Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিদায়ী ম্যাচে মাশরাফিকে জয় উপহার

প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:২৪ এএম, ৭ এপ্রিল, ২০১৭

বাংলাদেশ : ১৭৬/৯ (২০.০ ওভার)
শ্রীলংকা : ১৩১/১০ (২০.০ ওভার)
ফল : বাংলাদেশ ৪৫ রানে জয়ী।
শামীম চৌধুরী : টি-২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচে টসে’র আগে ফেসবুকে অবসরের ঘোষণা দিয়ে ভক্ত এবং টিমমেটদের করে তুলেছেন আবেগী। পাঁচ পাঁচবার হাঁটুর লিগামেন্টে অপারেশন করে, অদম্য মনোবলে কাটিয়ে দেয়া ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে যে মাশরাফি অনন্য-ক্রিকেট মাঠের এই নেতার বীরোচিত বিদায়টাই দেখতে চেয়েছিলেন সতীর্থরা। আবেগ চাপ রেখে, অধিনায়ক মাশরাফির টি-২০ বিদায়ী ম্যাচে জয় উপহার দেয়ার সংকল্প ছিল টিমমেটদের। শ্রীলংকার বিপক্ষে সফরের শেষ ম্যাচে ৪৫ রানের জয় উপহার দিয়ে সে কথাই রেখেছেন টীমমেটরা।
সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ক্রিকেট টি-২০তেও বর্নাঢ্য ক্যারিয়ার তার। যতোটা না নিজের জন্য, তার চেয়ে বেশি দেশের জন্য খেলেছেন মাশরাফি। টি-২০ অধিনায়কত্বের ক্যারিয়ারে সাফল্যে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন এই সফরের আগেই। ক্যাপ্টেনসি ক্যারিয়ারে ১০ম জয়ে নিজেকে আরো উঁচুতে তুলে শেষ করলেন টি-২০ ক্যারিয়ার। জয় দিয়ে শুরু করেছিলেন টি-২০ ক্যারিয়ার, শেষটাও হলো তার জয়ে! শ্রীলংকার মাটিতে অতীতে কখনোই ছিল না বাংলাদেশের স্বাগতিক শ্রীলংকার বিপক্ষে টি-২০তে জয়। সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ক্রিকেটে নিজের ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে তা আর অপূর্ণ থাকতে দেননি নড়াইল এক্সপ্রেস। শততম টেস্ট জিতে এই প্রথম শ্রীলংকার বিপক্ষে ১-১ এ টেস্ট সিরিজে সমতায় নুতন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের যে গল্প রচনা করেছে বাংলাদেশ মুশফিকুরের নেতৃত্বে, মাশরাফির নেতৃত্বে ওয়ানডে এবং টি-২০ সিরিজ ড্র’ করে কাকতালীয় কিছুরই জন্ম দিল বাংলাদেশ। ০ রানে মালিঙ্গার শিকার হয়েও অতৃপ্তি নিয়ে শেষ হয়নি টি-২০ ক্যারিয়ার। নিজের দ্বিতীয় শেষ ডেলিভারিতে কাপুগেরাকে ফিরিয়ে টিমমেটদের সবার বিদায়ী অভিনন্দনের জবাব যে দিতে পেরেছেন নড়াইল এক্সপ্রেস।
টি-২০তে বাংলাদেশের সেরা সাফল্যটা তার অধিনায়কত্বেই হয়েছে অর্জিত। গত বছরে এশিয়া কাপ টি-২০তে পাকিস্তান, ভারতকে হারিয়ে সেরা সাফল্যের পাশে ২০১৫ সালে ১ ম্যাচের সিরিজে পাকিস্তানকে ১-০তে হারিয়ে দেয়া অধিনায়ক সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ক্রিকেটে তার বিদায়টা স্মরণীয় করে রেখেছেন। কথা দিয়ে অধিনায়কের সম্মানে তা করে দেখিয়েছে গতকাল অনুজরা। প্রথম পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ওপেনিং জুটিতে উইকেটহীন ৬৮, তামীমের ইনজুরিতে ইমরুলকে নিয়ে সৌম্যর ৭১ রানের বাংলাদেশ সেরা ওপেনিং পার্টনারশিপে প্রেমাদাসায় অন্য এক বাংলাদেশকে দেখেছে বিশ্ব। এই পার্টনারশিপের কল্যানে সেøা উইকেটে ১৭৬/৯ স্কোরে শ্রীলংকাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জে ফেলে স্বাগতিক দলকে ব্যাকফুটে নামিয়ে এনেছে সেই পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারেই। ২ ওভারের প্রথম স্পেলে সাকিব (২-০-১৫-২),১ ওভারের স্পেলে মুস্তাফিজুরের (১-০-৭-২) বোলিয়ে শুরুতেই শেষ দেখেছে শ্রীলংকা ( ৪৭/৫)। মাঝে তিসারা-কাপুগেদারার ৫৮ রানের পার্টনারশিপে লড়ার চেষ্টা করলেও তা ব্যর্থ করে দিয়েছেন সাকিব ব্রেক থ্রু দেয়া স্পেলে (২-০-৮-১)। অবশিষ্ট দায়িত্বটা পালন করেছেন কাটার মাস্টার ভয়ঙ্কর আর একটি স্পেলে (১-০-৫-২)। টি-২০ ক্যারিয়ারে মালিঙ্গার প্রথম হ্যাট্টিক (৩/৩৪) এবং কাপুগেরার টি-২০ ক্যারিয়ারে প্রথম ফিফটি (৩৫ বলে ৫০) মøান করে ম্যাচের নায়ক সাকিব (৩৮ রান ও ৩/২৪)।
ইমরুল-সৌম্য ঝড়ে প্রথম ৬ ওভারে উইকেটহীন ৬৮ রানে টি-২০ সংস্করনে শ্রীলংকার বিপক্ষে রেকর্ড স্কোরের হাতছানি ছিল। তবে শেষ দুই ওভারে বাংলাদেশের ইনিংসের উপর দিয়ে মালিঙ্গা, কুলাসাকেরা বইয়ে দিয়েছে কালবৈশাখী ঝড়। ১৮০ পেরুনো যখন হাতের নাগালে, তখন মালিঙ্গার তিন তিনটি সেøায়ার ডেলিভারিতে হ্যাট্টিক বাংলাদেশকে করেছে লÐভÐ। ব্রেট লি, ওরাম, সাউদি, তিসারা পেরেরার পর লংকান এই পেস বোলার ১৯তম ওভারের ৩য় বলে মুশফিকুর, চতুর্থ বলে মাশরাফি এবং ৫ম বলে মিরাজকে শিকারে টি-২০ ক্রিকেটে ৫ম বোলার হিসেবে পূর্ণ করেছেন হ্যাট্টিক। কোমরে ব্যথায় তামিমের পরিবর্তে ইমরুল কায়েস খেলতে এসে এদিন নিজেকে মেলে ধরেছেন। আগের সর্বোচ্চ ২২ ছাড়িয়ে করেছেন ৩৬। প্রথম রানে অপেক্ষা তার ৪র্থ বল পর্যন্ত। সেই ইমরুল কুলাসাকেরাকে পর পর ২ বলে বাউন্ডারি এবং সঞ্জয়াকে এক্সট্রা কভারের উপর দিয়ে ছক্কায় প্রেমাদাসায় অন্য এক রজনী দিয়েছেন উপহার। সৌম্য এদিনও বাংলাদেশের শুরুটা এনে দিয়েছেন আপন স্টাইলে ব্যাটিংয়ে। সঞ্জয়া এবং গুনারতেœকে ছক্কায় বাংলাদেশকে বড় স্কোরের স্বপ্ন দেখানো সৌম্য থেমেছেন গুনারতেœকে রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে (৩৪)। তারপরও ৩ বছর আগে নেপালের বিপক্ষে বিজয়-তামীমের ৬৩ ছাড়িয়ে ওপেনিং পার্টনারশিপে সৌম্য-ইমরুলের ৭১ টি-২০তে বাংলাদেশের সেরা উদ্বোধনী জুটি। সৌম’র বিদায়ের পরের ওভারে ইমরুল ফিরে গেছেন রান আউটে। সেখানেই হয়েছে ম্যাচের ছন্দপতন। সেকুগে প্রসন্নকে পর পর ২ বলে ৪ ও ৮ রানের মাথায় জীবন পেয়ে ম্যাচকে টেনে নিতে চেষ্টা করেছেন, রুম্মানের সঙ্গে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৪৮ এ নেতৃত্ব দিয়ে কুলাসাকেরাকে স্কুপ করতে যেয়ে সাকিব বোল্ড হয়েই (৩৮) বিপদ ডেকে এনেছেন। ইনিংসের ১১ থেকে ১৫, এই ৫ ওভারে ৩৫ রানে লোয়ার অর্ডারের উপর পড়েছে চাপ। সেই চাপ উতরে যেতে পারেনি বাংলাদেশ। শেষ ৩০ বলে ৪০ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ ৬ উইকেট। দ্বিতীয় স্পেলে মার খেয়ে শেষ স্পেলে মালিঙ্গা (২-০-১৭-৩) ছড়িয়েছেন উজ্জ্বাল্য।
এই প্রেমাদাসায় ওয়ানডেতে হ্যাট্টিকের রেকর্ড আছে মালিঙ্গার। তাও আবার একটি নয়, ২টি। ২০১১ সালে কেনিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। ওয়ানডেতে ৩ হ্যাট্টিকে নিজেকে অন্য উচ্চতায় উঠিয়ে আনা মালিঙ্গা টি-২০তেও করেছেন একই কৃতিত্ব। তবে মাশরাফির বিদায়ী টি-২০ ম্যাচে শ্রীলংকার সবচেয়ে বড় ভেন্যুতে জয়টা যে হলো বাংলাদেশের, জীবন বাজি রেখে ১১ বছর পার করা টি-২০ ক্যারিয়ারের শেষটাও যে জিতলেন মাশরাফি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাশরাফির

১৭ জানুয়ারি, ২০২২
৮ নভেম্বর, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