পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঋতুরাজের হাত ধরে বসন্ত এসে গেছে। ধূসর-বিবর্ণ ধরণী জুড়ে পালিত হয়েছে রঙের উৎসব। দিনভর ছিল আড্ডা, উৎসবে মাতোয়ারা। গতকাল ছিল বাঙালির প্রাণের উৎসব ফাগুনের প্রথম দিন। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে করোনাভাইরাসের শোক ভুলে তরুণ-তরুণী, শিশু কিশোররা উৎসবে ঘুরে বেড়িয়েছে। শীতকে বিদায় জানিয়ে কারো মুখে মাস্ক, কারো মুখে নেই; তবে আবরণে আভরণে অঙ্গে অঙ্গে দেখা গেছে বাসন্তি সাজ। মহামারির শোক ছাপিয়ে ঋতুরাজের হাত ধরে ‘আসুক নতুন দিন’ গান গেয়েছে; সেজেছে শিমুলে, পলাশে; মাতাল সমীরণে ভাসিয়েছে ঋতুরাজের আগমনী গান। নিসর্গে ঋতুরাজের রঙিন শাসনের অভিষেকে দেশবাসীর আয়োজনেও কমতি নেই।
রাজধানী ঢাকা ছাড়াও বিভাগীয় শহর, জেলা শহর, উপজেলা শহর থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত ঋতুরাজকে বরণ করে নেয়ার উৎসবে মেতেছিল দেশের মানুষ। তবে কিছু কিছু মানুষ বিধর্মী সংস্কৃতি ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’ পালনের নামে বেলেল্লাপনা করেছে; যা ছিল দৃষ্টিকটু। গতকাল রোববার সূর্য ওঠার আগেই জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ এর আয়োজনে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে আয়োজন করা হয় বসন্ত উৎসব। হলুদ শাড়ি পরে রঙে রঙিন হয়ে এতে সামিল হন নগরবাসী। হলুদ, কমলা, লাল, সবুজের বাহারি বসন, চুলে হলুদ গাঁদা কিংবা মাথায় ফুলের মুকুট, কপালে টিপ- এ হলো বাঙালি নারীর বসন্ত সাজ।
বসন্ত উৎবে পিছিয়ে ছিল না তরুণ ও পুরুষরাও। উজ্জ্বল রঙ লেগেছে পুরুষের সাজেও, তা সে পাঞ্জাবিই হোক, কিংবা টি-শার্ট। হুমায়ুন আহমেদের ‘হিমু’ সেজেও অনেক তরুণ পথে বের হন।
ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায়, ১৫৮৫ সালে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা বর্ষপঞ্জি হিসেবে ফসলি সনের প্রবর্তন করেন। তিনি প্রতি বছর ১৪টি উৎসব পালনের রীতিও প্রবর্তন করেন। এর মধ্যেই অন্যতম ছিল বসন্ত উৎসব। ১৯০৭ সালে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট ছেলে শমীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে শান্তিনিকেতনে যাত্রা শুরু করে বসন্ত উৎসব, যা ‘ঋতুরঙ্গ উৎসব’ নামেই পরিচিত। স্বাধীন বাংলাদেশে বসন্ত উৎসবের গোড়াপত্তন এরশাদের শাসনামলে। স্বৈরাচারী এরশাদের পতনের আন্দোলনে গোটা দেশ যখন উদ্বেলিত, সেই সময়ে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুল তলায় ছোট্ট পরিসরে শুরু হয় বসন্ত উৎসব। পরে বঙ্গাব্দ ১৪০১ সালে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ-এর আয়োজনে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকায় শুরু হয় বসন্ত উৎসব।
প্রতিবছর ১৩ ফেব্রুয়ারি ‘বসন্ত উৎসব’ পালিত হলেও গত বছর বাংলা একাডেমির সংশোধিত বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বসন্ত উৎসব ১৪ ফেব্রুয়ারি পালিত হচ্ছে। সকাল সাড়ে ৭টায় দীপেন সরকারের যন্ত্র বাদনে শুরু হয় নগরবাসীর বসন্ত বন্দনা। এরপর পংক্তিমালায় বসন্তের আবাহন করেন এবছরের একুশে পদকপ্রাপ্ত আবৃত্তিশিল্পী ভাস্কর বন্দোপাধ্যায়। দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন সুর সপ্তক, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্যরা। স্বপ্নবিকাশ কলা কেন্দ্র, নৃত্যছন্দ, সুরবিহার, আঙ্গীকাম, ধ্রুপদ কলাকেন্দ্র, ভাবনা ধৃতি, দ্রুপদী নৃত্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, সাধনা সংস্কৃতি মন্ডল, নৃত্যাক্ষ, স্পন্দন, বুলবুল ললিতাকলা একাডেমি, মুদ্রা, মৌমিতা, মারমা স¤প্রদায়, সাঁওতাল সম্প্রদায় ও কথক নৃত্য সম্প্রদায়ের পরিবেশনায় ছিল দলীয় নৃত্য।
শিল্পী বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, শোয়েব, সঞ্জয় কবিরাজ, জান্নাতুল ফেরদৌস কাকলি, কাইয়ুম, নুসরাত বিনতে নূর ও নবনিতা জাইদ চৌধুরীর কণ্ঠে একক সংগীতেও ছিল বসন্তের বন্দনা।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন নাট্যজন নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু। তিনি বললেন, মহামারির এ দুঃসময়কে পাশে ঠেলে বসন্তের অনুপ্রেরণায় এগিয়ে যাবে বাঙালি, এই হোক প্রার্থনা। উৎসব পরিষদ এর সভাপতি কাজল দেবনাথ বলেন, আমাদের সব অর্জন কিন্তু প্রকৃতি থেকে। এ দিনে তরুণ প্রজন্মের কাছে আহ্বান, তারা যেন এ প্রকৃতির মধ্যে নিজেকে বিলিয়ে দেয়।
