Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আল্লাহর ওয়াস্তে অবৈধপথে বিদেশ যাবেন না : নুরুল ইসলাম বিএসসি

| প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শামসুল ইসলাম : অবৈধ পথে বিদেশ যাওয়া বন্ধ হচ্ছেই না। ভিজিট ভিসা ও স্টুডেন্ট ভিসায় বিদেশ গিয়ে বিপদে পড়ছে মানুষ। ভিটেমাটি বিক্রী করে অবৈধ পথে বিদেশ গিয়ে প্রত্যাশিত কাজ না পেয়ে দূর্বিসহ জীবনযাপন করছে হাজার হাজার প্রবাসী। এ প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি তার দপ্তরে ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়ে বলেছেন, আল্লাহর ওয়াস্তে অবৈধপথে বিদেশে কেউ যাবেন না। বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ যদি শক্ত ভূমিকা রাখতো তা’হলে বর্হিবিশ্বে মানবপাচার নিয়ে বাংলাদেশের মান সম্মান রক্ষা হতো। অবশ্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের টাস্কফার্স প্রধান ও যুগ্ন-সচিব শাহ নেওয়াজ চৌধুরী’র মতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে সচিব না থাকায় বিমান বন্দরের প্রশাসনের কার্যক্রম কিছু ঢিলেডালা যাচ্ছে। এ সুযোগটাও কেউ কেউ হীন-স্বার্থে কাজে লাগাচ্ছে।
মালয়েশিয়ায় ব্যাপক ধরপাকড়ে বাংলাদেশী শ্রমিকদের গ্রেফতার সর্ম্পকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের ধরপাকড়ে বাংলাদেশীদের আতংকিত হবার কিছু নেই। দেশটিতে গত ৩০ জুন অবৈধ অভিবাসী কর্মীদের এক বছর মেয়াদী অস্থায়ী পাস ই-কার্ড ইস্যুর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্ত মালয়েশিয়া সরকার অবৈধ কর্মীদের বৈধতা লাভের জন্য রিহায়ারিং কর্মসূচি আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করেছে। রিহায়ারিং কর্মসূচিতে ২ লাখ ৫৮ হাজার অবৈধ কর্মী অর্ন্তভূক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই বাংলাদেশী। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশী পাসপোর্ট ব্যবহার করে দেশটিতে র্দুনাম করে বেড়াচ্ছে। ইদানিং মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর বিমান বন্দরে বাংলাদেশী বৈধ ভিজিট ভিসার যাত্রীরা অহেতুক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, কেউ এমন পরিস্থিতির শিকার হলে ঢাকাস্থ মালয়েশিয়ান হাই কমিশনে দরখস্ত দিয়ে বিচার চাইতে পারেন। তিনি বলেন, আজ সোমবার মালয়েশিয়ার পুত্রাজয়ায় ইমিগ্রেশন কর্তকর্তাদের সাথে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব বিষয় নিয়ে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে বসবেন। ভ্রাতৃ-প্রতীম সউদী আরব ও কাতারের সাথে বাংলাদেশের সর্ম্পক অত্যান্ত চমৎকার দাবী করে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী বলেন, সউদী আরব সরকারের শ্রমিকদের সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা এবং কাতারের সাথে ছয়টি মুসলিম দেশের সর্ম্পূণ কূটনৈতিক সর্ম্পক ছিন্ন করায় শ্রমবাজারের কোনো প্রভাব পড়বে না। দেশ দু’টিতে প্রচুর বাংলাদেশী কর্মীর চাহিদা রয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী মানবপাচার প্রসঙ্গে প্রবাসী মন্ত্রী বলেন, হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ যদি শক্ত ভূমিকা রাখতো তা’হলে বর্হিবিশ্বে মানবপাচার নিয়ে বাংলাদেশের মান সম্মান রক্ষা হতো। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আল্লাহর ওয়াস্তে অবৈধপথে বিদেশে কেউ যাবেন না। যাতে বিদেশে দেশের মান মর্যাদা অক্ষুন্ন থাকে। শ্রমবাজার সম্প্রসারণে তেমন উদ্যোগ নেই এমন প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী মন্ত্রী বলেন, জাপান ও রাশিয়ায় নতুন শ্রমবাজার চালুর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই জাপানে আড়াইশ’ কর্মী গেছে। রেমিটেন্স প্রবাহ নিন্মগতি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আসন্ন ঈদ উল-আযহায় রেমিটেন্সের পরিমাণ আরো বাড়বে।
