বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
রাজধানীর যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অবৈধ কার পাকিং। শহরজুড়ে পর্যাপ্ত বৈধ পার্কিংয়ের ব্যবস্থাই নেই, আবার যেখানে আছে সেখানে যেতে আগ্রহী হয়না মালিক ও চালকরা। পর্যাপ্ত কার পার্কিং ব্যবস্থা না থাকা এবং গাড়ির মালিক ও চালকদের স্বেচ্ছাচারিতা- দুটোই এ অবৈধ কার পাকিং গড়ে ওঠার জন্য দায়ী। অবৈধ কার পার্কিংয়ের অতি পরিচিত একটি জায়গা শহরের অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল। রাজধানীর বাংলামোটর থেকে শুরু করে মগবাজার পর্যন্ত এলাকায় রাস্তার দুই ধারে গড়ে উঠেছে কার ডেকোরেশনের মার্কেট। শুধু এ এলাকা নয়, বিজয়নগর ও পল্টন এলাকায়ও রয়েছে এ ধরনের গাড়ির সাজসজ্জার দোকান।
বাংলামোটরে গেলে যে কারও চোখে পড়বে মোড়ের মাত্র ২০ গজ সামনেই বাংলামোটর মোড়ে রয়েছে একটি পুশিল বুথ। এ বুথের একেবারে আশেপাশেই অবৈধ পার্কিং করে যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা হলেও ভ্রƒক্ষেপ নেই বুথের পুলিশ সদস্যদের। বরং অনেক সার্জেন্টই এসব কার ডেকোরেশনের দোকান থেকে মাসোয়ারা (মাসিক ভিত্তিতে টাকা) নেন বলে অভিযোগ আছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই মার্কেটের এক কর্মচারী বলেন, পুলিশ মাঝে মধ্যে এসে অনেক গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করে চলে যায়। দোকান মালিকদের কিছু বলে না? এমন প্রশ্নে ওই কর্মচারী বলেন, মালিকদের বলবে কেন, মালিকরা তো মাসে মাসে টাকা দেয়। পুলিশ কত দিন পরপর এখানে রাখা গাড়িগুলোকে মামলা দেয়? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দু-এক মাস পরপর। দোকান মালিকরা টাকা দেয়ার পরও পুলিশ কেন মামলা দেয়? এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মচারী জানান, পুলিশ মাঝে মধ্যে এসে বলে আজ দু’একটা মামলা দিতে হবে, নয়ত একটু সমস্যা আছে। এতেই বোঝা যায় কেমন করে চলে এসব।
প্রতিদিন মতিঝিলে আসতে হয় এমন একজনের নাম জামিল আহমেদ। তিনি বলেন, বড় কোন ভবন থেকে মতিঝিলের রাস্তার দিকে তাকালে মনে হবে রাস্তা নয় গাড়ি বেচা-কেনার বড় এক হাট। রাস্তার বেশির ভাগজুড়েই থাকে এই অবৈধ পার্কিং। সকালে অফিসে আগতদের যেমন দুর্ভোগ পোহাতে হয়, সন্ধ্যায় ফেরার পথেও একই দুর্ভোগ। এ যন্ত্রণা নিত্যদিনের হলেও কারও যেন কিছু করার নেই। এ দুর্ভোগ থেকে কবে মুক্তি মিলবে? এমন প্রশ্ন অনেকের মনে জাগলেও উত্তর জানা নেই কারও। একটি বেসরকারী ব্যাংকের কর্মকর্তা জামিল গত তিন বছর ধরে নিয়মিত মতিঝিলে আসছেন। তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, মাঝে মধ্যে দেখি উচ্ছেদ হয় আবার দুই-চার দিন পরপর একই অবস্থা। এ উচ্ছেদ-উচ্ছেদ খেলার মানে কী? ঢাকা শহরের যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে ব্যক্তিগত গাড়ি চিহ্নিত হলেও এর জন্য অনেকেই দোষারোপ করে থাকেন যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংকে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার দুই পাশেই এসব গাড়ি সারি সারি পার্কিং করে রাখতে দেখা যায়। আর ভুক্তভোগী জনসাধারণের ভাষ্য, নগরীর প্রায় প্রতিটি রাস্তাই যেন পার্কিং প্লেস। স্বল্প পরিসরের রাস্তার এই শহরে রাস্তায় পার্কিং বন্ধ করা গেলে অনেকাংশেই যানবাহনের এই জটলা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেত বলে মনে করেন সংশিষ্টরা।