দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
পবিত্র মাহে রমজান। বরকতময় একটি মাস। সিয়াম-সাধনার মাস। আত্মসংযমের মাস। নিজেকে গড়ার মাস। পাপ মোচনের মাস। ইবাদতের মাস। পুণ্য হাসিলের মাস। মাহে রমজান মুমিন বান্দাদের জন্য ইবাদতের বসন্তকাল। রমজানে প্রতিটি ইবাদতের সওয়াব ৭০ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়, তাই এ মাসে যথাসাধ্য বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা প্রত্যেক মুসলিম ও মুমিনের ওপর আবশ্যক। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “রোজা ও কোরআন কিয়ামতের দিন মানুষের জন্য সুপারিশ করবে।” (মুসনাদে আহমাদ) আর ইবাদত-বন্দেগি প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, “আমি জ্বিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি এ জন্য যে, তারা আমারই ইবাদত করবে।” (সূরা আল-জারিআত : ৫৬)।
সাহরি, ইফতার ও তারাবি ছাড়াও রমজানে বিশেষ কিছু আমল করা যায়। যেন রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগানো যায়, সবার মধ্যে সেই প্রচেষ্টা থাকা উচিত। রমজানে আমরা কী কী নেক আমল করতে পারি, তা নিচে আলোচনা করা হলো- (১) তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যে রমজান মাসে ঈমান ও সওয়াবের আশায় (ইবাদতের মাধ্যমে) রাত জাগরণ করবে তার অতীতের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।” (মুসলিম)। (২) বেশি পরিমাণে কোরআন তিলাওয়াত: রমজানে যেহেতু প্রতিটি ইবাদতের সওয়াব ৭০ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়, তাই এ মাসে যথাসাধ্য বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা প্রত্যেক মুসলিম ও মুমিনের ওপর আবশ্যক। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “রোজা ও কোরআন কিয়ামতের দিন মানুষের জন্য সুপারিশ করবে।” (মুসনাদে আহমাদ)। (৩) দান-সদকা করা: এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত সাহাবি ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন মানুষের মাঝে সবচেয়ে বেশি দানশীল। আর রমজানে তাঁর বদান্যতা আরো বেড়ে যেত। (মুসলিম)। (৪) রোজাদারদের ইফতার করানো: রোজাদারকে ইফতার করালে রোজার সমান সওয়াব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে রোজা পালনকারীর অনুরূপ সওয়াব লাভ করবে, তবে রোজা পালনকারীর সওয়াব থেকে বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না।” (মুসনাদে আহমাদ)। (৫) বেশি বেশি দোয়া করা: মহান আল্লাহ রোজার বিধান বর্ণনা করার পর বলেছেন, “আমার বান্দারা যখন আমার সম্পর্কে তোমাকে প্রশ্ন করে, আমি তো কাছে আছি। প্রার্থনাকারী যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে, আমি তার প্রার্থনায় সাড়া দিই।” (সুরা আল-বাকারা: ১৮৬) তাই রোজা পালনকারী আল্লাহর কাছে অধিক পরিমাণে দোয়া প্রার্থনা করবে। (৬) তাওবা করা: সর্বদা তাওবা করা ওয়াজিব, বিশেষ করে এ মাসে তো বটেই। এ মাসে তাওবার অনুকূল অবস্থা বিরাজ করে। শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নাম থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়া হয়। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েও তার পাপ ক্ষমা করাতে পারেনি, তার নাক ধুলায় ধূসরিত হোক।” (জামেউল উসুল)। (৭) মিসওয়াক করা: মিসওয়াকের প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.) অশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। হাদিসে এসেছে, “মিসওয়াক মুখের জন্য পবিত্রকারী এবং রবের সন্তুষ্টি আনয়নকারী।” (ইবনে খুজাইমাহ)। (৮) একে অন্যকে কোরআন শোনানো: রমজান মাসে একজন অন্যকে কোরআন শোনানো একটি উত্তম আমল। এটিকে দাওর বলা হয়। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, জিবরাইল (আ.) রমজানের রাতে মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং রাসুল (সা.) তাঁকে কোরআন শোনাতেন। (সহিহ বুখারি)। (৯) সামর্থ্য থাকলে ওমরাহ পালন করা: এ মাসে একটি ওমরাহ পালন করলে একটি হজ¦ আদায়ের সমান সওয়াব হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “রমজান মাসে ওমরাহ পালন করা আমার সঙ্গে হজ¦ আদায় করার সমতুল্য।” (সহিহ বুখারি)। (১০) শবেকদর তালাশ করা: রমজান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। সবার উচিত ওই রাতের সন্ধান করা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, “কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।” (সুরা কদর: ০৪)।
সুতরাং, এখনই সময়। মোবারকময় এ মাসে পাপ-পঙ্কিলতায় ভরা আমাদের জীবনকে ধুয়ে-মুছে সাফ করার। খোদার রহমতের চাদরে আবৃত করার। ঈমান ও আত্মবিশ্লেষণ সহকারে নিজেদের সকল কাজ-কর্মে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য প্রকাশ এবং ইবাদত-বন্দেগিতে মনোযোগি হয়ে পূর্বাপর গুনাহখাতা মাফ করানোর। আল্লাহ তা’য়ালা সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: আলেম, শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।