নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
শামীম চৌধুরী : ঘোষণা দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটকে গুডবাই না জানালেও টেস্ট ক্যারিয়ার থেমে গেছে মাশরাফির ৮ বছর আগে। ২০০৯ সালে সেন্ট ভিনসেন্ট টেস্টে বোলিংয়ের সময়ে ফলো থ্রুতে পা পিছলে পড়ে মারাত্মক আহত হওয়ার পর আর ফিরতে পারেননি টেস্টে। ৩৬ টেস্টে ৭৮ উইকেটে থমকে গেছে টেস্ট ক্যারিয়ার। সাদা পোশাকে বাংলাদেশের হয়ে দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচ খেলার স্বপ্ন এখন আর দেখেন না নড়াইল এক্সপ্রেস। ওয়ানডে ক্যারিয়ার চালিয়ে নিচ্ছেন, এবং তা তরুণদের সাথে লড়ে, পারফর্ম করে। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বাধিক উইকেটের (১৭২ ম্যাচে ২২৫ উইকেট) মালিক টি-২০ ক্রিকেটকে গুডবাই জানাতে প্রস্তুতি নিয়েছেন প্রায় এক বছর। সর্বশেষ টি-২০ বিশ্বকাপ চলাকালেই এমন সিদ্ধান্তের কথা চেয়েছিলেন জানাতে। তবে তখন দেয়া হয়নি সে সিদ্ধান্ত। গতকাল প্রেমাদাসায় শ্রীলংকার বিপক্ষে টি-২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচে টসে নামার আগে ফেসবুকের মাধ্যমে দিয়েছেন টি-২০ থেকে অবসরের ঘোষণা। ২০১৪ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে টি-২০ সিরিজ দিয়ে ক্যাপ্টেনসির অভিষেক মাশরাফির, সেই শ্রীলংকার বিপক্ষে ফিরতি টি-২০ সিরিজকেই ক্যারিয়ারের শেষ টি-২০ সিরিজ বলে ঘোষণা দিয়েছেন সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল (২৭ ম্যাচে ৯ জয়) অধিনায়ক।
গতকাল খেলা শুরুর আগে ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আবেগময় ঘোষণা দিয়েছেন-‘বাংলাদেশ দলকে টি-২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে প্রতিনিধিত্ব করা আমার জন্য অনেক গর্বের। আমি বিশ্বাস করি বর্তমান দলটি একটি ভালো দল এবং দলে কিছু উদীয়মান খেলোয়াড় আছে। আমার উপর আস্থা রাখার জন্য এবং আমাকে চমৎকার একটি দলের নেতৃত্বের সুযোগ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের প্রতি আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। আমি আমার সকল ভক্ত, পরিবার এবং বন্ধুদের প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ আমাকে সবসময় সমর্থন করার জন্য। এই সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে উত্থান এবং পতন ছিল। আমি সবসময় চেষ্টা করেছি আমার ফ্যানদেরকে খুশি করতে। আমি আমার প্রত্যেক ফ্যান এর কাছে তাদেরকে প্রতি ম্যাচে খুশি করতে না পারার জন্য ক্ষমা চাইছি। এই মুহূর্তে দল হিসেবে আমরা ভালো খেলছি। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশ সামনের দিনগুলোতেও ভালো ক্রিকেট খেলবে। আমি মনে করি টি-২০ ফরমট থেকে অবসর নেয়ার জন্য এটাই আমার উপযুক্ত সময় যাতে অনেক তরুণ উদীয়মান ক্রিকেটাররা তাদের প্রতিভা তুলে ধরতে পারে এবং বিসিবি তাদেরকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারে। আমি বাংলাদেশের টি-২০ দলের নতুন অধিনায়ককে আগাম অভিনন্দন জানাই এবং আমি নিশ্চিত বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা সময় সামনে আসবে। শিগগিরই আবার দেখা হবে। সকলের জন্য রইল আমার আন্তরিক ভালোবাসা।’
