পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাখাওয়াত হোসেন বাদশা : মন্ত্রী, সচিব ও অধিদপ্তরের প্রধানদের ঘন ঘন বিদেশ সফরে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের দায়িত্বশীল পদে থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এমন বিদেশ সফরে প্রশাসনে এক ধরনের স্থবিরতাও দেখা দিয়েছে।
সরকারি অর্থ অপচয় করে এমন সব অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য এই বিদেশ সফর করা হচ্ছেÑ যার আদৌ কোনো প্রয়োজন নেই। এমন পরিস্থিতি এড়াতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সকল মন্ত্রণালয় ও দপ্তর প্রধান বরাবর আবারও চিঠি পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে ওই চিঠিতে মন্ত্রণালয়, বিভাগের সিনিয়র সচিব, সচিব ও ভারপ্রাপ্ত সচিবদের বিদেশ ভ্রমণের ব্যাপারে যথাযথ নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে।
সরকারি ও প্রজেক্টের টাকায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাদের পোষ্যদের বিদেশ সফরের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে কমপক্ষে ২৬টি টিম বিদেশ সফর করেছে। বর্তমানে ১৬টি টিম বিদেশে আছে। চলতি মাসে আরও অন্তত ১১টি টিমের বিদেশ যাওয়ার কথা রয়েছে বলে বাংলাদেশ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে।
একজন কর্মকর্তা বছরে সর্বোচ্চ কতবার বিদেশ সফরে যেতে পারবেন, এ নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পরিপত্রও জারি করা আছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই এই পরিপত্র জারি করা হয়। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তারা তা আদৌ মেনে চলছেন না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এমন অভিযোগও রয়েছে যে, অনেক মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের প্রধান বছরে ৮ থেকে ৯ বার বিদেশ সফরে গেছেন। এসব সফরের অধিকাংশই ‘প্লেজার ট্রিপ’। আবার এমন সব সফরেও সচিব কিম্বা দপ্তর প্রধানরা যাচ্ছেনÑ যেখানে নি¤œ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাঠালেও চলে।
এ নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, তাদের কাছে এমন অভিযোগও রয়েছে যে, সরকারি টাকায় কিম্বা প্রকল্পের জন্য যন্ত্রপাতি দেখার নামে পরিবারের সদস্যদের নিয়েও ইউরোপ সফর করে এসেছেন। এ ধরনের অভিযোগ সবচেয়ে বেশি উঠেছে, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বিআইডব্লিউটিএ এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নামে। অভিযোগ রয়েছে, পাউবো’র সাবেক এক মহাপরিচালক দায়িত্বে থেকে ড্রেজারের মেশিন দেখার নামে স্ত্রীসহ ইউরোপ সফর করে এসেছেন। এই সফরের অর্থ যোগান দিয়েছেন জনৈক ঠিকাদার।
সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের ব্যাপারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আরও বলেন, বিদ্যমান বিদেশ সফরের নীতিমালায় স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা না থাকায় যে যার ইচ্ছামত বিদেশ সফর করছেন। এতে সরকারের যেমন আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে কাজকর্মেও দেখা দিয়েছে ধীরগতি। বিদেশ সফর করছেন প্রকল্প পরিচালক, মন্ত্রীদের পিএস-এপিএস, পিও, এমনকি বাসার কর্মচারীও।
সূত্র জানায়, এসব সফর সবচেয়ে বেশি হয় অর্থ-বছরের শেষার্ধে এসে। তখন প্রকল্পের টাকার ব্যয় দেখাতে এবং মন্ত্রী-সচিবকে খুশি করতে প্রকল্প পরিচালকরা এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বিদেশ সফরে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়।
এদিকে, একজন কর্মকর্তা কতবার বিদেশ সফর করতে পারবেন তা নির্দিষ্ট করে দেয়ার পরও কেন তা মানা হচ্ছে নাÑএ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ১৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের তৎকালীন মুখ্য সচিব মো. আবদুল করিম সরকারের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি ও কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ প্রসঙ্গে চার দফা নির্দেশনা দিয়ে একটি পরিপত্র জারি করেন।
পরিপত্রে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব, যুগ্ম সচিব ও সংস্থা প্রধানের একসঙ্গে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পাশাপাশি সচিবকে বছরে চার বারের বেশি বিদেশ ভ্রমণে যেতে নিষেধ করা হয়। বিদেশের সেমিনার বা ওয়ার্কশপে অন্য দেশের কোন পর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন, তা জানানো বাধ্যতামূলক করা হয়। একই সঙ্গে এ ধরনের ওয়ার্কশপ বা সেমিনারে সচিবদের অংশগ্রহণ পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
এর আগে ২০০৯ সালের ১৫ জুন সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে অনিয়ম দূর করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশ দেন। একজন কর্মকর্তা বছরে সর্বোচ্চ কতবার বিদেশ সফরে যেতে পারবেন, তা নির্দিষ্ট করে দেয়ার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে গত ১১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো পত্রে বলা হয়েছে, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সিনিয়র সচিব, সচিব, ভারপ্রাপ্ত সচিবরা বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে অনুমতি ও অনুসরনীয় আনুষঙ্গিক বিষয়াদি যথাযথভাবে মেনে চলছেন না। এ ব্যপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ২০১১ সালের ১৯ জুন জারিকৃত অনুশাসন/নির্দেশনা কেন মন্ত্রণালয়সমূহ কর্তৃক অনুসৃত হচ্ছে না-তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, পরিপত্রের ১১ (ঙ) অনুচ্ছেদে উল্লিখিত মন্ত্রনালয/বিভাগের সিনিয়র সচিব/সচিব/ভারপ্রাপ্ত সচিবগণের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যতিক্রম ছাড়া চার বারের বেশি (অর্থ বছরের জুলাই-জুন সময়কালে গণ্য হবে) বিদেশ ভ্রমণ করতে পারবেন না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এই নির্দেশনা পত্র যথাযথভাবে মেনে চলার জন্য প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব, সচিব ও ভারপ্রাপ্ত সচিবদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম ইনকিলাবকে বলেন, বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় দেখছে। এ ব্যাপারে এ নির্দেশনাও রয়েছে। এই নির্দেশনা প্রত্যেক মন্ত্রণালয়েরই অনুসরণ করা উচিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।