পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রাথমিক সমাপনী (পিইসি), ইবতেদায়ী, জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার ফলাফলে পাসের হার এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্তির প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এসব পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি স্তরেই শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে, পাসের হার এবং জিপিএ মানও বেড়েছে। সেই সাথে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের অংশগ্রহণ, পাসের হার এবং উচ্চ গ্রেড প্রাপ্তিও আগের চেয়ে বেড়েছে। প্রাথমিক ও ইবতেদায়ীতে পাসের হার ৯৮.৫১ ভাগ এবং জেএসসি ও জেডিসিতে পাসের হার গড়ে ৯৩.০৬ শতাংশ। অর্থাৎ প্রাথমিকে পাসের হার শতকরা শতভাগের কাছাকাছি। গতবারের চেয়ে পাসের হার বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে এসব পরীক্ষার ফলাফলে অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রয়েছে। তবে পাসের হার আগের বছরের চেয়ে সামান্য বাড়লেও জিপিএ-ফাইভ প্রাপ্তির হার বৃদ্ধি অনেক বেশী। এবছর পিইসি পরীক্ষার কিছু উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, ছেলে শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ ছিল ১০ লাখ ৯৬ হাজার, এদের মধ্যে পাস করেছে ১০ লাখ ১৮ হাজার, মেয়ে শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ ছিল ১২ লাখ ৫০ হাজার, পাস করেছে ১১ লাখ ৬৫ হাজার। ইবতেদায়ী শাখায় পাসের হার ৯৫ শতাংশ এবং সংখ্যা আড়াই লাখ। সব মিলে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ীতে প্রায় ২৮ লাখ এবং জেএসসি ও জেডিসিতে ২২ লাখ মিলে সর্বমোট অর্ধকোটি শিক্ষার্থী প্রাথমিকের দু’টি স্তরের পাবলিক পরীক্ষায় পাস করেছে। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ লক্ষাধিক।
দেশের বৃহত্তম দু’টি পাবলিক পরীক্ষায় অর্ধকোটি শিশুর অংশগ্রহণ, শতভাগের কাছাকাছি পাসের হার এবং ৫ লক্ষাধিক শিশুর উচ্চগ্রেড প্রাপ্তির এই সংবাদ আশাব্যঞ্জক, এই ফলাফলকে ছোটদের বড় সাফল্য হিসেবে আখ্যায়িত করছেন অনেকে। দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে, সেই সাথে বাড়ছে শিক্ষার্থী এনরোলমেন্টের হারও। তারই ধারাবাহিকতায় পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে অংশগ্রহণকারির সংখ্যা ও পাসের হার বৃদ্ধিও অস্বাভাবিক নয়। তবে জাতির সামনে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে। শিক্ষার মান বাড়ছে কি? আমাদের শিশুরা শিক্ষার কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হচ্ছে কিনা, বাংলা ও ইংরেজী ভাষা, গণিত ও বিজ্ঞানে যথাযথ দক্ষতা, সমাজবিজ্ঞান, ধর্মীয় ও নৈতিকশিক্ষাসহ শিশুদের মধ্যে সৃজনশীলতার বিকাশে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কতটা সফল হচ্ছে, তার বিচার-বিবেচনায় সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলো চিহ্নিত করে শিক্ষার মানোন্নয়নে নতুন সিদ্ধান্তে আসতে হবে। পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই পরীক্ষা ও ফলাফল শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করবে। প্রাথমিকের পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে দু’টি পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা পরবর্তী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অভিজ্ঞতাসহ আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারছে তা’ অস্বীকার করা যায় না। তবে এসব পরীক্ষাকে ঘিরে সারা বছর ধরে শিশুদের প্রচ- চাপের মধ্যে রাখা, তথাকথিত নামি-দামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতা, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উপর কোচিং, নোট-গাইডবই, প্রাইভেট টিউশনীর বাড়তি খরচ চাপিয়ে দেয়ার এই শিক্ষাব্যবস্থা সমাজে যে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করছে সে বিষয়গুলোও অগ্রাহ্য করার কোন সুযোগ নেই।
প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা উচ্চশিক্ষার ভিত্তি রচনা করে থাকে। অতএব, শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত ও পরিকাঠামো প্রাথমিক স্তর থেকেই শুরু করতে হবে। পিইসি-ইবতেদায়ী, জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার পরবর্তী আরো দু’টি পাবলিক পরীক্ষার ধাপ পেরিয়ে শিক্ষার্থীরা যখন উচ্চতর ও পেশাগত শিক্ষাগ্রহণের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয় তখনি ইতিপূর্বে তাদের দক্ষতা ও মেধাগত অবস্থান ধরা পড়ে। বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে সারাদেশ থেকে উচ্চমাধ্যমিকে পাস করা লাখ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে এমনকি ১০ জনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কোন বিভাগে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও নৈতিক মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে অবক্ষয়, দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের বিস্তার ঘটেছে তার জন্য মূলত: শিক্ষাব্যবস্থাকেই দায়ী করা হয়। একদিকে শিক্ষার কাক্সিক্ষত মানোন্নয়ন হচ্ছে না, অন্যদিকে প্রতিবছর প্রাথমিক স্তরেই লাখ লাখ শিক্ষার্থী নানা কারণে ঝরে পড়ছে। প্রাথমিক স্তরেই এখনো শতকরা ২২ ভাগ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে বলে এক রিপোর্টে জানা যায়। শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে সরকার শিক্ষা উপবৃত্তি, স্কুল ফিডিংসহ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও ঝড়ে পড়া বড় সংখ্যায় কমিয়ে আনা যাচ্ছে না। পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রে নানামাত্রিক বৈষম্য কমিয়ে আনার কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। বিশেষত: সাধারণ শিক্ষা ও মাদরাসা শিক্ষায় বিদ্যমান বৈষম্য দূর করতে হবে। উচ্চশিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক যোগ্যতার ভিত্তিতে সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের আগামীদিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ ও নৈতিক মানসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে উপযুক্ত শিক্ষাক্রম ও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। প্রাথমিক, ইবেতেদায়ী, জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ও উত্তীর্ণ সকল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতি আমাদের অভিনন্দন ও শুভ কামনা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।