নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেননি, কিন্তু হাঁটুতে সাত সাতটি অস্ত্রোপচারের ধকলে টেস্ট খেলছেন না ২০০৯ সাল থেকে। কিছুটা মান-অভিমান মিশিয়ে গত বছরের এপ্রিলে অবসর নিয়েছেন টি-টোয়েন্টি থেকে। মাশরাফি বিন মুর্তজাকে এখন শুধু ওয়ানডে দলেই দেখা যায়। শুধু দেখাই যায় না, দলটির নেতৃত্বে এখনও সুউচ্চ তার অবস্থান।
গত বিশ্বকাপের আগ মুহুর্তে হঠাৎ রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব পেয়েছিলেন। তাকে অধিনায়কত্ব দেওয়ার সময় বোর্ডের ভাবনা ছিল, মাশরাফি যতোদিন পারে করুক, এর মধ্যে উপযুক্ত কাউকে খুঁজে বের করতে হবে। হাঁটুতে সাতটি অস্ত্রোপচারের কারণেই হয়তো বোর্ডের এমন ভাবনা ছিলো। কিন্তু সাত অস্ত্রোপচার নিয়ে এখন অবধি চালিয়েই নিচ্ছেন মাশরাফি। প্রশ্ন হচ্ছে, এই যাত্রা থামবে কোথায়? ক্রিকেট পাড়ায় গুঞ্জন হচ্ছে, আগামী মে মাসে শুরু হতে যাওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলে যাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছেন মাশরাফি। ক্রিকেটের বাইরের এক ঘটনায় এখন মনে হচ্ছে, সেই গুঞ্জনই সত্যি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে হয়েছেন সংসদ সদস্য। যদি সবকিছু ঠিক থাকে এমপি হিসেবে এই প্রথম কোন ক্রিকেটার খেলবেন বিশ্বকাপে। কিছু দিন আগে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছিলেন, অবসরের পরের সময়টা যেন কাজে লাগে সেই চিন্তাতেই নাকি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন মাশরাফি! বিশ্বকাপ শুরু হবে ৩০ মে, শেষ হওয়ার কথা ১৪ জুন। পাপনের ভাষ্যমতে, নির্বাচন করলে তারপরের সময়টাতে রাজনীতিবিদ হয়ে ক্রীড়াক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারবেন মাশরাফি। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, মাশরাফি বিশ্বকাপের পর অবসর নিচ্ছেন এটা পরিষ্কার, ‘ওর (মাশরাফি) যে শারীরিক অবস্থা, এখনো যে খেলছে, এটাই তো অনেক। সে খেলোয়াড় হিসেবে খেলে না, আমাদের দলে অধিনায়ক হিসেবে খেলে। ওর অধিনায়কত্ব আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। ওর মতো অধিনায়ক খুঁজে পাচ্ছি না, পাব বলে মনেও হয় না। সেদিক দিয়ে চিন্তা করলে বড়জোর বিশ্বকাপের পর অবসরে যাবে। সেটি যদি হয় মাত্র কয়েক মাসের ব্যাপার, তাহলে এর চেয়ে ভালো ‘ আর কিছু হতে পারে না।’
সত্যিই তাই। এমন বিদায় ক’জনের ভাগ্যে জোটে? ক্যারিয়ারজুড়ে চোটের সঙ্গে লড়াই করে নিজে যতটা এগিয়েছেন তার চাইতে ঢের এগিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটকে। ওয়ানডে ও টেস্ট অভিষেক একই সময়ে, ২০০১ সালের নভেম্বেরে। সে বছরই বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ দলে বল হাতে গতির ঝড় তুলে আর ব্যাটিং তাণ্ডব দিয়ে জানান দেন নিজের আগমণী। সেখান থেকে ওপরে উঠেছেন চলন্ত সিড়িতে চেপে। ঐ একই বছর ভারত সফরে যান বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে। সেই সফরের মাঝপথেই ডাক পান জাতীয় দলে। নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দেশের মাটিতে অভিষেক হয়ে যায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। ক’দিন আগেই ক্রিকেটে দেশসেরা এই অধিনায়কের হয়ে গেল দেড়যুগ পূর্তি। কথায় কথায় সেদিন বলে ফেলেছিলেন, ‘দেখি দুই দশক (ক্রিকেটে) পূর্ণ করতে পারি কি না!’ হেসে হেসে যতই বলুক, কথাটি যদি তিনি রাখবার ন্যুনতম চেষ্টাও করেন তবে হুমকিতে পড়তে পারে তার আজীবনের জমানো নাম, যশ, খ্যাতি, অর্জনগুলো।