এদিকে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে স্বীকার করেছেন, সিন্ডিকেট চক্র কিছু সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে বিমান বন্দর দিয়ে ওয়ার্ক ভিসার কর্মীদের ভিজিট ভিসা দেখিয়ে বিভিন্ন দেশে পাচার করছে। বিভিন্ন দেশে গিয়ে তারা কাজেরও সুযোগ পাচ্ছে। প্রতিদিন শ্রীলংকান এয়ারলাইন্সে, প্রতি সপ্তাহে চার দিন মালদিভিয়ান এয়ারলাইন্স ও মালয়েশিয়ার এয়ারলাইন্সে’র মাধ্যমে ভিজিট ভিসায় কর্মীরা বিদেশে যাচ্ছে। ইদানিং মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর বিমান বন্দর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন ভিজিট ভিসার অনেক বাংলাদেশী যুবককে ফেরত পাঠাচ্ছে। মালদ্বীপের ছাড়পত্র চার মাস যাবত বন্ধ তার পরেও কল্যাণ ডেস্কের চোখ ফাঁকি দিয়ে কি ভাবে কর্মীরা ভিজিট ভিসায় মালদ্বীপ যাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভিজিট ভিসায় কর্মীরা বিদেশে গেলে তাদেরকে আমাদের ধরার অধিকার নেই। এছাড়া মাত্র সাত জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে বিমান বন্দরে কাজ করতে গিয়ে বেশির সময়েই ভিআইপিদের সেবা দিতে ব্যস্ত থাকতে হয় কল্যাণ ডেস্কের কর্মকর্তাদের। উল্লেখিত এয়ারলাইন্সগুলো যোগে কর্মীদের ভিজিট ভিসা দেখিয়ে নির্বিঘেœ বিদেশে পাড়ি দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশন হচ্ছে একটি ছাঁকনি। তারা ভিজিট ভিসার যুবকদের ধরতে পারছে না। আমরা ধরবো কি করে ? তা’ছাড়া একাধিকবার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আমরা প্রস্তাব দিয়েছি যাতে ভিজিট ভিসা ও স্টুডেন্ট ভিসার ব্যক্তিদের যাচাই বাছাই করতে পারি। সে ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কোনো দিক নিদের্শনা আজো দেয়া হয়নি। বিমান বন্দরের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তৎপর হলে বিমান বন্দরের সিন্ডিকেট চক্রের মানবপাচার বন্ধ করা সম্ভব বলে মোস্তাফিজুর রহমান আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বিমান বন্দর প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের বিতর্কিত এমএসও মো: মিজান, সেলিম, আওলাদ ও প্রধান সহকারী আশরাফুল মানবপাচার সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত এমন প্রশ্নের জবাবে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কর্মচারীরা ভিজিট ভিসার যাত্রীদের বিদেশে গমনের বিষয়ে যাতে জড়িত না হয় তার জন্য সর্তক থাকতে বলা হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের টাস্কফার্স প্রধান ও যুগ্ন-সচিব শাহ নেওয়াজ চৌধুরী শনিবার ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে বিমান বন্দর দিয়ে অবৈধভাবে মানবপাচার প্রসঙ্গে বলেন, চুরি-চামাড়ি করে বা কাউকে ম্যানেজ করে ভিজিট ভিসায় অনেকে বিদেশে চলে যাচ্ছে। আমরাও এদেশের মানুষ জানি কিভাবে কি হচ্ছে। আমরাও মাঝে মধ্যে বিমান বন্দরে গিয়ে এসব ভিজিট ভিসার অবৈধ গমনেচ্ছুদের অফলোড করাই। বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে সচিব নেই। তাই বিমান বন্দরের প্রশাসনের কার্যক্রম কিছু ঢিলেডালা যাচ্ছে। এ সুযোগটাও কেউ কেউ হীন-স্বার্থে কাজে লাগাচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদেশ

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