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে গতকাল বসন্তবরণে ছিল দিনভর নানা আয়োজন। উত্তরার আজমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠেও বসন্ত উৎসব আয়োজন করেছে পরিষদ।
সেখানে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করবেন তাল কালচারাল সেন্টার, অনুপ্রাস খেলাঘর, অঞ্জলি নৃত্যকলা নিকেতন ও প্রার্থনা ললিতকলার শিল্পীরা। একক আবৃত্তি করবেন প্রসাত কুমার চক্রবর্তী, সোলায়মান কবীর, ফারজানা মালিক, সোহেল আনোয়ার, দীপক চন্দ্র, আশরাফুল আলম ও শফিউল গণি। তাছাড়া একক ও দলীয় সংগীতের পরিবেশনাও থাকছে সেখানে।
শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চে ছিল বসন্ত উৎসবের আয়োজন। আলোচনা পর্বে অংশ নেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। একাডেমির সাংস্কৃতিক পরিবেশন করেন বাংলাদেশ ওয়ার্ল্ড পারফরমিং আর্টস, স্পন্দনের শিশু শিল্পীর দল, নৃত্যালোক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, বাংলাদেশ একাডেমি অফ ফাইন আর্টস, নৃত্যম, নন্দন কলা কেন্দ্র, মারমা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়, ধৃতি নর্তনালয়ের শিল্পীরা। দ্বৈত সংগীত পরিবেশন করবেন শিল্পী সাজেদ আকবর ও সালমা আকবর, ইবরার টিপু-বিন্দু কনা এবং খাইরুল আনাম শাকিল-কল্পনা আনাম। একক সংগীতের পরিবেশনায় শিল্পী অপু আমান, সাব্বির, বিউটি এবং দিতি সরকার শোনাবেন বসন্তের গান। দলীয় সংগীত পরিবেশন করবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সংগীতদল, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ভাওয়াইয়া সংগীতদল, সরকারি সংগীত কলেজ এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পীরা।
জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ গেন্ডারিয়ার সীমান্ত গ্রন্থাগার প্রাঙ্গনেও বসন্ত উৎসবের আয়োজন করে। সংগীত পরিবেশন করবে সীমান্ত খেলাঘর আসর, গেন্ডারিয়া কিশলয় কঁচি-কাঁচার মেলা, মৈত্রী শিশুদল, কিশোর থিয়েটার, রঙ্গপীঠ শিশুদল, শাপলা কঁচি-কাঁচার আসর, চাইল্ড-হেভেন ললিতকলা একাডেমি, সপ্তকলির আসর, মহীরুহু, মরমী লোকগীতি শিল্পীগোষ্ঠী।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে বর্ণিল আয়োজনে গতকাল রোববার ঋতুরাজ বসন্তবরণ করা হয়। এ উপলক্ষে নগরীর সিআরবি শিরীষতলা, থিয়েটার ইনস্টিটিউট, শিল্পকলা একাডেমী, চারুকলা ইনস্টিটিউটসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বর্ণিল অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। বোধন আবৃত্তি পরিষদ থিয়েটার ইনস্টিটিউটে বসন্ত আবাহন, আবৃত্তি, সঙ্গীত, যন্ত্রসঙ্গীত, নৃত্য, শোভাযাত্রা, পিঠাপুলির সমারোহে দিনব্যাপী উৎসব উদযাপন করে। এসব অনুষ্ঠানে তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের মানুষের ভিড় জমে। পহেলা ফাল্গুনে নগরীর পর্যটন এলাকাগুলোতেও ছিল ভিড়। নগরীর চেরাগি পাহাড় ও মোমিন রোডের ফুলের দোকানগুলোতে ছিল জমজমাট কেনাবেচা।
পাহাড়তলী আমবাগান শেখ রাসেল পার্কে বসন্ত উৎসবের অনুষ্ঠানমালায় একক ও বৃন্দ আবৃত্তির পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহের শিল্পীদের পরিবেশনায় দলীয় সংগীত ও দলীয় নৃত্য পরিবেশন করা হয়। সিআরবির শিরীষতলা মুক্তমঞ্চে প্রমার বসন্ত উৎসবে ঢোলবাদন, আবৃত্তি, সঙ্গীত, নৃত্য, কবিতা পাঠ ও যন্ত্রসঙ্গীতে বসন্তকে বরণ করা হয়।
যশোর ব্যুরো জানায়, ঋতুরাজ বসন্ত উৎসব হয় যশোরে। পৌরপার্ক নতুনভাবে সাজে। লাল হলুদের সমাহার ঘটে। ফুলে ফুলে একাকার হয় উৎসব চত্বর। শহরের মোড়ে মোড়ে উৎসবে মেতে ওঠে তরুণ-তরুণীরা। হলুদরাঙা জামা কাপড় পড়ে ও মেয়েরা খোঁপায় হলুদ গোলাপ গুজে অপরূপ রুপে সাজে। সবার মধ্যে বসন্ত উৎসবের আনন্দ। একইসাথে ভালোবাসা দিবস হওয়ায় দিনটিতে উচ্ছ্বাস আনন্দ করে সবাই নানাভাবে। ফাল্গুনীর বাতাসে মন যেন দোলা দিয়ে ওঠে। ‘ফুল ফুটুক আর না ফুটুক’ রোববার প্রকৃতির ঋতুরাজ বসন্ত সামগ্রিক পরিবেশ মাতিয়ে তোলে।যশোরের ফুলের রাজ্যে গত কয়েকদিন ধরে বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে নানা রঙের ফুল বেচাকেনা হয়। রোববারও ব্যাপক ফুল বিক্রি হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।