঋণে দেশের ভৌত অবকাঠামোখাতের উন্নয়ন প্রকল্পে ভারতের উপর নির্ভরশীলতা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। দেশের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের জন্য এটি কোন ইতিবাচক উদ্যোগ নয়। সেই সাথে প্রকল্প বাস্তবায়নে নির্ধারিত সময়সীমা ও মান রক্ষা করতে ব্যর্থ হলে প্রকল্প বাতিলের ক্ষমতাও বাংলাদেশের থাকতে হবে। প্রকল্প গ্রহন ও বাস্তবায়নে ভারতীয় স্বার্থের বদলে বাংলাদেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে। দেশীয় বাস্তবতায় টেকসই উন্নয়নের রূপরেখার আলোকে অগ্রাধিকার প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের প্রতি জোর দিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।