হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
আবদুল আউয়াল ঠাকুর
বিশ্বব্যাপী যখন গণতন্ত্রের কথা ওঠে তখন যে মানুষটির নাম সর্বাগ্রে সামনে আসে সেই আব্রাহাম লিংকন কতটা লেখাপড়া করেছেন তা নিয়ে যেমনি কেউ প্রশ্ন করে না, তেমনি তিনি কোনো রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর কাছ থেকে শুনে বা তাদের কথা নকল করে যে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা নির্ধারণ করেননি সে কথাতেও কেউ কোনো সন্দেহ প্রকাশ করেন না। তিনি গণতন্ত্রের সংজ্ঞা নিয়েছেন তার দেশের মানুষের কাছ থেকে। সুনির্দিষ্টভাবেই বলা যায়, ওই সমাজে চলমান বৈষম্য নিরসনেই তিনি গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। সে সমাজের চিত্র কী ছিল বোধকরি সে আলোচনা এখন আর নতুন করে তুলে কোনো লাভ নেই। শুধু এটা মনে করিয়ে দেয়া দরকার যে, ফরাসি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যে মানবতার জয়গানের কথা বলা হয় তার সুফল কিন্তু সবাই পায়নি বরং সেই বিপ্লবের সূত্র ধরেই বিশ্বব্যাপী পরবর্তীতে যে শিল্প বিল্পব হয়েছিল তার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হিসেবে জন্ম নিয়েছিল দাস ব্যবস্থা। কিছু মানুষ অর্থবিত্তের কারণে নিজেদের অভিজাত শ্রেণি বিবেচনা করতে শুরু করেছিল। সেই শ্রেণি তাদের বিলাসী জীবনযাপনে আফ্রিকার স্বাধীন মানুষদের আটকে এনে দাসে পরিণত করেছিল। এই দাস ব্যবস্থা অর্থাৎ স্বাধীন মানুষদের পদানত করার বিষয়টি সে সমাজে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারেনি কেবলমাত্র সেই মানুষগুলোর স্বাধীন চেতনার কারণেই। আমেরিকার গণতন্ত্রও মূলত এই মানুষগুলোর মুক্তির একটা দলিল তৈরি করেছিল। সে অর্থে বলা যায়, গণতন্ত্র মানুষের নাগরিক বৈষম্য বিলোপের একটি সনদ। সমাজের অর্থনৈতিক বৈষম্যজনিত যে সামাজিক বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম হয়েছিল তা অপনোদনে সেই সমাজে মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে যে আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল তার চলমানতা এবং সে আইনের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধাবোধ প্রমাণ করে একটি গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে শিক্ষিত হওয়ার চাইতেও গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকার অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গণতান্ত্রিক সমাজের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে নির্বাচন। নির্বাচনের ব্যারোমিটার দিয়েই বোঝা যায়, একটি সমাজ কতটা গণতান্ত্রিক। সে বিবেচনায় যদি বাংলাদেশের বিগত প্রায় অর্ধশতাব্দীর শাসনকাল পর্যালোচনা করা যায় তাহলে দেখা যাবে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একটি বহুদলভিত্তিক নির্বাচনী ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন করেছিলেন। এরপর তার দলের দায়িত্ব নেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনিও একাধিকবার ক্ষমতায় ছিলেন এবং যথাসময়ে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন। অন্য বিবেচনায় যারা নিজেদের গণতান্ত্রিক বলে জনগণের সামনে প্রতীয়মান করতে চাচ্ছেন তারা ক্ষমতায় গিয়ে সর্বপ্রথম যে কাজটি করেছেন তা হলো নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়েছেন। অন্যদের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় যাওয়ার পথ রুদ্ধ করে দেয়ার প্রক্রিয়া চালু করেছেন। আর এর বাইরে যে দলটি থাকল সে তো ক্ষমতা দখল করেছিল সামরিক শাসনের মাধ্যমে। তার আলোচনা অবান্তর।
