Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচন

| প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে সরকার গঠনের জন্য কোনো দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। তবে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি ৩১৮ আসন নিয়ে বৃহত্তম দল হয়েছে। নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী লেবার পার্টি পেয়েছ ২৬১ আসন। সরকার গঠনের জন্য ৬৫০ আসনের পার্লামেন্টে প্রয়োজন ৩২৬ আসন। আসন হিসেবে দেখা যায়, কোয়ালিশন সরকার গঠন করতে পারে একমাত্র থেরেসা মের কনজারভেটিভ পার্টি। এজন্য উত্তর আয়ারল্যান্ডের রক্ষণশীল দল ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির (ডিইউপি) সমর্থন নিয়ে সরকার গঠনে সচেষ্ট থেরেসা মে। অন্যদিকে সব দলের আসন নিয়েও লেবার পার্টি সরকার গঠনের প্রয়োজনীয় আসন পাচ্ছে না। ফলে সরকার গঠনের সুযোগ কেবলমাত্র কনজারভেটিভ পার্টিরই রয়েছে। তবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর কারণে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের পদত্যাগের দাবী উঠেছে। আপত দৃষ্টিতে দেখা যাচ্ছে, ডিইউপি’র সমর্থন নিয়ে কনজারভেটিভ পার্টি সরকার গঠন করলেও তা ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হিসেবে অনিশ্চিত রয়ে যাবে। যে কোনো সময় পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠান হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
রাজনীতিতে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে, তার বড় ধরনের খেসারত দিতে হয়। হিসাবের গোলমাল হলে ভারসাম্যমূলক অবস্থান হারিয়ে বিপর্যয়ের মুখে অবধারিতভাবে পড়তে হয়। বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে রাজনীতির চালে ভুল করেছেন বলে তার সংহত অবস্থান হারিয়েছেন বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। বিরোধীদের দুর্বলতা এবং নিজেদের সুবিধা বুঝে থেরেসা বৃহত্তর জনসমর্থনের আশায় আগাম নির্বাচন দিয়ে নিজেই নিজের ফাঁদে আটকে গেছেন। সরকার গঠনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা তো পেলেনই না উল্টো অন্য দলের কাছে ধর্না দিয়ে সরকার গঠন করতে হচ্ছে। সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্তে¡ও মে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিয়ে নিজের ক্ষমতা আরও নিরঙ্কুশ করতে চেয়েছিলেন। বেক্সিট বা ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে আসা এবং তা কার্যকর করতে তার নেতৃত্বকে আরও শক্তিশালী করা দরকার বলে মে যুক্তি দিয়েছিলেন। নিজেকে আরও শক্তিশালী করতে গিয়ে উল্টো সরকার গঠন করার মতো সংখ্যা গরিষ্ঠতাই পাননি মে। উল্টো ১১টি আসন হারিয়েছেন। বেক্সিট কার্যকর করা নিয়ে যে থেরেসা মে নিজেকে নিরঙ্কুশ করতে চেয়েছিলেন, সেই তিনি এখন দুর্বল হয়ে পড়লেন। ফলে বেক্সিট কার্যকর করার বিষয়টি এখন অনেকটা দীর্ঘসূত্রে আটকে গেল। অন্যদিকে এ নির্বাচনের মাধ্যমে লেবার পার্টি তার অবস্থান আগের চেয়ে সুসংহত করতে পেরেছে। নির্বাচনের আগে জনমত জরিপে লেবার পার্টির সাথে কনজারভেটিভ পার্টির পার্থক্য ছিল ২০ শতাংশের বেশি। চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, খুব কাছাকাছি অবস্থানে লড়াই হয়েছে। কনজারভেটিভ পার্টি পেয়েছে ৪২.