পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সাম্প্রতিককালে এমন কতগুলো ঘটনা ঘটেছে যার ফলে, সোজা ভাষায় বলতে গেলে, সরকারের বদনাম হচ্ছে। এমনিতেই অর্থনৈতিক ফ্রন্টে একের পর এক সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালী না দুর্বল, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। লোডশেডিং, জ্বালানি সংকট, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, ডলারের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং বিপরীতে টাকার মূল্য কমে যাওয়ায় দেশের অর্থনীতির ভিত্তি নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। এর মধ্যে গত রবিবারের পত্রপত্রিকায় অর্ধ শতাধিক ওষুধের মূল্য দ্বিগুণ করার খবরে পিলে চমকে উঠেছে। ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি ছাড়াও গত দুই মাস ধরে সয়াবিন তেলসহ প্রতিটি পণ্যের দাম হুহু করে বেড়ে চলেছে। চাল ডাল তেলসহ এমন একটি পণ্যও নাই, যার দাম বিগত দুই মাসে দেড় থেকে দুই গুণ বাড়েনি। এর মধ্যে একের পর এক জনপ্রতিনিধি বলে অভিহিত এমপি সাহেবরা উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে একাধিক কলেজের প্রিন্সিপালকে একের পর এক পিটিয়ে চলেছে। অন্যদিকে আবার সাম্প্রদায়িকতার জিগির তোলা হচ্ছে। সাম্প্রতিককালে সংঘঠিত দুই তিনটি ঘটনায় দেখা গেছে যে, হিন্দু সম্প্রদায়ের ২/৩ ব্যক্তি মহানবীর (সা.) বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করেছে। ফলে মুসল্লিরা ক্ষিপ্ত হয়েছেন এবং পানি কিছুদূর গড়িয়েছে। আর এক শ্রেণির তথাকথিত বুদ্ধিজীবী এবং তথাকথিত মুক্তবাক পত্রিকা মহানবী (সা.)-এর কুৎসার অংশটি আড়াল করে পরবর্তী প্রতিক্রিয়াকে সাম্প্রদায়িকতার রংয়ে চিত্রিত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের কৃপায় এক সময় মন্ত্রিত্ব প্রাপ্ত সাবেক কমিউনিস্ট রাশেদ খান মেননের কি জন্ডিস হয়েছে? বাস্তবে যাই হোক না কেন, প্রবাদে রয়েছে যে, জন্ডিসে আক্রান্ত রোগী নাকি সব কিছুই হলুদ দেখে। রাশেদ খান মেননও এখন প্রকাশ্যে বলছেন যে, বাংলাদেশকে নাকি এখন আর বাংলাদেশ মনে হয় না। তার চোখে বাংলাদেশ নাকি আফগানিস্তান মনে হচ্ছে। কারণ, তিনি বাংলাদেশের কোথাও বাঙালি খুঁজে পান না। তিনি নাকি সর্বত্র মৌলবাদী দেখতে পান। এসব নিয়েই আজকের আলোচনা। তবে সবগুলো পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব হবে কিনা জানি না। কারণ, স্থানাভাব। তবে যে পয়েন্টটি উল্লেখ করিনি সেটি নিয়েই আজকের আলোচনা শুরু করবো।
গত শনিবার নিজ দলের এক আলোচনা সভায় রাশেদ খান মেনন বলেছেন যে, আমেরিকা নাকি আগামী নির্বাচনে তাদের পছন্দ মতো সরকার চায়। মেনন সাহেব কোথা থেকে এমন একটি মূল্যবান তথ্য আবিষ্কার করলেন সেটি আমাদের জানা নাই। আর আমরা জানবোই বা কীভাবে? আদার ব্যাপারীর পক্ষে কি জাহাজের খবর রাখা সম্ভব? মেনন সাহেব মন্ত্রী ছিলেন। মন্ত্রীরা দশানন হতে পারেন। তাদের কানেকশন ওয়াইড হবে, এটাই তো স্বাভাবিক। বাংলাদেশে আমেরিকার পছন্দের দল কোনটি সেটি আমরা জানি না। মেনন সাহেব জানতেও পারেন। জামায়াতে ইসলামী এবং অন্যান্য ইসলামী দল যে আমেরিকার পছন্দের দল নয়, সেটা তো আমরা সকলেই জানি। কারণ, আমেরিকা বিশ্বজুড়ে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ শুরু করেছিল। সেখানে সন্ত্রাসী বলতে তো বুঝিয়েছিল ইসলামী টেরোরিজম। আর ইসলামী সন্ত্রাসী বলতে তারা বুঝিয়েছিল তাদের ভাষায় মৌলবাদী দল। ‘ইসলামী দল’, এই কথা সরাসরি না বলে তারা মৌলবাদী দল বলে। কারণ, ইসলামপন্থী বললে তো পৃথিবীর ১৬০ কোটি মুসলমান এসে পড়ে।