টসে’র সময়ে ধারাভাষ্যকর ডিন জোন্সের প্রশ্নের উত্তরেও অবসর ঘোষণার সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী বলে জানিয়েছেন মাশরাফি। ২০০৬ সালে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক টি-২০ অভিষেক ম্যাচে করেছেন প্রতিনিধিত্ব। বাংলাদেশের ৬৭টি টি-২০ ম্যাচের মধ্যে ৫৩টিতেই করেছেন প্রতিনিধিত্ব। ১১ বছরের লম্বা টি-২০ ক্যারিয়ারে ৩৯ উইকেটের পাশে ৩৬৮ রান-সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ক্রিকেটে যথেষ্ট নয়। তবে সর্বশেষ টি-২০ বিশ্বকাপের প্রথম পর্বের বাধা পেরিয়ে বাংলাদেশ সুপার টেন এ খেলেছে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তার ম্যাচ উইনিং বোলিংয়ে ( ৪-০-১৪-১)। ২০১২ সালে বেলফাস্টে ম্যাচ সেরা বোলিংয়ের (৪/১৯) সুখস্মৃতি নিয়ে কাটিয়েছেন আরো ৫ বছর। টি-২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৩ ম্যাচের ক্যাপ্টেনসিকে ৮ জয়ে মুশফিকুর রহিমের সাফল্যকে টপকে গেছেন মাশরাফি ২৭ ম্যাচে ৯ জয়ে। গত বছর এশিয়া কাপ টি-২০তে পাকিস্তান, শ্রীলংকাকে হারিয়ে বাংলাদেশের ফাইনালে ওঠা তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজ জয়ের পাশে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২টি সিরিজ ড্র’ করেছে বাংলাদেশ তার নেতৃত্বেই। সংক্ষিপ্ত ভার্সনের টুয়েন্টি-২০ আসর বিপিএলে ২০১৫ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স শিরোপা জয়ে অসাধ্য সাধন করেছে যার অধিনায়কত্বে। বয়স ৩৬ বছর, পাঁচ পাঁচবার হাঁটুর লিগামেন্টে জটিল অপারেশন নিয়ে টি-২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আর কতোদিন চালিয়ে নিবেন? এ প্রশ্ন থেকে মাশরাফির অবসর ঘোষণাকে যারা যথার্থ মনে করছেন, তাদের উদ্দেশে পাল্টা প্রশ্ন- ক্রিকেটারদের মোটিভেটর মাশরাফিকে সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ক্রিকেটে অপাংক্তেয় ভাবার সময় কি এসেছে?
কী এমন হলো যে, ঘোষণা দিয়ে টি-২০ ক্যারিয়ারকে মাশরাফি জানালেন গুডবাই? সিনিয়র বিদ্বেষটা যেভাবে সংক্রমিত হয়েছে দলে, হাতুরুসিংহের ক্ষমতা যেভাবে বাড়ছে, বোর্ডের হস্তক্ষেপে যেভাবে দলে একটার পর একটা পরিবর্তন আসছে। তার অনেক কিছু’র সঙ্গেই যে মাশরাফির দ্বিমত পোষণ করেছেন অতীতে। টি-২০ সিরিজকে সামনে রেখে এমন ঘোষণায় তাই অন্য কিছু’র আলামতও যে পাচ্ছে মাশরাফি ভক্তরা। ওয়ানডে ক্রিকেটে তার নেতৃত্বে টানা ৬টি সিরিজ জয়ের অতীতের পাশে সম্প্রতি শ্রীলংকার মাটিতে ১-১ এ সিরিজ ড্র’র সুখস্মৃতি আছে। বিশ্বকাপ ক্রিকেট ইতিহাসে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য কোয়ার্টার ফাইনালিস্টও তার অধিনায়কত্বের আমলে। আইসিসি’র দুরূহ চ্যালেঞ্জ পাড়ি দিয়ে র্যাঙ্কিংয়ের হিসেব মিলিয়ে ১১ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার টিকিট পেয়েছে বাংলাদেশ, সেখানেও অধিনায়ক মাশরাফির জয়গান। বিশ্ব ক্রিকেটকে বিস্মিত করে ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে ৭ এ উঠে এখন ৬’র জন্য লড়ছে বাংলাদেশ-সেখানেও অধিনায়ক মাশরাফির কৃতিত্বকে সবাই আনছে সামনে। কিন্তু যে ফরমেটের ক্রিকেটকে বাংলাদেশের জন্য যথার্থ বলে গন্য করেছে ক্রিকেট বিশ্ব, সেই টি-২০তে যে বাংলাদেশ এখনো আফগানিস্তানের পেছনে। ওয়ানডের পারফরমেন্সের সঙ্গে মিল নেই টি-২০তে। র্যাঙ্কিংয়ে ১০ এ থাকার কস্ট, টি-২০তে ধারাবাহিক হতে না পারার সেই কস্টটা একদিন আগে প্রেমাদাসায় সে আক্ষেপই করেছিলেন মাশরাফি-‘টি-২০ ক্রিকেটে আমরা দিন দিন উন্নতি করছি, ভালো করছি। তবে আমরা যেখানে যেতে চাই, সেখানে যেতে পারিনি।’
তাহলে কি এই আক্ষেপেই দিলেন আবেগী ঘোষণা। যে ঘোষণায় স্তম্ভিত হলো ভক্তরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।