৪ শতাংশ ভোট, আর লেবার পার্টি পেয়েছে ৪০ শতাংশ ভোট। দেখা যাচ্ছে, ২০১৫ সালের তুলনায় লেবার পার্টির ভোট সাড়ে ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, কনজারভেটিভ পার্টির ভোট কমেছে এবং লেবার পার্টি জনসাধারণের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করে চলেছে। লেবার পার্টির এই উন্নতির জন্য দলটির নেতৃত্বদানকারী জেরেমি করবিনের কৃতিত্ব রয়েছে। তার গতিশীল নেতৃত্বের কারণে এই অগ্রগামীতা সম্ভব হয়েছে। অথচ তার নেতৃত্ব নিয়ে দলের মধ্যেই বিরোধ চরমে ছিল। করবিনবিরোধীরা মনে করেছিলেন, নির্বাচনে লেবার পার্টি আসন হারালে তাকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হবে। এখন দেখা যাচ্ছে, করবিন থেরেসা মের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতাই ঠেকিয়ে দিয়েছেন। এর ফলে লেবার পার্টিতে তার নেতৃত্ব আরও সুদৃঢ় হয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে হয়েছে মের নেতৃত্বের দুর্বলতার জন্য। বিরোধী দলের সঙ্গে বিতর্কে অংশগ্রহণ করতে রাজী না হওয়া এবং সাধারণ ভোটারদের সাথে মিশতে না পারার কারণে কনজারভেটিভ দলের জন্য নেতিবাচক ফল বয়ে এনেছে। মের তুলনায় জেরেমি করবিন ছিলেন স্বতঃস্ফূর্ত। যেখানেই গেছেন সেখানেই ভোটারদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা গেছে। তার ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বের কারণে অনেক পেছনে থেকেও লেবার পার্টি অনেক দূর এগিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের নির্বাচন থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে তা হচ্ছে, রাজনীতিতে অতি আত্মবিশ্বাস ও চালাকি অনেক সময় বিপদ ডেকে আনে। সময়মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে না পারাও দলের জন্য বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। যুক্তরাজ্যের গণতন্ত্রের সৌন্দর্যই এমন যে দেশটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে হোক বা কোয়ালিশনের মাধ্যমে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হোক, গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে সে আপস করে না। গণতন্ত্র ঠিক রেখে দল ও নেতৃত্বের পরিবর্তন ঘটে। যারা নেতৃত্ব থাকেন, তারা অসাধারণ গণতান্ত্রিক চেতনার পরিচয় দেন। আমরা যুক্তরাজ্যের গণতন্ত্রের আদর্শ এবং এ অনুযায়ী চলার কথা বলি। বাস্তবে এর কোনো নমুনা দেখা যায় না। যুক্তরাজ্যের নির্বাচনী ব্যবস্থা এতটাই শক্তিশালী যে এ নিয়ে কোনো ধরনের প্রশ্ন উঠার সুযোগ নেই। গণতান্ত্রিক যতগুলো সিস্টেম রয়েছে, তার সবই ঠিক থেকে যায়। বরং রাজনৈতিক ধারা ও নেতৃত্ব গণতান্ত্রিক সিস্টেমের কারণে বদলে যায়। গণতন্ত্রের সৌন্দর্য এখানেই। যুক্তরাজ্যের নির্বাচন ও অংশগ্রহণকারী দলগুলোর গণতান্ত্রিক মনোভাব থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়ার অনেক কিছু রয়েছে। এবারের নির্বাচনে লেবার পার্টি থেকে অংশগ্রহণকারি তিন বাংলাদেশি বংশদ্ভুত নারী পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। এরা হচ্ছেন রুশনারা আলী, ড. রূপা হক এবং বঙ্গবন্ধুর নাতনী টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক। এই তিন বাংলাদেশিকে নির্বাচিত করতে বৃটিশ প্রবাসী সকল বাংলাদেশি দলমতের উর্ধ্বে থেকে একযোগে কাজ করেছেন। এতে বৃটেনে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজয়ী এই তিন বাংলাদেশী নারীকে অভিনন্দন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন