পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ব্যয় সংকোচনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশ সফর নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা দেয়া হলেও পরিবেশ মন্ত্রণালয় তা একেবারেই মানছে না। সরকারের নির্দেশনার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নিজেই অবিরাম বিদেশ সফর করে বেড়াচ্ছেন। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের সফর তো আছেই। বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যস্ততা আছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। তিনি গত সপ্তাহে সেনেগালের রাজধানী ডাবারে অনুষ্ঠিত এলডিসি মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিয়ে গত সপ্তাহে দেশে ফিরেছেন। এরই মধ্যে আরও দুটি দেশ সফরে যাচ্ছেন তিনি। গত ২০ সেপ্টেম্বর গেছেন মালদ্বীপে। এর পরপরই তার নেপাল সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া আগামী নভেম্বরে মিসরে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দেবেন তিনি। একই মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহারের আগামী ৩ অক্টোবর নাইজেরিয়া যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরিবেশগত পারফরম্যান্স সূচকে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৭৭তম হয়েছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে শীর্ষ দূষিত শহরের তালিকায় স্থান করে নিচ্ছে দেশের রাজধানী শহর ঢাকা। বায়ুদূষণ, প্লাস্টিক-পলিথিন দূষণ, গাছ কেটে বন উজাড়, অবৈধ ইটভাটা, ট্যানারি বর্জ্য এসবে দেশের পরিবেশ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে। এই নানামুখি পরিবেশ দূষণ রোধে মন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয় বা অধিদফতরের কর্মকর্তাদের কার্যকর কোনো ভূমিকা লক্ষ্য করা যায় না। তবে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বিদেশ সফরে যাওয়ার ব্যাপারে তাদের আগ্রহের কোনো কমতি নেই। আর বিপুল অর্থ ব্যয়ে বিদেশ সফর করে দেশের কী লাভ হচ্ছে, সে প্রশ্নও এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মন্ত্রী, সচিব বা অন্যান্য কর্মকর্তারা বিভিন্ন প্রকল্পের নামে যে বিদেশ সফর করছেন তাতে দেশের প্রাপ্তি অশ্বডিম্ব ছাড়া আর কিছুই না।
ইতোপূর্বে ‘পুকুর ও খাল উন্নয়ন’ বিষয়ক প্রশিক্ষণ ছাড়াও ঘাসচাষ ও ঘাসকাটা শিখতে কর্মকর্তাদের বিদেশ যাওয়ার ছক সাজানোর কথা গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। তারপরও প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। গত জুনে ‘বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (বেস্ট)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও ভ্রমণ বাবদ ৪০ কোটি টাকা চাওয়া হয়। এছাড়া এ প্রকল্পে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জন্য ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা এবং সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের জন্য ৭ কোটি টাকাসহ এ খাতে মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৪৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এভাবেই প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে বিদেশ সফরের উচিলায় বিপুল পরিমাণ টাকা লুটপাট করা হয়। যা দেশের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক। বিদেশ সফরের বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিবেশ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, বিনা প্রয়োজনে আমাদের কর্মকর্তারা কখনো বিদেশ সফরে যান না। আসলে বর্তমানে বৈশিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় কোনো দেশ এককভাবে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা অসম্ভব। এজন্য আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক এসব সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। এ ছাড়া পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী শিল্পোন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ক্ষেত্রেও বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বৈঠকে কর্মকর্তা অংশ নেন। এসব সফর অবশ্যই দেশের প্রয়োজনে, অকারণে নয়।