Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাশরাফির অল রাউন্ড নৈপূণ্যে সিরিজে ফিরল বাংলাদেশ

প্রকাশের সময় : ১০ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:১৮ এএম, ১০ অক্টোবর, ২০১৬

বাংলাদেশ : ২৩৮/৮ (৫০.০ ওভারে)
ইংল্যান্ড : ২০৪/১০ (৪৪.৪ ওভারে)
ফল : বাংলাদেশ ৩৪ রানে জয়ী।
শামীম চৌধুরী : বড় প্রতিপক্ষের কাছে পিছিয়ে পড়ে দারুণভাবে সিরিজে ফেরার অতীত আছে বাংলাদেশের। ১৫ মাস আগে দক্ষিণ আফ্রিকার অভিষিক্ত পেস বোলার রাবাদার ভয়ংকর বোলিংয়ে (৬/১৬) ৮ উইকেটে হেরে সিরিজ শুরু। তাতেও হতোদ্যম নয় বাংলাদেশ। বরং পাকিস্তানকে ৩-০তে হোয়াইট ওয়াশ এবং ভারতকে ২-১ এ সিরিজ হারিয়ে কেন ছন্দপতন? দ.আফ্রিকার কাছে প্রথম ম্যাচ বাজেভাবে হারটাই যেনো একটু বেশি তাতিয়ে দিয়েছিল সেবার বাংলাদেশ দলকে। সিরিজের অবশিষ্ট ২ ম্যাচে তেতে ওঠা বাংলাদেশের গর্জনে কেঁপে উঠেছে দ.আফ্রিকা। সিরিজে ফেরার ম্যাচে শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ১৩৪ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। সিরিজের ট্রফি জয়ের ম্যাচে জয়টা আরো বড়Ñ৯ উইকেটে ! ১৫ মাস আগের সেই অতীতটাই দিয়েছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে ফেরার টনিক। সিরিজের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের ৩০৯/৮ তাড়া করে মিরপুরে স্বপ্ন দেখানো ম্যাচ ২১ রানে হেরে বিষন্ন নন মাশরাফিরা। বরং ওই ম্যাচের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে দারুণভাবে সিরিজে ফেরার শপথ ছিল দলটির। তার প্রতিফলনই দেখেছে গতকাল শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শক। ২০১০ সালে ব্রিস্টলে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে আইসিসি’র সব পূর্ণ সদস্য দলের বিপক্ষে জয়ের বৃত্ত পূরণ, ২০১১ সালে চট্টগ্রামে এবং ২০১৫ সালে অ্যাডিলেডে উপর্যুপরি ২ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের দর্প চূর্ন করে আবারো চেনা বাংলাদেশ হাজির গতকাল। মাশরাফির অল রাউন্ড পারফরমেন্সে (৪৪ রানও ৪/২৯) ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৪ রানে হারিয়ে দারুণভাবেই সিরিজে ফিরল বাংলাদেশ।
বড় ম্যাচে রাখতে হবে তাকে বিশেষ ভুমিকাÑ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে অল রাউন্ড পারফরমেন্সে (৩১ নট আউট ও ২/৩৬) সেটাই দিয়েছিলেন জানিয়ে মাশরাফি। ২০০৭ বিশ্বকাপে ফেভারিট ভারতকে প্রথম পর্ব থেকে বিদায় করে দেয়ার নায়ক ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয়েও ম্যাচ উইনার (২২ রান এবং ২/৪২) মাশরাফি। সেই মাশরাফিই অল রাউন্ড নৈপূণ্যে হাজির গতকাল শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে। সেøা পীচে টপও মিডল অর্ডারদের ব্যর্থতা আড়াল করতে ব্যাটিংয়ে নিয়েছিলেন গতকাল বাড়তি দায়িত্ব। সøগ ওভারগুলোকে কাজে লাগাতে ২৯ বলে ৪৪ রানের ইনিংসে (২ চার ৩ ছক্কা) দিয়েছেন দর্শকদের ব্যাটিং বিনোদন। ৮ম উইকেট জুটিতে নাসিরকে নিয়ে ৬৯ রান, শেষ ৬০ বলে ৭৫ রান যোগ করতে পেরেছে বাংলাদেশ দল তার ঝড়ো ব্যাটিংয়েই। ৪ ম্যাচ ড্রেসিং রুমে কাটনানো মানায় না তাকে, নির্বাচকদের সেই ভুল ধরিয়ে দিতে গতকাল ৮ নম্বরে নেমে ফিনিশার চরিত্রে প্রত্যাবর্তন করেছেন নাসির (২৭ বলে ২৭)। এমন এক ম্যাচে ৪ হাজার ক্লাবের সদস্যপদ পেয়েছেন মুশফিকুর। শুরু