এখানে মৌলবাদের ব্যাখ্যা সম্পর্কে কয়েকটি বাক্য না বললেই নয়। মৌলবাদের ইংরেজি কী? ইংরেজি হলো ফান্ডামেন্টালিজম। আর যারা ফান্ডামেন্টালিজমে বিশ্বাস করে তারা হলো ফান্ডামেন্টালিস্ট বা মৌলবাদী। খৃস্টধর্মে বলা হয়, যে কোনো মানুষকে প্রকৃত খৃস্টানহতে গেলে, তাকে তিনটি মূলনীতিতে বিশ্বাস করতে হবে। এই তিনটি মূলনীতি হলো (১) জেসাস বা যিশুখৃস্টই হলেন ঈশ্বর, (২) যিশুখৃস্টই হলেন ঈশ্বরের পুত্র এবং (৩) যিশুখৃস্টই হলেন স্পিরিট (এখানে স্পিরিট বলতে আত্মা বোঝানো হয়েছে)। এই তিনটি মূলনীতিকে বলা হয় ট্রিনিটি বা ত্রিতত্ববাদ। যারা ত্রিতত্ববাদে বিশ্বাসী নয়, তারা খাঁটি খৃস্টান নয়। এটিই হলো মৌলবাদ। আসলে মৌলবাদ বা তার ইংরেজি ফান্ডামেন্টালিজম শব্দটি এসেছে খৃস্টধর্ম থেকে।
অথচ, বাংলাদেশে কোনো ব্যক্তি ইসলামের কথা বললে অথবা টুপি বা দাড়ি রাখলেই তাকে মৌলবাদী বলা হয়। এখানে আমি একটি কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে চাই। মুসলমান হতে গেলে অবশ্যই তাকে কতগুলো মূলনীতিতে বিশ্বাস করতে হবে। এগুলো হলো: (১) আল্লাহর অস্তিত্ব, তার একত্ববাদ এবং তার সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস। (২) শুধু পৃথিবী নয়, এই মহাবিশ্ব এবং তার অন্তর্ভুক্ত চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-নক্ষত্র, আকাশ-পাতাল-মেঘপুঞ্জ-সমুদ্র-পাহাড়-পর্বত-বৃক্ষ-মানুষসহ সমগ্র প্রাণী তিনি সৃষ্টি করেছেন এবং লালন পালন করছেন। (৩) এই দুনিয়ার পর রয়েছে আরেক দুনিয়া, যেটিকে বলা হয় পরকাল। সেই পরকালে রয়েছে বেহেশত এবং দোজখ। (৪) এই দুনিয়ায় মানুষ যতখানি পাপ বা পুণ্য করবে সেই মোতাবেক সে পরকালে বেহেশত বা দোজখে নিক্ষিপ্ত হবে। (৫) আল কোরআন, ইঞ্জিল, তৌরাত, যাবুরসহ সকল আসমানী কিতাবে বিশ্বাসী হতে হবে, ইত্যাদি। এসব মূলনীতিতে বিশ্বাস না করলে নামে মুসলমান হলেও প্রকৃত অর্থে কোনো ব্যক্তি মুসলমান নয়। আমি এবং আমার মতো কোটি কোটি মানুষ এই সব মূলনীতিতে গভীরভাবে বিশ্বাসী। এই বিশ্বাসের জন্য যদি কেউ আমাকে এবং আমার মতো অন্যান্য বিশ্বাসীগণকে মৌলবাদী বলে তাহলে আমরা সেই মৌলবাদী অভিধায় অভিহিত হতে সানন্দে প্রস্তুত।
॥দুই॥
জাতীয় সংসদ সদস্য বা এমপি হলেই যে আইন হাতে তুলে নিতে হবে, এমনটি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু চরম পরিতাপের বিষয় হলো এই যে, আওয়ামী লীগের কয়েকজন এমপি সেটাই করছেন। তাদের ব্যবহার দেখে মনে হয় যে, দেশটি যেন মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, এমনকি নিজ দলের কর্মীদের ক্ষেত্রেও বলেন, এমপি সাহেবদের আচরণে মনে হয়, আইন কানুন নয়, জোর যার মুল্লুক তার নীতিতে তারা বিশ্বাস করেন। রাজশাহী ১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী কলেজের এক অধ্যক্ষকে বেদম পিটিয়েছিলেন। বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেলে এমপি ওমর ফারুক ঘটনাটি অস্বীকার করেন। শিক্ষক সমিতি অভিযোগ করে যে, অধ্যক্ষকে প্রহার করার পর ঐ অধ্যক্ষ যাতে ঐ মারের ঘটনাটি প্রকাশ না করে তার জন্য তাকে কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত শনিবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলইডি হলে দেবীদার উপজেলা চেয়ারম্যানকে বেদম প্রহার করেছেন কুমিল্লা-৪ আসনের এমপি কাজী মোহাম্মদ ফখরুল।
