পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব দিল্লীর পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। চলতি বছরের শেষে কিংবা আগামী বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব তীক্ষè সতর্ক দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছে। বিগত দুইটি জাতীয় নির্বাচনই একপাক্ষিক, ভোটার বিহীন ও কারচুপিপূর্ণ হওয়ার কারণে এসব নির্বাচন প্রক্রিয়াকে তারা সমর্থন দেয়নি এবং রাজনৈতিক সমঝোতার মধ্য দিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমুলক নির্বাচনের তাগিদ অব্যাহত ছিল। পক্ষান্তরে জনসংখ্যার বিচারে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশের দাবিদার হয়েও ভারত আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ হস্তক্ষেপের মধ্য দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনকে বৈধতা দেয়ার নজির সৃষ্টি করেছে। দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশ সফর করে চলেছেন। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রিয়ার এডমিরাল এইলিন লুবাচার ৪ দিনের বাংলাদেশ সফর শেষ হতে না হতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক উপমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র বাংলাদেশ সফরের মূল বিষয়ই ছিল বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আগামীতে একটি অর্থবহ নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে সহায়তা করা। তারই ধারাবাহিকতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ডেরেক শোলে ঢাকা সফর করছেন। লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে, একই সময়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন খাত্রাও আকস্মিক দুদিনের সফরে ঢাকায় পদার্পণ করেছেন। বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল ও জনগণ যখন দেশে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে একাট্টা, একই লক্ষ্যে পশ্চিমা বিশ্বও তাদের মত করে কাজ করছে, তখন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব অতীতের ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনার নেতৃত্ব তথা আওয়ামী লীগের প্রতি ভারতের পূর্ণ সমর্থনের কথা পুর্নব্যক্ত করেছেন।
বাংলাদেশের নির্বাচনে ভারতের প্রাক্কালে ভারতের ন্যক্কারজনক ভ‚মিকা ও হস্তক্ষেপ খুব বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। বাংলাদেশ সব সময় ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখতে চায়। সে সম্পর্ক হতে হবে দুই দেশের জনগণের পারস্পরিক স্বার্থ ও সৌহার্দ্য ভিত্তিক। জনগণের বৃহত্তর স্বার্থ ও আকাঙ্খার বিরুদ্ধে গিয়ে অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কোনো বিশেষ দল বা গোষ্ঠিকে সমর্থন দিলে দেশের জনগণ তা ভাল চোখে দেখেনা, মেনে নেয়না। আধুনিক বিশ্বের রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্কের মূল ভিত্তি গড়ে ওঠে দ্বিপাক্ষিক ক্ষেত্রে সমতা, স্বচ্ছতা ও জনস্বার্থের নিরীখে। ভারতের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সম্পর্ক এখন চরম ভারসাম্যহীন অবস্থায় উপনীত হয়েছে। ভারতের সাথে বাণিজ্য বৈষম্য এবং বেআইনী অ্যান্টি-ডাম্পিং ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের কণ্ঠ খুবই ক্ষীণ। গত ১৪ বছরে ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে প্রায় বিনা শুল্কে বাণিজ্যিক করিডোর, স্থল ও নৌ-ট্রানজিট সুবিধা, বন্দর সুবিধাসহ একপাক্ষিকভাবে অনেক স্পর্শকাতর বিষয়ে সুযোগ সুবিধা আদায় করে নিলেও বাংলাদেশের ন্যায্য ও প্রত্যাশিত কোনো দাবিই পুরণ করেনি। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মরু প্রক্রিয়া ও পানি সংকট তীব্রতর আকার ধারণ করলেও ভারত তিস্তা চুক্তি না করে দুই দশকের বেশি সময় ধরে মূলা ঝুলিয়ে রেখেছে। আন্তর্জাতিক নদী হিসেবে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা বাংলাদেশের অধিকার। এ বিষয়ে বাংলাদেশের ভারত নীতি ও ক‚টনৈতিক ব্যর্থতার দায় অস্বীকার করা যাবে না।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা, গঙ্গা পানিচুক্তির সঠিক বাস্তবায়ন, সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা, বাণিজ্য বৈষম্য দূর করা, মাদক ও চোরাচালান রোধে ফলপ্রসু কর্মপন্থা ও ভ‚মিকা দেখতে চায়। কোনো একটি রাজনৈতিক পক্ষের প্রতি অটুট সমর্থন পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য কার্যকর কোনো পন্থা হতে পারেনা এটা বরং সার্বিক সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। দেশের অর্থনীতি এখন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এ সময়ে ভারতের আদানি গ্রæপের সাথে কথিত চুক্তির নামে লক্ষকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার প্রতারণামূলক তৎপরতার ঘটনা নিয়ে খোদ ভারতের সংসদে বিরোধী সদস্যরা আলোচনার ঝড় তুলেছেন। ঢাকায় ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বিনয় খাত্রাকে এসব বিষয়ে প্রশ্ন করা আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ক‚টনীতিকদের দায়িত্ব। ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের এই সফরে গত ১৪ বছরে ভারতের সাথে যে সব চুক্তি, প্রতিশ্রæতি ও দ্বিপাক্ষিক আদান-প্রদানের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তার অনুপুঙ্খ বিচার বিশ্লেষণসহ প্রত্যাশিত ইস্যুগুলোর সঠিক সমাধানই আমাদের কাম্য। শেখ হাসিনার প্রতি ভারতের নিরঙ্কুশ সমর্থনের বিনিময়ে তিস্তার পানিচুক্তি, গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা, সীমান্তে বিএসএফ’র হত্যাকান্ড, অস্বাভাবিক বাণিজ্য বৈষম্যের মত বাংলাদেশের অগ্রাধিকার ও চিরায়ত স্বার্থগুলো অগ্রাহ্য হতে পারে না। ভারত ও বাংলাদেশের সরকারকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মানদন্ড হিসেবে জনস্বার্থ ও জনগণের প্রত্যাশার প্রতি নজর দিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।