শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
কুতুবউদ্দিন আহমেদ : আমাদের বঙ্গদেশে বসন্ত হানা দিয়েছে মাসদেড়েক পূর্বে। এখন তা প্রায় সমাগত হওয়ার চেষ্টায় রীতিমতো কসরৎ করছে। কিন্তু ইতোমধ্যে এর প্রাণময়, কলকাকলিময়, পত্রময় ও ফুলেল সমারোহ আমাদের চোখে পড়েছে। সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক লাগানো পথডিভাইডারের অপরিপুষ্ট, ক্লিষ্ট গাছগুলোও বেশ পরিপুষ্ট ও সবুজাভ হয়ে উঠেছে। চোখে পড়েছে এ-দেশের ছেলেমেয়েদের বসন্তকে ঘিরে উৎসাহ-উদ্দীপনাও। দলে-দলে মেয়েদের দেখা গেছে কুন্তলে ফুল গুঁজে সেজে-গুঁজে আনন্দচিত্তে ঘুরে বেড়াতে। আমাদের গৌরবের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় তরুণীদের বাসন্তী সাজে দেখা গেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। তাহলে এথেকে নিশ্চয়ই আশা করা যায়, আমাদের ছেলেমেয়েরা ঐতিহ্যসচেতন, প্রকৃতিসচেতন এমনকি বলা যায় ঋতুসচেতন। প্রকৃতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এদেশের ছেলেমেয়েদের মনেরও পরিবর্তন ঘটে; তাদের মনও নেচে ওঠে প্রকৃতির নৃত্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে; বসন্তের নিষ্কলুষ প্রভায় তাদের অন্তরও নিষ্কলুষ হয়ে ওঠে। আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের নিকট এ আশাটুকু করা যেতেই পারে।
কিন্তু কথা হলো, এসবের মধ্য দিয়ে একটি প্রশ্ন মনের কোণে তীব্রভাবে উঁকি দেয়। আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের বসন্তকে ঘিরে এইযে এত উৎসাহ-উদ্দীপনা সব মেকি নয়তো? মনের কোণে এ উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে প্রশ্নটি উঁকি দেয়ার সঙ্গত কারণও যথেষ্ট রয়েছে। মনে হচ্ছে আজকাল ছেলেমেয়েরা কেবল উৎসব আর অনুষ্ঠানসর্বস্ব হয়ে পড়েছে। হৃদয়ে তারা কতটুকু বসন্তসচেতন? বসন্তকে কি তারা আদৌ হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করে; বসন্তের বার্তা হৃদয়ে ধারণ করে? নাকি বসন্ত উদ্যাপনের ছলে কেবল বন্ধু-বান্ধবী নিয়ে হাত ধরাধরি করে ঘোরাফেরা করার যুতসই মওকা পেয়ে যাওয়া! সত্যিকার অর্থে তারা দেশীয় ঐতিহ্য ধরে রাখতে কতটা আগ্রহী? তাদের চলনে-বলনে, কথা-বার্তায়, কাজে-কর্মে, ভাষা-প্রয়োগেই তা পরিষ্কারভাবে ফুটে ওঠে।
২
বাংলা বাগ্ধারায় ‘বসন্তের কোকিল’ বলে একটি বিশেষায়িত কথা আছে। এই বঙ্গদেশের বসন্তে কোকিলের আনাগোনা দৃষ্টিগোচর হয় চিরকাল ধরে। বৃক্ষশাখায় তারা মনের সুখে নাচানাচি করে, নিজের সুরে গান গায়। বছরের অন্য কোনো সময় এ পাখিটিকে চাইলেও দেখা যায় না। তারা সময়মতো লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যায়। বিষয়টিকে আমাদের দেশে রূপকার্থে ব্যবহৃত হয়ে আসছে আবহমানকাল ধরে। সমাজ-সংসারে কিছুসংখ্যক সুযোগসন্ধানী মানুষ আছে যারা মানুষের সুখের সময়, সমৃদ্ধির সময়, সাচ্ছন্দ্যের সময় আনাগোনা করে; অথচ বিপদ দেখলেই পাত্তারি গুটিয়ে পিঠটান দেয়। কবি রফিক আজাদ তাই তার প্রিয়তমাকে বলেছেন : বসন্তে তো সকলেই আসা-যাওয়া করে/ বসন্তে এসো না ... [বসন্তে এসো না : পরিকীর্ণ পানশালা আমাদের স্বদেশ]।
উদাহরণটি থেকে উপলব্ধি করা যায় যে, আমাদের এই বঙ্গদেশে বসন্ত নিশ্চয়ই সুখের কাল, সুসময়ের কাল, সমৃদ্ধির কাল। এই সময়টিতে বাঙালি সুখে-সাচ্ছন্দ্যে কালাতিপাত করে। তাই বোধহয় বাঙালি বসন্তকে ঋতুরাজ অভিধায় অভিষিক্ত করেছে অনেক পূর্বেই।
বাংলাদেশ ঋতুবৈচিত্র্যের দেশ। বারো মাসে ছয়টি ঋতু এ দেশে ঘুরেফিরে আবর্তিত হয়। এ-দেশটি ষড়ঋতুর রূপ-রস, সৌন্দর্য দ্বারা এতটাই প্রভাবিত যে, ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয় এ দেশের প্রাকৃতিক সুষমা, পারিপার্শি¦ক বাতাবরণ, মানুষসহ অন্যান্য জীবসকলের স্বাভাবিক আচার-আচরণ, দৈনন্দিন জীবনযাপনের রীতি-বৈশিষ্ট্য, সর্বোপরি মনুষ্য সমাজের কৃষ্টি-কালচার পর্যন্ত।
আমাদের দেশের সবচে’ জৌলুসময় ঋতু বসন্ত। রূপ-রসের ঝাঁপি নিয়ে এসে আমাদের দুয়ারে হাজির হয় ঋতুরাজ বসন্ত। বসন্তের রূপে-গুণে কেবল মানবসন্তানই নয়, বন-বনানীর বৃক্ষরাজি, নানান রঙের পাখ-পাখালিও উল্লসিত ও উদ্ভাসিত হয় দারুণভাবে। মোটকথা, এ-সময়টাতে প্রকৃতিতে কোনো কাঙালিপনা থাকে না; সে সাজে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে। সঙ্গে এ-দেশের কবিকুলও দুহাতে লিখে যান আপন ঢঙে, নতুন আবহে।
সেই প্রাচীনকাল থেকেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কবিরা বসন্তের প্রভাব তুলে ধরেছেন তাদের রচিত অমর পঙ্ক্তিমালায়। এ ঋতুটাকে বাংলার কবি সম্প্রদায় জনসম্মুখে তুলে ধরেছেন বোধহয় একটু বেশি গুরুত্ব দিয়েই। মধ্যযুগের কবি বড়–চ-ীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন যা বাংলা ভাষার দ্বিতীয় নিদর্শন; এই কাব্যগ্রন্থটিতেই আমরা বসন্তের প্রভাব লক্ষ্য করি দারুণভাবে। এ কাব্যের প্রাণভোমরা রাধা বসন্তের হৃদয়হরণ করা সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি। বসন্তের এই অপার সৌন্দর্যের মাঝে প্রেমিক কৃষ্ণকে তার চাই। কৃষ্ণ ব্যতীত বসন্তের এ অপার সৌন্দর্য তার নিকট ষোলোআনাই বৃথা; এমনকি কৃষ্ণ ব্যতীত বসন্তের সৌন্দর্য যেন তার নিকট নরক যন্ত্রণার মতো। তদুপরি চারদিকে নানান পাখির গুঞ্জরণে সে আরো আকুল ও ব্যাকুল হয়ে পড়ে। তাই সে করুণ কণ্ঠে আর্তনাদ করে ওঠে :