থেকে ছন্দময় ব্যাটিংয়ে মাহামুদুল্লাহ’র ৮৮ বলে ৭৫ রানের ইনিংসকে দিতে হচ্ছে বিশেষ কৃতিত্ব। সেøা উইকেটে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৩৮/৮ পর্যন্ত স্কোর টেনে নেয়ার পথটা যে বাতলে দিয়েছেন চট্টগ্রাম এবং অ্যাডিলেড জয়ের এই নায়ক। স্কোরটা হতে পারতো আরো বড়, তবে ইংল্যান্ডের দারুণ গ্রাউন্ড ফিল্ডিং,দারুন সব ক্যাচে সম্ভব হয়নি তা। তবে এই ম্যাচেও বাংলাদেশ ভুগেছে লেগ স্পিনেÑআদিল রশিদকে খেলতে পারেনি ব্যাটসম্যানরা স্বাচ্ছন্দে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ব্যাটিং ধারাবাহিকতার স্বাক্ষর রেখে টানা তৃতীয় ফিফটি উদযাপন করেছেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলার। অ্যাডিলেডে ৬৫’র পর সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৬৩, গতকাল সেখানে থেমেছেন ৫৭ তে। ৫ম উইকেট জুটিতে বেয়ারস্ট্রকে নিয়ে ৮৩ বলে ৭৯ রানে বাংলাদেশ সমর্থকদের উৎকণ্ঠায় রেখেছেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। শেষ জুটির অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে ৪৫ রানে কিছুক্ষণ রেখেছে বাংলাদেশ সমর্থকদের উৎকণ্ঠায়। তবে এই ম্যাচে প্রথম পাওয়ার প্লেতেই ইংল্যান্ডের মনোবলে ধাক্কা দিতে পেরেছে বাংলাদেশ বোলাররা। স্কোরশিটে ৩১ উঠতেই হারাতে হয়েছে ইংল্যান্ডকে ৪ উইকেট! শুরুটা করেছেন মাশরাফি, তার প্রথম স্পেলে (৬-০-২১-৩) ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের লেজ কেটে বাংলাদেশকে জয়ের আনন্দেও ভাসিয়েছেন মাশরাফি শেষ ৪ বলের স্পেলে (০.৪-০-১-১) ! প্রথম এবং শেষ স্পেলে অমিতব্যয়ী বোলিংয়ের পরও দ্বিতীয় স্পেলটিতে (৫-০-১৬-৩) ম্যাচটাকে বাংলাদেশের হাতের মুঠোয় এনেছেন তাসকিন। শেষ স্পেলে মার খেয়েও (২-০-২২-০ মইন আলীকে মিড উইকেটে ব্যাক ডাইভে বিশ্বমানের ক্যাচ নিয়ে দায়িত্বটা যে পালন করেছেন সাকিব।
এক নাসির যুক্ত হয়েই বদলে দিলেন অনেক কিছু। তার কার্যকরী ব্যাটিংয়ে (২৭) লড়াইয়ের পুজি পেলো বাংলাদেশ। মিতব্যয়ী বোলিংয়ে (১০-১-২৯-১) ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের আটকে রাখতেও রেখেছেন ভুমিকা। জ্যাক বলকে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে তার অসাধারণ ক্যাচের সঙ্গে সঙ্গেই সিরিজে ফিরলো বাংলাদেশ।
ব্রিস্টলে ৬ বছর আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৩৬/৭ স্কোরকে ৫ রানের জয়ে পরিণত করার নায়ক মাশরাফি (২২ রান ও ২/৪২) গতকাল শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামেও করেছেন অল রাউন্ড পারফর্ম (৪৪ রানও ৩/২৮)। তবে ব্রিস্টলের চেয়েও বেশি দ্যুতি ছড়ানো মাশরাফিতে গতকাল জয়ের ব্যবধানটা হয়েছে বড়Ñ ৩৪ রানে জিতে সিরিজে ফিরেছে বাংলাদেশ। লাকি ভেন্যু চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে গত বছর দ.আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে হেসেছে বাংলাদেশ। এবারো ট্রফি জয়ের মঞ্চ সেই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামেই হচ্ছে প্রস্তুত।



 

Show all comments
  • Biplob ১০ অক্টোবর, ২০১৬, ১১:২৬ এএম says : 0
    স্যালুট বস।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাশরাফির অল রাউন্ড নৈপূণ্যে সিরিজে ফিরল বাংলাদেশ
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