Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রিয় শিষ্য তামীম মাশরাফিকে নিয়ে গর্বিত আলভিস

| প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা, কলম্বো (শ্রীলঙ্কা) থেকে : বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যতোবারই দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ খেলতে এসেছে শ্রীলংকায়, ততবারই ক্রিকেট দলের খোঁজ-খবর নিতে এসেছেন সেনরাত আলভিস। বাংলাদেশ দল মোরাতুয়ায় খেলেছে ২ দিনের ম্যাচ, ছুটে গেছেন সেখানে। এক সময়ের শিষ্যদের দেখতে পি. সারায়ও এসেছেন ছুটে। বিসিবির চাকরি ছেড়ে শ্রীলংকায় এসেছেন ১৫ বছর আগে। তবে এখনো বাংলাদেশের মায়া ছাড়তে পারেননি। প্রিয় শিষ্য তামীমের খেলা দেখতে ছুটে গেছেন কলোম্বোর এই দুই ভেন্যুতে। বলেছেন কথা, দিয়েছেন প্রয়োজনীয় উপদেশ। ১৫ বছর আগেও ছিলেন যেমন, এখনো তেমনি আছেন শ্রীলংকান কোচ সেনরাত আলভিস। ২০০০ থেকে-২০০২, বয়সভিত্তিক কোচের দায়িত্ব নিয়ে বিসিবিতে কাজ করেছেন এই ২ বছর। বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে সে সময়ে ব্যাপক প্রসার এবং উন্নতিতে রেখেছেন অবদান। বিসিবিতে চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর শ্রীলংকা ক্রিকেটের সঙ্গে ছিলেন ২০১১ পর্যন্ত। এখন কলম্বোর ফিজিক্যাল অ্যাডুকেশন ইউনিভার্সিটিতে করছেন অধ্যাপনা। তামীম, মাশরাফির আবিষ্কারক এই শ্রীলংকান এই দুই শিষ্যকে নিয়ে করেন গর্ব। গতকাল পি.সারা ওভালের প্যাভিলিয়ন ভবনে টি ব্রেকের সময় দেখা হতেই ফিরে গেলেন নস্টালজিয়ায়। গর্বের সঙ্গে মনে করিয়ে দিলেন, ‘আমি কিন্তু তামীম, কৌশিকের (মাশরাফি) আবিষ্কারক।’ ২০০০ সালে মাইলো অনূর্ধ্ব-১৩ ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রাম থেকে তামীমকে খুঁজে বের করেছিলেন বলে জানিয়েছেন সেনরাত ‘তামীম যে আকরাম খানের ভাতিজা, তখন তা জানতাম না। কেউ তামীমের জন্য কোনো সুপারিশও করেনি। চট্টগ্রামে প্রায় ৩শ’ ক্ষুদে ক্রিকেটার জড়ো হয়েছিল ওই ক্যাম্পে। ক্যাম্পটি অনূর্ধ্ব-১৩ হলেও কারো কারো বয়স ছিল ১৫ বছর। ওদের মধ্যে বয়সে সবার ছোট ছিল তামীম। ১১’র মতো হবে। নেটে নামিয়ে দিয়ে অন্যদের বেলায় বেশ ক’টি করে শট দেখেছি । কিন্তু তামীমকে একটি শট দেখেই নির্বাচিত করেছিলাম। মনে আছে, লং অনের উপর তামীম বিশাল শট মারার পর আমি বলেছি, ওকে আর দরকার নেই। তখন দৌড়ে আমার কাছে এসে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে তামীম জানতে চাইল, আমার কি অপরাধ। আমি বললাম তোমাকে আর দেখার দরকার নেই, তুমি সিলেক্টেড। তখন মাথা ঝুঁকিয়ে বুক উঁচু করে হাসতে হাসতে ফিরে গেল তামীম। এখন তামীমকে নিয়ে আমি গর্বিত। মাইলোর স্পন্সরে অনুষ্ঠিত ওই ক্যাম্পে বিসিবি’র তৎকালীন ডেপুটি ডিরেক্টর, বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক শফিকুল হক হীরার ভ‚মিকার প্রশংসা করেছেন আলভিস‘হীরা থাকায় আমাদের কাজটা অনেক সহজ হয়েছে। চট্টগ্রামে তার বাসা ছিল বলে সে প্রায় আমাদেরকে বাসায় নিয়ে যেয়ে খাওয়াতো।’