বসন্ত কালে কোকিল রাএ।
মনে মনমথ সে বাণ তাএ।।
আম্মার বোল সাবধান হয়;
বাহির চন্দ্রকিরণে সোঅ।।
কি সুতিব আম্মে চন্দ্রকিরণে।
আধিকেঁ বড়ায়ি দহে মদনে।।
[বিরহ খ- : শ্রীকৃষ্ণকীর্তন]
মধ্যযুগের অন্যতম কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী। বাংলা সাহিত্যে সবল চরিত্র রূপায়ণে তিনি স্বকীয়তার স্বাক্ষর রেখেছেন। তার নির্মিত অন্যতম চরিত্র নায়িকা ফুল্লরাও বসন্তের আবেদন উপেক্ষা করতে পারেনি :
সহজে শীতল ঋতু ফাল্গুন যে মাসে।
পোড়ায় রমণীগণ বসন্ত বাতাসে।
[ফুল্লুরার বারো মাসের দুঃখ : কালকেতুর উপাখ্যান]
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তও বসন্তের আবেগে নিজেকে জড়িয়েছেন। তিনিও বসন্তের পাখ-পাখালির কলরবে মুখরিত হয়েছেন। বসন্তের রঙে নিজের অন্তরকে রাঙিয়েছেন বাংলা ভাষার এ অমর শিল্পস্রষ্টা :
নহ তুমি পিক, পাখি, বিখ্যাত ভারতে,
মাধবের বার্তাবহ; যার কুহরণে
ফোটে কোটি ফুল্লুপুঞ্জ মঞ্জু কুঞ্জবনে!-
তবুও সঙ্গীত-রঙ্গ করিছ যে মতে
গায়ক, পুলক তাহে জনমে এ মনে!
[বসন্তের একটি পাখির প্রতি : চতুর্দশপদী কবিতাবলী]
বাংলা ভাষার অসামান্য কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও বসন্তে প্রভাবিত হয়েছেন। বসন্তকে বুকে ধারণ করে তিনি বসন্তের ভাষায় আবেগায়িত হয়ে কথা বলেছেন। বলা যায় তিনি বাংলার এ-ঋতুটি নিয়ে ভেবেছেন অনেক। নিজস্ব চিন্তার অনেকখানিই ব্যয় করেছেন তিনি ঋতুরাজ বসন্তকে নিয়ে। তিনি বসন্তকে জানিয়েছেন :
অযুতবৎসর আগে, হে বসন্ত, প্রথম ফাল্গুনে
মত্ত কুতুহলী
প্রথম যেদিন খুলি নন্দনের দক্ষিণদুয়ার
মর্তে এলি চলিÑ
অকস্মাৎ দাঁড়াইলে মানবের কুটির প্রাঙ্গণে
পিতাম্বর পরি,
উতলা উত্তরী হতে উড়াইয়া উম্মাদ পবণে
মন্দার মঞ্জুরীÑ
দলে দলে নরনারী ছুটে এল গৃহদ্বার খুলি
লয়ে বীণা বেণু,
মাতিয়া পাগল নৃত্যে হাসিয়া করিল হানাহানি
ছুঁড়ি পুষ্পরেণু ।।
[বসন্ত : কল্পনা]
প্রেমিক কবি কাজী নজরুল ইসলাম ভালোবেসেছিলেন এক নারীকে। এই বসন্তেই তার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ ঘটেছিল। কিন্তু নয়ন সমুখে আর সেই নারী নেই। কবি এতদিনে প্রায় ভুলেও গিয়েছিলেন এই এই প্রেয়সীকে। কিন্তু বাঁধ সাধে আবার সেই চিরচেনা বসন্ত। প্রেয়সী চলে গেছে বিস্মৃতির অতল তলে। কিন্তু বসন্ত হানা দেয় ঠিকই কবির দুয়ারে। বসন্তের গুঞ্জরণে কবির মনে পড়ে সেই হারানো মানবীকে যার সঙ্গে বসন্তে প্রথম দেখা হয়েছিল :
বইছে আবার চৈতী হাওয়া গুমরে ওঠে মন,
পেয়েছিলাম এমনি হাওয়ায় তোমার পরশন।
তেমনি আবার মহুয়া-মউ
মৌমাছিদের কৃষ্ণা-বউ
পান ক’রে ওই ঢুলছে নেশায়, দুলছে মহুল বন,
ফুল-সৌখিন দখিন হাওয়ায় কানন উচাটন!
