পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ কাতারের সাথে হঠাৎ করেই সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষনা দিয়েছে সউদি আরবসহ ৬টি আরব দেশ ও দক্ষিন এশিয়ার দেশ মালদ্বীপ। এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত। সউদি আরব,বাহরাইন, ইয়েমেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর, লিবিয়ার মত একই বøকের আরব দেশগুলো তাদের অন্যতম প্রতিবেশি, মিত্র ও সহযোগি কাতারের সাথে ক‚টনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষনা দিয়ে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ক‚টনীতিকদের এবং ১৫দিনের মধ্যে কাতারের সাধারণ নাগরিকদের ওই সব দেশ ত্যাগ করতে বলেছে। ক‚টনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের পাশাপাশি সউদি আরব কাতারের সাথে তার সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। সউদি এয়ারলাইন্স,এমিরেটস এবং ইতিহাদ কাতারে তাদের সব ফ্লাইট স্থগিত করে দিয়েছে। একইভাবে কাতার এয়ার ওয়েজও এসব দেশে তাদের সব ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে। মধ্যপ্রাচ্য যখন ইতিহাসের সবচেয়ে সংকটময় ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে তখন ঘনিষ্ট মিত্রদের মধ্যে বিরোধ-বৈরিতা অনভিপ্রেত। সউদি আরবের নেতৃত্বে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ বিরোধি সামরিক জোটে কাতারও অন্যতম অংশিদার হয়ে কাজ করছে তখন কাতারের বিরুদ্ধে সউদি আরবের নেতৃত্বে ৬টি আরব দেশের এমন সিদ্ধান্তে মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক হিসাব নিকাশ যেন উলট পালট হয়ে যেতে বসেছে। ইয়েমেনের হুথি বিরোধি যুদ্ধে সউদি সামরিক জোটে কাতারের অংশগ্রহন সত্বেও সউদি আরব কাতারের বিরুদ্ধে মুসলিম ব্রাদারহুড ও ইরান সমর্থিত কয়েকটি জঙ্গি গোষ্ঠির প্রতি সমর্থন ও সহায়তার অভিযোগ তুলে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তাদের আভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে এবং আল কায়েদা, দায়েশ বা আইএস’র মত জঙ্গি গোষ্ঠির মোকাবেলায় নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার জোর প্রয়াস চালাচ্ছে। এ সময় কাতারের মত মিত্র দেশকে বিচ্ছিন্নতার দিকে ঠেলে দেয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। আরব-ইসরাইল সংকট, আইএস’র উত্থান, সিরিয়ায় বিদ্রোহ, ইয়েমেনে মানবিক বিপর্যয়, অভিবাসন ইস্যুসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আরব ও মুসলমানদের মধ্যে যখন সৌদি আরবের নেতৃত্বে একটি ঐক্য প্রক্রিয়া চলমান আছে তখন অন্যতম সহযোগি দেশের বিরুদ্ধে যে আনীত অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। তবে আলোচনার টেবিলে বসে এর সমাধানে আসাই ছিল প্রত্যাশিত। জায়নবাদি ইসরাইল এবং পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদিরা মধ্যপ্রাচ্য ও আরবদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে অস্থিতিশীলতা জিইয়ে রাখতে চায়, এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতি রিয়াদে অনুষ্ঠিত আরব-ইসলামিক-আমেরিকান(এআইএ) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। সেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট মধ্যপ্রাচ্য সমস্যার সমাধানে আরবদের ঐক্যের কথা বললেও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম আঞ্চলিক শক্তি ইরানের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন। সকলের মনে রাখতে হবে, আংশিক বা খন্ডিত ঐক্য আঞ্চলিক শান্তি ও সংহতি প্রতিষ্ঠায় কোন কার্যকর ফল দেবেনা। ইরান হোক আর কাতার হোক যে কোন আঞ্চলিক সমস্যার জন্য সকল পক্ষকে আলোচনার টেবিলে বসেই সমাধানে আসতে হবে। আলোচনা ব্যর্থ হলেই কেবল ক‚টনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন বা অর্থনৈতিক অবরোধের প্রসঙ্গ আসতে পারে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনাপ্রবাহে কাতারকে বরাবরই অ্যাক্টিভ ভূমিকায় দেখা যায়। ইরাকে আগ্রাসন কিংবা লিবিয়া সংঘাতে তাকে পশ্চিমা শক্তির পক্ষে সক্রিয় অবস্থান নিতে দেখা গেছে। এ ব্যাপারে তার সংযম রক্ষা করা উচিৎ ছিল।
সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ এখন একটি বৈশ্বিক সমস্যা এবং একই সাথে একটি বেøইম গেমের ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুসলিম ব্রাদারহুডের মত আঞ্চলিক রাজনৈতিক শক্তির প্রতি কাতারের সমর্থন থাকা অস্বাভাবিক বিষয় নয়। তবে উগ্র জঙ্গিবাদের প্রতি কাতারের সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ কাতার কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করছে। তারা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে আগ্রহী। আলোচনার মাধ্যমে যে কোন বিরোধ, মতপার্থক্য ও সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারি হিসেবে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের ভূমিকায় ইতিমধ্যেই কিছুটা আশার আলো ছড়িয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থে বৃহত্তর ঐক্য ধরে রাখতে এরদাগান কাতার ক্রাইসিস উত্তরনে মধ্যস্থতাকারি হিসেবে সাহসী ও প্রশংসনীয় ভূমিকা নিচ্ছেন বলে জানা যায়। ঘটনার ব্যাপকতা ও সুদুর প্রসারি প্রভাব অনুধাবন করে সংকট নিরসনে এরদোগান সউদি আরব, কাতার, কুয়েত কর্তৃপক্ষসহ আঞ্চলিক ও বিশ্বনেতাদের সাথে কথা বলেছেন। এরদোগানের পাশাপাশি কুয়েতও কাতার সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থতাকারির ভূমিকা পালন করতে আগ্রহী বলে জানা গেছে। যেখানে কাতার কর্তৃপক্ষ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে আগ্রহী এবং একাধিক আঞ্চলিক শক্তি তাৎক্ষনিকভাবেই মধ্যস্থতাকারির ভূমিকা পালন করতে চায়, সেখানে সমাধানের ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা নেই বললেও চলে। সউদি আরবের মত বড় আঞ্চলিক শক্তির আরো সহনশীল ও সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত ও ভূমিকাই এখন সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। উগ্রবাদ, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদসহ মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে সব সমস্যা সমাধানের পথ উন্মুক্ত রাখতে হবে। বিচ্ছিন্নতা ও বেøইম গেম পরিহার করে মধ্যপ্রাচ্যে পারস্পরিক আস্থা, নির্ভরতা ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।