এ আলোচনার হয়তো এমনি কোনো প্রয়োজন হতো না। তবে সম্প্রতি চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর পরবর্তীতে কোনো কোনো মহল থেকে এমন কিছু আলোচনা উঠেছে যাকে কোনো বিবেচনাতেই এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, চীনের প্রেসিডেন্টের সফরকে হালকা করে দেখার কোনো অকাশ নেই। রিপোর্ট ও বিশ্লেষণাদিতেও বলা হয়েছে, তিনি এমন একসময়ে সফর করেছেন যখন বাংলাদেশ প্রকৃতই এক যুগসন্ধিক্ষণে অবস্থান করছে। এর মূলে রয়েছে সরকারের সাথে ভারতের সম্পর্ক। সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, চীনের প্রেসিডেন্টের এই সফরের অন্তর্নিহিত বিষয় নিয়ে। এ আলোচনায় দুটি বিষয় অত্যন্ত স্পষ্ট হয়ে উঠেছেÑ প্রথমত, চীনের ঋণ ও সাহায্য প্রস্তাব। দ্বিতীয়ত, এই সফরের রাজনৈতিক তাৎপর্য। চীনের প্রসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফরকে আনুষ্ঠানিকতার মোড়কে মূলত অর্থনৈতিক বাস্তবতাতেই দেখা হচ্ছে। অনেক বড় অংকের আর্থিক প্রস্তাব ও আশ্বাস দিয়ে বন্ধন সুদৃঢ় করার বার্তা দিয়ে ঢাকা ছেড়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশের সর্বোচ্চ নেতা ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোডের সম্প্রসারণের ভিত্তিতে সম্পর্কের নতুন দিগন্তের সূচনার ঘোষণা দিয়ে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার শুধু চীনের প্রেসিডেন্ট নন বরং সম্প্রতি ঘুরে যাওয়া বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টও বাংলাদেশকে বড় ধরনের আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। সে বিবেচনায় বলতে গেলে, বাংলাদেশের নদ-নদীতে পানি না থাকলেও টাকার উপরে ভেসে বেড়ানোর কথা। এত প্রস্তাব-আশ্বাস সবকিছু মিলে বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব ক্ষেত্রে প্রশংসা ও সতর্কবাণী অবশ্যই গভীর বিবেচনার দাবি রাখে। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে বলেছেন, ১৯৯১ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ২ কোটি ৫ লাখ লোককে দারিদ্র্যসীমার উপরে তুলে এনেছে। তবে এখনো বাংলাদেশের আরো অনেক কাজ করার আছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন, সুশাসন শক্তিশালী করা এবং বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের সাথে একত্রে কাজ করতে আগ্রহী বিশ্বব্যাংক। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এখনো বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে কম। যদি সুশাসন বাড়ানো সম্ভব হয় তাহলে তা কর্মসংস্থান বাড়াতে সহায়তা করবে। বাস্তবতও বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে কোনো মহলেই কোনো দ্বিধা-সন্দেহ নেই। আবার সেই সাথে এ প্রসঙ্গকে যদিও কিন্তু মুক্ত করা যায়নি। চীনের প্রেসিডেন্টের সফরের পরও ঋণ-সাহায্যের আশ্বাস সব মিলিয়ে অনেক বড় প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এ প্রসঙ্গেও বিশ্লেষকরা বলছেন, কথা যাই হোক বাংলাদেশের সক্ষমতার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। প্রতিবছরই অর্থনৈতিক বছরের শেষে দেখা যায়, সক্ষমতার অভাবে অনেক বিদেশি সাহায্য ব্যবহার করা যাচ্ছে না। টাকা ফেরত যাচ্ছে। চীন এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে তার বাজারে শুল্কমুক্ত যেসব পণ্য প্রবেশের অগ্রাধিকার দিয়েছে বাংলাদেশ তার একাংশও ব্যবহার করতে পারেনি। কেন পারেনি সে আলোচনায়ও নানা মাত্রিকতা রয়েছে। সক্ষমতার বিষয়টি এক্ষেত্রে বিবেচিত হতে হবে বাস্তবতার আলোকে। বাংলাদেশ এখন মূলত ভারতনির্ভর একটি আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ কী উৎপাদন করবে বা করতে পারবে তার রফতানি সক্ষমতার বিষয়টি নির্ধারণের এখতিয়ার এখন সর্বাশেং বাংলাদেশ রাখে কিনা তা নিয়ে পর্যবেক্ষক মহলে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। বর্তমানে যে প্রসঙ্গ উঠেছে তারও একটু আলোচনা দরকার। মনে করা হচ্ছে, চীন এখন বড় শিল্পের দিকে যাচ্ছে। ছোট ছোট রফতানিমুখী কারখানা অন্যত্র সরিয়ে দিতে চাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য এটা বড় সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। ব্যাপারটি যদি একটু পেছনের দিকে ফিরে তাকানো যায় তাহলে দেখা যাবে, গত কয়েক বছরে এ ধরনের ঘটনা জাপানে ঘটেছে, তার আগে ইউরোপীয় বিশ্বে