একটি কর্পোরেট হাউজের বাংলা দৈনিকে গত রবিবার প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, গত এক বছরে অন্তত ছয় জন এমপি মানুষ পিটিয়ে আলোচনার সৃষ্টি করেছেন। গত ২১ মে বরগুনার পাথরঘাটায় এক সালিশ ডেকে স্থানীয় এমপি শওকত হাসানুর রহমান রিমন এক মাছ ব্যবসায়ীকে মারধর করেন। কর্পোরেট হাউজের ঐ পত্রিকার রিপোর্টে হাসানুর রহমান রিমন এমপিকে মারপিটে সিদ্ধ হস্ত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক ব্যক্তিকে প্রহার করার অভিযোগ রয়েছে। ঝিনাইদহ-২ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার ঝিনাইদহ সরকারি কলেজের দুই অধ্যাপককে চড় থাপ্পর কিল ও ঘুষি মারেন। এই প্রহারের ঘটনায় কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান এসপির কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু ফলাফল শূন্য। বরং অধ্যাপকদের কমনরুমে এসে এমপি আনোয়ারুল আজিম শিক্ষকদেরকে প্রকাশ্যে হুমকি ধামকি দিয়ে চলে যান। গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা-৫ আসনের এমপি মনিরুল ইসলাম মনু ঢাকা দলিল লেখক ও ভেন্ডার সমিতির সাধারণ সম্পাদককে চেয়ার দিয়ে পেটান এবং তার দিকে একটি গ্লাস ছুঁড়ে মারেন। গালাগালির পাশাপাশি ঐ এমপি দলিল লেখককে হত্যার হুমকিও দেন বলে পত্রিকাটির রিপোর্টে প্রকাশ। কক্সবাজারের সাবেক এমপি বদি টেকনাফে দলের বর্ধিত সভায় তিন জন আওয়ামী লীগ সদস্যকে বেদম প্রহার করেন। মারপিটের এই ঘটনায় বদির সঙ্গে তার ভাইও অংশগ্রহণ করেন।
॥তিন॥
এবার অর্থনীতির হাল হকিকত। অর্থনৈতিক ফ্রন্টে রয়েছে একাধিক সেক্টর এবং একাধিক খবর। তার মধ্যে সর্বশেষ খবর হলো ঔষধের মূল্য। গত রবিবার একাধিক জাতীয় দৈনিকে বলা হয়েছে যে জীবন রক্ষাকারী ঔষধের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। খবরে প্রকাশ, স্বাস্থ্য সেবায় বহুল ব্যবহৃত ২০টি জেনেরিকের ৫৩টি ব্র্যান্ডের ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন মাত্রার প্যারাসিটামলের দাম বাড়ানো হয়েছে ৫০ থেকে ১০০ ভাগ। মাত্র ৪০ টাকার অ্যামোক্সিসিলিনের দাম করা হয়েছে ৭০ টাকা। ২০ টাকার ইঞ্জেকশন ৫৫ টাকা। ৯ টাকার নাকের ড্রপের দাম বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৮ টাকা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাইদুর রহমান মনে করেন যে, যেভাবে দাম বাড়ানো হয়েছে সেভাবে দাম বাড়ানো উচিত হয়নি। মনে হয়েছে, র্যানডমভাবে দাম বাড়ানো হয়েছে। দাম বাড়ানোর আগে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন ছিল। অনেকগুলো ওষুধের দাম বৃদ্ধি যৌক্তিক হয়নি। বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি জাকির হোসেন রনি বলেন যে, বহুল ব্যবহৃত ওষুধের দাম এভাবে প্রায় দ্বিগুণ বাড়ানো উচিত হয়নি। যেসব ওষুধের দাম প্রায় দ্বিগুণ বাড়ানো হয়েছে তারমধ্যে অনেক জীবন রক্ষাকারী ওষুধও রয়েছে। প্রিয় পাঠক, যতগুলো ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে তার সম্পূর্ণ একটি তালিকা আমার হস্তগত হয়েছে। এই তালিকায় আগের দাম এবং বর্ধিত দাম উল্লেখ করা হয়েছে। তালিকাটি পড়ে আমি হতভম্ব হয়েছি। যখন এই লেখাটি বের হবে তখন হয়তো আপনারা এই মূল্য বৃদ্ধির বিস্তারিত পাবেন। আমি তাই আর ঐ বিস্তারিত তালিকাটি দিচ্ছি না। তবে আমি এটুকু বলতে পারি যে, কোনো কল্যাণধর্মী রাষ্ট্রে এরকম বেপরোয়াভাবে ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি করা যায় না। তেমনি সরকার যদি জনকল্যাণমুখী হয় তাহলে তারাও এভাবে মূল্য বাড়াতে পারে না।
