Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পদ্মার তীব্র ভাঙনে হুমকিতে ফরিদপুর শহর রক্ষা বাঁধ

| প্রকাশের সময় : ৭ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা : ফরিদপুর সদর উপজেলার দু’টি ইউনিয়নে পদ্মা নদীর ভাঙন তীব্র হচ্ছে। গত কয়েক দিনে শহর রক্ষা বাঁধ থেকে পদ্মা ভাঙনের দুরত্ব মাত্র ১৫/২০ ফুট। আতঙ্কে এলাকাবাসী। শহররক্ষা বাঁধ ক্ষতির আশংকা করছে অনেকে। সিএন্ডবি ঘাট গরুর হাট থেকে দুলাল মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার অংশে কয়েকটি স্থানে ডুবো চর জেগে ওঠায় পদ্মার উত্তাল ¯্রােত আপন ধারা ঘুরে সোজা শহর রক্ষা বাঁধের দিকে আঘাত হানছে। ডিক্রিরচর ইউনিয়নের মুন্সীডাঙ্গির বাসিন্দা মাছ বিক্রেতা মোতালেব শেখ বলেন, এলাকাবাসী মিলে কয়েকদিন আগে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। পদ্মা ভাঙন থেকে গোলডাঙ্গি ব্রীজের দুরুত্ব মাত্র ২৫০ ফুটের মত। শহর রক্ষা বাঁধের গলার কাছে এসে পড়েছে পদ্মার ভাঙন। আমরা অবিলম্বে এই ভাঙন প্রতিরোধের দাবী জানাই। তাইজুদ্দিন মুন্সীর ডাঙ্গি এলাকার বাসিন্দা জবেদা খাতুন (৭০) বলেন, কি বলবো রে ভাই, ভাঙতে ভাঙতে সব শ্যাস। এই কলোনীতে একটু ঘর কইর‌্যা আছি। মন্ত্রী মোশাররফ মিয়া বাঁধ দিছিল বইল্যা কোনো রকম বাইচ্যা আছি। আল্লা উনারে বাঁচায় রাখুক। রাতে ঘুমাইতে পারি না। শো শো শব্দে এই বুঝি সব গেল !
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডিক্রিরচর ইউনিয়নের আইজুদ্দিন মুন্সির ডাঙ্গী এলাকায় শহররক্ষা বাঁধ সংলগ্ন পদ্মা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। অন্যদিকেও নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের মৃধা ডাঙ্গীতেও ভাঙন শুরু হয়েছে। বসতবাড়ী সরিয়ে নিচ্ছে অনেকে। ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলিন হচ্ছে। এছাড়া ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন, হাজীগঞ্জ, ভাঙ্গা, সদরপুর থানার বিভিন্ন স্থানে নদী ভাঙন তীব্রতর হয়েছে। প্রতিদিনি স্রোত বাড়ছে। ভাঙছে পাড়। নদীর স্রোতে ঘুর্নায়মান পাক রয়েছে। এই ভাঙনের ফলে এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। ডিক্রিরচর এলাকার বাসিন্দা কৃষক গঞ্জের খাঁ বলেন, গাঙ্গের উপর অত্যাচার হলে, গাং অভিমান করে। আর মান হলে খবর আছে। ২০ বছর পর পদ্মা নদীর কবল থেকে এই গ্রাম জেগে উঠছে। দফায় দফায় ঘর ভাঙছে বসত ভাঙছে এহান থেকে ওহানে। কতবার যে এই গাং আমাগো সর্বনাশ করছে তা বলার না। ফরিদপুরের মন্ত্রী মোশাররফ ভাই শহররক্ষা বাঁধ দিছিল তাই একটু মাথা গোজার ঠাই হয়েছে। তয় ভয়ে আছি আবার ভাঙন শুরু হলো।
মৃধা ডাঙ্গী এলাকার বাসিন্দা কৃষক মোহাম্মদ আলী বলেন, এখনি যদি ভাঙন প্রতিরোধে কাম না হয় তাহলে শহররক্ষা বাঁধের ক্ষতি হতে পারে। রাতে ঘুম হয় না। কখন বুঝি পদ্মা ধেয়ে আসে। সিএন্ডবি ঘাট সংলগ্ন আইজদ্দিন মুন্সির ডাঙ্গী গ্রাম সংলগ্ন শহররক্ষা বাঁধ থেকে ১৫-২০ ফুট দুরে পদ্মার ভাঙন দেখা দিয়েছে। বড় আকার ধারণের আগেই প্রতিরোধ করা প্রয়োজন। নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ মোস্তাকুজ্জামান মোস্তাক জানান, গত কয়েকদিন ধরে পদ্মা নদীর ভাঙনে ইউনিয়নের মৃধা ডাঙ্গী এলাকার অনেক জমি নদীগর্ভে ধসে গেছে। পদ্মার মধ্যে জেগে ওঠা ডুবোচর ¯্রােতের গতি শহর বাঁধের দিকেই ঘুরিয়ে দিয়েছে। ডুবোচরটি খননের মাধ্যমে অপসারণ করে দিলে ¯্রােতের গতি আরো কমে যেত। এখই ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরণের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি যে শহররক্ষা বাঁধ গড়েছেন তাতে হাজার হাজার মানুষের বসতভিটে ও ফসলি জমি রক্ষা পেয়েছে। সেই সুনাম ধরে রাখতে এই ভাঙন প্রতিরোধে এখনি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। ইউনিয়নবাসীর পক্ষ থেকে আমি ভাঙন প্রতিরোধের দাবী জানাই। পদ্মা নদীর ভাঙন সম্পর্কে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসডি মোঃ জহিরুল ইসলাম জানান, পদ্মা নদী বিভিন্ন জায়গায় ভাঙছে। কিন্তু প্রকল্প ছাড়া বা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না। বিষয়টি যদি জরুরী হয় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা কর্মচারীরা এক প্রভাবশালী এক নেতার ছত্রছায়ায় দীর্ঘ ৯ বছর ধরে সরকারী প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করে খাচ্ছে। কোনো সাংবাদিক তথ্য সংগ্রহ করতে গেলেই ওই প্রভাবশালী নেতার ভয়ভীতি দেখানো হয় এবং চাঁদাবাজীর মামলার ভয় দেখানো হয়। ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি দুর্নীতির আখড়া।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পদ্মা

১১ জানুয়ারি, ২০২৩
৩১ অক্টোবর, ২০২২
৪ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