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব বাংলাদেশে এখন প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। শিল্পোন্নত দেশগুলোর অতিমাত্রায় ফসিল জ্বালানি ব্যবহারের কারণে প্রকৃতির অস্বাভাবিক আচরণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রধান শিকার হচ্ছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলো। অসময়ে বন্যা, বর্ষায় খরা, ঝড়, সমুদ্রে অস্বাভাবিক জোয়ার এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনেক বেড়ে গেছে। এর ফসলের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি বন্যপ্রাণীর জীবনধারণও হুমকির মুখে পড়ছে। নদী শুকিয়ে যাচ্ছে, কোখাও বা তীব্র ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে, রাস্তা, ঘাট, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিলীন হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। মানুষ ঘরবাড়ি সব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে। অথচ পরিবশে মন্ত্রণালয়ের সেদিকে কোনো নজর নেই। সমুদ্র উপকূল ভাঙছে, ভাঙছে বেড়িবাঁধ। পানিসস্পদ মন্ত্রণালয় ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাথে এসব বিষয়ে আলোচনা করে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার কথা পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের। অথচ তারা এ ব্যাপারে নীরব। পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলেন, এটা নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ও পনিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাজ।
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ইমেরিটাস অধ্যাপক ডক্টর আইনুন নিশাত ইনকিলাবকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি অবশ্যম্ভাবী হলেও আগে থেকেই যথাযথ উদ্যোগ নিলে তা অনেকটা কমানো সম্ভব। কিন্তু এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের উদাসীন বলেই মনে হয়। শুধুমাত্র বিদেশ সফর করে বিদেশি অর্থÑ যেমন খুশি তেমন করে খরচ করলে পরিবেশজনিত দুর্যোগ মোকাবিলা সম্ভব নয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের দেশে এ যে বিরূপ প্রভাব তার জন্য দায়ী উন্নত বিশ্ব। এ জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য গত জুনে জার্মানির বন শহরে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সে সম্মেলনে ধনী দেশগুলো যারা কার্বন নিগর্মনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী তারা শুধু কথার ফুলঝুড়ি ছড়িয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যাপারে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ সেখানে গৃহীত হয়নি। বাংলাদেশের পরিবেশমন্ত্রী, সচিবসহ আরো কয়েকজন কর্মকর্তা সে সম্মেলনে অংশ নিলেও তাদের অর্জন একেবারেই শূন্য। জাতিসংঘ বারবারই বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কার কথা বলছেন। এ অবস্থায় আগামীতেও জলবায়ু তহবিল সংগ্রহ ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
সেনেগালের রাজধানী ডাকারে অনুষ্ঠিত এলডিসি মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিয়ে পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন গত ১৪ সেপ্টেম্বর জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলোর কাছে ১০০ বিলিয়ন ডলার দাবি করেন। তবে তার সে দাবি শুধু কাগজপত্রে রয়ে গেছে। এ বৈঠকেও অর্জন বলতে কিছুই নেই। ডাকারের বৈঠকে পরিবেশমন্ত্রী বলেন, জরুরিভাবে প্রশমনের উচ্চাকাক্সক্ষা এবং বাস্তবায়নের মাত্রা বাড়াতে হবে। এটা ছাড়া আমরা কখনোই ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার লক্ষ্য অর্জন করতে পারব না। এই লক্ষ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী নিগর্মন ২০১০ সালের তুলনায় ৪৫ শতাংশ কমাতে হবে। তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই বিশ্বব্যাপী প্রশমন প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিতে হবে এবং উন্নত দেশগুলো, বিশেষ করে জি-২০ দেশগুলোকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। মন্ত্রীর এই আহ্বানে ওই বৈঠকে কার্যকর তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নির্বাহী সভাপতি ড. আব্দুল মতিন ইনকিলাবকে বলেন, পরিবেশের বিপর্যয় ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয় বা অধিদফতর পরিবেশের দূষণ রোধে একেবারেই আন্তরিক নয়। অনেক ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদফতরের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অবৈধ ইটভাটা চলে, পলিথিন কারখানা চলছে। তারা পরিবেশ উন্নয়নের কথা বলে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে। এসব প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি হয়, পরিবেশের উন্নয়ন কিছুই হয় না। সরকারের লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে প্রশিক্ষণের নামে বা প্রকল্পের অর্থ অনুদান প্রাপ্তির নামে বিদেশ সফর করলেও তাতে দেশের প্রাপ্তি একেবারেই শূন্য কোটায়। সব মিলিয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয় তাদের দায়িত্ব পালনে একেবারেই ব্যর্থ বলা যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।