মাশরাফিকেও বয়ভিত্তিক কর্মসূচি থেকে খুঁজে বের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি‘২০০১ সালে বাংলাদেশে এশিয় অনূর্ধ্ব-১৭ ক্রিকেটের আসর বসছে বলে বিভাগীয় পর্যায়ে ক্রিকেটার খুঁজতে বেরিয়েছিলাম। খুলনায় বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রাম হলো। মন্টু নামে এক কোচ (সাবেক কোচ মরহুম মহসীন মন্টু) ক্যাম্পের দেখভাল করতেন। দেখলাম লম্বা, ছিপছিপে গঠনের এক ছেলে অনেক জোরে বল করছে অনবরত। লাইন লেন্থে সমস্যা আছে। ছেলেটির হাঁটা-চলায় আগ্রাসী আচরণ দেখতে পেয়ে ছেলেটির খুব কাছে যেয়ে বললাম, এই যে স্ট্যাস্প দেখছ এই বরাবর তিনটি ডেলিভারি দাও। এদিক ওদিক নয়। কথামতো বল করায় কৌশিক ( মাশরাফি) নামের ওই বোলারকে বললাম তুমি নির্বাচিত। ঢাকার প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেটে খেলেনি কখনো, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলার কথা কল্পনায়ও ভাবছে না যে ছেলেটি, মাত্র ৭ মাসের মধ্যে সেই ছেলেটিকেই আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য তৈরি করতে হলো।’ ২০০১ সালে এশিয়ান অনূর্ধ্ব-১৭ ক্রিকেট থেকে বাংলাদেশ পেয়েছে এক ঝাঁক ক্রিকেটার। মাশরাফি ছাড়াও আশরাফুল, আফতাব, নাফিস ইকবালদের উপহার পেয়েছে বাংলাদেশ, খেলেছে তারা সবাই টেস্ট। এ নিয়েও গর্ববোধ করেন আলভিস‘বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য কিছু একটা তো করতে পেরেছি।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শুরু থেকে মাশরাফির ইনজুরির সঙ্গে বসবাসের জন্য দায়ী করেছেন ২০০১ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচিং স্টাফকে‘একদিন জাতীয় দলের অনুশীলন দেখতে যেয়ে শুনলাম, কৌশিককে দিনে ২৫ থেকে ৩০ ওভার বল করানো হচ্ছে। শুনে তো আমি রীতিমতো হতভম্ব। কোচ সারোয়ার ইমরানকে বললাম, এ কি করছ তোমরা ? এই বয়সে এতো লোড নিবে কিভাবে ছেলেটি।’
প্রিয় শিষ্য তামীমের একটি ভুলে (রান আউট) গল টেস্টে বাংলাদেশ গেছে হেরে। তামীমের ওই বোকামি দেখে ভীষণ কস্ট পেয়েছেন, পি সারা ওভালে তামীমের সঙ্গে কথা বলে দিয়েছেন প্রয়োজনীয় টিপস‘যখন জিজ্ঞেস করলাম কেন ওই ভুলটি করলে। ও তখন বলল,আমি ধরে নিয়েছিলাম বলটি উইকেট কিপারের গ্ল্যাভসে নেই, তাই সিঙ্গলের চেস্টা করেছিলাম। আমি বলেছি, এখন থেকে সতর্ক থাকবে, বলের পজিশন দেখে তার পর রান নেয়ার সিদ্ধান্ত নিবে। মাথা ঝুঁকে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিয়েছে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রিয়


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