পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদী শাসনের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হচ্ছে। মেয়াদের সঙ্গে বাড়ছে ব্যয়ও। প্রকল্পের বর্তমান ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২ হাজার ৮৭৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এটি অনুমোদিত ব্যয়ের তুলনায় ২৬৮২ কোটি ১৩ লাখ টাকা বা ৮.৮৮ শতাংশ বেশি। সময় ও ব্যয় বৃদ্ধির এ সংশোধিত প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে পরিকল্পনা কমিশনে।
গত বছরের ২৫ জুন উদ্বোধন হয়েছে পদ্মা সেতু। পরদিন থেকে এ সেতুতে গাড়ি চলছে। দৈনিক গড়ে দুই কোটি টাকা টোল আদায় হচ্ছে। নির্মাণকাজের মেয়াদ গত জুনে শেষ হয়ে গেলেও প্রকল্পের মেয়াদ আগামী জুন পর্যন্ত। এখন চলছে ঠিকাদারের দেনা-পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া এবং ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড (ডিএলপি)। তবে নদীশাসন শেষ হয়নি। চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশনের দায়িত্বে আছে। এই একই প্রতিষ্ঠান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাজ করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরকে সময় ও ব্যয় বৃদ্ধির চক্করে ফেলেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। সংশোধিত প্রস্তাবে পদ্মা সেতু প্রকল্পের নদীশাসন এবং ঠিকাদারের পাওনা পরিশোধের জন্য ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়েছে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) শফিকুল ইসলাম বলেন, আইটি-ভ্যাট, ডলারের দর, বিদুৎ সঞ্চালন লাইনসহ নানা কারণে খরচ বেড়েছে।
জানা গেছে, প্রকল্পের মূল ডিপিপির মেয়াদকাল ছিল ২০০৭ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৫ সালের ৩০ জুন। ১ম সংশোধিত ডিপিপির মেয়াদ ছিল ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর। প্রকল্পের ২য় সংশোধিত মেয়াদ ছিল ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর। ৩ বার মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ডিপিপি অনুযায়ী নদীশাসনকাজ আগামী ৩০ জুন শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু নদীশাসনকাজ এবং ঠিকাদারের পাওনা পরিশোধের জন্য ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়েছে।
নতুন করে ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির কারণ হিসাবে বলা হয়েছে- মূল সেতুর ২২ পিয়ারের পুনঃনকশা (রিডিজাইন)। কয়েকটি অস্বাভাবিক বন্যা, নদীশাসনকাজে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ড্রেজিং চলাকালে ৫০ বার সেøাপ ফেইলিউর, নদীতে অপ্রতাশিতভাবে অতিমাত্রায় পলি জমে যাওয়ায় ঠিকাদারের অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন হওয়া এবং কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে জনবল ও যন্ত্রপাতি পর্যাপ্ত পরিমাণ না পাওয়ায় কাজের গতি ধীর হয়েছে।
সরকার পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সারা দেশের মানুষকে নিয়ে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। এ জন্য জাতীয়ভাবে প্রকল্প এলাকায় মাওয়া ও জাজিরায় মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়। এর বাইরে প্রতিটি জেলায়ও বড় পর্দায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখানো ও আতশবাজিসহ নানা কর্মসূচি ছিল। পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে এ অনুষ্ঠানের পুরো ব্যয় বহন করা হয়েছে। তা ছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যবহারের পর থেকে যাওয়া মালামাল লোহা-লক্কড় হিসেবে বিক্রি করে দেয়। পদ্মা সেতুর মালামাল সরকার কিনে রাখতে চাইছে। সেতুর নির্মাণকাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি দিয়ে একটি জাদুঘর করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতু বিভাগ এর পর জাদুঘরে রাখার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে কিছু মালামাল কিনে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে বাড়তি যে ব্যয় ধরা হয়েছে, এর বেশিরভাগ আগেই খরচ হয়ে গেছে। এখন প্রকল্প সংশোধনের মাধ্যমে তা আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ করা হচ্ছে। কিছু কাজ ভবিষ্যতে করা হবে। এর ব্যয়ও যুক্ত করে প্রকল্প প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্পের মূল ডিপিপিতে ব্যয় ধরা ছিল ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ১ম সংশোধিত ব্যয় ধরা ছিল ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। ২য় সংশোধিত ডিপিপিতে ব্যয় ধরা হয় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। ওই অর্থের অতিরিক্ত হিসাবে ১১৬২ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ বাবদ ১৪০০ কোটি টাকা অনুমোদিত হয়। এতে করে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে সরকার কর্তৃক ভ্যাট ও আইটির হার ১০.৫% থেকে ১৫% করা, প্রকল্পের সময় বৃদ্ধি পাওয়ায় কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্ট বাবদ খরচ বৃদ্ধি, মূল সেতু ও নদীশাসন কাজের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোয় সময়জনিত খরচ বৃদ্ধি, ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের প্ল্যাটফর্মের ডিজাইন পরিবর্তন ও কাজের পরিধি বৃদ্ধি, নদীশাসন কাজের জিওব্যাগের আকার পরিবর্তন, ফেরিঘাট স্থানান্তর, ফেরি চ্যানেল ড্রেজিং, মাওয়া প্রান্তে নদীশাসন কাজের ডিজাইন পরিবর্তন; মূল্যবৃদ্ধি; মুদ্রার বিনিময় হার বৃদ্ধি ইত্যাদি প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির উল্লেখযোগ্য কারণ।
সেতু বিভাগ বলছে, প্রকল্পের নির্মাণকাজের জন্য মাওয়া ও কাঁঠালবাড়িতে ফেরিঘাট স্থানান্তর করতে হয়েছে। মাওয়ায় ফেরিঘাট ভাঙনের মুখে পড়েছে। সেটাও মেরামত করতে হয়েছে। এ ছাড়া করোনা মহামারীর সময় দুই পাড়ে নির্মাণ করা হয় দুটি অস্থায়ী হাসপাতাল। ২০২০ সালে বন্যায় মাওয়ায় পদ্মা সেতুর নির্মাণমাঠের একাংশ ভেসে যায়। এ সময় সেতুর জন্য তৈরি করা ১২৬টি কংক্রিট স্ল্যাব ও ১৯২টি রেলওয়ে স্লাব (স্ট্রিঞ্জার) স্রোতে ভেসে যায়। এতে বাড়তি খরচ হয়েছে। তা ছাড়া বিদেশি ঠিকাদারের ভ্যাট ও কর দেওয়া হয় প্রকল্প থেকে। সরকার বিদেশি ঠিকাদারের কেনা পণ্যের ভ্যাট ও তাদের আয়ের ওপর কর সাড়ে ৪ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। মূল সেতু ও নদীশাসনের কাজ করেছে চীনের ঠিকাদার। ব্যবহৃত মালামালের বড় অংশই চীনের। ঠিকাদার, পরামর্শক ও বিদেশি পণ্য কেনার খরচ ডলারে পরিশোধ করতে হয়েছে। এখন ডলারের দর অস্বাভাবিক।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, নির্মাণকাজের পরামর্শকদের প্রায় সবাই বিদেশি। সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে এখনো টানতে হচ্ছে। পদ্মা সেতুর ভাটিতে ৪০০ কেভি বিদ্যুতের লাইন যাচ্ছে। এর ভিত্তি তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে। এ কাজে শুরুতে যে ব্যয় ধরা হয়েছিল, তা থেকে আরও প্রায় ৪০০ কোটি টাকার মতো বাড়তি খরচ করতে হয়েছে। নদীশাসনের কাজে ৮০০ কেজি ওজনের জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। শুরুতে যে আকারের ব্যাগ ফেলার কথা ছিল, পরে এর আকার বাড়াতে হয়েছে। এ কাজে প্রায় ১৩০ কোটি টাকা বাড়তি খরচ করতে হয়েছে। চালুর পর সেতুতে নানা যন্ত্র বসানো, অপটিক ফাইবার কেবল বসানো, সেতুর পাশে সড়ক সম্প্রসারণ, টোল প্লাজার কাছে বাস বে নির্মাণ, ট্রাকের জন্য আলাদা লেন তৈরি এসব কাজ প্রকল্প থেকে করা হচ্ছে। এতে ২১৫ কোটি টাকার মতো বাড়তি ব্যয় হবে। এর আগে সেতুর পাইল বসাতে গিয়ে মাটির নিচে নরম মাটি পাওয়া যায়। এ জন্য নকশা সংশোধন করে পাইলের গভীরতা বাড়াতে হয়। এ কাজে প্রায় ৫০ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।