এবার সংক্ষেপে অর্থনীতির চেহারা। ঈদের ঠিক আগে এবং পরে সরকার এবং ঊর্ধ্বতন মহল পদ্মাসেতুর উদ্বোধন এবং আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এর মধ্যে যে অর্থনীতি যে হঠাৎ করে টালমাটাল হয়ে গেল সে খবর অনেকেই রাখেননি। গত ১৫ জুলাই একটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিকে খবর বেরিয়েছে যে, আমদানীকারকরা ডলার কিনছেন ১০৪ টাকা দরে। অর্থনীতি সম্পর্কে যাদের সামান্যতম জ্ঞানও আছে তারা জানেন যে, এটি একটি ভয়াবহ সংবাদ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর গত ৫১ বছরে এটাই ডলারের সর্বোচ্চ মূল্য। অথচ, ঈদুল আযহার আগের দিনই ডলার বিক্রি হয়েছে ৯৯ টাকায়। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে যে, তারা ইতোমধ্যেই ৫৭৫ মিলিয়ন ডলার বাজারে ছেড়েছে। আগের বছর তারা ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বাজারে ছেড়েছে। বিলিয়ন সম্পর্কে ধারণা দেওয়া দরকার। ১০০০ মিলিয়নে ১ বিলিয়ন হয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংক বিগত দেড় বছরে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে দেড় বিলিয়ন ডলার ছেড়েছে। তাহলে ডলার তথা আমদানির বাজারে কেন এই টালমাটাল অবস্থা?
অথচ, দুই আড়াই মাস আগেও ডলারের মূল্য ছিল ৮৫ টাকা। বেশ কিছুদিন ডলারের এই মূল্য স্থিতিশীল ছিল। সেটি তাহলে হঠাৎ করে এক দুই টাকা নয়, একেবারে ১৯ টাকা বেড়ে গেল, কী কারণে? আমি ব্যক্তিগতভাবে একাধিক প্রাইভেট ব্যাংকের সাথে কথা বলেছি। তারা বলছেন যে, আমদানির সবগুলো এলসি তারা অনার করতে পারছেন না। কারণ, তাদের কাছে প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা অর্থাৎ ডলার নাই। তাহলে কোথায় গেল ডলার? বাংলাদেশ ব্যাংক এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। যতই ইউক্রেনের যুদ্ধের কথা বলা হোক না কেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে তেমনভাবে প্রভাবিত করার কথা নয়। যে কোনো অর্থনীতিবিদই এই কথা বলবেন। অথচ, অর্থনীতিতে এমন একটি অবস্থা তৈরি হয়ে গেছে। এই যদি অর্থনীতির অবস্থা হয় তাহলে আপনি কেমন করে বলবেন যে, বাংলাদেশ পৃথিবীর কাছে উন্নয়নের রোল মডেল? বরং দুমূর্খরা বলতে চান যে, অনেক ঢোল সহরত যোগে প্রচারিত অর্থনৈতিক উন্নয়নের বেলুন ফুটো হয়ে যাচ্ছে।
আমরা এই লেখার শুরুতে দেখিয়েছি যে, বিগত এক দেড় মাসে এমন কোনো পণ্য নাই যার দাম বাড়েনি। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলি। আমি কয়েকটি পশ্চিমা দেশে ছিলাম। সেখানে দেখেছি, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেলে কমপেনসেটরি অ্যালাউন্স দেওয়া হয়। বাংলাদেশে যে জিনিসপত্রের দাম দেড় থেকে দুই গুণ বেড়ে গেল তার জন্য কি এক পয়সাও কমপেনসেটরি অ্যালাউন্স দেওয়া হয়েছে? হয়নি। তাহলে মানুষের অবস্থার উন্নতি হলো কোত্থেকে? বরং তাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। এখানে পারক্যাপিটা ইনকাম বা মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির পরিসংখ্যান বাস্তবের সাথে মেলে না।
যেসব প্রশ্ন এই নিবন্ধে তুলে ধরা হলো, সেগুলো অবিলম্বে কারেকশন করা দরকার। অন্যথায় অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে বলেই ধরে নিতে হবে।
Email: [email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।