[চৈতি হাওয়া : ছায়ানট]
কবি সুফিয়া কামালও বসন্তকে আহ্বান জানিয়েছেন অমর পঙ্ক্তিমালায়। তার ক্লান্ত-জীর্ণ মন বসন্তের নতুন বাতাসে নতুন করে জেগে ওঠে। তিনি আনমনা হয়ে যান । প্রকৃতির সঙ্গে তিনিও দুলে উঠেছিলেন :
কখন হয়েছে শুরু বসন্তের পুষ্প সমারোহ,
কেটে গেছে শিশিরের ব্যথাঘন কুয়াশার মোহ,
বুঝি নাই ছিলাম উন্মনা!
অকস্মাৎ দেখি শুরু হইয়াছে কী সে আনাগোনা
মধুপ অলিরÑ
বাতায়ন পথে তারা করিয়াছে ভিড়
প্রভাতের স্বর্ণ আলো সাথে।
[বসন্তলিপি : মায়াকাজল]
মুসলিম রেঁনেসার কবি ফররুখ আহমদ বসন্তের সৌন্দর্যে সচকিত হয়েছেন। কুয়াশামোড়ানো শীতের শেষে প্রকৃতি যেন মুক্ত-স্বাধীন হয়েছে। নিজের মতো করে তার রূপের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। গাছে-গাছে, ডালে-ডালে যেন তারুণ্যের জোয়ার বয়ে গেছে :
‘বনানী সেজেছে সাকী ফুলের পেয়ালা নিয়ে হাতে’
তুহিন শীতের শেষে দেখি আজ মুক্ত রূপ তার,
গাছে গাছে, ডালে ডালে তারুণ্যে জেগেছে জোয়ার;
জেগেছে ফুলের কুঁড়ি অরণ্যের মদিরা বিলাতে।
[ ফাল্গুনে : মুহূর্তের কবিতা ]
বসন্তের পঙ্ক্তিমালা সৃৃষ্টি করে যে কবি সবচে’ অধিক স্মরণীয় হয়েছেন তিনি পদাতিক কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়। বলা যায়, অনেকটা সাধ্যাতীত ভাষায় এই মহান কবি অলংকৃত করেছেন বসন্তের ভেতর-বাহিরের রূপরস। তার কলমের ছোঁঁয়ায় বসন্ত পেয়েছে ভিন্নতর মহিমা :
ফুল ফুটুক না ফুটুক
আজ বসন্ত
সান-বাঁধানো ফুটপাথে
পাথরে পা ডুবিয়ে এক কাঠখোট্টা গাছ
কচি কচি পাতায় পাঁজর ফাটিয়ে
হাসছে।
ফুল ফুটুক না ফুটুক
আজ বসন্ত।
[ফুল ফুটুক না ফুটুক : ফুল ফুটুক]
শামসুর রাহমান স্বীকৃত নাগরিক কবি হলেও বসন্তের রং হৃদয়ে নাড়া দিয়ে গেছে তাকেও। বসন্ত বাতাস তিনি উপেক্ষা করতে পারেননি। বসন্ত সকলকে সমানভাবে রাঙায়। ধনি-গরিব, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বসন্তের আগমনে আপ্লুত হয়। কেননা বসন্তের সৌন্দর্য সর্বজনী :
অকস্মাৎ প্রিয়মিলনের মতো রঙিন শাড়ির
ঝলক ছড়িয়ে আমাদের
দুঃখের ধূসর গুঁড়োগুলো বিস্মৃতির
অন্ধকারে ডুবিয়ে দাঁড়ায়
বসন্তের জ্বলজ্বলে আলো নিয়ে ধনীর প্রাসাদে,
দরিদ্রের বিরান আঙিনা আর ক্ষুধার্ত সংসারে।
[বসন্তের মায়া : না বাস্তব না দুঃস্বপ্ন]
কবি ওমর আলী বসন্তের বন্দনা করেছেন অকৃত্রিমভাবে :
আবার এসেছো তুমি, প্রাচুর্যের রূপে, হে ফাল্গুন
সাজিয়ে দিয়েছো তুমি দিকে দিকে আরক্তিম ফুলে
মন্দারের শাখা, তুমি গেঁথেছো মালিকা সুনিপুণ
