Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি নয়

| প্রকাশের সময় : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকার আবারো গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। একদিকে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রবণতা অন্যদিকে বন্যায় ফসলহানির কারণে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে মন্দাভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশেষত: খাদ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে মূল্যস্ফীতি দরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য দুর্বহ হয়ে উঠেছে। এহেন বাস্তবতার মধ্যেও সরকার আবারো বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে কোন বিবেচনায় তা বোধগম্য নয়। আকষ্মিক বন্যায় হাজার হাজার হেকটর জমির উঠতি ফসল বিনষ্ট হওয়ায় খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কায় চালের মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা দেখা দেয়া অস্বাভাবিক নয়। গত কয়েক বছরে বিশ্ববাজারে জ্বালানী তেলের মূল্য কমে অর্ধেকের নিচে নেমে আসার পর বিদ্যুতের উৎপাদন খরচও অর্ধেকে নেমে আসার কথা। এহেন বাস্তবতায় বিদ্যুতের মূল্য কমে যাওয়াই সঙ্গত ও প্রত্যাশিত ছিল। তবে আমাদের দেশে সবক্ষেত্রেই উল্টো হাওয়া বইতে দেখা যায়। জ্বালানী তেলের মূল্যের ক্রমহ্রাসমান বাস্তবতায় বর্তমান সরকারের ৮ বছরে ৭ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। প্রতিবারই বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবকে সামনে রেখে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন(বিইআরসি) কে নিয়মমাফিক গণশুনানীর আয়োজন করতে দেখা যায়। গণশুনানিতে বিদ্যুত ব্যবহারকারি, ভোক্তা অধিকার সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি এবং জ্বালানী বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত হয়ে মূল্যবান মতামত ও পরামর্শ দিলেও সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে এসব গণশুনানিতে প্রাপ্ত মতামতের কোন প্রতিফলন দেখা যায়না।
বিদ্যুতের উৎপাদন কমে যাওয়া সত্বেও সরকার ৮ম বারের মত বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত গণশুনানির আয়োজন করবে বিইআরসি। অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, এসব লোক দেখানো গণশুনানি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। অর্থাৎ সরকার আবারো বিদ্যুতের মূল্য বাড়াতে চলেছে। জ্বালানি তেলের অব্যাহত মূল্যহ্রাসের প্রেক্ষাপটে সরকার ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বিদ্যুতের দাম কমানোর কথা বলেও তা’ রক্ষা করতে পারেনি। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে সর্বশেষ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। সে সময়ও জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ আরো কমিয়ে কথা বলেছিলেন সংশ্লিষ্টরা। অজ্ঞাত কারণে কথিত মূল্য সমন্বয় আজো হয়নি। বিদ্যুত কোম্পানীগুলোর নিজস্ব উদ্যোগে জ্বালানি আমদানি এবং বিপিসি’র কাছ থেকে ডিজেল বা ফার্নেস অয়েল কিনে বিদ্যুত উৎপাদনের ক্ষেত্রে এখনো বিস্তর ফারাক রয়ে গেছে। একদিকে সরকারী আমদানি মূল্যের দ্বিগুন দামে জ্বালানি বিক্রি করছে, অন্যদিকে জ্বালানি মূল্যের কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেশী দেখিয়ে এ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। অথচ জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করে বিদ্যুত উৎপাদন, বিতরণে বৈষম্য কমিয়ে আনার পাশাপাশি ভর্তূকিও কমিয়ে আনা সম্ভব। বিদ্যুতের মত একটি সার্বজনীন বিষয়ে ভর্তুকিকে বড় করে দেখার কোন সুযোগ নেই।
বিদ্যুত ও জ্বালানির দাম বাড়লে এর প্রভাব দেশে উৎপাদিত প্রতিটি পণ্যের উপর পড়ে। দেশে এখন বন্যার্ত মানুষের আহাজারি চলছে। হাওরাঞ্চলসহ দেশের বানভাসি কোটি মানুষের বেশিরভাগই দরিদ্র প্রান্তিক কৃষক। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি তাদের জন্য বোঝার উপর শাকের আঁটির মত দুর্বহ হয়ে দাঁড়াবে। যারা এখনো গৃহস্থালিতে বিদ্যুতের সংযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সেচপাম্পের খরচ বাড়লে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে দেশের শিল্পখাতে বিনিয়োগে যে মন্দা দেখা যাচ্ছে, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সেখানেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এমনিতেই রফতানিমুখী তৈরী পোশাক শিল্পের শত শত কারখানা নানামুখী চাপে, লোকসানের মুখে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সেখানে বিদ্যুতের আরেকদফা মূল্যবৃদ্ধি প্রতিযোগিতামূলক বাজারে তাদের টিকে থাকার সক্ষমতা আরো কমিয়ে দেবে। চাহিদা অনুপাতে গ্যাসের উৎপাদনবৃদ্ধি ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারায় আবাসনখাতসহ গ্যাসভিত্তিক শিল্প কারখানায় হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে ফার্নেস অয়েলের মূল্যহ্রাসের সুযোগ গ্রহন করে বিদ্যুত খাতে গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে শিল্প ও গৃহস্থালিতে গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধি করা সম্ভব ছিল। পর পর দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার সুযোগ পেয়েও সরকার বড় বড় বিদ্যুত প্রকল্পের কোনটাই বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এখনো রেন্টাল, কুইক-রেন্টালের উপর ভর করে স্বাভাবিক উৎপাদন খরচের তিনগুন দামে বিদ্যুত কিনে সাধারণ গ্রাহকদের উপর বাড়তি বিলের বোঝা বাড়িয়ে চলেছে। এখনো সিস্টেম লস, অবৈধ সংযোগসহ বিদ্যুত খাতে বছরে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হচ্ছে। বিদ্যুতের মূল্য না বাড়িয়ে তথাকথিত সিস্টেম লস, দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা বন্ধ করে বিদ্যুত খাতের ভর্তুকি ও লুটপাট কমানোর উদ্যোগ নেয়া হোক। উৎপাদন খরচ না বাড়লেও বিদ্যুতের আরেক দফা মূল্যবৃদ্ধি জনগন মেনে নেবেনা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদ্যু


আরও
আরও পড়ুন