ঘটেছে। একসময় চীনও আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে এসব শিল্প তার দেশে নিয়ে এসেছে। দেশের অর্থনৈতিক ভিত রচনা এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের প্রেক্ষিত ও পুঁজির বিবেচনায় এ ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানানোর কোনো বিকল্প নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সে ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের সদিচ্ছা বা মানসিকতা রয়েছে কিনা। একটি ছোট্ট উদাহরণ তুলে ধরছি। বাজারে বার্মিজ চিরুনি বলে এক ধরনের উন্নতমানের পকেট চিরুনি পাওয়া যেত। গত কিছু দিন থেকে এটি হাওয়া হয়ে গিয়েছিল। এখন অনুরূপ চিরুনি পাওয়া যাচ্ছে তবে তা ভারতীয় ম্যাজিক চিরুনি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। এটি আগেরটি নয়। উদাহরণটি এ জন্য যে, চীনের থেকে যেসব ছোট ছোট শিল্প আমরা পেতে পারি সেগুলো ভারতীয় স্বার্থের সাথে সাংঘর্ষিক হলে কি বাংলাদেশে করা যাবে? প্রশ্নটি আরো এক কারণে উঠেছে, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সবচেয়ে বড় ও নির্ভরযোগ্য খাত পোশাক শিল্প এখন বড় ধরনের হুমকির মুখে রয়েছে। এই হুককির কারণ কি তা বোধহয় আর বিশদ আলোচনার প্রয়োজন নেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের প্রেসিডেন্টের সফরের কারণে যতটুকু আশঙ্কা ভারতের তৈরি হয়েছিল তা অপনোদিত হয়েছে গোয়ার সম্মেলনে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় তার অবসান হয়েছে। ভারত আশ্বস্ত হয়েছে যে, উদ্বেগের কিছু নেই। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এসব নানা দিক দেখছেন বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে। তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন দুর্নীতি, দুর্বৃৃত্তায়ন নিয়ে। তারও চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন রাজনৈতিক আস্থার প্রসঙ্গে। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট যখন সুশাসন ও বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে কথা বলছেন ঠিক তখন বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন নিয়ে আলোচনার কথা বলেছেন ইইউ রাষ্ট্রদূতও। তিনি বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরে ইইউ সদর দফতরে বাংলাদেশ ইইউ যৌথ কমিশনে গণতন্ত্র, সুশাসন, মানবাধিকার সংক্রান্ত উপ-কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। কেন এ প্রসঙ্গ উঠছে তার বিষদ বিবরণের কোনো প্রয়োজন নেই। বোধকরি এ কথা সবারই জানা যে, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে যে আলোচনা সর্বত্র রয়েছে এসব তারই প্রতিধ্বনি করছে। আস্থা, সুশাসন, মানবাধিকার সবকিছুই নির্ভর করছে দেশে কতটা গণতন্ত্র রয়েছে, মানুষ কতটা স্বস্তিতে রয়েছে তার ওপর। বিদেশি বিনিয়োগ যে এখন পর্যন্ত কার্যকরভাবে আকৃষ্ট করা যাচ্ছে না তার মূলেও রয়েছে এক ধরনের আস্থার সংকট। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট মূলত স্থিতিশীলতার ওপরই গুরুত্ব দিয়েছেন, যা নিশ্চিত করতে পারে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।
চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের পর চীনের সাহায্য-সহায়তা কাজে লাগানোর আলোচনা যতটুকু হয়েছে তার চেয়ে বেশি হয়েছে কেন চীনের প্রেসিডেন্ট সরকার নির্ধারিত ‘বিরোধী’ দলের সাথে বৈঠক করেননি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার সাথে কী কথা হয়েছে তা নিয়ে। এর মধ্যে কী ধরনের রাজনৈতিক বার্তা রয়েছে তা খোঁজার চেষ্টা করেছেন অনেকেই এমনকি ভারতীয় কোনো কোনো মহলও এ থেকে বাইরে নেই। এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া অর্থনৈতিক প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। সরকার নির্ধারিত বিরোধী দলের সাথে বৈঠক না হওয়াকে খুব সঙ্গতভাবেই ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এদিক থেকে