দীর্ঘ এই পথচলায় ৩৬টি টেস্টে উইকেট সংখ্যা ৭৮টি, ২০৫টি ওয়ানডেতে শিকার গিয়ে ঠেকেছে চূড়ায়- ২৫৯টি। টি-২০তে তেমন একটা না দেখা গেলেও ৫৩ ম্যাচে উইকেট আছে ৪২টি। তবে প্রথম শ্রেণী আর লিস্ট এ ক্রিকেটে বরাবরই রেখেছেন সাফল্যের স্বাক্ষর, উইকেট যথাক্রমে ১৩৫ ও ৩৮৯টি। জাতীয় দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ৭০টি ওয়ানডেতে, দল জিতেছে ৪০টি। তার অধিনায়কত্বে ২৮ টি-২০ ম্যাচে জয় ১০টি। আর একমাত্র টেস্টটিতেও দলকে জিতিয়েছেন দলনেতা মাশরাফি। চলতি মৌসুমে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগেও সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি করেছেন। তার নেতৃত্বেই গতবারের চ্যম্পিয়ন হওয়া আবাহনীর জার্সিতে খেলছেন এবারও।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের গৌরবদীপ্ত সাফল্যের পথচলায় মাশরাফিকে মোকাবেলা করতে হয়েছে অনেক কিছুই। চোট তো আছেই, বয়সটাও পেরিয়েছে ৩৫। এই বয়সে শারীর-মন দুটোই বিদ্রোহ করাটা স্বাভাবিক। যার কিছুটা পরিলক্ষিত হচ্ছে তার কিছুদিনের পারফরম্যান্সে। কিছুদিন আগে শেষ হওয়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-টোয়েন্টিতে ১৪ ম্যাচ খেলে ২২ উইকেট নিয়েছেন রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেই তেজদ্বীপ্ত বোলিং এখন আর দেখা মেলেনা মাশরাফির। নিউজিল্যান্ড সফরে তিন ওয়ানডের হোয়াইটওয়াশ হওয়া সিরিজে উইকেট পেয়েছেন মাত্র একটি, যা তার ক্যারিয়ারের সঙ্গে একেবারেই বেমানান। অনেক ক্রীড়াবোদ্ধাই সমালোচনার বাঁকা সুরে তাকে অবসর নিয়ে নেবার কথাটি জানিয়ে দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার নিয়ে প্রশ্নে মাশরাফি অনেকবারই বলেছেন, এখনও কিছুই ঠিক করেননি। আগামী বিশ্বকাপের পর পরিস্থিতি বুঝে নেবেন সিদ্ধান্ত। তার ভাষ্যে, ‘আমি ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবি না। বর্তমানে বিশ্বাস করি। হ্যাঁ, তবে একটা সময় তো আসবেই যখন মনে হবে, তখনকারটা তখন ভাববো।’ সেই ‘তখন’টা কবে?
শুধুমাত্র ক্রিকেটীয় অর্জনেই নয় ব্যাক্তি মাশরাফিও এখন তরুণদের জন্য সাধারণ একজন রোল মডেল। শুধু দেশের মাটিতেই নয়, তার জনপ্রিয়তার চর্চ এখন বিশ্বজুড়েই। সারা দেশ এখন অপেক্ষায় থাকে, মাশরাফি কী সিদ্ধান্ত নিল, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল জিতবে না হারবে- সেসব জানতেও পুরো জাতি তাকিয়ে থাকে তার দিকে। এখনও আছেন ক্যারিয়ারের সুউচ্চ আসনে অসীন। ক্রিকেট, ব্যাক্তি জীবনে সফল মাশরাফি এখন দেশের আইন প্রণেতাও। এখনও তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন ক্রিকেটারের জীবন। এমন জ্বলজ্বলে ক্যারিয়ারের শিখরে থেকেই ক্রিকেটকে বিদায় বলেছিলেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি ইমরান খান, তিনি এখন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থেকেই ফুটবলকে বিদায় বলেছিলেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি কাজী সালাউদ্দিনও। তিনি এখন এদেশের ফুটবল প্রধান। সময় থাকতে অবসর নিয়ে সেই সকল সমালোচকদের ভুল প্রমাণ করুক মাশরাফি, আমরা সেটিই চাই। চাই না তার উজ্জ্বল সাফল্যভরা ক্যারিয়ারের শেষটা হয়ে উঠুক বিষাদে ভরা।
মাশরাফি কি পারবেন সময়ের দাবি মিটিয়ে ইমরান খান কিংবা কাজী সালাউদ্দিন হয়ে উঠতে?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।