সে মালা শোভিত হয় যেন বনরমণীর চুলে।
[ফাল্গুনকে : এদেশে শ্যামল রঙ রমণীর সুনাম শুনেছি]
বাংলা ভাষার আরেক কবি নির্মলেন্দু গুণ। বসন্তকে তিনি আগ্রাসী ঋতু বলেছেন। তার সবকিছু গ্রাস করে নেয় এ-ঋতু। এ-ঋতুর সৌন্দর্যে তিনি এতোটাই মোহিত যে তিনি একে অতিক্রম করতে পারেন না। খল এক-নারীর মতো তাকে গ্রাস করে রাখে :
এমন আগ্রাসী ঋতু থেকে যতোই ফেরাই চোখ,
যতোই এড়াতে চাই তাকে দেখি সে অনতিক্রম্য।
বসন্ত কবির মতো রচে তার রম্য কাব্যখানি
নবীন পল্লবে, ফুলে ফুলে। বুঝি আমাকেও শেষে
গিলেছে এ খল-নারী আপাদমস্তক ভালোবেসে।
[বসন্ত বন্দনা : অচল পদাবলী]
বাংলার বসন্ত চিরকালই সৌন্দর্যে ঐশ্বর্যশালিনী হয়; রানির চেয়ে ধনবতী আর রাজকুমারীর চেয়ে রূপবতী হয় এ কথা স্বীকার করেছেন কবি পূর্ণেন্দ্র পত্রী। এ সময়েই প্রকৃতির সমস্ত বৃক্ষরাজি নতুন করে যৌবনবতী হয়ে ওঠে :
শুনেছি বসন্তকালে বনভূমি অহংকারী হয়।
[বসন্তকালেই : প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণ]
বসন্ত বাঙালির অতিপ্রিয় একটি ঋতু। এ-ঋতুতে প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মনেও নতুন আবহের সৃষ্টি হয়। এ ঋতু নিয়ে বাঙালির আগ্রহ চিরকালের। এ প্রিয় ঋতুর আগমন উপলক্ষে নানা স্থানে বিশেষ উৎসবেরও আয়োজন করা হয়। কবি জয়গোস্বামী বিষয়টি স্বীকার করেছেন অকপটে :
অন্ধ যখন বৃষ্টি আসে আলোয়
স্মরণ-অতীত সাঁঝবেলারা সব
এগিয়ে দিতে এল নদীর ধারেÑ
নদীর ধারে বসন্ত উৎসব
[বসন্ত উৎসব : ঘুমিয়েছো , ঝাউপাতা]
বসন্ত বাংলার ঋতু। বসন্তকে ঘিরে এ-দেশের আপামর জনসাধারণের উৎসাহ-উদ্দীপনা রয়েছে। এ-মাসেই বাংলার মানুষ খুব বেশি আবেগতাড়িত হয়। এ-ঋতুটির সঙ্গে এ-দেশের মানুষের আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে; নাড়ীর সম্পর্ক রয়েছে। তাই এই ঋতুটির প্রভাব এ-দেশের মানুষের মনে এতো বেশি। কোকিলের কুহুতানে আবেগতাড়িত হয় না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না এ-ভূভাগে। এমনকি কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচী যে অন্ধবধূর চরিত্র চিত্রায়ন করেছেন; সেই অন্ধবধূও বসন্তের প্রভাবকে অস্বীকার করতে পারেনি। বসন্ত এই অন্ধবধূরও মনেও সর্বগ্রাসী প্রভাব বিস্তার করেছে। অন্ধবধূর এ-উক্তি থেকেই তা উপলব্ধি করা যায় : Ñ অনেক দেরি? কেমন করে হবে!/ কোকিল ডাকা শুনেছি সেই কবে,/ দখিন হাওয়া বন্ধ কবে ভাই; [ অন্ধবধূ : যতীন্দ্রমোহন বাগচী]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।