সরকারের প্রতি এক ধরনের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ যে ছুড়ে দেয়া হয়েছে তা বোধকরি যে কোন সাধারণ মানুষের পক্ষেও বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তাহলে এটা অনুমান করা অসঙ্গত নয় যে, তারা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পক্ষে রয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্টের সাথে বৈঠকের পর বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চীন বাংলাদেশের জনগণের সাথে থাকার অঙ্গীকার করেছে। জনগণের সাথে থাকার অর্থ যে ব্যাপক সে কথা বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই। সহজভাবে এটা বলা যায়, বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভারতের সরকার জনগণের নয় বরং একটি দলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। সে কারণে একটি অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন হতে পেরেছিল। যেসব যুক্তিতে সে সময়ে ভারত তার অবস্থান নিয়েছিল আজকের প্রেক্ষিতে বলা যায় ভারতীয় অবস্থানে ভারতের সাথে বাংলাদেশের জনগণের সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়েছে না আরো শীতল হয়েছে তা বিবেচনার ভার ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছেই থাকল। এখানে আরো একটি বিষয় বিবেচনায় রাখা দরকার চীন যে কোনো দেশ বা সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত। ঐতিহ্যগতভাবেই চীন এটা মেনে চলছে। চীনের প্রেসিডেন্টের বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে বৈঠকের পরপরই সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বিএনপি বিদেশিদের কাছে নালিশ করছে। গত কিছু দিনে দেখা যায়, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে ২০-দলীয় জোটের অবরোধ চলাকালে একপর্যায়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতসহ ১১টি দেশের প্রতিনিধিরা বেগম জিয়ার সাথে একত্রে সাক্ষাৎ করেছিলেন। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর অবিলম্বে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে এমন আশ্বাসও সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশিদের দেয়া হয়েছিল। মাত্র সেদিন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বেগম জিয়ার সাথে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন। জনকেরির বাংলাদেশ সফরের সময়ও তিনি সরকারের নির্ধারিত বিরোধী দলের সাথে বৈঠক করেননি। যখনই কেউ বেগম জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেন তখনই সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে বলা হয়, তিনি বিদেশিদের সাথে দেশের ব্যাপার নিয়ে কথা বলছেন। আবার কখনো যদি বাংলাদেশে সফররত কোনো বিদেশি বেগম জিয়ার সাথে কোনো কারণে সাক্ষাৎ না করেন তখন বলেন, বিদেশিরা পাত্তা দিচ্ছে না। যাই হোক কথা হচ্ছে, সরকারের পক্ষ থেকে যে অভিযোগটি করা হয়, তার মূল হচ্ছেÑ দেশে যে গণতন্ত্র নেই, বাকস্বাধীনতা আক্রান্ত, নাগরিক নিরাপত্তা বিঘিœত এ কথা বললেই তারা মনে করেন এটা সরকার তথা দেশের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। দেশে রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর যে নির্যাতন চলছে সে কথা তো সরকারের বিভিন্ন মহল থেকেই প্রকারান্তরে বলা হচ্ছে। যত কথাই বলা হোক, মূল বিষয় হচ্ছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এটি করার মতো পরিস্থিতি ও বাস্তবতা যদি সরকারে পক্ষ থেকে তৈরি করা হয় তাহলে বোধকরি অন্য যে কোনো আলোচনাই অর্থহীন হয়ে উঠবে। এ লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের যে দাবি উঠেছে সেক্ষেত্রে সবার মতামতের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া গেলেই বোধহয় গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং নিজেদের গণতন্ত্রী হিসেবে প্রমাণ করা যাবে।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।