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের বিপরীত দিকে সারিবদ্ধভাবে ব্যক্তিগত গাড়ি ও টেক্সিক্যাব পার্কিং করে রাখতে দেখা যায়। রাস্তার ওপর অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং করে কেন রাখা হলো, জানতে চাইলে টেক্সিক্যাব চালক নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের রাস্তার গাড়ি তো রাস্তাতেই থাকবে। পার্কিংয়ের জায়গায় গাড়ি রাখলে তো আমরা যাত্রী পাব না।
গুলশান-২ এলাকায় রাস্তার পাশে পার্কিং করে রাখা ব্যক্তিগত গাড়ির চালক সোহেল বলেন, স্যার গাড়ি থেকে নেমে এখানে অপেক্ষা করতে বলেছে। তিনি আসলেই চলে যাব। রাস্তার ওপর অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং ও যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের অপরাধে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ট্রাফিক পুলিশের বিশেষ টিম অর্থদন্ডসহ নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকে । কোনো গাড়ি রেকার বা হুইল লকার লাগালে সর্বনিম্ন ১ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা গুণতে হয় বলে জানান ট্রাফিক পুলিশ। ট্রাফিক পুলিশের এমন অভিযানের পরেও কিছুতেই যত্রতত্র পার্কিং কমানো যাচ্ছে না।
বনানী এলাকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছু এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য জানান, দেখেন রাস্তার পাশে রেস্টুরেন্ট, সেখানে তো মানুষ খেতে আসবেই। কিন্তু সেই মানুষটি যে গাড়িতে করে আসবে সেটা পার্কিং করার কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। আবার অনেকে গাড়ি থামিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য ৫-১০ মিনিট সময় চায়। কিন্তু তার ৫ মিনিটের জন্য রাস্তাতে একটা জটলা সৃষ্টি হয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) প্রবীর কুমার রায় বলেন, সারা শহর জুড়েই পার্কিংয়ের জায়গার সমস্যা রয়েছে। দেখা গেল, অনেকে ভবন করার সময় পার্কিং স্পেস রেখেছে, কিন্তু পরে সেখানে দোকান করে ভাড়া দিয়েছে। নগরজুড়ে প্রতি ভবনে পার্কিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আবার অনেক ভবনের নিচে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও ২০-৩০ টাকা খরচ করে গাড়ি চালক পার্কিং করতে চায় না। কোটি টাকার গাড়ি কিনে ৩০ টাকার জন্য রাস্তায় গাড়িটি পার্কিং করে।
রাস্তার ওপর অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিংসহ যত্রতত্র পার্কিং ঠেকাতে ট্রাফিক বিভাগের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, রাস্তায় ট্রাফিক আইন মেনে চলার জন্য আমরা নিয়মিত মাইকিং করি, লিফলেট বিতরণ করি, বিভিন্ন স্থানে নিজেরা গিয়ে অনুরোধ করি, চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও বলি।
শুধুমাত্র রেকারিং করে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এজন্য জনগণকেই সচেতন হতে হবে। বর্তমানে যে অবস্থায় আছে, সে অবস্থাতেই আরও পার্কিং স্পেস বাড়াতে হবে। ভবনে কোনো একটি প্রতিষ্ঠান খোলার আগে পর্যাপ্ত পার্কিং স্পেস নিশ্চিত করতে হবে বলে জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।